পর্ব ২
.................................
পরীক্ষার হলে ডুকলো শাওন। চল্লিশজন মানুষ থাকা সত্তেও রূমটা
আজ জনবহীন মরূভুমির মত । থমথমে পরিবেশ, চারদিকে নীরবতা। কাগজের উপর কলম চলার খস খস শব্দ। এক এক জন টিচার সেনাবাহীনীর এক এক জন দক্ষ সৈনিক । অস্ত্র তাক করে দাড়িয়ে আছে। একটু পাশে তাকালে কিংবা কথা বললেই টিগার এ চাপ বসাতে দেড়ি হবে না। মোটামুটি ভালো ভাবেই পরীক্ষা শেষ করলো শাওন।
পরদিন ভার্সিটি ক্লাসে বসে আছে শাওন, অতি ক্ষমতাবান দের সাথে বসে থাকলে নিজিকে তুচ্ছ তুচ্ছ মনে হয়, এই মুহূতে যিনি ক্লাস নিচ্ছেন , তিনি এক সাথে ক্ষমতাবান ও জ্ঞানী মানুষ । মানে সব কিছু ডাবল ডাবল । পদার্থের মত জটিল বিষয়টা তার কাছে জর্দার কৌটার মত। কৌটা খুললো আর ভেতর থেকে এক গাদা বিভৎষ যুক্তি বেড় হয়ে এলো।
আইনস্টাইন নামক লোক যদি ঈশ্বরকে কনা হিসেবে পেতে পারেন। তাহলে এ লোক ঈশ্বরের অনু পরমানুও বের করে দিতে পারেন মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। এই লোকের লেকচার শুনা আর ঠাকুরের মন্ত্রপাঠ শুনার মেধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই শাওনের কাছে।
হটাৎ ২১ ইঞ্চি চশমার পেছন থেকে
-স্যার একটা প্রশ্ন ছিলো?
-হ্যা ,বলো সেতু।
-স্যার সম আকর্ষন শক্তি সম্পন্ন দুটি ব্লাকহোল যদি খুব কাছাকাছ চলে আসে তখন কি ঘটবে। আর মানুষ পৃথিবীতে না জন্মিমে যদি ব্লাকহোল এ জন্মাতো , তাহলে কি এভাবে সিড়ি কিংবা লিফট বেয়ে উপরের এসে ক্লাস করতে পারতো।
শাওন লক্ষ করলো চিন্তায় স্যারের সরু বাশিঁর মত নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। প্রবাদ আছে, 'যে সব পুরুষের নাক ঘামে, তারা খুব বউ এর ন্যাওটা হয়'। পদার্থ বিজ্ঞানের স্যার বউয়ের মাথায় প্যারাসুট নারিকেল তেল দিয়ে মাথা বানিয়ে চুল বেনুনী করে দিচ্ছেন এমন দৃশ্য সচারাচর দেখা যায়না। স্যারের বউ এর সাথে শওনের পরিচয় না থাকায় বিরাট আফসোস হচ্ছে।
জেলখানার দেড় ঘন্টা শেষ হতেই মহারানীর কোমল কন্ঠে-
-আপনার না কাল আমার সাথে দেখা করার কথা ছিল?দেখা না করে চলে গেলেন কেনো ?
- ইচ্ছে করে করেছি, ব্যপারটা সেরকম না। খুবই ব্যাস্ত ছিলাম।
- আপনার মত বেকার মানুষের আবার কিসের ব্যাস্ততা?
- না মানে আপনার মেজাজ যে পরিমান গরম ছিলো দেখা করলে আজ হয়তো ক্লাসের বদলে হাসপাতালের দেড় ফিটের বেড এ থাকতাম।
-হাসপাতালের বেডে থাকতে কেনো ? আমাকে কি গুন্ডা মনে হয় নাকি?
- সেরকম না, তবে কম কিসে আর, কাল যে ঝাড়ি দিয়েছেন, আমি না হয়ে কোন বৃদ্ধলোক হলে হার্ট এটাক করে মারা যেতো তখনই। সেই হিসেবে একবার ফাঁসি হতো আপনার । আমি বলে বেঁচে গেলেন এবারের মত।
- যাই হোক কালকের বিষয়ের জন্য আমি সরি। আসলে আমরও কালকে একটা এ্যসাইনমেন্ট এর তাড়া ছিলো তাই জলদি করতে গিয়ে ধাক্কা লেগে গেছে।
- বিপরীতে কি বলবে তা খুজে পেলো না শাওন।
- এই যে কিছু বলেছেন না কেনো ? আর আপনার পরীক্ষা কেমন হলো?
- মোটামুটি ভালোই, আপনার সাথে ধাক্কা না খেলে হয়তো এতটা ভালো হতো না।
-আচ্ছা আপনি কি সিরিয়াস ভাবে কখানো কথা বলতে পারবেন না ?
-একটা সিরিয়াস কথা ছিলো, রাগ করবেন না তোহ আবার।
- ওরে আমার সিরিয়াস লোক রে, বলেন বলেন।
-চিন্তা করেছি প্রত্যেকদিন পরীক্ষার আগে আপনার সাথে একটা করে ধাক্কা খেয়ে যাবো, আমার শরীরের নিউরন আপনার শরীরের নিউরনের সাথে স্পর্শিত হবে। এতে করে , নিউরনের মাধমে পদার্থ নামক জটিল বিষয়ে আমার মস্তিস্কে কিছু জ্ঞান অর্জিত হবে।
সেতু নিউরন কতৃক জ্ঞান স্থান্তরের হিসেবে ব্যস্ত।
রুমে চলে এলো শাওন, ক্রিং ক্রিং শব্দে টেবিলের উপর বেজে উঠলো নাতাশার ফোন কল।