আজকাল সন্তান জন্ম নিতেই তাকে কোন পেশায় দেখতে চায় তা ঠিক করে ফেলে। মায়ের সন্তানের নাম আগে না। আগে আসে তার পেশা। আমার মেয়ে ডাক্তার হবে। তারপর নাম। নামেও কি ফেশন। এক আপুর বাচ্চা হয়েছে, আমার বন্ধুর বোন, তার নাম চাই, এমব নাম যা আগে কেউ রাখেনি। আপু বলেছে uncommon নাম খুঁজে আনো। আমি গুগলে সার্চ দিলাম এক বন্ধু বিয়ে করেছে। প্রেমের বিয়ে। অনার্স পাস করেনি। আগেই বিয়ে করেছে। মেয়ে হয়েছে আমাকে ফোনে বলে দোস্ত আমাকে কিছু নামের এডভাইস দে। তোর ভাস্তির নাম রাখবো। এমন নাম যা আগে কেউ রাখেনি। আমি গেলাম গুগল ট্রান্সলেট এর কাছে, বাংলা লিখে তার আরবী মিনিং বের করে দিলাম।। বন্ধু বলে আরে মামা তুই এই নাম কোথায় থেকে পাইলি? সুন্দর নাম। নতুন নাম!! আমি মনে মনে বলি হায়রে মানুষ। নাম নিয়ে এতো??
)স্কুলে ভর্তি বয়স ৩ থেকে চার হতেই বাবা মা যুদ্ধে নেমে যান। তার সন্তান ভালো স্কুলে যাবে। কেউ যদি বলে আরে বাচ্চার বয়স হয়নিতো। তাহলে বেশি খাবার খাওয়ানো শুরু করে। বলে আরে তারাতারি বড় হতে হবে। ৪,৫ হতেই প্লে, কেজি স্কুলে যাওয়া শুরু।
তার পরেই স্কুলে গিয়ে সব মা তার বাচ্চা নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয়। আমার ছেলে কেন কম নাম্বার পেল। ওর ছেলে কেন বেশি নাম্বার পায়? আমি কি স্কুলে কম বেতন দেই? নিজের চোখে দেখা এসব কাহিণি। কি করে ভুলে যাবো?
২)তারপর বেসরকারি স্কুল গুলো নানান প্রতিযোগিতা করে মেধা প্রতিযোগিতা । এটা নিয়ে কত বাবা মা যে কত শিক্ষক কে পিয়িয়েছে। তার কোন হিসাব নাই। প্রশ্ন একটাই আমার বাবু কেন পেলনা ?
৩)সরকার নতুন এক জামেলা এনেছে সেটা হল পি এস সি পি এস সি তে মা বাবা এতো সিরিয়াস ভাবে বাচ্চার পিছনে লাগে। আর এমন মানসিক অত্যাচার করে যা বলার নাই। কিছু মা বাবা প্রতি বিষয়ে দুইটা টিউশন টিচার রাখে। একটা দিনে। একটা রাতে। এই যদি হয় পি এস সির অবস্থা তাহলে অন্য গুলো কি হবে?
৪)আরো আছে অনেকে চায় তার সন্তান ক্যাডেট কলেজে পড়া লেখা করবে, সন্তান চায়না। বাবা মা চায়। আমি এমন বাবা মা দেখেছি। তার ছেলে বলে ওইখানে খুব আইন। নিয়ম কানুন। আমি যাবোনা সেখানে। না তার বাবা মা তাকে কোচিং প্রাইভেট, বাসায় প্রাইভেট, আরো কত কি। সব অবস্থার পর ছেলেটি টয়লেট যাওয়ার সময় নাই। খেলাধুলা করবে কখন?
৫) জে এস সি, ও এস এস সি এ প্লাস পেতেই হবে। সাথে থাকতে হবে গোল্ডেন নামক সিলমোহর। না হলে হবেনা। ভালো স্কুলে চান্স পেতে হবে, ভালো কলেজে ভর্তি হতে হবে। না হলে এলাকার উমুক ভাবির সামনে মুখ দেখানো যাবেনা। তার ছেলে পাবনা ক্যাডেট কলেজে পড়ে। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে পড়ে আরেকজন। তুই কি করস?
