সবাই চায় অল্প কথায় ধর্মের ব্যাপারে জানতে কিন্তু দেখা যায় বর্তমানের ধর্মীয় পন্ডিতরা ধর্মের সহজ সরল সারাংশকেও জটিল আর দূর্ভেদ্য করে তুলেছে তাই আজ প্রতিটা মানুষেরই কমন গোপন ইচ্ছাটাই হল- এতো বেশী জটিলতায় না গিয়ে ধর্ম বলতে আসলেই কি বুঝায় এটি যদি অল্প কথায় জানা যেত! অথবা ঈশ্বর আমাদের কাছে আসলেই কি চান ? অর্থাৎ কেন আমাদের সৃষ্টি করলেন ? আর কোন নিকৃষ্ট পাপটি কিছুতেই করা যাবে না বা যে পাপ করলে কোনভাবেই মুক্তি মিলবে না? আর কিভাবে চললে পরিপূর্ন মুক্তির মাধ্যমে মোক্ষ লাভ সম্ভব হবে ?
যদিও ঈশ্বর যুগে যুগে মাত্র একটি বাক্যের মাধ্যমেই এই গুরুত্বপূর্ন কথাটি বিভিন্ন অবতার-নবী-রসুল আর জ্ঞানী-গুনীজনের দ্বারা ঠিকই যুগানুযায়ি প্রচার করিয়েছেন অত্যান্ত সহজভাবে কিন্তু পরবর্তীতে মানুষের কাছে সেই সরল গুরুত্বপূর্ন বাক্যটিই হয়ে গেছে শুধুই মুখের বুলি, আবার কারো কাছে হয়ে গেছে না বুঝে শুধুই মন্ত্র পাঠের মতন ব্যাপার, আবার কোন কোন ধর্মে এক বাক্যে প্রকাশের অস্তিত্বই বিলীন করে দেয়া হয়েছে আবার যেসব ধর্মে ঐ বাক্যের অস্তিত্ব আছে তাদের কাছে এটি হল অন্ধভাবে মনের উপর জোড় করেই উক্ত বাক্যের কথায় নিজেকে বেধে ফেলে বিশ্বাসি থাকার অভিনয় করতে থাকা আবার কারও কাছে এই সরল বাক্যটি হল শুধুমাত্র নিজেদের ধর্মে সামাজিকভাবে প্রবেশের জন্য একধরনের সাক্ষীমাত্র। যদিও এটা সত্য যে এই গুরুত্বপূর্ন বাক্যটি বর্তমানে শুধুমাত্র মুসলিমদের কাছেই অবিকৃত রয়েছে, আরবীতে যাকে বলে কালিমা, কিন্তু বেশিরভাগ মুসলিমরা আজ এই সহজ সরল গুরুত্বপূর্ন বাক্যটিকে সর্বপ্রথমে ব্যাখ্যা করে মানুষের কাছে না বুঝিয়ে এমনভাবে নিজেদের ধর্মে লোকবল বাড়ানোর জন্য মানুষকে আহব্বান করে যে, অন্য ধর্মের লোকজন মনে করে এটা নতুন কোন ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কথা যা আরব দেশের নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম মধ্যযুগে উদ্ভব করেছিল, এমনকি বেশিরভাগ মানুষই উল্টো ধর্মকে ভয় পেয়ে আরো দূরে সরতে থাকে আবার অনেকেই বুড়ো বা শেষ বয়সে ধর্মে ফিরার কু-মতলব আঁটে।
অতএব মহান স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানা তায়ালা যেটি সবার আগে মানুষের মাঝে প্রচার করতে বলেছেন সেটিই প্রচার করতে হবে এমনকি মুসলমানদের মাঝেও কেননা অনেক মানুষই মুসলমান সমাজে জন্মগ্রহন করেও কালিমার ব্যাখ্যা ও হাক্বিকত অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃত না বুঝার কারনে জাহেল/মুনাফিক/গাদ্দার হয়ে অমুসলিমই থেকে যায়। তাহলে অন্য ধর্মের লোক আর মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য শুধু মুসলমানরা স্রষ্টার নাম আল্লাহ বলে আর মুহাম্মদ সাঃ এর উপর প্রেরীত ধর্ম এর কিছু সহজ রীতি নীতি যেমন- নামাজ রোজা বিয়ে সাদী ইত্যাদি করে থাকে। যদিও অনেকেই জানে না যে সকল ধর্মই একই স্রষ্টা হতেই এসেছে, যেমন- সনাতন হিন্দু ধর্মসহ প্রায় সকল প্রধান ধর্মেই ঈশ্বরের আসল নাম আল্লাহ ই ছিল কিন্তু বৃটিশদের বিশ্ব শাষনের পর হতে প্রায় অনেক ধর্ম হতেই আশ্চর্য্যজনক ভাবে ঈশ্বরের নাম হিসেবে আল্লাহ আর পাওয়া যায় না তবে ভালভাবে খোঁজ নিলে কিছু কিছু ধর্মগ্রন্থে আজও পাওয়া যায়, উদাহরণস্বরূপ- হিন্দুদের উপনিষদে আল্লোহ নামে একটা উপনিষদ আছে সেখানে ঠিকই ঈশ্বরের নাম আল্লো বলে উল্লেখ আছে তাই বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বরের আসল নাম আল্লাহ উল্লেখ থাকলেও পরিপূর্ন কালিমা বা এক বাক্যে ধর্মের ব্যাখ্যাটা কিন্তু সরাসরি ইসলাম ধর্ম ছাড়া আর কোন ধর্মে পাওয়া যায় না, তাই ১মত মুসলিমদেরই উচিত এই আরবী কালিমার সঠিক অর্থ সকল ধর্মের মানুষকে পৌছে দেয়া আর ঈশ্বরও এই দায়িত্ব মুসলিমদেরই দিয়েছেন, এজন্যই মুসলিমদের বলা হয়ে থাকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বা জাতি ।
যাইহোক আরবীতে উক্ত কালিমাটি হল-" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ—মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ" বাংলায় এর সরাসরি সরল অর্থ হবে " নাই কোন ইলাহ আল্লাহ ছাড়া--- মুহাম্মদ(সঃ) আল্লাহর বার্তাপ্রচারক" । উপরের বাক্য ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই বাক্যের মোট দুটি অংশ রয়েছে যার ১ম অংশই বেশি গুরুত্বপূর্ন আর ১ম অংশে বলা হচ্ছে আল্লাহই হলেন সত্যিকারের ইলাহ অর্থাৎ তিনি ছাড়া অন্য ইলাহ বা ঈশ্বর নেই, তার মানে ইহলোকে অনেকেই ভুলবশত বা সীমাতিক্রম করে স্রষ্টা ভিন্ন অন্য কোন সৃষ্টিকে বা নিজেদেরই ইলাহ বা ঈশ্বর ভাববে বা দাবী করবে অথবা সে জোড়-জবরদস্তি করে তার অধিনস্তদেরকেও মানাবে কিন্তু জীবন গেলেও আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ঈশ্বর ইলাহ মানা যাবে না। আর আমরা অতীতের ইতিহাসের পাতাতেও ঠিকই এমন ইলাহ বা ঈশ্বর দাবীদারদের দেখতে পাই যেমন- হিন্দুস্থানে রাজা কংস আর মিশরের রাজা ফেরাউনরা এমন দাবী করেছিল। যাইহোক কেউ যদি নাস্তিক হয়ে থাকে বা স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে দ্বিধা-দন্দে থাকে তবে এসব আলোচনার পুরোটাই তার মাথার উপরে দিয়ে যাবে তাই প্রথমেই(সত্যিই কি ঈশ্বর বলতে কিছু আছে ? Click This Link)এর পর্বগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া জরুরী, দ্বিতীয়ত (নাস্তিক ও ইসলামবিরোধীদের প্রশ্নোত্তর Click This Link)এই পর্বগুলোও এক নজর দেখা উচিৎ।
অতীতে শুধুমাত্র রাজা-বাদশা বা বিশেষ কেউ নিজেদের ইলাহ বা ঈশ্বর ভাবলেও শেষ কলি যুগে এসে মানুষের জ্ঞান-গড়িমা বেড়ে যাওয়ায় মানবজাতি আজ সীমা অতিক্রম করে নিজেদের সামগ্রিক জীবন-বিধান নিজেরাই প্রণয়ন করছে, শুধু তাই না আজকে বেশিরভাগ মানুষই নিজেদেরকে অযথাই সম্পূর্ন স্বাধীন ভাবছে, এমনকি জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত দেশ নিজেদেরকে সার্বভৌমত্বের মালিক(সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী) পর্যন্ত মনে করছে আর ঈশ্বর গড আল্লাহকে শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা/খালিক/ব্রম্ম ইত্যাদি রুপে মানছে। আর কেউ যদি এমন বিশ্বাস করে বা মানে তবে সে স্রষ্টাকে একেবারেই ঈশ্বর হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে ফেলল, হোক সেটা জেনে অথবা না জেনেই আবার যদি কেউ এক স্রষ্টাকে ঈশ্বর হিসেবেই বিশ্বাস করল আবার উপরোক্ত বিশ্বাসও পোষন করল তখন সে স্রষ্টার সাথে অন্য সৃষ্টিকেও ঈশ্বররুপে তুলনা করল বা সমকক্ষ ভাবল বা স্রষ্টার গুনে অন্য সৃষ্টিকেও প্রায় কাছাকাছি হলেও গুনান্বিত করল অথবা অংশীদার বানাল বা শরীক করল তথা শিরক করে ফেলল। আর বৃটিশদের বিশ্ব শাষনের পর এখন সাধারন মানুষগুলোর মাঝেও মিছেমিছি প্রজারাই রাজা এবং "নিজের মনে নিজেই রাজা" এমন ভাবার প্রবনতা তৈরী হয়েছে। আর সেজন্যই তারা ১মত ঈশ্বরের উপর বিশ্বাসকে পিছনে ফেলে নিজেই নিজের উপর বিশ্বাস তথা আত্মবিশ্বাসকে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু সকল কিছুই স্রষ্টার তৈরী ভাগ্যলিপি অনুযায়ি হওয়ায় বা তাঁর ইচ্ছে অনুযায়িই সব কিছু চলার পরেও অর্থাৎ সকলেই তাঁর অধীন হবার পরেও সেক্যুলার শিক্ষার আধিক্যের কারনে অযথা মানুষগুলো নিজেদেরকে স্বাধীন ভাবে অথচ সবকিছুই তাঁরই অধীন তাই মানুষগুলোও স্বাধীন নয় বরং স্রষ্টার অধীন। মানুষ নিজেদেরকে স্বাধীন ভেবে নিজেদের মনমত জীবন-ব্যাবস্থা অনুযায়ি চলাসহ ইত্যাদি আরও অনেক কারনে আজ প্রায় সকলেই নিজের মন বা নিজের কামনাকেই একমাত্র মাননীয় উপাস্য সত্তা ভাবতে ভাবতে অবশেষে নিজেরাই যে অলীক ইলাহ বা ঈশ্বর বনে যাচ্ছে তা তারা অনেকেই বুঝতে পারছে না আর তাই শুধুমাত্র বর্তমান এই জামানার ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় অধর্ম বা শিরক হল- প্রথমতঃ নিজেকে স্বাধীন ভেবে নিজের মন অনুযায়ি চলা। দ্বিতীয়তঃ নিজ পরিবার পিতামাতা সর্বপরি বাপ-দাদার অন্ধ আনুগত্য করা। তৃতীয়তঃ যারা নিজেদের মন অনুযায়ি চলে সাধারনত তাদের কাছেই মানুষের সীমাবদ্ধ মস্তিস্কপ্রসুত সামাজিক/রাষ্ট্রীয় বিধান বেশি উপযুক্ত মনে হয় আর ভালও লাগে তাই সে অনুযায়ি চলতে গিয়ে গনতন্ত্র/সমাজতন্ত্র ইত্যাদির কোন একটিকে মানা অথবা সাপোর্ট করা । আর এইভাবেই স্রষ্টার তন্ত্রকে পেছনে ফেলা হয়, সুতারাং স্রষ্ট্রার তন্ত্রকে পেছনে ফেললেই শুধুমাত্র সামগ্রিক বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে হলেও ঈশ্বরের আনুগত্য না করে বা ঈশ্বরের পুজা-উপাসনা না করে মানুষের জ্ঞানের আনুগত্য করা হয় বা মানুষের জ্ঞানকে বেশি ভক্তির মাধ্যমে মানুষের জ্ঞানকেই পুজা-উপাসনা করা হয় অর্থাৎ মানুষকেই প্রধান মাননীয় উপাস্য মানা হয় তথা মানুষকেই ঈশ্বর ইলাহ মানা হয় । আর বর্তমান যুগে শুধুই শারীরিক আনুগত্য এর মাধ্যমে স্রষ্টা ভিন্ন অন্য কারও আরাধনা বা মুর্তি পূজা, কবর পুজা, সিজদা এগুলো বর্তমানে ছোট অধর্মে বা ছোট শিরকে(শিরকে আছগার এ) পরিনত হয়েছে কেননা এগুলো এখন ব্যাক্তিগত বা ছোট পর্যায়ে চলে এসেছে আর সামগ্রিক বা রাষ্ট্রীয় পর্যায় হল বড় ধরনের পর্যায়, যেহেতু মানুষ সামাজিক জীব আর সমাজে বাস করা প্রতিটা স্বতন্ত্র ব্যাক্তি অবশ্যই সমাজ বা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রন হতে বাধ্য হয় কিন্তু শুধুই একজন ব্যাক্তি বা কারও ব্যাক্তিগত ব্যাপার সমাজ বা রাষ্ট্র এর মত বড় ক্ষেত্রকে সেভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না আর সেই বড় ধরনের পর্যায়েই কিন্তু ঈশ্বরের বিধান তথা ঈশ্বরকে না মেনে মানব রচিত বিধানকে মানা হয়। অথচ বর্তমানের কলি যুগের পন্ডিত, পোপ, দরবারী আলেম আর মসজিদের খতিব, ইমাম এরা কিন্তু শুধুমাত্র এসব ছোট-খাট অধর্ম, শিরক- পুজা নিয়েই বলবে কিন্তু বড় শিরক নিয়ে বলবে না অর্থাৎ বর্তমান যুগের কংসের চাইতেও খারাপ রাষ্ট্র প্রধান বা ফেরাউনী শিরক বা রাষ্ট্রীয় শিরক নিয়ে বলবে না কারন এরাই যে এ যুগের রাবন/ কংস /ফেরাউনের অনুমদিত পন্ডিত আর হুজুর, যাদেরকে আবার সত্যিকারের ধার্মীক ব্রাহ্মণ আর হক্কানী আলেম ওলামারাই নাম দিয়েছে “দরবারী আলেম/ওলামায়ে ছু বা সরকারে পাঁ চাটা আর্য্য পন্ডিতবর্গ”।
