হজকিন লিম্ফোমা হলো এক ধরনের ক্যান্সার যেটা নিরাময় করা যায় সহজেই। মধ্যবয়সী রুগীদের মধ্যে বেঁচে থাকার হার ৯০% এর উপরে। আর কমবয়সী রুগীদের মধ্যে এই হার ৯৫% এর উপরে। কিন্তু কথা হচ্ছে এই রোগে আক্রান্ত রুগীকে অবশ্যই আধুনিক প্রচলিত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এর অন্যথা হলে কোন আশা নেই। মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে রুগী মারা যাবে।
যুক্তরাস্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গ রাজ্যের নিউ আলম্ (New Ulm) শহরের এন্হনি এবং কলিন হাউজার দম্পতির ৮ সন্তানের একজন হলো ড্যানিয়েল হাউজার। ১৩ বছর বয়সী এই কিশোর গত ফেব্রুয়ারী মাসে জানতে পারে যে সে হজকিন লিম্ফোমা নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত। বুকের মধ্যে বড় হওয়া টিউমারটা আরও বড় হতে হতে শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে ফেলছে। ডাক্তাররা তাকে চিকিৎসা হিসাবে কিমোথেরাপী নেয়ার জন্যে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে বলন। সেটা ছিলো ফেব্রুয়ারী মাসের কথা। কিন্তু প্রথমবার থেরাপী নেয়ার পর ড্যানিয়েল থেরাপী নেয়া বন্ধ করে দেয়। এর বদলে এন্হনী এবং কলিন তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী "অলটারনেটিভ মেডিসিন" দ্বারা তার চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, এই "অলটারনেটিভ মেডিসিন" সম্পর্কে ইন্টারনেটে কিছু ওয়েব এড্রেস ছাড়া তাদের আর কোন সম্যক কোন ধরানা নেই।
হাউজার পরিবার আদতে রোমান ক্যাথলিক। কিন্তু নেমেনহাহ নামে একটি নেটিভ আমেরিকান ধর্মীয় বিশ্বাসেও তারা বিশ্বাসী। তাদের মতে এ দুটি বিশ্বাসের মধ্যে কোন বিরোধ না থাকায় তারা দুটিতেই বিশ্বাস করেন। আর নেমেনহাহ বিশ্বাসীদের মতে সেকুলার চিকিৎসা গ্রহণ করা পাপ।
ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম কিমোথেরাপী নেয়ার পর যখন দ্বিতীয়টি নেয়ার জন্যে ড্যানিয়েল আর ডাক্তারের কাছে যায়নি তখন ড্যানিয়েলের ডাক্তার
ব্রাউন কাউন্টির চাইল্ড প্রটেক্শন কর্মীদেরকে ফোন করে সতর্ক করে দেন।
প্রথম থেকেই এন্হনী এবং কলিন কিমোথেরাপীর বিপক্ষে ছিলেন কারণ এটা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীতে যায় বলে। তাই কাউন্টি অফিস ড্যানিয়েলের বাবা-মার প্রতি তাদের ছেলেকে অবহেলা এবং চিকিৎসা সুবিধা বঞ্চিত করার অভিযোগ এনে কোর্টে মামলা করে দেয়। তারা যুক্তি দেখান যে কিমোথেরাপী না নিলে ড্যানিয়েল নিশ্চিত ভাবেই মারা যাবে। ফলশ্রুতিতে মে মাসের ১৫ তারিখে বিচারপতি জন রডেনবার্গ রায় দেন যে এখন থেকে ড্যানিয়েলের দায়িত্ব কাউন্টি অফিসের কাছে থাকবে কিন্তু পরবর্তি শুনানীর দিন (১৯শে মে) পর্যন্ত ড্যনিয়েল তার বাবা-মার কাছে থাকতে পারবে। কিন্তু মের ১৯ তারিখে তারা আর কোর্টে হাজির না হয়ে ক্যালিফর্নিয়ায় পালিয়ে গেলে রডেনবার্গ সারা দেশব্যাপী ক্রিমিনাল এলার্ট জারী করেন ও এন্হনী এবং কলিন হাউজারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন।
এ্যারেস্ট এড়াতে ড্যানিয়েলের বাব-মা মিনেসোটা ফিরে আসেন এবং কোর্টে হাজিরা দেন। বিচারপতি রডেনবার্গ এরপর ড্যানিয়েলকে তার বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দিতে রাজী হন এক শর্তে যে তারা এখন থেকে নিয়মিত ড্যানিয়েলকে কিমোথেরাপী দিতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। তারা আরও বলেছেন যে তারা এখন বিশ্বাস করেন যে ড্যানিয়েলের জীবন বাঁচাতে কিমোথেরাপী অবশ্যই জরুরী ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।
রাস্ট্র ব্যবস্হা কেন ধর্ম থেকে আলাদা থাকবে সেটা কিশোর ড্যানিয়েল আর একটু হলেই তার নিজের জীবন দিয়ে আরো একবার প্রমাণ করে দিতে যাচ্ছিলো।তাই ড্যানিয়েলের ডাক্তার, ব্রাউন কাউন্টির চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা, এবং বিচারপতি রডেনবার্গের শুভ বুদ্ধির প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা যে ড্যানিয়েলকে কাদম্বীনির মতো মরিয়া কোন কিছু প্রমাণ করতে হয় নাই। আশা করি এই ঘটনা থেকে আমরাও কিছু শিক্ষাগ্রহণ করলাম।
সূত্র: Click This LinkW3ckUiD3aPc:_Yyc:aU1yDEmP:QMDCinchO7DU