৬) এইস এস সি প্লাস না পেলে যাবি কোথায়? ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া কোন কিছু হওয়াযাবেনা। হয় মেডিকেলে না হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কোন ভার্সিটির টিকেট চাই ই চাই। ভুয়েটে, ডুয়েট, চুয়েট।
আসল কথা হল তারা ওই জিনিস কোনদিন খেয়াল করবেনা। তার সন্তানের সামর্থ কত। কেন সে পারেনা। এতো শিক্ষক রাখার পরেও সে কেন কম? তার চাওয়া কি? সে কি চায়? কতটুকু দেয়ার সামর্থ আছে তার। না শুধু পাল্লা দিয়ে আগে যাও। অনেকে বলবে আরে এসব
তো সন্তানের ভালোর জন্যই করে। হুম ভালোর জন্যই করে। দেশে ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার বাদেও আরো লোক বাস করে ভাই। আরো পেশা আছে। না নিজের সন্তানকে ডাক্তার হতেই হবে। মরে হলেও।
আর না হয় ভালো ভার্সিটির ছাত্র হতেই হবে। ভালো চাকরি ভালো এই ভালো সেই। না হয় সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। সমাজ আর সমাজ।
আমি এক আন্টিকে জিজ্ঞাস করেছিলাম আচ্ছা মেয়েকে ডাক্তার ই হতে হবে কেন? বলে অন্য ডাক্তার ভালো চিকিৎসা করেনা। নিজের ঘরে একজন ডাক্তার থাকাটা ভালো। আর শুন পাশের বাসার ভাবির ছেলে রংপুর মেডিকেলে পড়ে । আমারটা কলেজে পড়বে কেন? মান সম্মান নিয়ে টানাটানি এইটাই বুঝলাম। তার অন্যের উপর বিশ্বাস নাই। আবার আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাও এমন।
আসল কথা এইটা যে ছেলে মেয়েকে তারা নিজেদের সখ আর আহ্লাদ পুরন করতে খুব ব্যবহার করে।
কোনদিন যদি সেই সন্তানের জন্য সন্তানের স্কুলে গিয়ে সবার সামনে অপমানিত হতে হয়। তাহলে তারা কি করবে ভাবা যায়? সেদিন হয় হাতে পারবে না হয় ভাতে। মানসিক অত্যাচার তো আছেই। এর পরেও বাবা মার ;কোন অপরাধ নাই। তারা ফেরেস্তা।এইটা জানেন মা বাবার মানসিক অত্যাচার কত ভয়ংকর হয়? আর সেটা কত খারাপ প্রভাব পরে সন্তানের উপর? না যে দেখে জানে তারাই বুঝবে।
প্রশ্ন উত্তাপন করা সহজ। তার উত্তর কত কঠিন তা কেউ জানেনা । অনেক পিতা মাতা নিজের জীবনে কিছু না পারলে সন্তানকে তা হিসেবে গড়ে তুলতে এমন শুরু করে। যেনো দেশে যুদ্ধ হচ্ছে। আমার এক ভাই। মামাতো ভাই। সে জীবনে এতো ভালো ছাত্র ছিলনা। তার চরিত্র ও এতো ভালো ছিলনা। বাবার সাথে জগড়া করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সে এখন তার ছেলেকে ভালো মানুষ, বানাতে খুব উঠে পরে লেগেছে। কারো সাথে মিশতে দেয়না। বাসায় বসে পড়ায়। আর ছেলেকে মিতব্যয়ী বানাতে চায়। সারাদিন সংসারে অভাব না থাকলেও ছেলের মুখে অভাব আর অভাব। ছেলেকে ডাক্তার বানাবে। আর তার বাবাকে ভাইদের দেখিয়ে দিবে। কিভাবে ছেলে।মানুষ করতে হয়।। এটা তার একটা যুদ্ধ। নিজের পরিবারের বিরুদ্ধ। যার হালাল বলির খাশি হল তার সন্তান।
এক আন্টির মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে। সে এখনি ভার্সিটির ভর্তির জন্য যে গাইট বই সাধারণ জ্ঞান বই এসব মুখস্থ করায় তার মেয়েকে। তার মেয়েকে নাকি ঢাকা ভার্সিটি পড়তেই হবে। কারন? সে পারেনি। তাই। আহা মেয়েটির খেলা , বাহিরে যাওয়া সব বন্ধ ১৪৪ধারা জারি থাকে তার উপর। আর না পড়লে কি মার মারে। কি গালি গালাছ করে। ছি ছি ছি। মেয়েকে ভার্সিটিতে পড়াতে ইচ্ছুক ঠিক আছে। তাই বিলে পঞ্চম শ্রেণীতেই তাকে কেন ভার্সিটি ভর্তি কোচিং এর বই পড়তে হবে? কেন এখন থেকে সেসব গ্রামার, ট্রান্সলেট পড়তে হবে? এর কোন মানে হয়?