বর্তমান যুগের বেশিরভাগ মানুষ অতিরিক্ত পার্থিব লোভের তারনায় হোক আর অজ্ঞতা বশ্বতই হোক ধর্মের জ্ঞান নিজে নিজে অর্জন না করে ঐসকল পথভ্রষ্ট ধার্মীকদের কাছ থেকেই ধর্মের একটু আধটু জ্ঞান লাভ করে, তাছারা সমাজে যেহেতু ঐসব পথভ্রষ্ট পুরোহিত বা আলেমের সংখ্যাই বেশি তাই সাধারন মানুষগুলোও ওদের থেকেই ধর্মের ভুল জ্ঞান অর্জন করে যার ফলে সাধারন মানুষের ধারনা হয়েছে যে – ধর্মমতে স্বর্গে যাওয়া খুবই সহজ যদি ওদের কথামত চলা যায় কিন্তু ধর্ম বুঝা খুবই কঠিন তাই নিজে নিজে ধর্মশিক্ষা না করে তাদের উপর নির্ভর করতে হবে অথচ মুল ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বর সরাসরি বলেছেন- ধর্ম বুঝা সকলের জন্যই সহজ করে দিয়েছি আর স্বর্গে যাওয়ার পথ কঠিন করে দিয়েছি বিভিন্ন পরীক্ষা আর আত্মত্যাগের মাধ্যমে। মোটকথা বর্তমান ধর্মীয় পন্ডিতরা ঈশ্বরের বাণীর সম্পূর্ন উল্টো ধারনাগুলোই মানুষদের বুঝাতে সমর্থ হয়েছে যার কারনে সর্বসাধারন আজকে মনে করে মানুষ হবে দুই প্রকারের- হয় সে ফেরেশতা বা দেবতার মত নিষ্পাপ হবে(বর্তমান হুজুর সম্প্রদায় আর পুরোহিত সম্প্রদায় এমন ভাবে চলার অভিনয় করে) আর না হয় সে আপাদত শয়তানের মত হবে ( বর্তমান যুগের আম শ্রেনীর লোকেরা নিজেদেরকে এমন মনে করে) আর একদম বুড়ো বা শেষ বয়সে শয়তানী সম্পূর্ন ত্যাগ করে বড় ধরনের মাফ চেয়ে পরবর্তীতে একদমই পাপ না করে পুরোহিত/হুজুরদের কাছাকাছি বা ধার্মীক/মুন্সি টাইপ হয়ে তারপর মরতে হবে যাতে ঈশ্বর কিছুতেই ধরতে না পারে! কিন্তু এসকল আম জনতা যে মূহুর্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিক তখনি কিন্তু তারা ঈশ্বরের কাছে প্রাথমিক ধরা খেয়ে মানুষরুপী শয়তান হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে, এর কারন তারা মনে মনে কি সিদ্ধান্ত নিল তা ঐ মূহর্তেই ঈশ্বর খুব ভালভাবেই জানতে পারে। তাছারা সৃষ্টিকর্তা কেন দুনিয়াতে পাপের রাজ্যে পাঠিয়ে পাপের প্রতি আকর্ষন সৃষ্টি করেও কেন আবার পাপ হতে দূরে থাকতে বলেন ? পরীক্ষা না করে সবাইকেই স্বর্গবাস দিলেই কি ভাল হত না ? ধর্ম কর্ম ভালভাবে না করলে ঈশ্বরের কি আসে যায়? তিনি কি আমাদের ধর্মকর্মের মুখাপেক্ষী ? আর পুরোহিত হুজুরদের ছরানো ভুল তত্ত্ব- ফেরেশতা বা শয়তানরুপে যদি মানুষকে তিনি নাই দেখতে চান তবে আসলেই মানুষদেরকে কি রুপে দেখতে চান তা কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই নিজে নিজে ধর্ম না জানার কারনে কিছুতেই বুঝতেও পারে না এমনকি মানুষ যে দেবতা/ফেরেশতাদের চাইতেও উঁচু মর্যাদার হয় অথবা হয় পশুর চাইতেও নিকৃষ্ট সেটাও অনেকে জানে না। শয়তানের মত হয়ে সারাজীবন ভোগবিলাস করে তারপর সর্বদ্রষ্টা ঈশ্বরকে ধোকা দেবার জন্য একদমই শেষের দিকে ফেরেশতার মত হবার সিদ্ধান্ত নিলেও নরকেই জ্বলতে হবে কারন সে পূর্বেই এমন ধোকাবাজীর পরিকল্পনা করে রেখেছে বলে পরে সে যত চেষ্টাই করুক স্বয়ং ঈশ্বরই ক্রোধবশ্বত তাকে নিষ্পাপ মত হতে দিবেন না। তবে যে সকলেই একটি সত্য তত্ত জানে যে- “শেষ ভাল যার সব ভাল তার” এটা কি মিথ্যা ? না এটি সত্যই তবে এই তত্ত্ব একমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যাদের কেউ যদি না জেনে না বুঝে সারাজীবন শয়তানের মত থাকে অথবা অন্য ধর্মের হয়ে থাকে অথবা সে যে ভুল পথে আছে সেটাকে সে সঠিক পথ জানে কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে অথবা তারও আগে সময় থাকতেই যদি ভুল বুঝতে পারে এবং খুবই দ্রুত শিরক ও শয়তানি ত্যাগ করে সাধ্যমত পূন্যের চেষ্টা করে এবং কিছু পাপ থাকাবস্থাতেও যদি পরলোক গমন করে তবেও কিন্তু ঈশ্বর ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু ইচ্ছে করে পূর্ব হতে এমন বাটপারী টাইপ সিদ্ধান্ত নিলে তাদের ক্ষমা করা হবে না বরং ঈশ্বরের সাথে চালাকী করার কারনে দ্বিগুন সাস্তি হতে পারে । বিশেষ করে বুদ্ধি হবার পরে ইচ্ছে করেই ১ম দিকে শয়তানের মত থেকে ভোগ-বিলাস করতে থাকাবস্থায় হুজুর পুরোহিতদের সন্তুষ্ট রাখতে সহজ কিছু ধর্মকর্ম করে পরে শেষ বয়সে একদমই ভাল হবার এরকম সিদ্ধান্ত পূর্ব হতেই নেওয়া পুরোটাই কিন্তু স্বয়ং ঈশ্বরের সাথেই ছলনা করা। আর এসকল ধোকাবাজী সিদ্ধান্ত নেয়ার মুল কারনই হল- স্রষ্টাকে ইলাহ বা ঈশ্বর হিসেবে বিশ্বাস না করে শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস রেখে সমাজের বেশিরভাগ মানুষকে অনুকরণের প্রতিফল, তাই প্রথমে ইলাহ/ঈশ্বর এর ব্যাখ্যা ধর্মে আসলেই কি দেয়া হয়েছে তা জানতে হবে।
যাইহোক বর্তমান হুজুর আর পুরোহিত সম্প্রদায় ধর্মের সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা করেছে সেটা হল ধর্মের ব্যাখ্যা পরিবর্তন করে ফেলেছে এমনকি ইসলাম ধর্মে মুসলিমদের কালিমার “ইলাহ” এর অর্থই পরিবর্তন করে ফেলেছে আর তাই প্রথমেই আরবী শব্দ ইলাহ এর সঠিক অর্থ জানতে হবে, আর ইলাহ এর ভাবার্থ আরব দেশের ওলামারাই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবে তাই তারাসহ এমনকি অন্নান্য দেশের বেশিরভাগ আলেম-ওলামারাও একই ভাবার্থ করেছে, আর তা হল ইলাহ এর ভাবার্থ “মা’বুদ” যার বাংলা শাব্দিক অর্থ হল – যার দাসত্ব/গোলামী/চাকরী করা হয়। আর তাই যদি হয় তবে “ইলাহ” এর সরাসরি সরল বাংলা অর্থ পূর্নাংগভাবে যা হবে তা হল -" সর্বদাই মাননীয় উপাসনীয় সর্বচ্চ/ প্রধান সত্তা" বা “সর্বচ্চ মাননীয় উপাসনীয় অদ্বিতীয় সত্তা” অথবা এক কথায় প্রকাশ করলে সংস্কৃত অর্থ হবে “ঈশ্বর । কিন্তু এত ছোট ও সহজ অর্থ বাদ দিয়ে কেন “ইলাহ” এর মত মাত্র তিন অক্ষরের শব্দের অর্থ পুরো একটি বাক্যের সমান ধরতে হবে তার প্রধান দুটি কারন আছে। যেমন ১ম কারন- আরবী এমন এক ধরনের ভাষা যার অর্থ অন্য যে ভাষাতেই করা হোক না কেন এর শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থই অনেক বড় হয় কিন্তু আরবীতে আবার সেটি ছোট হয় এবং মাত্র একটি শব্দেই তা প্রকাশ করা সম্ভব হয় কিন্তু অন্য ভাষাতে বেশ কয়েকটি শব্দ লাগে আরবীর কেবল মাত্র ১টি শব্দ প্রকাশ করতেই, আর এই ব্যাপারগুলো যাদের আরবী ভাষা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান আছে এবং এর পাশাপাশি অন্য যেকোন একটি ভাষাও জানা আছে এমন যে কেউই এ কথা স্বিকার করবে আর সব আলেম-ওলামা মুফতিরাও তো এটি স্বিকার করবেই। যাইহোক এখন ২য় কারনটি ধীরে ধীরে খোলাসা করা হবে-
উপরে “ইলাহ” শব্দের ১ম বাংলা শব্দ “সর্বাদাই” আনার কারন বর্তমানে মুসলিম,হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রায় সকল ধর্মের লোকই ঈশ্বরের গোলামী/ইবাদত/উপাসনা শুধু পার্ট টাইমই করে কিন্তু সর্বদাই তাঁর দাসত্ব করে না যেমন- মুসলিমরা শুধু দৈনিক মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়াটাকেই শুধুমাত্র ইবাদত ভাবে কিন্তু সকালের নামাজ শেষ করে দুপুরের নামাজ পড়ার আগ পর্যন্ত সময়ও যে ঈশ্বরের গোলামী তথা আল্লাহর চাকরীতে নিয়োজিত থাকতে হবে তা কিন্তু তারা জানে না বুঝেও না। তাই এই নব্য জাহেলিয়াতের যুগে উক্ত “সর্বদাই” বাংলা শব্দটা যুক্ত করতে বাধ্য হতে হয় নয়ত “ইলাহ” এর পরিপূর্ন অর্থ প্রকাশ হবে না। আবার ২য় শব্দ “মাননীয়” আনার কারন- মা’বুদ অর্থ হল “যার গোলামী বা দাসত্ব করা হয়” আরও সহজভাবে বললে দ্বারায় “যাকে মানা হয়” আর যাকে মানা হয় তাকেই তো মাননীয় বলে। তাছারা “ইলাহ” এর অর্থ অনেকে সরাসরি হুকুমদাতা/আইনদাতাও করে থাকে, সেটিও ঠিক একই অর্থই প্রকাশ করে - যার হুকুম/আইন মানা হয় তাকেই বলে মাননীয়, ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে সকল শ্রেনীর মানুষের বুঝার সুবিধার্তে এই “মাননীয়” ছোট কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক শব্দটি আনতে হয়েছে। এরপরে “উপাসনীয়” শব্দ আনা হয়েছে কেননা অনেকে “ইলাহ” এর অর্থ উপাস্যও করেছে আর উপাস্য অর্থও ঠিক আছে কেননা কেউ যদি সারাদিনই ঈশ্বরের হুকুম মেনে চলল আবার দিন শেষে বা কোন এক সময় আল্লাহ ভিন্ন অন্যকিছুর উপাসনা করল তবেও সে কিন্তু আল্লাহকে একমাত্র “ইলাহ” হিসেবে মানার ক্ষেত্রে অন্য সৃষ্টিকেও শরিক তথা শিরক করল কিন্তু শুধুই “উপাস্য” অর্থ করা মানে “ইলাহ” শব্দকে অপরিপূর্নভাবে প্রকাশ করা হয় আর ইলাহ এর অর্থ যদি পরিপুর্ন না হয়ে আংশিক অর্থ হয় তবে মানুষও আল্লাহকেই ইলাহ মানার ক্ষেত্রেও আংশিকই মানতে বাধ্য হবে যেটা কিনা শিরক এবং চিরজাহান্নামী হবার পথ । কেননা মানুষ বর্তমানে শুধুমাত্র নামাজ, রোজা ইত্যাদি ধর্মীয় কিছু আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই কেবল ঈশ্বরের উপাসনা করছে বুঝে কিন্তু ঈশ্বরের উপাসনা আরও অনেক মাধ্যমেই করতে হয় তাছারা এরকম নামাজ রোজা এমনকি হজ্ব পর্যন্ত মক্কার মুশরেকরা আল্লাহর জন্যই করত তবু তাদেরকে কাফের জাহান্নামী স্বয়ং আল্লাহই কুরানে বলেছেন কারন তারা অন্য মাধ্যমের দ্বারা উপাসনা করে শিরকও করত । আর উপরে তো আলোচনা করাই হয়েছে যে- বর্তমান এই নব্য জাহেলীয়াতের যুগে সবাই ব্যাক্তিগতভাবে নামাজ রোজা পুজা ইত্যাদি স্রষ্টার জন্যই করে পার্ট টাইম হলেও আবার সামগ্রিক/রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্র