দেশের স্বার্থে সুরঞ্জিতের অপসারণ প্রয়োজন : অধ্যাপক মোজাফফর :
টিআইবির ট্রাস্টি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার আমার দেশ-কে বলেন, বিজিবি সদর দফতরের ভেতরে অবৈধভাবে বস্তাভর্তি অবৈধ টাকা ও মদ নিয়ে কিছু লোক প্রবেশ করল। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নাটক হলো। অবশেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হলো। এখনও তাদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। এটা সত্যিকার অর্থেই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। তিনি বলেন, গভীর রাতে বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে মন্ত্রীর বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়ে আবার তা ধরা পড়ার পরও মন্ত্রী স্বপদে এখনও বহাল আছেন, তা আরও বড় আশ্চর্যের বিষয়! দেশের স্বার্থে তাকে অপসারণ করে ঘটনার প্রকৃত তদন্ত করে অপরাধী যে-ই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সুরঞ্জিতের বিন্দুমাত্র বিবেচনাবোধ থাকলে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়াতেন : ড. ইফতেখার :
সুরঞ্জিতকে অপসারণের দাবি করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিন্দুমাত্র বিবেচনাবোধ থাকলে ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি নিজে থেকেই মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়াতেন। যেহেতু তিনি পদত্যাগ করেননি, তাই তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে রেল বিভাগের নিয়োগবাণিজ্য, ঘুষ ও দুর্নীতির সব ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। এ কমিটি গঠনের আগে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকেও মন্ত্রীর পদ থেকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে।
সন্দেহের তীর মন্ত্রীর দিকেই যাবে : আসিফ নজরুল :
গতকাল একটি পত্রিকায় লেখা উপসম্পাদকীয়তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ১০ এপ্রিলের প্রতিটি ঘটনা অত্যন্ত রহস্যপূর্ণ এবং স্পষ্টভাবে দুর্নীতির ইঙ্গিতবাহী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে টাকা উদ্ধারের ঘটনার পর অধিকাংশ পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য এসেছে, তা একত্র করলে সব সন্দেহের তীর মন্ত্রীর দিকে যাবে। ১০ এপ্রিলের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা চরম স্ববিরোধী। তার বক্তব্যের সঙ্গে রেলওয়ের জিএম এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্যেও প্রচুর গরমিল রয়েছে। এসব তথ্যে যা প্রতীয়মান হয়, তাতে পৃথিবীর যে কোনো প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অভিযুক্ত মন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হতেন (এমনকি সরকারকেই হয়তো পদত্যাগ করতে বাধ্য হতে হতো) এবং তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হতো।
মন্ত্রীর ব্যক্তিগত হিসাব চেয়ে চিঠি দেয়া হবে না : দুদক চেয়ারম্যান : দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান
বৃহস্পতিবার আমার দেশ-কে বলেন, রেল বিভাগের যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ লেনদেন ও নিয়োগবাণিজ্যের ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে টাকাসহ যারা ধরা পড়েছে, তাদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে। অনুসন্ধানে যারাই জড়িত বলে প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। তবে আপাতত মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব চেয়ে কোনো চিঠি দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
কালবিলম্ব না করে সুরঞ্জিতের অপসারণ চাই : এম হাফিজউদ্দিন :
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও টিআইবির সাবেক চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, গভীর রাতে ১ কোটি কিংবা ৭০ লাখ টাকা ও অবৈধ মদ নিয়ে মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন তারই অধীন কিছু লোক। আর এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য মন্ত্রীরই পিএসকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি মনে করি, এটা জাতির সঙ্গে উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, এটা কোনো ছোটখাটো বিষয় নয়। আমি মনে করি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কালবিলম্ব না করে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করে একটি উচ্চপর্যায়ের নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত।
রেল মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয় : ড. বদিউল আলম :
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এপিএস ও জিএম বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে গভীর রাতে মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন—এটা এখন আর গোপন বিষয় নয়। এরই মধ্যে মিডিয়াগুলো তথ্যপ্রমাণসহ তা প্রকাশ করেছে। কাজেই এটা নিয়ে তামাশার কিছু নেই। তিনি বলেন, রেল মন্ত্রণালয় যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তা আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কমিটি যে সঠিক তদন্ত করতে পারবে না, সেটা বুঝতে কোনো বিশেষজ্ঞ লোকের প্রয়োজন নেই। দেশের মর্যাদারক্ষার স্বার্থে সরকারের উচিত হবে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত এই ঘটনা তদন্ত করার জন্য সত্যিকারের নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত দোষীদের আইনের হাতে সোপর্দ করা। সরকার এটা করতে ব্যর্থ হলে এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হতে পারে।
অর্থ কেলেঙ্কারি দুঃখজনক : হানিফ :
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে বৃহস্পতিবার দলের এক বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, দু’দিন আগের এই খবরটি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এর তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনা প্রতিক্রিয়া জানানো যাচ্ছে না। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসবে, কার টাকা কীভাবে এলো। প্রয়োজনে দলীয়ভাবেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই সুরঞ্জিতকে পদত্যাগ করা উচিত : মওদুদ :
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, সুরঞ্জিত বাবুর নিজের আত্মসম্মানবোধ থেকেই পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত। সুরঞ্জিতের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি এ পদে থাকলে কোনো তদন্তের সুফল জনগণ দেখতে পারবে না। তাই নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, সুরঞ্জিত বাবু যদি নিজেকে নির্দোষ মনে করেন তাহলে পদত্যাগ করে কারা তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করছে, তা উন্মোচন করুক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না করতে পারলে বুঝে নেব, সরকারের সবাই এটার সঙ্গে জড়িত।
পদত্যাগ করে রাজনৈতিক পরিচয় রক্ষা করুন, নইলে অন্য পেশায় যান : এ এফ ফখরুল :
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গতকাল এক অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এফ ফখরুল ইসলাম মুনশী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, রাজনীতির নৈতিক দায়িত্বের বলে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করুন। রাজনৈতিক পরিচয় রক্ষা করুন। না হয় অন্য পেশায় চলে যান।
রেলমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা উচিত : কর্নেল অলি :
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এমপি বীরবিক্রম বলেছেন, রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়ির ড্রাইভার বলেছেন, ‘গাড়িতে পাওয়া ৭০ লাখ টাকা ঘুষের টাকা।’ এপিএস বলেছেন, ‘মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছি।’ এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, ওই টাকার সঙ্গে মন্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে। ওই টাকা দেয়ার জন্য মন্ত্রীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। অবৈধভাবে টাকা নেয়ার অভিযোগে রেলমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেষ বয়সে রাজনীতিবিদদের অপমানিত করেছেন সুরঞ্জিত : সাকা চৌধুরী :
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শেষ বয়সে এভাবে ধরা খেয়ে রাজনীতিবিদদের অপমানিত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন কারাগারে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি। বৃহস্পতিবার তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।