আবার কিছু পিতা মাতা নিজের চাকরি, ক্যারিয়ার নিয়ে এতোই ব্যস্ত থাকে যে সন্তানকে গৃহ শিক্ষক, আয়া, আর টিউটর এর হাতে বন্দি করে ফেলে। পড়া লেখা, আর পড়া লেখা। মানে সেটা কোন মানুষ না। সন্তান নামের একটা রোবট।
কিছু পরিবার আছে সন্তানের পড়া লেখার শুধু খরচ দিবে। আর কোন খোজ খবর নাই। নিজেরা দুই জন ই চাকরিজীবী। বাবাও অফিস নিয়ে ব্যস্ত মাও অফিস নিয়ে ব্যস্ত। সন্তান একটা গাজা খায় আরেকটা ইয়াবা বাবা নিয়ে ব্যস্ত। টাকা পয়সা যা যায় বাবা দেয়। মাও খুব যত্নবান হাওয়ার অভিনয় করবে। আর ছেলে ক্লাস এইটে উঠেই ১৮+ হয়ে যায়। বিয়ের পরের কাজ আগেই সমাধান করে ফেলে। এই হল এদের অবস্থা। অথচ বাবা মা দুইজন এমন অভিনয় করবে যেন, তারা খুব দায়িত্ববান।
আমরা কথায় কথায় অনেক কিছুই বলতে পারি। সমাধান নাই কারো কাছে। যারা এসবের ভিক্টিম তারাই জানে জীবন কেমন।।।
একটা কথা না বললেই নয়। সন্তান জন্ম দেয়া খুব সহজ। তাতে বিয়ে না করলেও হয়। তবে একজন ভালো পিতা হওয়া অনেক কঠি
।একজন আদর্শ মা হতে সবাই পারেনা। আপনার পাশের বাসার ভাবির ছেলে ডাক্তার তাই বলে আপনার ছেলেকে ডাক্তার হতে হবে কেন?আপনার ছেলে ভালো ক্রিকেটার ভালো বাস্কেট বল খেলোয়াড় বা ভালো গায়ক হতে পারেনা কেন? আপনার ছেলে কেন একজন চিত্রকর হতে পারবে না? যে ছেলেটি ৮বছর বয়সে মানুষ আকতে পারে। এর চাইতেও ভালো আকতে পারে। তাকে আপনি কেন ডাক্তার বানাতে চান? এইজন্য যে পাশের বাসার আবুলের পোলা ইঞ্জিনিয়ার। আর আপনার মেয়েকেও হতে হবে। ছি।।। এইরকম পিতা মাতা না হয়ে যান আপনারা নিজেদের জিজ্ঞাস করুন। কে বলেছে আপনাদের পিতা হতে? মাতা হতে। কে বলেছে আপনাদের মতো লোকের সমাজে বিয়ে করে বাচ্চা জন্ম দিতে?