এর মত বড় বড় ক্ষেত্রগুলোতে স্রষ্টার তন্ত্রকে পেছনে ফেলে সকলেই সৃষ্টিজীব মানুষের সীমাবদ্ধ মস্তিষ্কপ্রসুত সমাজ তন্ত্র/গনতন্ত্র/রাজতন্ত্র ইত্যাদি মেনে চলে তাই ব্যাক্তি জীবনে ঈশ্বরের উপাসনা পার্টটাইম করেও মানব রচিত তন্ত্র অনুযায়ি চলার কারনে শুধুমাত্র সামগ্রিক বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে হলেও ঈশ্বরের আনুগত্য না করে বা শুধুই ঈশ্বরের পুজা-উপাসনা না করে মানুষের জ্ঞানের আনুগত্য করা হয় বা মানুষের জ্ঞানকে বেশি ভক্তির মাধ্যমে মানুষের জ্ঞানকেও পুজা-উপাসনা করা হয় অর্থাৎ মানুষকেও উপাস্য মানা হয় তথা মানুষকেই ঈশ্বর ইলাহ মানা হয় । তারমানে নামাজ, রোজা, পুজা, আরাধনা ইত্যাদি হল শারীরিক উপাসনা আর স্রষ্টার বিধান/নিয়ম/হুকুম অনুযায়ি চলাও উপাসনা তবে এগুলো হল মানবীয় উপাসনা এবং সার্বিক/পরিপূর্ন উপাসনাও বলা যায়। তাই শুধুই নামাজ রোজা পুজা করাই উপাসনা নয় অন্যভাবেও উপাসনা হতে পারে এমনকি কেউ যদি মনে মনে স্রষ্টার নাম নিতে থাকে একেও মানষিক উপাসনা বলা হয়। সুতারাং ইবাদত বা গোলামী/দাসত্ব এর সাথে উপাসনা যোগ করলেই সত্যিকারের “ইলাহ” এর অর্থ প্রকাশ করা সম্ভব। আর তাই উপরে “ইলাহ” এর সরল অর্থে “মাননীয় উপাসনীয়” দুটো অর্থই যুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আবার সর্বচ্চ/ প্রধান সত্তাও যুক্ত করা হয়েছে কারন- স্রষ্টাকে হুকুম, আইন, জীবন ব্যাবস্থা, তন্ত্র-মন্ত্র, নামাজ, রোজা, পুজা/ভক্তি/সম্মান ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই মানতে হবে এবং উপাসনাও করতে হবে ব্যাক্তি পর্যায় হতে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র , বিশ্ব পর্যায় পর্যন্ত এমনভাবে যে- আমাদের কাছে স্রষ্টাই যেন সর্বচ্চ বা প্রধান বনে যায়, এমনকি নিজের মনের রাজ্যেও স্রষ্টার আসন যেন সর্বচ্চ বা প্রধান হয় এমনভাবে যে নিজের মনের স্বাধীনতা বলতে আর কিছুই না থাকে, আর এমনভাবে স্রষ্টাকে মানলে তবেই আল্লাহ সুবঃ কে সর্বচ্চ/প্রধান সত্তা হিসেবে মান হবে। আবার কেউ যদি স্রষ্টা আল্লাহকেও সর্বচ্চ প্রধান সত্তা মনে করে আবার এই বিশ্বাসও রাখে খ্রিষ্টানদের মত যে ঐ সত্তাই প্রধান তিন ভাগে বিভক্ত বা হিন্দুদের মত বিশ্বাস করে যে ঐ সত্তাই বহুভাগে বিভক্ত তবেও সে এক ইলাহ হিসেবে একমাত্র আল্লাহকেই না মানার কারনে সত্যিকারের প্রধান সর্বচ্চ সত্তা বা অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে শুধু তাঁকেই মানে না, তাই উক্ত বাক্যে সবশেষে “অদ্বিতীয়” শব্দটিও যুক্ত করে পরিপূর্ন একটি সরল বাক্যের মাধ্যমে “ ইলাহ” এর সঠিক মর্মার্থ তুলে ধরা হয়েছে। এছারাও অনেকেই অনেক অর্থই করেছেন যেমন- অনেকে ইলাহ মানে প্রভু বলেন কিন্তু প্রভু মানে হল লর্ড বা শাষক/রাজা আরবীতে যার অর্থ হয় মালিক, কিন্তু ইলাহ হবে না তাই ইলাহ এর সঠিক এবং পরিপূর্ন সরল অর্থটি হবে- -" সর্বদাই মাননীয় উপাসনীয় সর্বচ্চ/ প্রধান সত্তা" বা “সর্বচ্চ মাননীয় উপাসনীয় অদ্বিতীয় সত্তা” আর এই অর্থটি বর্তমান যুগানুযায়ি পূর্নাংগ অর্থ হলেও হুবহু কিন্তু শাব্দিক অর্থ নয় । সরাসরি শাব্দিক অর্থ বাংলায় হবে –" ঈশ্বর " আর ইংরেজিতে হবে "গড" যদিও ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের অরজিনাল বাইবেলে কিন্তু ঠিকই "এলোহেম" উল্লেখ আছে যা কিনা ইলাহ এরই হিব্রু উচ্চারন, এমনকি হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থে সংস্কৃত ভাষাতেও "ইলা" শব্দ এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
কিন্তু দেখা যায় বর্তমানে সকলেই মনে করে ঈশ্বর ইলাহ মানে স্রষ্টা/ব্রম্মা, পরিচালক/বিষ্ণু/প্রতিপালক, রাজা ইত্যাদি একটা কিছু তাই উক্ত “ইলাহ” এর সরাসরি সংস্কৃত শাব্দিক ছোট অর্থ “ঈশ্বর”কে শব্দ হিসেবে আপাদত বাদ দিয়ে ঈশ্বর বলতে আসলেই কি বুঝায়? বা কখন কোন সত্তা কে ঈশ্বর বলা যাবে তার ব্যাখ্যা আরো ভালভাবে জানতে হবে ।
যাইহোক ইলাহ শব্দের শাব্দিক শর্ট অর্থ ঈশ্বর/গড যেটাই হোক না কেন বর্তমান যামানার মানুষের কাছে ইলাহ ঈশ্বর বা গডের নাম নেয়ার সাথে সাথেই মানসপটে যা ভাসে তা কিন্তু ভুল আবার শুধুমাত্র যেসব উপাসনা, ইবাদতের মাধ্যমে ঈশ্বর ইলাহকে মানা হয় বা সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা হয় তাও ভুল এবং কিছু কিছু ইবাদত যেমন- নামাজ রোজা ইত্যাদি ঠিক হলেও শুধুমাত্র এগুলোর মাধ্যমেও তাঁকে কিন্তু পরিপূর্নভাবে ঈশ্বর ইলাহ মানা হচ্ছে না । সুতারাং স্রষ্টাকে পরিপূর্নভাবে ঈশ্বর ইলাহ মানতে হলে শুধু তাঁরই উপাসনা করার পাশাপাশি তাঁর আদেশ নিষেধ বিধি-বিধানও সাধ্যমত মেনে চলতে হবে ব্যাক্তিজীবন হতে সামগ্রিক জীবনেও। অর্থাৎ স্রষ্টাকে ঈশ্বর ইলাহ মানতে হবে সকল ক্ষেত্রেই পরিপূর্নভাবে, কখনই আংশিক মানা যাবে না। উপাসনার ক্ষেত্রে শুধু ঈশ্বরকে মানার পরও মানুষ জীবন চলার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধানকে বাদ দিয়ে অন্য সিস্টেমে বা অন্য নিয়মে চললে শুধুমাত্র উপাসনার ক্ষেত্র ছাড়া অন্য ক্ষেত্রগুলো হতে স্রষ্টাকে বাদ দেয়া হয় অথবা স্রষ্টার সাথে অন্য সৃষ্টিকেও সমকক্ষ বা কাছাকাছি মানা হয় কেননা ধর্মীয় নিয়ম বাদ দিয়ে যাদের পদ্ধতিতে চলা হবে তাদেরকেও এখানে বিধান দাতা বা ঈশ্বর ইলাহ মানা হচ্ছে যদিও ব্যাক্তিগত জীবনে তাদের উপাসনা করা হয় না। আর এক ঈশ্বরকে পার্ট টাইম মানা বা শুধু নামাজ রোজা ইত্যাদি উপাসনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে বাদবাকী সময় অন্যকারও গোলামী করে শিরক করার এই পদ্ধতিটি বর্তমানে শুধু মুসলমানরাই বেশি করে থাকে আর অন্নান্য ধর্মের লোকেরা সামগ্রিক ক্ষেত্রে তো পশ্চিমাদের নীতিতে চলেই এমনকি তারা পার্ট টাইমও শুধুমাত্র এক ঈশ্বরের উপাসনা করে না বরং একের অধিক ঈশ্বরের উপাসনা করে। ব্যাক্তিগত উপাসনার ক্ষেত্রে শুধু একমাত্র ঈশ্বরেরই উপাসনা করায় মুসলিমদের এই দিক হতে একটু উন্নত মনে হলেও সামগ্রিক ক্ষেত্রে পশ্চীমাদের জীবন বিধান মানায় এরাও শিরকই করে, তাই পরকালে এদেরও রেহাই নেই এমনকি মৃত্যুর পরের জীবনে অন্য ধর্মের লোকের চেয়ে আরও বেশি সাস্তি হবার সম্ভাবনা রয়েছে কারন মুসলিমদের ঘরে কুরান-হাদিস ছিল এবং তা নিজে নিজে পড়ে হক্ব-বাতিল চেনার স্বাধীনতাও ছিল, হিন্দু ধর্মের মত নিজেদের ধর্মগ্রন্থ নিজেরাই যারা পড়তে পারে না এমন কঠিন গ্যাঁড়াকলে মুসলিমরা ছিল না, সর্বপরি মুসলিমদের কাছে যে ধর্মগ্রন্থ ছিল তা হল সম্পূর্ন অবিকৃত এবং সর্বশেষ নাজিলকৃত পরিপূর্ন দ্বীন, তাই এতকিছু সুযোগ থাকার পরও শিরক করে মারা গেলে অন্য ধর্মের চেয়ে তাদের অবশ্যই বেশি সাস্তি দেওয়া আল্লাহর কখনই অবিচার হবে না। তাই মুসলিমদেরকেই বেশী সাবধান হতে হবে এবং শুধরানোর দিকেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে কেননা মুসলিমরাই অন্য ধর্মের লোক যারা ভুলের মধ্যে আছে তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিবে অথচ সমস্যা বেশি মুসলিমদেরই অতএব মুসলিমদেরই আগে সমাধানে আসতে হবে । তবে অমুসলিম বা অন্য ধর্মের মানুষ অনেকেই শুধুমাত্র মূর্তি পূজা না করেই নিজেদেরকে এক ঈশ্বরবাদী ভাবে অথচ ব্যাক্তিগত জীবনে তাদের ধর্মীয় বিধানের তোয়াক্কা না করে নিজের মন মত চলে, সমাজ ও রাষ্ট্রের অধার্মীক রীতি অনুযায়ি চলে আর পশ্চিমা কালচার খুবই উন্নত মনে করে এবং তাদের মতই হতে চায় আর কখনই নিজেদের ধর্মকে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হোক পশ্চিমাদের গনতান্ত্রিক পদ্ধতি ছারাই এটা চায় না এমনকি নিজেদের ধর্ম অনুযায়ি অপরজনের সাথে যে ভালভাবে, সৎ ভাবে, আদর্শের সাথে চলতে হবে সেটাও করে না তবে এরাও এক ঈশ্বরবাদী নয় বরং এরা নিজের মন মত চলার কারনে নিজের মনেরই পুজো করে আবার সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের নীতিতে চলার কারনে তাদেরও ঈশ্বর হিসেবেই পুজা করে তা তারা নিজেরা জানুক বা না জানুক স্বয়ং ঈশ্বর ঠিকই জানে।
আবার মুসলিমরা এতটুকু জেনেছে যে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁরই ইবাদত করার জন্য অন্য কারও নয় তাই বেশিরভাগ মুসলিমগুলো তাঁর ইবাদত বলতে শুধুই উপাসনা/নামাজ/রোজা/হজ্ব ইত্যাদির মত আংশিক পার্ট টাইম আমলকেই শুধুমাত্র ইবাদত মনে করে আর এসব করলেই আল্লাহর হক্ব পরিপূর্ন আদায় হয়েছে ভেবে থাকে কিন্তু সত্যিকারের বাস্তব জীবনের ইবাদত/গোলামী/দাসত্ব শুরু হয় নামাযে ছালাম ফিরানোর পর হতে পরবর্তী নামাজের পূর্ব পর্যন্ত উদাহরনস্বরুপ- কেউ যদি সকালে ফজরের নামাজ পর হতে দুপুরের যহোর নামাজ পড়ার পূর্ব পর্যন্ত নিজের মনের কামনা-বাসনা অনুযায়ি চলে অর্থাৎ নামজ শেষেই তার চলার নীতি হল নিজের মন যা চায় সেটাই তবেও সে নিজের মনকেই ইলাহ বা প্রধান মাননীয় উপাসনীয় সত্তা মানল। এক্ষেত্রে সে নিজের মনে নিজেই অনেকটা এভাবেই নীতি প্রণয়ন করে যে তার সাথে যারা ভাল থাকবে সেও তাদের সাথে ভালই থাকবে আর যে তার সাথে খারাপ থাকবে সেও তাদের সাথে খারাপই থাকবে, অথচ আল্লাহর দেয়া ধর্মের নীতি ছিল এরকম “যে ভাল করবে তার তো ভাল করতেই হবে এমনকি যে খারাপ থাকবে তার সাথেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালই করতে হবে মন না চাইলেও শুধু তাই না যে সর্বদাই ভাল থাকে ক্ষেত্রবিশেষে তার সাথেও এমন আচরন করতে হবে যা মন সায় দিবে না” নামাজ শেষ করে সমাজে চলার সময় এই ধর্মীয় নীতির উপর বিশ্বাস রেখে চলার চেষ্টা না করে যদি সে নিজের মনকে সন্তুষ্ট করার নীতিতে চলে তবে সে কিন্তু নামাজী হয়েও মুশরেক যদিও সমাজে সে মুসলিম হিসেবেই পরিচিত। কুরানে(২৫-৪৩,৪৪) আল্লাহ সুবঃ বলেছেন যারা তাদের (হাওয়া)মনকে ইলাহ বানিয়ে নেয় তারা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট, আর এভাবে যারা নিজের নফসকে ইলাহ মেনে চলে তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্যই যেন সর্বদা নিজের মনকে সন্তুষ্ট রাখা উদাহরণস্বরুপ- সাধারনত এরাই নিজের মনমত যা ইচ্ছা তাই করতে গিয়ে বিপরীত লিংগের কাউকে মনপছন্দ হলেই এতিম শিশুর ন্যায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ! আবার কাউকে যদি নিজেদের মনপছন্দ না হয় তবে তাকে দেখে বিশ্রী ভঙ্গিতে থু থু পর্যন্ত ফেলতে পারে(বিশেষ করে ইন্ডিয়ার মত মিশ্রজাতির মাঝে এমন স্বভাব বেশি পরিলক্ষিত)। কিন্তু স্রষ্টাকে সর্বক্ষেত্রেই বিধানদাতা প্রধান মাননীয় সত্তা মানলে তারা নিজের মনের ইচ্ছা(হাওয়া)কে ঈশ্বর ইলাহ বা সর্বচ্চ মাননীয় সত্তা মেনে এভাবে সর্বদাই নফসকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করত না বরং তাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যই হত স্রষ্টার সন্তুষ্টি।
