গুরু,
আমি ভণিতা করব না। গল্পের শুরুতে কথা বলে নিজেকে প্রিয় করে নেবার কাজটা বরং তোমার গল্পের চরিত্ররাই ভালো করতে পারে। "আমার ছেলেবেলা"-র তুমিও ভালো পারতে। এমনকি হৈমন্তিকে খুন করা কাপুরুষ অপুও নায়ক হয়ে উঠতে পারে। আমি বরং সোজাসুজি কথা বলি?
জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলাম। (আচ্ছা, তোমার সময়ও কি "শুভ জন্মদিন" বলা হতো? জানা হয়নি তো!)
তুমি হয়ত নতুনের সাথে তাল মিলিয়ে হেসে বলছ, "বটে রে! আমার জন্ম বুঝি মে মাসের ৮-এ? তোদের গুগল-টুগলে খুঁজে দ্যাখ, Rabindranath Tagore
7 May 1861 – 7 August 1941"
শুনে আমিও বলব, "বাংলা সনের নতুন হিসেব জানা নেই না তোমার? আর তুমি আজকের দিনটাকে মে মাসের ৮ বলছ কেন? আজ বৈশাখ, বৈশাখের ২৫।"
বাংলা সনের হিসেব-নিকেশ ঠিক কোন নিয়ম মেনে বদলে গেল, আমার জানা নেই। কেউ কেয়ারও করে বলে মনে হয় না। আজকাল সবকিছু ইংরেজ ক্যালেন্ডার মেনেই চলে। ক্যালেন্ডারের পাতাটা রোজই উল্টায়। পাতাটা রোজই উল্টায়। ১ তারিখের পর ২ তারিখ আসে, ২ এর পর ৩, ৩ এর পর ৪, ৪ এর পর ৫,৬,৭। ৭ই মের পর ৮ই মে হঠাৎই নিজের পরিচয় হারায়। হয়ে যায় ২৫শে বৈশাখ। তা তো তোমারই জন্য।
২৫শে বৈশাখ আর ২২শে শ্রাবণ, দিনগুলো বাংলা রয়ে গেল কিভাবে? আরো অনেক দিনই আছে হয়ত। কিছু আছে হিন্দু ধর্মীয় উৎসবে। কিন্তু ১লা বৈশাখই যেখানে এখন ১৪ই এপ্রিল, ২৫শে বৈশাখ বাংলা রয়ে গেল তো কবির নাম রবীন্দ্রনাথ বলেই। কবি-লেখক কম আসেননি এদেশে, এই ভাষায়। তাঁদের প্রতিভার বর্ষণে ভিজে মুগ্ধ হয়েছি অনেকবার। তবু সেই বাংলা সাহিত্যের আকাশে রবি হয়ে ছিলে তুমি একজনই। সেই মহাকবি মানব-হৃদয়ে অমর হয়ে আছ সেই কতকাল ধরেই। তবু ২৫শে বৈশাখে সব কবিভক্তের মন পুলকিত হয়ে ওঠে। বলে, "আজই সেই দিন, আজই সেই দিন!"
মিথ্যে বলব না, জীবনটা পুরোপুরি "রবিন্দ্রময়" হয়ে ছিল না আমার কোনোদিনই। আর সেখানেই হয়ত তোমার মাহাত্ম। অনেক মানুষই তো তোমার চর্চায় জীবন নিবেদিত করে গেছে। কিন্তু যারা তোমাকে অতটা আপন করে নিতে চায়নি, তাঁদের জীবনেও তুমি এক অদ্ভুত মুগ্ধতার নাম। তোমাকে ছাড়া পহেলা বৈশাখ পুর্ণ হতো না। তোমাকে ছাড়া বর্ষাকালও স্নিগ্ধ হতো না। তোমাকে ছাড়া মনে মনে হারিয়ে যাবার ইচ্ছেটা মনেই রয়ে যেত, কোনোদিন প্রকাশ করা যেত না। তোমায় বাদ দিয়ে প্রেম মধুর হতো না, বিরহ সুন্দর হত না......
যারা তোমার সৃষ্টির সাগরে পুরো ডুবে যায়নি, তাঁদের জীবনেও তাই তুমি ভালোবাসার নাম। কেউ তোমার কবিতায় মুগ্ধ, কেউ তোমার ছোটগল্পের ভক্ত। কেউ তোমার উপন্যাসে পড়ে থাকে সারাদিন।
আমি যেমন তোমার গানে খুঁজে পেয়েছি নিজ ভালোবাসা। (২৫শে বৈশাখ, আর ২২শে শ্রাবণ, দুটো দিন, যেদিন আমার প্লে লিস্টটা হাই-ফাই বন্ধুদের কাছে সেকেলে মনে হয় না!)
যতদিন বাঙালি রবে, বাঙালি হৃদয় রবে, সে হৃদয়ের একটা ঘরে রবীন্দ্রনাথের স্থান থাকবেই। সে হৃদয়ের মন্দির ঘরে মহাকবির দাঁড়ি শোভিত ওই মুখটার ছবি থাকবেই। আজি হতে শতবর্ষ পরেও কত মানুষ খোলা বারান্দায় বসে রবীন্দ্রনাথে ডুবে থাকবেন, তার হিসাব তখনও দেয়া যাবে না।
২৫শে বৈশাখও তাই বাংলা ছিল, বাংলা আছে, বাংলা রবে, যতদিন বাঙালি আছে।
সত্যিই বলেছিলে গুরু, "র'বার যেটা সেটাই রবে!"
তাই ৭মে আর ৮মে-র ঝামেলা ভুলে যাই। যদি রাগ হয়, গুরু ক্ষমা করে দিও.......
ইতি
তোমার কোটি ভক্তের মাঝে কোনো একজন।
আমাকে আলাদা করে মনে রাখতে পারবে না তুমি। আমাকে আলাদা করে মনে রাখার দরকারও নেই। আলাদা হয়ে তো কেবল তুমি ছিলে। তুমিই আছ,
তুমিই রবে.......