চলুন শুরুতেই টাইম মেশিনে এক ধাক্কায় ১২ বছর আগে ফিরে যায়। ২০০৮ এর দিককার সময়ে দেশে কম্পিউটাররের প্রচলন বাড়ার সাথে সাথে দেশে কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার এর ডিমান্ড প্রচুর বেড়ে গিয়েছিল। এরফলে কি হল? সবাই এমন গনহারে এই সাবজেক্ট নিয়ে পড়া শুরু করলো যে এর ৫ বছর পরেই দেখা গেল দেশে ভুরি ভুরি সিএসএ পাশ করা স্টুডেন্ট যারা তাদের যোগ্যতা,চাহিদা অনুসারে কাজ,চাকরি পাচ্ছে ন
এরপর যেটা হল, হুট করে দেশে বিবিএতে পড়ার প্রচলন শুরু হল। স্কুল কলেজে সায়েন্স নিয়ে পড়লেও ভার্সিটিতে এসে বিবিএতে পড়ছে এমন হাজারো উদাহরণ। এতে কি হল? বর্তমানে কর্পোরেট জব সেক্টরে চাকরির তিব্র সংকট। পোস্ট খালি আছে একটা কিন্তু আবেদন করছে ১-২ হাজার। প্রতি ১০০ জনে ৬০-৭০ জনই বিবিএর স্টুডেন্ট, অথচ অনেক সাবজেক্ট, সেক্টর রয়েছে যেখানে দক্ষ জনশক্তির বড়ই অভাব।
এবার আসুন দেখি এই সমস্যাগুলো কেন হল? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে যেটা বুঝতে পারি সেটা হচ্ছে হুজুগে পড়ে কাজ করা। আমরা ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে বর্তমানটাই ধরে বসে হুজুগে পড়ে কাজ করি। এরফলে যেটা হওয়ার সেটাই হয় স্বাভাবিকভাবে,কিন্তু গালি দি অন্যকিছুকে
বর্তমানেও ই-কমার্সের হুজুগ চলছে৷ এখন তো আবার করোনা সুরক্ষা প্রোডাক্ট, আম নিয়েও হুজুগে পড়ে ভালভাবে না জেনে, বিজনেসের ব্যাসিকটাই রেডি না করে বিজনেস শুরু করে দিচ্ছে।
ই-কমার্সের হুজুগ চলছে, জোয়ার চলছে। আমার তো মনেহয় হিসেব করলে দেখা যাবে প্রতি ঘরে একজন করে সেলার পাওয়া যাবে। সবাই ব্যাসিকটা না জেনে, যে প্রোডাক্টটা নিয়ে কাজ করছে সেটার ভবিষ্যৎ না ভেবেই কাজ শুরু করে দিচ্ছ৷ কিন্তু দিনশেষে ভাল সেলস জেনারেট করছে কয়জন?? বিজনেস শুরুর আগেই একটু খোঁজখবর নিয়েছেন কি??
আমি ২০১৭ তে বিজনেস শুরু করি ৫ বছর পরে ২০২২ সালে ই-কমার্সের প্রসার কেমন হবে,কাস্টমার কেমন থাকবে, মানুষ ধরণের সেলার, কোন ধরণের প্রোডাক্ট খোঁজ করবে,সেসব আগে থেকে চিন্তা ভাবনা করে নিয়ে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে ৫ বছর লাগবে না, ৬ মাস পরের মার্কেট সম্পর্কেও চিন্তাও করেছেন এমন সেলারের সংখ্যা খুবই কম। জিজ্ঞেস করলেই সবার কমন কথা, একদিন বড় কিছু করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু আসলেই কি করার টার্গেট সেটাই ওনি নিজেই জানেন না। অনেকটা মহাসমুদ্রে লক্ষ্যবিহিন জাহাজ ভাসিয়ে দেওয়ার মত, যেটা দিনশেষে গন্তব্যে পৌঁছায় না।
আপনি ফুটবল খেলতে নামেন প্রতিপক্ষের জালে গোল দেওয়ার টার্গেট নিয়ে, মাঠের ১১ জন প্রতিপক্ষকে নিজের দক্ষতায় পাশ কাটানোর টার্গেট নিয়ে। তাহলে বিজনেসের খেলার মাঠে কেন লক্ষ্য ছাড়ায় আসছেন?? একটু ভেবেছেন কি??
আপনি ভাল রান্না পারেন, তাই হোমমেইড ফুড নিয়ে পেইজ খুলে বিজনেস শুরু করে দিলেন। কিন্তু আপনি খাবার নিয়ে আসলেই কতটুকু জানেন?? খাবার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেন কি?? বিভিন্ন রকমের খাবার টেস্ট করার ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা কতটুকু?? নতুন নতুন আইটেম বানানো, ভিন্ন রকম প্রেজেন্টেশন নিয়ে কখনো ভাবেন কি??
আপনি শাড়ি, ড্রেস আইটেম নিয়ে কাজ করছেন,কিন্তু সেসব নিয়ে আপনার জ্ঞান কতটুকু?? কোন শাড়ির ইতিহাস কি? কিভাবে সংরক্ষণ করলে সেটা সবথেকে ভাল থাকবে সেটা সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?? বছরের কোন সময়ে কোন ধরণের কাপড় পড়াটা আরামদায়ক সেটা সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখেন নি?? কোন সময়ে কাস্টমারের কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকে সেসব নিয়ে এনালাইসিস করেন কি??
বিজনেসে আসার আগে নিজেকেই প্রশ্ন করুন, আপনি কি অন্যরা করছে তাই আপনিও করবেন এই হুজুগে আসছেন নাকি প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভাল জ্ঞান নিয়ে, বিজনেসের ব্যাসিক জায়গাটা সেট করে তবেই আসছেন?? আপনার নূন্যতম ৬ মাসের প্ল্যান রেডি আছে তো??
একটা কঠিন বলে শেষ করি " হুজুগে পড়া কিছুর ফলাফল কখনো ভাল হয় না সবার জন্য। আপনি হুজুগে পড়ে কাজ শুরু করে দিনশেষে শূন্য হাতেই থাকবেন নাকি এমন কোন কাজ করবেন যেখানে আপনাকে দেখেই হুজুগ শুরু হবে। যে কোন হুজুগে তারাই লাভবান হয়,তাদের দেখেই হুজুগটা শুরু হয়।
তাই ফলোয়ার নয়, ক্রিয়েটর হোন। হুজুগে না পড়ে ফাঁকা মাঠ খুঁজুন। এক দুই বছর পরে কোন ধরণের প্রোডাক্টের চাহিদা বেশি থাকবে, টার্গেট কাস্টমার কারা হবে সেসব ভাবুন
কাজি ইরফান