আবার কেউ যদি ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময় ব্যাতীত বাদবাকী সময় নিজের পিতামাতা বা এই ধরনের কোন অভিভাবকের মনমত চলে অর্থাৎ তাদের আদেশ নিষেধই তার কাছে সর্বচ্চ নীতি তবে এখানে সে পিতামাতাকেই প্রধান মাননীয় সত্তা বা ঈশ্বর ইলাহ মানছে উদাহরণস্বরুপ- কারও পিতামাতা যদি সন্তানকে বলে ব্যাংকার হতে, কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে, ধর্মহীন কৃষ্টি কালচার মানতে, যুবক বয়সেই ধর্মীয় লেবাস ধারন না করতে আর সেই সন্তান যদি পাই টু পাই তার পিতামাতার আদেশ মত চলে যদিও তারা নামাজ বা প্রচলিত উপাসনায় বাধা দেয় না তবু সেই সন্তান তার মাতাপিতার ঈশ্বরবিরোধী বিধান সততার সাথে মেনে চলার কারনে মাতাপিতাকেই বিধানদাতা বা সর্বচ্চ মাননীয় সত্তা ইলাহ মেনে শিরক করছে। কারন ধর্মমতে যেমন পিতামাতার আনুগত্য করতে বলা হয়েছে ঠিক তেমনি সেই ধর্মেই আবার পিতামাতার অন্ধ আনুগত্য করতে গিয়ে তাদের ধর্মবিরোধী আদেশগুলোকে অমান্য করতেও বলা হয়েছে । তাই নিজের মনের ইচ্ছার যেমনি আনুগত্য, গোলামী, দাসত্ব করা শিরক ঠিক একইভাবে পিতামাতা বা অভিভাবকেরও অন্ধ আনুগত্য, গোলামী, দাসত্ব করাও শিরক যা কিনা ঈশ্বরের কাছে এমনি অমার্জনীয় অপরাধ যে কিছুতে তিনি তা ক্ষমা করবেন না অন্য সকল পাপ ক্ষমা করলেও।
ইসলাম ধর্মে ৫ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিটা মুসলিমের জন্য ফরজ এমনভাবে যে তা না করলে সেই ব্যাক্তি কাফের অর্থাৎ সে আর মুসলিম থাকে না কিন্তু সর্বদা রাস্তার ডান দিক দিয়ে চলা হল এই ধর্মমতে সুন্নত কিন্তু কেউ এটা না মেনে চললেও মুসলিম ঠিকই থাকে । এখন নামাজ শেষে কেউ যদি ডান দিকে চলা সুন্নত জেনেও রাস্তার বাম দিক দিয়ে বাড়ি ফিরতে থাকে শুধুমাত্র এজন্য যে, গ্রামের রাস্তার ডান দিকে ছিল ঐ এলাকার একসময়ের জমিদারের বাড়ি এবং আজও ঐ জমিদারের সন্তানই ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, তাই ঐ সমাজে এটা পূর্ব হতেই প্রতিষ্ঠিত যে জমিদার বাড়িকে সম্মান জানাতে একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয় তাই রাস্তার ডান দিক দিয়ে না গিয়ে বাম দিক দিয়ে যাওয়াই পূর্ব হতে সকলের নিয়ম , এখনও যদি কেউ রাস্তার ডান দিক দিয়ে যায় তাকে বেয়াদব বলা হয় আর বাম দিক দিয়ে গেলে ময়-মুরব্বী মান্যকারী ভদ্র বলা হয়, এখন যদি নামাজ শেষে ঐ নামাজী ডান দিকে চলা সুন্নত জেনেও বাম দিক দিয়ে চলা শুরু করে এজন্য যে আশেপাশে কিছু সিনিয়ার মুরব্বী মানুষ এমন ছিল যে ওরাই বেশিরভাগ সময় ঐ রাস্তায় ডান দিক দিয়ে কেউ হাটলে বকা ঝকা করত নয়ত রক্তচক্ষুর দৃষ্টিপাত করত সুতারাং সে নামাজী হয়েও তাদের ভয়ে বা সামাজিক রীতিকে ভালবেসে আল্লাহর বিধানকে ছোট করে প্রত্যাখান করল এবং সেই একই ক্ষেত্রে সে আবার সমাজের প্রতিষ্ঠিত বিধানকে উঁচু করে তা গ্রহনও করল অর্থাৎ সমাজই হয়ে গেল আইনদাতা আর শুধু একারনেই সমাজকেই সে সর্বচ্চ মাননীয় সত্তা মানল অথবা বলা যায় সে শুধু পথ চলার ক্ষেত্রে হলেও স্রষ্টা বাদে সমাজ ও সমাজের মানুষের আদেশ মানার মাধ্যমে তাদেরই গোলামী বা ইবাদত করল তথা তাদেরও মাবুদ ইলাহ মানল সে যেহেতু নামাজের ক্ষেত্রে ঠিকই আল্লাহকে ইলাহ মানছে আবার হেটে চলার ক্ষেত্রে অন্যদের মাবুদ মানছে তাই সে স্রষ্টার গুনের সাথে অন্য সৃষ্টিরও অংশিদার বানাল বা শরিক করল অর্থাৎ শিরক করল অথচ সে একই কাজ যদি এই বিশ্বাসের সাথে করত যে- ডানদিকে চলা স্রষ্টার বিধান হওয়ায় সেটাই উত্তম তাই মনে মনে ঘৃণার সাথে যদি বাম পথে চলতে বাধ্য হত তবে তার শিরক তো হতই না বরং সে নিচুস্তরের মুমিন হিসেবেই গন্য হত আর উঁচুস্তরের মুমিন হিসেবে গন্য হতে হলে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করতে হত অথবা একে শক্তিদ্বারা প্রতিহত করতে হত। সুতারাং নামাজে শেষ করার পর বাদবাকি সময়গুলোতেও কোন নামাজী ধর্ম বাদ দিয়ে বিশ্বাসের সাথে যার ইবাদত বা গোলামী করছে তাকেও ইলাহ বা কখনও রব মানছে যদিও তাদের কাউকেই কিন্তু সে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও মৃত্যুদাতা আল্লাহ মানছে না, কিন্তু দৈনিক কিছু সময়ের জন্য হলেও ইলাহ এবং রব ঠিকই মানছে কর্মকান্ড এবং চিন্তাধারা আর বিশ্বাসের মাধ্যমে হলেও অথচ এসব ক্ষেত্রেও মাননীয় উপাসনীয় হবার একমাত্র হক্ব আল্লাহরই ছিল।
এতো গেল ব্যাক্তি,পরিবার এবং সমাজে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ মানার উদাহরন কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই রাষ্ট্রীয় শিরকে নিমজ্জিত যেমন- কেউ যদি ধর্মীয় রাষ্ট্র ছাড়া অন্য যেকোন রাষ্ট্র হোক সেটা গণতান্ত্রিক/সমাজতান্ত্রিক বা রাজতান্ত্রিক দেশ আর সেই দেশের সরকার, প্রশাষন, সংবিধান, আইন ইত্যাদিকে বিশ্বাস ও আস্থার সাথে মেনে চলে তবে সে এ যুগের সবচেয়ে বড় শিরক(শিরকে আকবার) করে। সাধারনত এই শিরক হতে যে মুক্ত হয় দেখা যায় স্রষ্টা তাকে ব্যাক্তি,পরিবার,সমাজ ইত্যাদির শিরক হতেও মুক্ত থাকতে সাহায্য করেন এমনকি অন্নান্য ছোটখাট শিরকগুলোও চিনিয়ে দেন অথচ যে ব্যাক্তি এই যুগের শিরকে আকবার হতে মুক্ত হয় না তাঁকে ঈশ্বর এমনি অন্ধ করে রাখেন যে অন্য পর্যায়ের শিরকগুলোও সে চিনতে পারে না, তাই ১মেই উচিৎ এই রাষ্ট্রীয় শিরক হতে মুক্ত হওয়া কেননা এই রাষ্ট্রই অন্নান্য সকল শিরক ও অধর্মকে লালন করে থাকে। উদাহরণস্বরুপ- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগনই সকল ক্ষমতার অধিকারী কথাটি শুনতে ভাল লাগলেও আসলে এটা হল শিরক কারন সকল ক্ষমতার মালিক হল স্বয়ং ঈশ্বর আর তাঁকে বাদ দিয়ে এখানে জনগনকে তাঁর সমকক্ষ করা হচ্ছে। এসব রাষ্ট্রে জনগনই হল বিধানদাতা কিন্তু সকল জনগন তো আর একসাথে বিধান দিতে পারে না তাই ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ট জনগনের পক্ষ হতে জনপ্রতিনিধিকে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা হয় সেই সংসদে জনগনের পক্ষ হতে বিধান রচনা করে তাই এখানে নামমাত্র জনগন বিধানদাতা হলেও প্রকৃতপক্ষে সংসদ সদস্য বা প্রশাষনই হল সত্যিকারের আইনদাতা বা সর্বচ্চ মাননীয় সত্তা তথা ঈশ্বর ইলাহ । এভাবে আবার বিশ্বের প্রতিটা দেশই জাতিসংঘকে সার্বভৌমত্বের মালিক মানে আর পশ্চিমারা( যাদের অধিকাংশই ইহুদি খ্রীষ্টান) জাতিসংঘের মাধ্যমেই পুরো বিশ্ব পরিচালনা করে এমনকি কোন দেশে কি আইন প্রণয়ন করতে হবে সেটা আসলে তারাই নির্ধারন করে দেয় অর্থাৎ বর্তমানে কোন দেশে বাস করে সরকারকে মানলে একাধারে দেশের জনগন, সরকার, জাতিসংঘ, পশ্চীমা ইহুদী খ্রীষ্টানদেরও বিধানদাতা তথা ঈশ্বর ইলাহ মানা হয় এমনকি তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার কারনে তাদেরকেও রব পরিচালক বা বিষ্ণু মানা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে সমস্ত দেশকে ধর্মহীন করে জনগনকে ব্যাক্তিগত কিছু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মানতে স্বাধীনতা দিয়ে সামগ্রিক সকল ক্ষেত্রেই তারা প্রশাষনের মাধ্যমে পরিপূর্ন নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তারা ঈশ্বর আর ধর্মকে পেছনে ফেলে নিজেরাই মনমত আইন তৈরী করে বিধানদাতা ঈশ্বর ইলাহ হয় আবার নিজেদের ইচ্ছেমত মানুষকে পরিচালনা করায় বিষ্ণু রবও বনে যায় কিন্তু তারাই যে বর্তমানে মানুষের ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে তা কিন্তু তারা প্রকাশ্যে সরাসরি বলবে না কিন্তু কর্মকান্ডে ঠিকই তারা গড হয়ে থাকবে। তারা যেহেতু সরাসরি মৌখিকভাবে নিজেদেরকে ঈশ্বর, গড দাবী করে না কিন্তু বাস্তব কর্মকান্ডে ঠিকই ঈশ্বরের ভূ্মিকা পালন করে তাই এটাকে বলা যায় ধোকাবাজী। তারা আসলে সমস্ত ধর্মকে মুছে দিতে বিশ্বব্যাপী নতুন ধর্ম সৃষ্টি করেছে আর এই ধর্মের নাম দিয়েছে মানব ধর্ম। কেউ যদি সরকার নির্বাচন করতে ভোট দেয় তবে সে নিজেকে ঈশ্বরের পর্যায়ে নিয়ে গেল কারন সে ভোটের মাধ্যমে তার সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় যে আমার বিধানদাতাকে আমিই নির্বাচন করব এভাবে ভোটদাতাসহ ভোটে দ্বাড়ানো ব্যাক্তি, সমস্ত প্রশাষন, সকল সরকারী কর্মকর্তা সকলেই ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়। আবার কেউ যদি ভোট দেওয়া এবং সরকারী সকল ক্ষেত্র হতে নিজেকে মুক্ত রেখেও সরকারকেই মানে তবেও সে প্রশাষনকে ঈশ্বর ইলাহ মেনে বড় শিরকই করে। তবে কেউ যদি এসব দেশে বাস করেও সরকারী বেশিরভাগ আইনই মেনে চলে এজন্য যে এসব আইনের সাথে তার ধর্মীয় আইনের মিল রয়েছে অর্থাৎ সে আসলে ধর্মের কারনেই এসব আইন মানে অর্থাৎ সে