somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুবিতে শোক দিবসঃ কটকা ট্রাজেডি কিভাবে

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে চোখে পড়ে মুক্ত মঞ্চ, শহীদ মিনার, অদম্য বাংলা, কটকা মনুমেন্ট। বাইরে থেকে পরিচিত কেউ ক্যাম্পাসে এলে জানতে চায় এসব সম্পর্কে। সব কিছু নামে বুঝতে পারলেও কটকা মনুমেন্টের নাম শুনে জানতে চায় বিস্তারিত। মুখোমুখি হতে হয় নানা প্রশ্নের। এ সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে চেষ্টা করেছিলাম ঘটনার বিস্তারিত।

১৩ মার্চ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস। ২০০৪ সালের এ দিনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়ে কটকা সী-বিচে ঘোরাঘুরির সময় হঠাৎ জোয়ারের টানে সমুদ্রে হারিয়ে যায় অনেকেই, স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে কেউ কেউ তীরে ফিরতে পারলে ও ফিরে আসতে পারেনি ওরা ১১ জন। সেখান থেকে প্রতিবছর এ দিনটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

২০০৪ সালের ১২ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৭৮ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের ২০ জন অতিথি নিয়ে খুলনা থেকে রওনা দেয় সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে। সারারাত লঞ্চযাত্রা শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা সুন্দরবনের কটকার নিকটবর্তী বাদামতলী এলাকায় পৌঁছে। বেলা ১টার দিকে তারা গভীর অরণ্য পেরিয়ে কটকা সী-বিচে পৌঁছায়। আধোঘুমে কেটে যাওয়া সারা রাতে ভ্রমনের ক্লান্তি যেন দূর করে দেয় অকুল সমুদ্রের ঢেউ। অনেকেই হাটাহাটি করতে শুরু করল সাগর পাড়ে, কয়েকজন দল বেধে বল খেলছে হাঁটুপানিতে, কেউবা আবার নেমে পড়ে সমুদ্রে গোসলের জন্য। আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠে তারা।

হঠাৎ কানে এসে পৌঁছে এক আত্নচিৎকার। ৩-৪ জন শিক্ষার্থী ভাটার স্রোতের কবলে পড়ে। তাদের 'বাঁচাও, বাঁচাও' চিৎকারে পরিবেশ হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে ওঠে। কিছুক্ষনের মধ্যে সবাই ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে এক অসহনীয় দৃশ্য। একটু দূরে সাগরের ঢেউয়ের উপর কালো কালো কয়েকটা মাথা দেখা যাচ্ছে আর তাদের উঁচু করা বাঁচতে চাওয়া হাতগুলো ভাটার টানে ভেসে যাচ্ছে আরো গভীরে। কিন্তু কারো যেন করার কিচ্ছু নেই।
কেউ কেউ ছুটে গেল তাদের দিকে। পাশের কাউকে একটু উপরে এনেই আবার ছুটে যায় অন্যকে উদ্ধারে। কারো চেষ্টা সফল হলেও অনেকেরই উদ্ধার সম্ভব হয়নি। যারা কোনমতে বেঁচে ফিরে এসেছে তারা বালুর উপর শুয়ে পড়ে হাপাচ্ছে আর বমি করছে। রুপা আপু আর কাউসার ভাই কে তারা উদ্ধার করে আনলেও ততক্ষনে তারা আর নেই। চোখের সামনে প্রিয় সহপাঠীদের করুণ মৃত্যুর দৃশ্য দেখে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
সাগরে ভেসে থাক মুখগুলো আর দেখা যাচ্ছে না। গাছের ডাল আর লুঙ্গি দিয়ে স্ট্রেচার বানিয়ে কাউসার ভাই আর রূপা আপুকে নিয়ে সবাই ফিরে আসছে হল লঞ্চঘাটের দিকে। অসহ্য যন্ত্রনা, চুপচাপ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে সবাই। তখনো কেউ জানে না কতজনকে ফেলে এসেছে তারা।

লঞ্চে এসে এক এক করে নাম ধরে ডাকা হচ্ছে সবাইকে। খুজে না পেলে ধরে নেয়া হচ্ছে তাদেরকে গ্রাস করে নিয়েছে ঐ রাক্ষুসে সাগর। শেষে দেখা যায় ৯জনকে আর খুজে পাওয়া যায়নি। সর্বনাশী সাগর গ্রাস করে নিয়েছে মোট ১১টি তরতাজা প্রান। যার মধ্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের নয়জন আর বাকি দুইজন বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের।