আপনারা হাজার প্রশ্ন করবেন। আমি হাজার প্রমাণ সামনে খারা করবো। হাজার প্রমাণ, আপনারা এই জীবন নিয়ে খেলে বন্ধ করুন। দয়া করে বন্ধ করুন।।
আপনার সন্তানকে আপনি এমন একটা ঘোড়ার রেসে পাঠাতে চান বা পাঠাচ্ছেন যেখানে তার যাওয়ার ইচ্ছা আছে কিনা সেটা সে জানে না। জানার আগেই আপনি তার চিন্তা চেতনাতে এমন কথা প্রবেশ করিয়ে দেন যে সে দুনিয়াটাকে একটা গাড়ির রেসের মাঠ ভাবে। আপনার সন্তান স্কুলে মোবাইল নিয়ে যায়। আপনি জানেন না। স্কুলে পর্ণ নোংড়া ভিডিও দেখে আপনি জানেন না। আপনি শুধু কোন খবর নেনে?
তার রোল কত হল? কত নাম্বার পেল? কতটা প্রাইজ , নিয়ে এল? তার চরিত্র কেমন হচ্ছে দেখার সময় নাই। কি করে কোথায় যায় সময় নাই জানার। জি পি কত আসে তা জানতে চলে যান।
বাচ্চাদের স্কুলে গিয়ে আপনাদের দেখেছি অনেক। আপনারা সেদিন মারামারি শুরু করে দেন যেদিন বাচ্চার স্কুলের রেজাল্ট আসে। সেই রকম একটা অবস্থা করে ফেলেন। বাচ্চারা খেলায় ব্যস্ত, আর বাচ্চার মা টেনশনে রক্ত চাপে মরে মরে অবস্থা। কি করবে না করবে কোন হুশ নাই।
খবরের তথ্য অনুযায়ী অরিত্রির বাবা কে স্কুলে ডাকা হয়।আপনি শুধু যা দেখেছেন তাই বললেন। তার বাবা কে ডেকে এনে অপমান করার পর তার বাবা মা বাসায় নিয়ে গিয়ে তাকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করেনি এর প্রমাণ কি?? কিছুই বলেনি এর।প্রমাণ কি??? এমন ও হতে পারে, হ্যা তোমার জন্য অপমানিত হতে হয়? এতো বড় হয়েছ কাজের কোন দায় নাই। আরো কত কি। আমাদের পিতা মাতা সাধারণত এসব ই করে। আরো হতে পারে তার পিতা সব দোষ তার মায়ের উপর ঝেড়েছে। আরে তোমার মেয়ের জন্য আজ আমাকে এতোগুলো মানুষের সামনে অপমানিত হতে হল। ভাই এইটাই বাস্তব। উপন্যাস না। আমাদের বাংলাদেশে এসব হয়। একটা প্রবাদ আছে, জি কে মেরে বৌকে শেখানো। ভাই প্রবাদটা এমনি হয়ে যায়নি। তার পিতা মাতা তাকে চাপ দেয়নি তার কি প্রমাণ আছে??
আমাদের শিক্ষা, আজকের পিতা মাতাদের কম্পিশন, আর আমাদের এই সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সমাজ ই এই অরিত্রীদের খুনি। এরা চায় ভালো সার্টিফিকেট , একটা ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার। সন্তান মানুষের মতো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠুক এটা চায়না ।। এরা ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের রোবট বানাতে চায়।।আগে বাবা মা, শিক্ষক হাতে পারতো। এরা মানসিক অত্যাচার করে। নানান ভাবে অত্যাচার করে। আগের দিনে এমন রেইস হতোনা। এখন শিশুর সাথে পিতা মাতারা রেইসে নামে। পড়া ভালো না হলে ওই পোলার, মাইয়ার খবর আছে। বুঝিনা ক্লাসে ১০০ ছাত্র থাকবে। ১০০জনের কি ১ রোল হবে? না। আকজের মা বাবা তার সন্তানের চাইতে তার মেধা তার সার্টিফিকেট আর তার পেশাকে বড় করে দেখে।
তার কথা এলাকার সবার কাছে বলতে পারবে এমন রেজাল্ট চাই সবার
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২০