আসলে তার নিজ ধর্মকেই মানছে, এর পাশাপাশি যদি সে এই ব্যাবস্থার বিলুপ্তি ঘটিয়ে ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে থাকে তবে এসব দেশে বাস করতে গিয়ে মজলুমের মত অনেক অধার্মীক সরকারী আইনই মানতে বাধ্য হতে হয় যেমন- ট্রাফিক আইন বাম দিক দিয়ে গাড়ি চালনা ইত্যাদি অনেক অনইসলামিক আইন মানলেও আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন তবে এজন্য অবশ্যই ধর্মীয় রাষ্ট্র কায়েমে সরাসরি এক্টিভ থাকতে হবে দলীয়ভাবে নয়ত একাই অথবা সর্বনিম্ন হলেও এই রাষ্ট্রীয় সিস্টেমকে মন হতে ঘৃণা করার পাশাপাশি স্রষ্টার কাছে রাষ্ট্র পরিবর্তনের জন্য প্রার্থনা ঠিকই করতে হবে নয়ত শিরকে আকবারের পাশাপাশি সরকারকে সাপোর্ট করায় অসংখ্য পাপ আমলনামায় যুক্ত হবেই। মোটকথা এই রাষ্ট্রীয় শিরকই সবচেয়ে বড় শিরক হবার কারন হল রাষ্ট্রীয় পর্যায় হল সবচেয় বড় সামগ্রিক পর্যায় এমনি যে এটি ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ অন্নান্য সকল পর্যায়কেই ভালভাবে নিয়ন্ত্রন করে। তাই রাষ্ট্রে যদি অধর্ম থাকে তবে সকলেই অধর্মের স্রোতে ভাসতে থাকে তাই রাষ্ট্রতে অবশ্যই ধর্ম থাকতে হবে কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রের অধর্মীয় কার্যকলাপ আর গোপন নেই বেশিরভাগ মানুষই এসব বুঝতে পারে তাই অনেক আধা সচেতন ধর্মীয় ব্যাক্তিরা আবার রাষ্ট্রে ধর্ম কায়েম করতে সেই রাষ্ট্রেরই দেয়া সিস্টেমে ধর্ম কায়েম করতে চায় অর্থাৎ তারা গণতন্ত্রের মাধ্যমেই রাষ্ট্রে ধর্ম কায়েম করতে চায় যেখানে গণতন্ত্র নিজেই একটা আলাদা মানব সৃষ্ট ধর্ম সুতারাং এদের উদ্দেশ্য ভাল হলেও এরাও ঈশ্বরের সাথে শিরক করছে , তবে এদের শিরক হয় দুইভাবে প্রথমত- রাষ্ট্রীয় হুকুম আইন মেনেই এরা নির্বাচন করে তাই এরাও রাষ্ট্রকেও আইনদাতা বিধানদাতাই মানছে বা রাষ্ট্রকেও ইলাহ মানছে । দ্বিতীয়ত- গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগনের ভোটের দ্বারাই কেবল ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে বা জনগন যখন চাইবে বা ধার্মীক জনগনের ইচ্ছা হলেই রাষ্ট্রে ধর্ম কায়েম হবে নচেৎ নয়, এখানেও জনগনের মনের ইচ্ছাকে ঈশ্বর ইলাহ মেনে শিরক হয়ে যাচ্ছে অথচ সকল কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন তাই সবই স্রষ্টার রাজ্য তাঁরই রাজ্যে তাঁর ধর্ম কায়েম করতে গিয়ে তাঁর পাশাপাশি তাঁর সৃষ্টিকেও এখানে অংশিদার বানানো হচ্ছে বা শরিক করা হচ্ছে তথা শিরক হচ্ছে আর এই ধরনের শিরকে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন ইসলামিক দলও । তাছারা গণতান্ত্রিক সিস্টেমে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচন হয় কিন্তু ইসলাম ধর্মে অধিকাংশের মত মানা হারাম বরং কুরানে আরো উল্লেখ আছে যে- সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানেই পথভ্রষ্টতা। শুধু তাই নয় অন্নান্য ধর্মেও এই সত্য এখনও উপস্থিত আছে আর তাই বলা হয়ে থাকে- “অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট” “Too much cooks spoil the broth”. “Too many helpers make a mess of the thing” যাইহোক এতকিছুর পরও বিশেষ করে বিভিন্ন ইসলামিক দল গণতন্ত্রের মত কুফরী তন্ত্রকে হালাল বানাতে বলে থাকে আমরা ইসলামি গণতন্ত্র মানি । আসলে পশ্চিমারাই নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহারের জন্য এদেরকে সৃষ্টি করে প্রায় ১০০ বছর পুর্বে মিশরে যা অনেকেই জানে না । তাই এদের ইতিহাস সহ বিস্তারিত জানতে চাইলে(ইসলামি গনতান্ত্রিক দলের ইতিহাস- Click This Link) এটাও পড়তে হবে।
যাইহোক আগেকার যুগের অত্যাচারী রাজা-বাদশারা নিজের পছন্দের দেব-দেবীদের উপাসনা করতে বাধ্য করত আর নিজের পছন্দ অনুযায়ি আইন দিয়ে রাজ্য পরিচালনা করত কখনও তাদের কেউ কেউ আবার নিজেদেরকেও দেবতা ঈশ্বর দাবী করে তারও উপাসনা করতে নির্দেশ দিত অর্থাৎ তারা উপাস্য এবং বিধানদাতা একইসাথে দুটোই হত যা ছিল অবশ্যই শিরক কিন্তু বর্তমানের প্রশাষন ব্যাবস্থা শুধুমাত্র উপাসনার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিলেও আইন ও সামগ্রিক বিধি-বিধানের স্রষ্টা তারা নিজেরাই হয় বিধাতার স্থলে। আর এই কারনেই কেউ তাদের উপাসনা না করে শুধু মেনে চললেও শিরক করা হয়। ব্যাক্তিগতভাবে কে কার উপাসনা করল তাতে সরকারের কোন যায় আসে না কিন্তু তাদের কথায় প্রজাদের ঠিকই উঠা বসা করতে হবে, অতীতে রাজাদের ঈশ্বর মানলেও ধর্ম দিয়েই রাজ্য চলত হোক সেটা ভুল ধর্ম কিন্তু বর্তমানের মত সকল ধর্মকে ব্যাক্তি পর্যায়ে নির্বাসন দিয়ে মানব রচিত বিধান দিয়ে দেশ পরিচালনার ইতিহাস অতীতেও খুজে পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারগুলি এমনি ক্রিটিক্যাল যে অনেক মানুষের সাথে সাথে প্রশাষনের অনেক মন্ত্রীরা পর্যন্তও জানে না যে তারাও এখানে ফেরাউনের মত মিথ্যে ঈশ্বর হয়ে আছে। প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাব্যাবস্থা আর মিডিয়ার ব্রেইন ওয়াশের ফলে এরা সবাই জানে ধর্মের ব্যাপার শুধু ধর্মালয়ের মাঝে কিছু উপাসনা ও রসম রেওয়াজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সমাজ রাষ্ট্রে ধর্মের কোন ভূ্মিকা নেই কিন্তু সমাজ রাষ্ট্র হল সামগ্রিক ব্যাপার আর বড় ধরনের পর্যায় তাই এখানে ধর্মকে তথা ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে মানুষের তন্ত্রকে শরিক করা মানে বড় ধরনের শিরক করা যাকে বলে যুগের সবচেয়ে বড় শিরক । আর শুধু বর্তমান কালেই নয় প্রতিটা যুগেই শয়তান ও তার চেলারা যুগের শিরককে এমনি ক্রিটিক্যাল করে রাখে যে একে যে শুধু বুঝাই দুঃস্কর হয়ে যায় তা নয় বরং সেটাকে ভাল ও উত্তম কাজ মনে করে বেশিরভাগ মানুষই সেটা মানতে থাকে, ঠিক তখনই ঈশ্বর কোন নবী-রসুলকে অবতার করে পাঠিয়ে সেই সূক্ষ্ম করে তোলা বড় ধরনের শিরকের ব্যাপারে মানুষকে সাবধান করেন এবং নির্মূলও করেন, কিয়ামতের আগে আর কোন নবী আসবে না তবে ইমাম মাহদী এই যুগে আসার ভবিষ্যৎবাণী আছে আর সনাতন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে আবার ইমাম মাহদীর সাথে ঈসা আঃ কেও কল্কি অবতার হিসেবে বর্ননা করা হয়েছে যদিও ১ম এবং আসল কল্কি অবতার হযরত মুহাম্মদ সঃ কেই উল্লেখ আছে।
যাইহোক আলেম ওলামারাও কিন্তু শিরককে দুই ভাগে ভাগ করেছেন যেমন- বড় শিরক এবং ছোট শিরক। বড় শিরক বলতে যুগের শিরক বুঝায় অর্থাৎ প্রতিটা যুগেই কোন একটি বড় শিরককে কেন্দ্র করে মানুষ আল্লাহ সুবঃ এর সবচেয়ে বড় হক্ব নষ্ট করে মুশরেক হয়ে থাকে আর ঐ শিরককে প্রত্যাখ্যান করলেই সে প্রথমে মুমিন হয় অতঃপর সে অজানা অন্নান্য ছোট ছোট শিরকও বাদ দিতে পারে কিন্তু প্রতিটা যুগেই শায়তান বড় শিরককে মানুষের সামনে এমনি ভাল রুপ দিয়ে তুলে ধরে যে কেউ উক্ত শিরকের বিরুদ্ধে বললে বেশিরভাগ মানুষই উল্টো তাকেই আরও পথভ্রষ্ট ভাবে যা কুরানের আয়াত দ্বারাই প্রমানিত। তাই বর্তমানে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় আইন মানাকে শিরক বলে তবে তাকেও একই সমস্যায় পরতে হয়। গণতন্ত্র মানা শিরকি ও কুফরি কেননা এটির উদ্ভবই হয়েছে মানুষের মনের ইচ্ছাকেই সবার উপরে স্থান দিতে, কুরানে স্পষ্টই বলা আছে যে মানুষ নিজের মনের ইচ্ছা(হাওয়া)কে ইলাহ বানায় মনের আনুগত্য করতে গিয়ে। অর্থাৎ মানুষের মনের ইচ্ছা খেয়াল খুশিকে ঈশ্বর ইলাহ বানানোর সমন্বিত রুপই হল এই গণতন্ত্র। গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র এগুলো আসলে মানব সৃষ্ট নতুন দ্বীন বা ধর্ম আর এগুলোর দ্বারা রাষ্ট্র চালনার মাধ্যমে ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। আর এসবই হল বর্তমানে সবচেয়ে বড় শিরক বা যুগের শিরক যার কারনে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অথবা আল্লাহর সাথে মানুষকেও ইলাহ মানা হয় ফলে কালিমার প্রধান অংশ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তে ইমান থাকে না কেননা কালিমায় ইমান আনা মানে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই ইলাহ মানা যাবে না তথা শিরক করা যাবে না কিন্তু সমাজ রাষ্ট্রকে মানতে গিয়ে মুল কালিমাতেই যে ইমান থাকছে না তা অনেকে জানেও না বুঝেও না। কালিমা যেহেতু বাদ পরে যাচ্ছে সেটা জেনে হোক আর না জেনেই হোক সে তখন আর মুসলিম থাকে না সে তখন মুশরিক আর এই সত্য তাকে জানানোর পরও সে যদি অবিশ্বাস করে বা প্রত্যাখ্যান করে তখন সে হয়ে যায় কাফের। তাই কালিমা না মেনে নামাজ রোজা করেও কোন লাভ নেই। আর মুসলিমদের মাঝে সকল আলেম ওলামাই এ বিষয়ে ভালভাবে জানেন এবং একমতও যে, কালিমা যে মানে তার জন্যই নামাজ রোজা কিন্তু যে কালিমাই মানে না বা বুঝে না তার নামাজ রোজা হজ্ব দান-খয়রাত কোনকিছুই কবুল হবে না অর্থাৎ কালিমাই ১মে তারপরে অন্যগুলো । আর যারা বলবে আমরা তো বাপ দাদার আমল হতে এই কালিমাই মানি এবং জন্মগত মুসলমান; তারা কিন্তু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালেমা মানে না বরং তারা "নাই কোন স্রষ্টা(খালিক্ব) আল্লাহ ছাড়া" এই কালেমা মানে, যে কালেমা কিনা নবী সাঃ যুগে মক্কার কাফেররাও মানত বলে কুরানে বলা হয়েছে। আল্লাহ সকল কিছুই ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু ইলাহ হিসেবে অন্য কাউকে মেনে নিয়ে শিরক অবস্থায় মৃত্যুবরন করলে সে চিরকাল দোযখে থাকবে আর সত্য জানার পরও একটু বুঝে শুনে কয়েকদিন পরে আল্লাহকে সকল ক্ষেত্রে সর্বসময়ের জন্য ইলাহ মানার সিদ্ধান্ত নিলেও কিন্তু তার পূর্বের এবং বর্তমানের কোন ইবাদতই কবুল হবে না তাই খুবই দ্রুত কালিমার উপর ইমান আনতে হবে কেননা হটাৎ মৃত্যু এসে গেলে ফেরাউনের মতই সময় পাবে না।
