বিশিষ্ট আলেম, আলেমকুল শিরোমনি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদী একজন রাজাকার তথা ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষদের খুন, পাক বাহিনীর নিকট ধরিয়ে দেয়া, নারী ধর্ষন, পাক বাহিনীর নিকট বাঙ্গালি নারীদের যৌনদাসী হিসাবে সরবরাহ,ধর্মের দোহাই দিয়ে পাড়ের হাট বন্দরের হিন্দু সমপ্রদায়ের ঘরবাড়ি লুট করেছেন ও নিজে মাথায় বহন করেছেন, দোকান লোটপাট, লুটের মাল বিক্রি সহ নানা পূণ্য কর্মে লিপ্ত ছিলেন। আসুন দেখি তার কি কি মহান কর্ম জাতিকে রক্ত আর অশ্রু দিয়ে বরন করতে হয়েছিল।
খুন সমুহঃ
এই মহান কর্মবীর একসময় গর্ব করতেন তিনি বলেশ্বর নদীর পাড়ের বধ্যভূমিতে ৫০০ জন মুক্তিকামী (তার ভাষায় বেইমান, কাফের) মানুষকে জবাই করে হত্যা করেছেন। সম্পতি গণতদন্ত কমিশন পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে গিয়ে সরেজমিনে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে।
১। '৭১-এর ৬ মে পিরোজপুর থানার সামনে থেকে মহান সাইদী বাহিনী তত্কালীন মহকুমা এসডিপিও ফয়জুর রহমান আহমেদকে ধরে বলেশ্বর নদীর পাড়ে বধ্যভূমিতে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে।
২। এই মহান আলেম পিরোজপুরের ভারপ্রাপ্ত এসডিও আবদুর রাজ্জাক কে হত্যা করেছেন।
৩। মহান আলেম সাইদীর সহযোগিতায় পিরোজপুর শহর এলাকার হিমাংশু বাবুর ভাই ও আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করা হয়েছে।
৪। পিরোজপুরের মেধাবী ছাত্র গণপতি হালদারকে সাঈদী ধরে নিয়ে গিয়ে বলেশ্বর নদীর পাড়ের বধ্রভূমিতে নিজে জবাই করে হত্যা করেছেন।
৫। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান
৬। স্কুল হেডমাস্টার আব্দুল গাফফার মিয়া,
৭। সমাজসেবী শামসুল হক ফরাজী
৮। অতুল কর্মকার
৯। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তথ্য সরবরাহকারী ভগীরথীকেও এই মহান আলেমের নির্দেশেই মোটরসাইকেলের পিছনে বেঁধে পাঁচ মাইল পথ টেনে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১০।তদানীন্তন ইপিআর সুবেদার আব্দুল আজিজ,
১১। পাড়ের হাট বন্দরের কৃষ্ণকান্ত সাহা
১২। বাণীকান্ত সিকদার,
১৩। তরুণীকান্ত সিকদার
১৪।'৭১-এর ১৬ আগস্ট সাঈদীর নেতৃত্বে গোপাল বণিক নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে পাকসেনাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
১৫। পাড়ের হাটের আনোয়ার হোসেন
১৬। আবু মিয়া,
১৭। নূরুল ইসলাম খান,
১৮। বেনীমাধব সাহা,(মৌসুমী ভৌমিকের গাওয়া সেই বেনীমাধব গানটা কি মনে পড়ে?)
১৯। বিপদ সাহা,
২০। মদন সাহা,
২১। হরি সাধু
২২। নিখিল পাল ও অন্যান্য
২৩। তালুকদার বাড়ির হত্যাযজ্ঞ
২৪। ১৯৭১ সালের ৮ মে বাদুরা এলাকার ইব্রাহীম হাওলাদার
আরও নাম না জানা অজস্র শহীদ, অসংখ্য নাম। যাদের অনেকেই শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন, স্বজনেরা অপেক্ষায় থেকেছে আমার ফুফুর মতো আমৃত্যু, তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে, ক্লান্ত খোকা!
যেন ফুরোবেনা এই তালিকা। বলেশ্বর নদীল শান্ত জল আজও সেই নির্মমতার স্বাক্ষী হয়ে আছে। যেন শোকবার বইতে না পেরে শুকিয়ে গেছে জলধারা আর ঘাতক প্রিয় মানুষদের খুনে রঞ্জিত করেছে তার দাড়ী!