লঞ্চ চলতে শুরু করল খুলনার দিকে। নীচতলায় দুটি নিথর দেহকে চাদরে ঢেকে রাখা। কেউ বসে, কেউ রেলিংয়ে হেলান দিয়ে, কেউ শুয়ে সবাই চুপচাপ। মাঝে মাঝে ডুকরে কেদে উঠছে কেউ কেউ। এমন পরিবেশ যেন স্বান্তনা দেবার কেউ নেই।

যাদের ওরা হারিয়ে এসেছেঃ

তৌহিদুল এনাম (অপু): চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া অপু (পৈত্রিক নিবাস ফেনী) মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা ও ঢাকা আইডিয়াল কলেজ শেষে ভর্তি হয় খুবির স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে। চমৎকার আবৃতি করতেন। লেখালেখিও করতেন। খুবির প্রথম নাট্য সংগঠন নৃ-নাট্যের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম সদস্য।

আব্দুল্লাহ-হেল বাকী: খুলনা পাবলিক কলেজে স্কুল এবং খুলনা সুন্দরবন কলেজে শিক্ষা শেষে খুবির স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ভর্তি হন। ভালো ছড়া লিখতে পারতেন। বই পড়া ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন।

কাজী মুয়ীদ ওয়ালি (কুশল): আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা তে স্কুল জীবন পরে কোডা কলেজ অব অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট কলেজ শেষে খুবিতে। ভালো ছবি আকতে পারতেন, বই পড়তেন। মেডিটেশন করতেন নিয়মিত।

মোঃ মাহমুদুর রহমান (রাসেল): চট্টগ্রাম কলিজিয়েট স্কুল ও চট্টগ্রাম হাজী মোঃ মহসীন কলেজ শেষে খুবিতে। জন্মস্থান চাঁদপুর। টেবিল টেনিস খেলা পছন্দ করতেন।

মোঃ আশরাফুজ্জামান (তোহা): স্কুল-কলেজ কাটিয়েছেন হারম্যান মাইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর, ঢাকাতে। জন্মস্থান ছিল যশোরে। ভাল গাইতেন এবং গীটার বাজাতেন।

আরনাজ রিফাত (রূপা): জন্ম ঢাকায়। স্কুল কেটেছে কাকলী বিদ্যালয় এবং কলেজ বদরুন্নেছা কলেজ, আজিমপুর ঢাকায়। ভালো রান্না পারতেন, অন্যকে রেধে খাওয়াতে পছন্দ করতেন।

মাকসুমমুল আজিজ মোস্তাজী (নিপুন): জন্ম দিনাজপুরে। স্কুল কেটেছে দিনাজপুর জিলা স্কুলে পরে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে। সর্বদা হাশিখুশি থাকতেন। ভালো কবিতা আবৃতি করতেন ও লিখতেন। বিতর্ক ও আড্ডায় টার জুরি ছিলনা।

মোঃ কাউসার আহমেদ খান: স্কুল বনানী বিদ্যা নিকেতনে পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজ। জন্ম ঢাকায়। কম্পিউটারে গেমস খেলতে পছন্দ করতেন। স্বল্পভাষী ছিলেন, বই পড়তেন আর ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন।

মুনাদিল রায়হান বিন মাহবুব (শুভ): জন্মস্থান যশোরে। স্কুল-কলেজ কেটেছে দাউদ পাবলিক স্কুল ও কলেজ, যশোরে। বই পড়তেন খেলাধূলা করতেন। ঘুরে বেড়ানো ছিল তার শখ।

শামসুল আরেফিন শাকিল: বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে পড়াশুনা করতেন। স্কুল কেটেছে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে নটরডেম কলেজে। তিমি ছিলেন ভ্রমনপ্রিয়। দেশের প্রায় ৪০টি জেলা ভ্রমন করেছেন। অকাতরে বন্ধুদের সুখে-দুখে পাশে দাড়াতেন। কটকা সৈকতে দুর্ঘটনায় ১১জনকে উদ্দেশ্য করে টঙ্গীতে উনার বাবা একটা স্মৃতিসৌধ করেছেন।

সামিউল হাসান খান: আইডিয়াল প্রি-ক্যাডেট স্কুল কলেজ, ঢাকা ও নটরডেম কলেজ শেষে পড়াশুনা করতেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে। জন্মস্থান ঢাকায়। সাধারণ জ্ঞান ভাল পারতেন, বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিতেন। কবিতা লিখতেন।

তোমরা আছো প্রতি হৃদয়ের বিশ্বাসে
তোমরা আছো সকল হাসিখেলা আর উচ্ছাসে..

সাজিদ রিয়াজের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×