সুতারাং পুরো কালিমা না মানলে সে মুসলিম নয় উদাহরনস্বরুপ- সর্বক্ষেত্রেই আল্লাহকে না মেনে শুধু উপাসনায় আংশিক মেনে এবং অন্যসময় নিজের মনমত চলে বা রাষ্ট্র-সমাজের নীতিতে চলে হুকুমদাতা/বিদানদাতা হিসেবে আল্লাহ ভিন্ন অন্য সত্তাকেও আংশিকভাবে মান্য করাকেই আরবিতে বলা হয় আল্লাহর সাথে অন্য কিছুর শরিক করা বা শিরক করা আর যারা শিরক করে তাদের বলা হয় মুশরিক অর্থাৎ এরা চিরজাহান্নামী। আর মুশরিক শুধুই মুর্তি-ক্ববর পুজারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং দাড়ি টুপি পরিহিত পাক্কা নামাজী হাজ্বীরাও মুশরিক হতে পারে নিজ-নীতি/সমাজ-রাষ্ট্র নীতিকে মান্য করে বা এগুলোও খুবই ভাল নীতি মনে করার মাধ্যমেও। এরকম নামাজী হলে সেও চিরজাহান্নামী মুশরিক। ঠিক একইভাবে অন্য ধর্মের কেউ যদি কোনরকম মূর্তিপুজা না করে এক ঈশ্বরবাদী হয় এরপরেও সে যদি বাস্তব জীবনে নিজের খেয়াল খুশিকেই চুরান্ত নীতি বানায় অথবা সমাজ-রাষ্ট্র ও বর্তমান প্রশাষনকে মানে বা সাপোর্ট করে তবে সেও এক ঈশ্বরবাদী থাকছে না বরং সেও মুশরিক বলেই গন্য হবে যা নিচের আরও আলোচনা শেষে বুঝা যাবে।
এত বিস্তারিত আলোচনা করার পরও অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারে যে তাহলে অধিকাংশ ধার্মীক ব্যাক্তিবর্গরা বা অধিকাংশ নামী-দামী স্কলার আর পন্ডিতবর্গরা এসব বলছে না কেন ? মোটকথা মানুষের মনে শয়তানী অসওসার কারনে মনে হবে যে বাপ-দাদার আমল হতে বেশিরভাগ মানুষ এতদিন যা বলে আসছে বা করে আসছে সেটিই ঠিক অর্থাৎ গণতন্ত্রের দ্বারা শাসিত হয়ে দীর্ঘকালের ব্রেইন ওয়াশের ফলে মানুষের কাছে এখন সত্য মিথ্যার মাপকাঠিই যেন হয়ে গেছে সংখ্যাগড়িষ্ঠতার রায় বা অধিকাংশের মত! তাই কেউ কোন সত্য নিয়ে আসলেও আমরা প্রথমেই দেখি সে যা বলছে তা বেশিরভাগ মানুষের মতের সাথে মিলে কিনা ? কিন্তু অন্নান্য ধর্মগ্রন্থসহ আল কুরানে রয়েছে সম্পুর্ন ভিন্ন বক্তব্য যা প্রচারের অভাবে সাধারন মানুষগুলো জানেই না বরং সর্বসাধারন “দশজন যেখানে আল্লাহও সেখানে” ইত্যাদি কুসংস্কারপূর্ন কথায় বিশ্বাস করে আসছে যার সাথে ধর্মের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, এখন ধর্মগ্রন্থের দলীল দেবার পূর্বে সর্বসাধারনের বুঝার সুবিধার্থে কিছু উদাহরণ উল্লেখ করা হচ্ছে প্রথমে।
স্রষ্টার এই সৃষ্টির মাঝেই চিরন্তন একটি বৈশিষ্ট হল- সৃষ্টিজগতের মাঝে বস্তু বা প্রানী যেটাই হোক না কেন তার সংখ্যা যদি বেশি হয় তবে তারা হয় তুলনামূলক দূর্বল, খারাপ, ক্ষতিকর, সস্তা ও সুলভ, দরিদ্র, হীন নিচু পর্যায়ের, কুৎসিত, বোকা, অজ্ঞ, পথভ্রষ্ট, অধার্মীক, ঈশ্বরবিরোধী ইত্যাদি ধরনের। স্রষ্টা যেহেতু সবকিছুরই বিকল্প সৃষ্টি করেছেন তাই সৃষ্টিজগতের মাঝের সংখ্যায় যা কম তাদের বৈশিষ্ট করেছেন তুলনামূলক শক্তিশালী, ভাল, উপকারী, দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ, ধনী, উঁচু পর্যায়ের, সুন্দর, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, সুপথপ্রাপ্ত, ধার্মীক, ঈশ্বরপ্রেমীক ইত্যাদি ধরনের। উদাহরণস্বরুপ- প্রকৃতিতে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস আছে এদের শক্তি খুবই কম এরা এতই দূর্বল যে মানুষ সামান্য হাঁচি দিলেই হাজার হাজার ভাইরাস সংগে সংগে মৃতুবরন করে আবার ভাল ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের চেয়ে খারাপ ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের সংখ্যাই বেশি কিন্তু ভাল জীবানুগুলো শক্তিশালী হওয়ায় এসব খারাপ জীবানু হতে প্রানীদের সুরক্ষা করে আবার দূর্বল পিপীলিকা বা মশার চেয়ে হাতীর মত বড় প্রানী সংখ্যায় কম কিন্তু শক্তিশালী, যে জিনিস সংখ্যায় বেশি তার মূল্যও কম চাহিদাও কম, একটি দেশে পুলিশ সেনাবাহিনীর চেয়ে সাধারন জনগনের সংখ্যা অনেক বেশি কিন্তু জনগন তাদের তুলনায় অনেক দূর্বল আবার সৈন্য ও কর্মচারীর তূলনায় মন্ত্রী-সরকার বা রাজারা হয় সংখ্যালঘু কিন্তু তারাই হয় বেশি পাওয়ারফুল তাছারা সমাজে মুরব্বী, বিচারক, নেতা, ইমাম এদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় কম হয় কিন্তু এরাই হয় উঁচু পর্যায়ের এবং সম্মানী ব্যাক্তি ঠিক একইভাবে সুন্দর, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও শিক্ষিতের সংখ্যাও সর্বদাই কম থাকে তাই তাদের কদরও বেশি। ইবাদতের জন্য আল্লাহ মানুষ ও জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন বিশ্বে জ্বিনের সংখ্যাই বেশি কিন্তু তারপরেও মানুষই সৃষ্টির সেরা জীব, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে দেখা যাবে ছাত্রের সংখ্যাই বেশি কিন্তু শিক্ষকের সংখ্যা কম তবু তারা ছাত্রদের তুলনায় অনেক শিক্ষিত ও জ্ঞানী। উপন্যাস-নাটক সিনেমায় অন্নান্য চরিত্র ও ভীলেন এর চাইতে নায়কের সংখ্যাই কম থাকে তবু তারাই বেশি সম্মানিত, শক্তিশালী এবং ভাল চরিত্রের, ঠিক একইভাবে একটি সমাজের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে সেখানেও বোকা, অজ্ঞ –মূর্খ্য, পথভ্রষ্ট মানুষের সংখ্যাই বেশি থাকে পক্ষান্তরে বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, শিক্ষিত ও হেদায়েতপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা কম থাকে এমনকি এই পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে অন্নান্য নিচুজাতের প্রানীদের সংখ্যাই বেশি কিন্তু মানুষই উন্নত জীব এমনকি এই সংখ্যালঘু মানুষই তাদের পরিচালনা করতে পারে ঠিক একইভাবে আমাদের সমাজেও সর্বদাই বেশি সংখ্যক বোকা, অজ্ঞ আর নিচূ শ্রেনীদের নিয়ন্ত্রন করে এসব কম সংখ্যক বুদ্ধিমান, জ্ঞানী শিক্ষিত তারাই যারা উন্নত। সবচেয়ে আসল কথা হল শেষ বিচারের দিন বেশিরভাগ মানুষই যাবে নরকে পক্ষান্তরে এত কম সংখ্যাক মানুষ স্বর্গে যাবে যে অনেকে তা জানেই না এই ব্যাপারে মুসলিমদের কাছে সঠিক তথ্য রয়েছে যেমন- সহী বুখারীর হাদিসে উল্লেখ আছে হাজারে একজন যাবে জান্নাতে আর ৯৯৯ জনই যাবে দোযখে তাই দুনিয়াতেও দেখা যায় ধার্মীক, খাঁটি মুমিনের সংখ্যার চাইতে অধার্মিক আর বেঈমানের সংখ্যাই বেশি থাকে সুতারাং বেশিরভাগ মানুষ সর্বদাই ভুল পথে থাকে আর সত্য সঠিক পথে থাকে খুবই নগন্য মানুষ কিন্তু দীর্ঘদিনের শয়তানী প্ররোচনায় মানুষ উল্টোটাই জেনে আসছে তাই বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মুসলিমদের মনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পরেছে বেশি যারফলে তারাই “দশজন যেখানে আল্লাহও সেখানে” এমন সব থিউরী আবিস্কার করেছে। শুধু তাই না ঈশ্বরপ্রেমীক আল্লাহভক্ত এদের সংখ্যা আরও কম যে কারনে নবী রসুলসহ খাঁটি মুসলিমদের সংখ্যা আরও কম এমনকি স্বয়ং নবী সাঃ এর যুগেও যখন কিনা ইসলাম ধর্ম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল তখনও মোট মুসলিমদের সংখ্যা কমই ছিল আর মুনাফিক বা নামধারী মুসলিমদের ধরলে তো সংখ্যা আরও কমবে। মুসলিমদের মাঝে যারা সংখ্যাগড়িষ্ঠতায় বিশ্বাস করে তারা কি জানে না বিশ্বে মুসলিমদের চেয়ে বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদের সংখ্যা বেশি তাই বলে কি তারা হক্বের উপরে আছে ? এতকিছুর পরও মানুষ অধিকাংশ বা বেশিরভাগ মানুষের মতকে অগ্রাধিকার দেয়ার পেছনে যে লজিক কাজ করে সেটা হল- বেশি মানেই ভাল বা উন্নত আর কম মানেই খারাপ বা নিম্ন। এই লজিকটা যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল তা অনেক মানুষই ভালভাবে চিন্তাভাবনা না করায় বুঝতে পারে না। যাইহোক আর কথা না বাড়িয়ে এবার দেখতে হবে পৃথিবীর বুকে একমাত্র অবিকৃত ধর্মগ্রন্থ আল কুরান অধিকাংশের ব্যাপারে কি বলছে। কুরানে মহান আল্লাহ সুবহানা তায়ালা বলেন-“তুমি যতই আগ্রহ ভরে চাও না কেন মানুষের অধিকাংশই ঈমান আনবে না”- সুরা ইউসুফ-১০৩ আবার ১০৬ নং বলা হচ্ছে- অধিকাংশই আল্লহকে বিশ্বাস করে কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে। ৩৬ নং এ বলা হচ্ছে- “তাদের অধিকাংশ কেবল ধারনার অনুসরন করে কিন্তু সত্য মুকাবেলায় ধারনা কোন কাজে আসে না”। এছারাও সুরা মায়িদার ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- “অধিকাংশই নির্বোধ”। সুরা আনআম ৩৭ এবং সুরা ইউসুফ ৬৮ বলা হচ্ছে-“ অধিকাংশই মানুষই(সত্য) অবগত নয়”। আবার সুরা আনআমেরই ১১১ নং এ বলা হয়েছে-“ অধিকাংশই অজ্ঞ”। সুরা আরাফের ১১৩ নং এ আল্লাহ বলছেন- “ অধিকাংশই জানে না”। ঠিকই একই ভাবে অধিকাংশ বা বেশিরভাগ মানুষ যে সর্বদাই ভুল পথে থাকে আর খারাপ গুন বিশিষ্ট হয় তা নিচের আরও আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেমন- সুরা বাকারা ৯৯,১০০ । ফুসিলাত ১-৪ । সফফাত ৬৯-৭১। শুআরা ২২১-২২৩। আনআম ১১৬। যুররুফ ৭৮ এবং সুরা আরাফ ১০২ নং আয়াত ।