লুটপাট
১। ৭১ সালের তিনি মদন নামে এক হিন্দু ব্যবসায়ীর বাজারের দোকানঘর ভেঙে তার নিজ বাড়ি নিয়ে গেছেন। মদন বাবুর বাড়ি উঠিয়ে নিয়ে সাঈদী তার শ্বশুর বাড়িতে স্থাপন করেন।
২।পাড়ের হাটের আনোয়ার হোসেন, আবু মিয়া, নূর"ল ইসলাম খান, বেনীমাধব সাহা, বিপদ সাহা, মদন সাহা প্রমুখের বসতবাড়ি, গদিঘর, সম্পত্তি এই দেলোয়ার হোসেন সাঈদী লুট করে নেন বলে তিনি গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন।
৩। পিরোজপুরের নিখিল পালের বাড়ি তুলে সাঈদী এবং তার সহযোগী ঘাতকেরা এনে পাড়ের হাট জামে মসজিদের গনিমতের মাল হিসেবে ব্যবহার করে।
৪।পাড়ের হাট বন্দরে লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, সেকান্দার শিকদার, মওলানা মোসলেহ উদ্দিন, দানেশ মোলা প্রমুখ। এ ছাড়াও সাঈদীকে একটি ঘরের আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যেতে দেখেছিলেন রুহুল আমীন।
৫।সদর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সইজুদ্দিন পশারীর বাড়িতে পাকিস্তানী সেনাদের উপস্থিতিতে ১০ লাখ টাকা মূল্যের ঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং ৫০ হাজার নগদ টাকাসহ ঘরের মালামাল লুট করে।
নারী ধর্ষন ও পাকিদের হাতে তুলে দেয়া
অনেকেই আজও বেচে আছেন। মৃতের মতোই! অথচ তাদের ত্যাগে অর্জিত স্বদেশ। মুখ খুলতে চান না সামাজিকতা চিন্তা করে, নষ্ট সমাজ বাচ্চাদের জারজ বলে ডাকবে ভেবে, সমাজ পরিত্যাক্তা হবেন ভেবে। তারপরও দু একজনের নাম তো বলতেই হয় যাদের নিজে ধর্ষন করেছে সাইদী, তারপর হত্যা করেছে। অনেক তথ্য প্রমান আছে এই মহান আলেম নিয়মিত পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীদের ধরে এনে তুলে দিয়েছেন তার পিতাদের হাতে। তিনশ জন রাজাকারের একটা বাহিনী ছিল তার। প্রতাপ ছিল জবর।
১। হরি সাধুর মেয়েকে নির্যাতন করেছেন তিনি ও তার বাহিনী।
২। বিপদ সাহার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।
৩। বিখ্যাত তালুকদার বাড়ি থেকে ২০-২৫ জন মহিলাকে ধরে এনে পাকসেনাদের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
দেশের জন্যে করা মহান এই দেশপ্রেমিকের এসব মহান কর্মে তথ্য প্রমান আছে বৈকি। যুদ্ধাপরাধ আদালতে এসব তথ্য প্রমান উপস্থাপিত হবে সময়মতো।
শেষ কথা
তারপরও সাইদী আমাদের মহান নেতা। আমার ভাইয়ের বুকের রক্তে স্বাধীন এই দেশে নির্বাচিত সাবেক সাংসদ।পবিত্র সংসদ তার পদভারে ধন্য। তার মুখ নিসৃত মধু বয়ানে সংসদ কক্ষ এবং জনগনের নির্বাচিত সাংসদগন আনন্দিত হয়েছেন। এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশে মন্ত্রিত্বের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সময়ে একাবর গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। ৭৫ এর পর জামিনে বেড়িয়ে আসেন এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার মেধার যোগ্য স্বাক্ষর রাখেন।
আজ স্বাধীনতার ৪০ বছর পর আমার ভাইয়ের মতো শহীদদের আত্মাকে আমরা যারা ধারন করে আছি , প্রতি মূহুর্তে রক্তক্ষরণ নিয়ে বেচে আছি তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ আসুন অন্তত এই মহান ব্যক্তিদের বিচারের ক্ষেত্রে আমরা একজোট হয়ে দাড়াই। কলঙ্ক মুক্ত করি নিজেদের। এখনও যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী সমর্থন করে স্বাক্ষর করেননি তাদেরকে এই লিংকে গিয়ে নিজের নাম আর ইমেইল লিখে দেওয়ার বিনীত অনুরোধ রাখছি।