কেউ যদি আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মানার পরও অন্নান্য ক্ষেত্রে শিরক করে সেটা ছোট শিরক হলেও সে চিরজাহান্নামী হবে। আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য শিরক আছে যেগুলোকে মানুষ শিরক হিসেবে জানেই না বরং সেগুলোকেও ধর্মেরই অংশ মনে করে যেমন- মূর্তি পুজা, কবর পূজা, মাজার ও পীর পুজা ছারা আরও অনেক শিরক আছে বিশেষ করে কেউ যদি আলেম-ওলামা বা হুজুর পুরোহিত সম্প্রদায়ের কথার অন্ধ অনুগত্য করে তবে কুরানের ভাষ্য অনুযায়ি সেটাও শিরক এমনকি তাবিজ ব্যাবহার, পিতা-মাতা বা নিজের নামে কসম করা , নিজের সন্তানাদিসহ কারও মাথায় হাত রেখে কসম করা, কুরান বা মসজিদ ছুঁয়ে কসম করাও শিরক। তবে যত শিরকই থাক শিরকে আকবারের মধ্যে যুগের শিরক তথা সামাজিক-রাষ্ট্রীয় শিরক হতে কেউ যদি বেঁচে থাকতে পারে তবে সে অন্নান্য শিরকও খুব দ্রুত চিনতে পারবে ইনশাহ আল্লাহ কেননা এই রাষ্ট্রীয় শিরকই অন্নান্য সকল শিরককে লালন করে থাকে। আর এই শিরককে প্রত্যাক্ষান করলেই সে আল্লাহকেই হুকুমদাতা, আইনদাতা, সর্বচ্চ মাননীয় উপাসনীয় সত্তা হিসেবে মেনে নেয় বা আল্লাহকেই একমাত্র ঈশ্বর ইলাহ হিসেবে মেনে নেয়। প্রথমেই শিরক হতে বাঁচতে বলা হয়েছে এজন্য যে এই শিরকই হল সকল পাপের মূল উৎস বা কেন্দ্র, তাই ১মে এটা হতে বাঁচতে পারলে অন্নান্য পাপ হতেও বাঁচা যায়। মূর্তি পুজা বাদ দিয়ে কিভাবে সমাজ-রাষ্ট্রকে মানা বড় শিরক হল এটা বুঝতে ছোট একটি উদাহরন হল- কেউ যদি দুজন গোলাম বা চাকর রাখে আর দুজনের মধ্যে ১ম দাস তার মনিবকে শুধুই সম্মান করতে থাকে আর তাঁকে দেখামাত্র মাথানত করে, মুখে শুধু মনিবেরই নাম নিতে থাকে কিন্তু মনিবের আদেশ মেনে চলে না অর্থাৎ কোন কাজ করে না কিন্তু ২য় গোলাম আবার ভিন্ন ধরনের, সে মনিবের সকল হুকুমই ভালভাবে মেনে চলে প্রতিদিনই মনিবের আদেশ অনুযায়ি সকল কাজই করে। এখন মনিব কোন গোলামকে ভালবাসবে আর কোন দাসের উপর ক্রোধান্বিত হয়ে ছাঁটাই করে দিবে এটা বুঝলেই বর্তমান যামানায় আল্লাহর দাস মানুষ যে শুধু নামাজ রোজার ইত্যাদির মত কিছু উপাসনা করে মাত্র কিন্তু উদাহরনের ১ম দাসের মত সমাজ ও রাষ্ট্রের মত সামগ্রিক বড় ক্ষেত্রগুলোতেই তাঁর আদেশ নিষেধ মানে না তথা হুকুমদাতা হিসেবে মানে না বিধায় এদের উপরও মানুষের প্রভুর ক্রোধ সবচেয়ে বেশি।
এখন দেখতে হবে দুনিয়ার বুকে স্রষ্টার হুকুম না মেনে চললে কেন তিনি এত বেশি নারাজ হন ? এর প্রধান কারন হল- সকল কিছুই তাঁরই সৃষ্টি এবং তাঁর সৃষ্টিকে তিনি ভালবাসেন, তিনি যেহেতু সৃষ্টি করেছেন তাই তিনিই সবচেয়ে ভাল জানেন সৃষ্টিগুলোর কিভাবে চললে ভাল হবে আর তিনি সেভাবেই তাঁর সৃষ্টিকে হুকুম দিয়ে থাকেন শুধু মানুষ ও জ্বিন ব্যাতীত সকলে তা মেনে চলে কিন্তু মানুষ জ্বিনরা যদি স্রষ্টার হুকুমগুলো না মানে তবে নিজেরা সহ সকল সৃষ্টির মাঝেই শুরু হয় চরম বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, হানাহানি, ফিতনা-ফাসাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, অন্যের হক্ব নষ্ট করা, অবিচার করা, ক্ষতি করা, চুরি-ডাকাতি, সুদ-ব্যাভিচার ইত্যাদি অসংখ্য জুলুম। আর এসব জুলুমের স্বিকার হয়ে চরম দুঃখ আর অশান্তিতে থাকে তাঁরই বিভিন্ন সৃষ্টি বিশেষ করে মানুষ ও জ্বিন আর এদের দুঃখ- ব্যাথা অশান্তিতে ঈশ্বরও দুঃখী হন এবং ভীষন ক্রোধান্বিত হয়ে থাকেন যে এর সাস্তিস্বরুপ তিনি পরকালে নরকের ব্যাবস্থা করেন। তাই যুগ যুগ ধরে ঈশ্বর প্রথমেই মানুষদেরকে তাঁকে হুকুমদাতা,আইনদাতা একমাত্র মাননীয় উপাসনীয় সত্তা তথা ইলাহ হিসেবে মানতে বলেন আর তাঁকে ইলাহ মানলেই তাঁর হুকুম বা আদেশ নিষেধ মানতে হয় ফলে নিজের সহ অন্নান্য সৃষ্টির মাঝে ইহসান ও শান্তির প্রতিষ্ঠিত হয় যার দরুন স্রষ্টা সন্তুষ্ট হন এবং তাদের জন্য পরকালে চিরস্থায়ী শান্তির ব্যাবস্থা করেন।
এখন কেউ যদি যুগের শিরককে প্রত্যাখ্যান করে একমাত্র আল্লাহকেই হুকুমদাতা আইনদাতা ইলাহ মেনে নেয় তবে সে কালিমার প্রধান অংশই মেনে নিল এরপরে সে যদি নবী সাঃ কে রাসুল হিসেবেও মেনে নেয় তবে সে কালিমার পুরোটাই মেনে নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করল অর্থাৎ সে মুসলিম হল। মুসলিম অর্থ আত্মসমর্পনকারী আর ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পন কিন্তু অনেকেই ভুলবশ্বত ইসলাম ধর্ম মানে শান্তির ধর্ম মনে করে কিন্তু ইসলাম (إسلام) শব্দটি এসেছে আরবী শব্দ সিলমুন (سِلْمٌ) হতে, যার অর্থ আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা যদিও ইসলাম (إسلام) শব্দের আরেকটি উৎস সালাম (سلام), যার অর্থ শান্তি, কল্যাণ, পরিপূর্ণতা ইত্যাদি তাই বলে ইসলাম মানে শান্তি নয় বরং আত্মসমর্পন তবে কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহন বা আল্লাহর কাছে পরিপূর্ন আত্মসমর্পন করলে পরকালে চিরস্থায়ীভাবে শান্তিতে থাকবে এমনকি দুনিয়াতেও মনে মনে শান্তি পাবে এবং সমাজে শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে যা কিনা অধিকাংশ মানুষেরই অশান্তির কারন তাই বেশিরভাগ মানুষের কাছে সর্বদাই ইসলাম ধর্ম হল অশান্তির ধর্ম কিন্তু ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্মও নয় আবার অশান্তির ধর্মও নয় বরং তা আত্মসমর্পনের ধর্ম । যখনই কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম হয় তখনই সে নিজেকে সম্পুর্নরুপে একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করে বলে তার নিজস্ব স্বাধীনতা বলতে আর কিছুই থাকে না তাই আল্লাহর ইচ্ছাই তারও ইচ্ছা করে নিতে হয় মন না চাইলেও অর্থাৎ আল্লাহ্ সুবঃ এর আদেশ-নিষেধ হুকুম পালনে নিজেকে সমর্পন করতে হয় তথা একমাত্র তাঁকেই হুকুমদাতা মেনে নিতে হয়। তাই একজন মুসলিম(আত্মসমর্পনকারী) এর নিজের নফসকে সম্পূর্নই ভেংগে ফেলতে হয় তথা নিজের আমিত্বকে পরিপূর্ন বিসর্জন দিতে হয় ফলে সে একদিক দিয়ে সকল সৃষ্টির পরাধীনতার শৃঙ্খল হতে মুক্ত হয় অপরদিকে নিজের স্বাধীনতাকেও বিসর্জন দিয়ে স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে একমাত্র ঈশ্বরের অধীন হয়। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখলে মনে হতে পারে নিজের জীবনের সকল স্বাদ-আহ্লাদই বোধ হয় শেষ হয়ে যায় কিন্তু বাস্তবে আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দিয়ে মুসলিম হবার পরই প্রকৃত শান্তি পাওয়া যায় কেননা তিনিই সকল কিছুর স্রষ্টা আর তিনিই সবচেয়ে ভাল জানেন কিসে মানুষের শান্তি আর কিসে অশান্তি । তবে বর্তমান জামানায় ধর্ম সম্পর্কে বেশি অজ্ঞ থাকায় এসব ভুল-বুঝাবুঝির সমস্যার আরও বেশি সৃষ্টি হয়েছে যে ধর্ম মানেই নিরানন্দ।
সবশেষে একটি বিষয় জানা প্রয়োজন আর তা হল এসব বিস্তারিত আলোচনার পর অনেকেই ভুলবশত মনে করতে পারে যে কালিমায় ঈমান আনা মানে আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মানতে গিয়ে বুঝি আল্লাহর সকল আদেশ নিষেধই পুংক্ষানুপুংক্ষ মানতে হবে নয়তো কোন একটি আদেশ অমান্য করলে অথবা কোন পাপ করলেই আল্লাহকে হুকুমদাতা তথা ঈশ্বর ইলাহ আর মানা হয় না অর্থাৎ ঈমান থাকে না। কিন্তু আসলে ব্যাপারটি এমন জটিল নয় কারন আরবী ঈমান শব্দের অর্থ হল বিশ্বাস, তাই কেউ যদি একমাত্র আল্লাহকেই মাননীয় উপাসনীয় সত্তা বা হুকুমদাতা আইনদাতা হিসেবে বিশ্বাস করল তবে সে লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ কালিমায় বিশ্বাস স্থাপন করল অর্থাৎ ঈমান আনল। আবার এই ঈমান আনার ব্যাপারটি এমন সরলও নয় যে, কেউ আল্লাহকে হুকুমদাতা ঈশ্বর ইলাহ হিসেবে খাঁছ দিলে শুধুমাত্র বিশ্বাস করেই ক্ষান্ত হল কিন্তু তাঁর কোন হুকুমই সে মানল না। আসলে আরবী শব্দ ঈমান এর বিশেষ তাৎপর্য হল অন্তরে বিশ্বাসের সাথে সাথে বাহ্যিকভাবেও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটানো। আর এই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে বাস্তব জীবনে মানার মাধ্যমে অর্থাৎ বিশ্বাসের সাথে মানা জড়িত তবে প্রথমেই বিশ্বাস করতে হবে তারপরই মানা শুরু। মানুষের মন স্বয়ং স্রষ্টাই এমন বানিয়েছেন যে, সে যেটা বিশ্বাস করবে একটু দেরিতে হলেও বাস্তবে সেটাই সে মানবে তাই প্রথমেই বিশ্বাস তথা ঈমানের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কথা হল- ঈমান আনা বা বিশ্বাস করার পর সবই যে মানতে হবে তা নয় বরং ১মেই বিশ্বাস করতে হবে যে তিনিই ইলাহ, মাবুদ, হুকুমদাতা, মাননীয় উপাসনীয় সত্তা তাই তিনি যা হুকুম দেন রসুলের মাধ্যমে তাই আমাদের মানতে হবে আর তিনি যেভাবে চান সেভাবেই তাঁর উপাসনা করতে হবে। এখন কেউ উক্ত বিশ্বাস মনে গেঁথে নিলে সে হয় মুমিন বা বিশ্বাসি আর যদি উক্ত বিশ্বাসের সাথে সাথে সে প্রত্যহ ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পড়লে তাকে মুসলিম বলা হয় অর্থাৎ সে যে ঈমানদ্বার তা সে আল্লাহর ১ম হুকুম ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে উপাসনা করে প্রত্যহ স্বীকৃতি দেয়। তবে নামাজের মাধ্যমে সামাজিকভাবে সে মুসলিম পরিচিতি পেলেও লোক দেখানো নামাজ পড়লে কিন্তু আল্লাহর কাছে কিছুতেই মুমিন হিসেবে গন্য হবে না অর্থাৎ সে হবে অবিশ্বাসি বেঈমান। সুতারাং বাহ্যিকভাবে আল্লাহর হুকুম মানার পরও যেভাবে একজন সত্যিকারের মুসলিম নাও হতে পারে ঠিক একইভাবে খাঁছ দিলে বিশ্বাস করার পর কিছু হুকুম না মানলেও সে মুমিন ঠিকই থাকে তবে ফরজ নামাজের হুকুম অবশ্যই মানতে হবে এরপরও আল্লাহর কিছু নিষেধ না মানলে সে পাপী মুসলিম হিসেবে গন্য হয় কিন্তু অমুসলিম হয়ে যায় না। মোটকথা কেউ আল্লাহ সুবঃ কে ইলাহ হিসেবে বিশ্বাস করলেই সে মুমিন বা বিশ্বাসি এরপরেই সে যদি ফরজ নামাজী হয় তবে সে হয় মুসলিম বা আত্মসমর্পনকারী অতঃপর সে যদি আল্লাহর দেয়া আরও ফরজ আদেশ নিষেধ না মানতে পারে তবে সে হয় পাপী মুসলিম আর যদি মানে তবে সে হয় খাঁটি মুসলিম এমনকি কেউ যদি আল্লাহর দেয়া ফরজ হুকুমের পাশাপাশি নফল হুকুমও মেনে চলে তবে সে হয় উঁচুস্তরের মুসলিম । আরও একটি সহজ উদাহরণ দিলে পরিস্কার হবে যেমন- কেউ যদি ব্যাক্তিগত আল্লাহর হুকুম নামাজ পড়ার পাশাপাশি সমাজ-রাষ্ট্রেও আল্লাহর হুকুম আইনকে বড় মনে করে কামনা করে কিন্তু সেই ব্যাক্তিই আবার হারাম কাজও করে যেমন- মিথ্যা, মদ্য-পান, ব্যাভিচার ইত্যাদি তবে এই ব্যাক্তি পাপী হলেও আল্লাহর কাছে ঠিকই মুসলিম থাকবে অথচ পাক্কা নামাজী কেউ যদি শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত ইবাদতের বেলায় আল্লাহর হুকুমগুলো ভালভাবে মানে কিন্তু সামগ্রিক ক্ষেত্র সমাজ-রাষ্ট্রের বিধানের বেলায় আল্লাহর দেয়া বিধানকে বড় মনে করে না অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর আইনকে কামনা করে না কিন্তু সেই একই ব্যাক্তি আবার ব্যাক্তিগতভাবে ভালই সাধু যেমন- সচারচর মিথ্যা, মদ-জুয়া, সুদ, জিনা-ব্যাভিচার ইত্যাদির নিকটবর্তীও হয় না তবুও এই ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে ঠিকই কাফের মুশরিক হিসেবে গন্য হয়। কেননা কুরান-হাদিস অনুসারে একথাতে সকল আলেম-ওলামাই একমত যে কেউ আল্লাহর দেয়া কোন সাধারন বিধানকে না পালন করতে পারুক এতেও সে ঈমানহারা হবে না কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর কোন বিধানকে প্রত্যাখ্যান করে অথবা অপ্রয়োজনীয় বা ছোট মনে করে তবে তার আর ঈমান থাকে না , ঈমান না থাকলে নামাজ কবুল হয় না সুতারাং তার এসব সাধুগিরীরও দাম থাকে না আল্লাহর কাছে কিন্তু পাপী মুসলিমের শিরক ছাড়া আল্লাহ যেকোন পাপই ক্ষমা করে দিতে পারেন।
মহান আল্লাহ সুবঃ এর দেয়া দ্বীনুল ইসলাম হল কেয়ামত পর্যন্ত সকল পরিস্থিতিতে সকল প্রকার সমস্যারই সুষ্টু সমাধান দেয়। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সময় জাহিলিয়াতের যুগ ছিল, মক্কার জীবনে ইসলামের ১ম ও প্রধান ধাপ শুরু হয় তাই তখন আল্লাহ সুবঃ শুধুমাত্র সকল পাপের মুল উৎস শিরক হতে বিরত থাকার অহি নাজিল করেন, এজন্য বেশিরভাগই জাহান্নামের সাস্তি আর জান্নাতের শান্তির আয়াত নাজিল করেন কিন্তু মদ, জুয়া, ব্যাভিচার, পর্দা এসব সরাসরি হারাম ঘোষণা করে ওহি নাজিল করেন ইসলামের শেষের ধাপে অর্থাৎ মদীনার জীবনে কারন এখানে নবী সাঃ ইসলামি সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। মহান আল্লাহ হলেন অসীম দয়ালু তিনি কারও উপর বিন্দুমাত্র যুলুম করেন না তাই মানুষের পারিপার্শ্বিক ব্যাপার এবং যোগ্যতা-সামর্থ কেমন এসবও তিনি বিবেচনা করেন তাই মক্কায় মুসলিমদের যতটুকু সাধ্য ছিল তার উপরই তিনি বিধান দিতেন কিন্তু মদীনায় ইসলামি রাষ্ট্র থাকায় সমাজের চলমান স্রোত ভালর দিকে ছিল তাই সেখানে তিনি সকল পাপ ধীরে ধীরে হারাম করেন এবং তারপরই নবী সাঃ বলেন- "তোমরা এমন এক যুগে বাস করছো যে, যদি দ্বীনের এক দশমাংশ আমলও ছুটে যায় তবে তোমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। এরপর এমন এক সময় আসবে যে, কোনো বান্দা শরীয়তের এক দশমাংশের উপরও যদি আমল করতে সক্ষম হয় তবে সে মুক্তি পেয়ে যাবে। সেই সময়টাতে হিম্মত করে দ্বীনের উপর টিকে থাকাটা জলন্ত কয়লা হাতে রাখার মতোই কঠিন হবে। সেই ফেতনার সময়টাতে ইবাদাত করার সওয়াব আমার নিকট হিজরত করে আসার সমতূল্য হবে।- (তিরমিজি)। আরেক হাদিসে আছে নবী সাঃ বলেন- “সেই সময় প্রকাশ্যে কোন অশ্লীল পাপাচার করতে দেখে কেউ যদি সাহস করে বলে যে এই কাজটা লোকসম্মুখে না করে যদি আড়ালে গিয়ে করতে! যে এই কথা বলবে তার ঈমান হবে বর্তমান আবু বকর ওমর রাঃ এর ন্যায়।“ বর্তমান যুগ যেহেতু নব্য জাহিলিয়াতের যুগ তাই এখনও নবী সাঃ এর মাক্কি জীবনের ন্যায় বিধান প্রজোয্য হবে অর্থাৎ এখন ইসলাম মানা আর জলন্ত অংগার হাতে রাখা সমান তাই আল্লাহ সুবঃ ও বিশেষভাবে ছার দিবেন কিন্তু ইসলামকে সঠিক সিরিয়ালে মানতে হবে যেমন- ১মে আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মানা তথা সকল প্রকার শিরক হতে বেঁচে থাকা, ২য়ত ফরজ নামাজ পড়া, ৩য়ত ইসলামের আরও মৌলিক বিষয় মেনে চলার পাশাপাশি কবিরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকার চেষ্টা, এভাবে চলতে চলতে একদম শেষের অংশে আসবে দাড়ি-টুপি সুন্নতি লেবাসের ব্যাপারগুলো। অথচ দেখা যায় বর্তমান সমাজে বেশিরভাগ মানুষই ইসলামকে উল্টো সিরিয়ালে মানে অর্থাৎ তাদের কাছে ১ম জিনিসই হল দাড়ি-টুপি সুন্নতি লেবাস অথচ দাড়ি-টূপিওলা অনেকেরই ঈমান শিরক মুক্ত না তাই তাদের নামাজ-রোজা কোন ইবাদতই কবুল হয় না সুতারাং তাদের সুন্নতি চেহারা আর পোশাকের কোন দামই নেই আল্লাহর কাছে । তবে অনেকেই ভাবতে পারে বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় যে, এখনও ঐ সময় আসে নাই যে সময়ের কথা নবী সাঃ বলেছেন। এমন যারা ভাববে তারা আসলে চরম অসচেতন কারন আশেপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি ভালভাবে পর্যবেক্ষন করলে এটি সহজেই বুঝা যায় তাছারা তাদের হয়ত এই হাদিসগুলোও জানা নেই যেমন- নবী সাঃ বলেন তোমাদের মুসলিমদের মাঝে ইসলামের রশি একের পর এক ছিরতে থাকবে সর্বপ্রথম ইসলামী শাষন ব্যাবস্থার রশি ছিরবে, এভাবে চলতে চলতে সর্বশেষ নামাজের রশি ছিরে যাবে অর্থাৎ তোমরা যখন নামাজ পরিত্যাগ করবে তখন তোমাদের মাঝে ইসলামের আর কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।(হাদিসের সারাংশ, সনদ সহী) আর বর্তমান যুগে এমনটাই দেখা যায় বেশিরভাগ মুসলিমই বেনামাজী এমনকি আরব দেশেও বেনামাজীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে আবার আরেকটি হাদিসে এসেছে যখন মসজিদগুলো সুসজ্জিত করা হবে তখন সেখানকার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মুসুল্লি কারও ঈমান থাকবে না, বর্তমানে দরিদ্র এলাকাতেও মসজিদগুলো অনেক উন্নত দেখা যায়, এভাবে আরও অনেক দলিল সরাসরি কুরান- হাদিস হতে দেখে বুঝা যায় যে আমরা আসলে সেই নব্য জাহিলিয়াতের যুগেই আছি তাই এখন শিরকমুক্ত থাকার পাশাপাশি ইসলামের দশভাগের এক ভাগ মানলেও মুক্তি কিন্তু যখন ইমাম মাহদী বা ঈসা আঃ এর খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে তখন আবারও শরীয়তের দশভাগের একভাগ কেউ ছেরে দিলেও সে বরবাদ হয়ে যাবে। তবে যেভাবেই হোক শিরক কখনই করা যাবে না আর একারনেই হাদিসে বলা হয়েছে – কখনই আল্লাহর সাথে শিরক করবে না , যদিও তোমাকে মেরে ফেলা হয় বা আগুনে পুড়ে ফেলা হয়। আর বর্তমানে শিরক হতে বেঁচে থাকাটাও এমন কঠিন হয়ে গেছে যে নূন্যতম ঈমান রাখতে চাইলেও দেখা যায় নিজের জীবনই বাজি রাখতে হয়।
তবে আশার কথা হল, কষ্ট করে হলেও কেউ যদি কালিমার প্রতি ঈমান এনে ধর্মের দশ ভাগের একভাগও মানতে পারে তবে তাকে আল্লাহ মুক্তি দিয়ে দিবেন এমনকি হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রীষ্টান যে ধর্মেরই হোক না কেন সে যদি কালেমার প্রথম অংশকে ( আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) মানতে পারে তথা সকল শিরক হতে বেঁচে মৃত্যুবরন করতে পারে তবে সে অন্তত চিরজাহান্নামী হওয়া থেকে বেঁচে যাবে যদিও সে মুসলিম না হয়। আল্লাহকেই একমাত্র ইলাহ মানলে মৃত্যুর পর ফেরেশতা যখন বলবে তোমার রব কে? সে ঠিকই বলতে পারবে যে আমার রব আল্লাহ, কিন্তু তোমার ধর্ম কি এবং নবী সাঃ কে চেনার জন্য পরবর্তী দুটি প্রশ্নে আটকে যাওয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত আযাব তো হতেই থাকবে এমনকি ইসলাম ধর্ম না মেনে চলায় অনেক ভুল-ভ্রান্তি ও ক্ষমার অযোগ্য বড় বড় পাপের কারনে অনেক যুগ নরকেও জ্বলতে হবে তারপরে একসময় ঠিকই মুক্তি পাবে এর দলীল কুরানেই আছে। তবে ১ম আহব্বান হবে পুরো কালিমাই মেনে মুসলিম হবার, এরপর সর্বশেষ ১টা সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন যা তিনি কুরানের সুরা আল ইমরানের ৬৩ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন- (ইসলামধর্ম তারা গ্রহন না করলেও তাদেরকে অবশেষে) বল “কালিমার সেই সেই অংশের দিকে আস যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যেও একই- আল্লাহ ছাড়া আর কারও দাসত্ব করব না, তাঁর সাথে কোনকিছুর শিরক করব না এবং তাঁকে ব্যাতীত কাউকে( বিভিন্ন পথভ্রষ্ট ধর্মীয় গুরুদের) প্রভু হিসেবে গ্রহন করব না”। এই তিনটি বিষয় মানা মানেই কালিমার প্রধান অংশকেই মানা । আর এমন হলে সুরা আল ইমরানের ১১৩,১১৪,১১৫ নং আয়াতে তাদেরকে সৎ ব্যাক্তি ঘোষনার পাশাপাশি পরকালে প্রতিদানের ওয়াদা করা হয়েছে। তাছারা নবী সাঃ তার আপন চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে বলেছিলেন- আপনি অন্তত শুধু লা ইলাহা ইল্লাহ ইল্লাল্লাহ কালিমার ১ম অংশটুকু মেনে নেন তাহলে আমি আপনাকে হাশরের মাঠে সুপারিশ করতে পারব। সুতারাং বুঝা যায় কালিমার ১ম অংশই বেশি গুরুত্বপূর্ন অর্থাৎ শিরক না করা।
কিন্তু যারা পুরো কালেমা অর্থাৎ মুহামাদ্দুর রসুলুল্লাহ এই ২য় অংশও মেনে নেয় তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম হয়ে যায় আর মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরন করতে পারলে ক্ববরের আজাব হতে শুরু করে পরকালে পরিপূর্ন মুক্তি এমনকি সমস্ত মানব জাতির মাঝে মুসলিমরাই সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এখন দেখা যাক কালিমার ২য় অংশে কি বলা হচ্ছে? বলা হচ্ছে- মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর রসুল বা বার্তাপ্রচারক/পিয়ন। আর যে রসুল হয় তার কাছেই স্রষ্টা ধর্মের সকল ইনফরমেশন বিস্তারিত নাজিল করেন অর্থাৎ মুহাম্মদ সাঃ এর কাছেই আল্লাহর বানী কুরান এবং ব্যাখ্যা হিসেবে হাদিস-সুন্নাহ রয়েছে আর এই দুটি বিষয়ের মধ্যেই ইসলাম ধর্মের সকল কিছুই বিদ্যমান। শুধুমাত্র ১ কালিমা বা মাত্র ১টি বাক্যের মাধ্যমে যেই আল্লাহ সুবঃ মানুষদের কাছে ধর্মের ব্যাখ্যা সহয-সরল করে সংক্ষেপে তুলে ধরছেন সেই মহান স্রষ্টার প্রশংসা করে আলোচনার ইতি টানছি- আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন ওয়া সালামু আলা রসুলিহী। আল্লাহ সুবঃ আমাদেরকে এই কালিমার হাক্বিকত বুঝে ঈমান আনার তৌফিক দিন এবং উঁচুস্তরের মুসলিম বানিয়ে মৃত্যু দিন- আল্লাহুম্মা আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:০৭