চর্বির তৈরি তুলতুলে এবং স্পঞ্জ ধরণের এক বস্তু এই মস্তিষ্ক। বিশ্বাস করা কষ্ট যে, আঙ্গুলের সামান্য ছোঁয়ায়ও এর আকার পরিবর্তিত হতে পারে, এতোটাই স্পর্শকাতর তিনি! তাই নিরাপদ থাকার জন্য এরা খুলির ভেতরে এক ধরনের ঘন তরলে (সেরেব্রো স্পাইনাল ফ্লুয়িড) ভেসে থাকে, যা এদেরকে খুলির স্পর্শ থেকে দূরে রাখে। প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের গড় ওজন প্রায় দেড় কেজি। মহিলা এবং পুরুষের মস্তিষ্কের আয়তন যথাক্রমে ১১৩০ এবং ১২৬০ ঘন সেন্টিমিটারের আশেপাশে। তবে ব্যক্তিবিশেষে প্রচুর পার্থক্য দেখা যায়। আয়তনের পার্থক্য মহিলা এবং পুরুষের আইকিউ কিংবা বোধশক্তিতে কোন প্রভাব ফেলে না।
১) মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন একই গতিতে চলাচল করে না। এদের এক একটির স্পীড এক এক রকম। এদের কোনটি ০.৫ মিটার/ সেকেন্ড আ চলাচল করে। আবার কোনটি ১২০ মিটার/সেকেন্ড এ চলাচল করে।
২) মস্তিষ্ক নিজে কোন ব্যথা অনুভব করে না। আপনার হাত, পা বা শরীরের কোন অঙ্গে কেটে গেলে বা ব্যথা পেলে মস্তিষ্ক তা অনুভব করে না। মস্তিষ্ক অনেকগুলো টিস্যু, নার্ভ ও রক্ত দ্বারা বেষ্টিত। তাই বলে এই নয় যে, আপনি মাথায় ব্যথা পাবেন না। তবে মস্তিষ্ক কষ্ট অনুভব করতে পারে না।
৩). আমাদের ব্রেইন এর ৮০ ভাগই পানি। আপনি হয়ত টিভি তে দেখেছেন যে, ব্রেইন দেখতে অনেকটা জেলির মত গোলাপি রং এর। যাতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও রক্তের তৈরি টিস্যু জালিকা রয়েছে। তাই যখনই আপনি নিরুধ-বোধ করবেন তখনি পানি খেয়ে নিবেন।
মস্তিষ্ক আর জিনের DNA – দুটোর ভাষা এক নয়। মস্তিষ্কের ভাষাকে বলে নিউরন। আমরা যা শিখি, তা লেখা হয় নিউরন নামক কোষে। এরা হলো সংযোগকারী উপাদান। প্রতিটি সংযোগ = এক বিট তথ্য।
কতটা নিউরন আছে আমাদের? হয়তো ১০০ বিলিয়ন। সংখ্যাটা আকাশগঙ্গার নক্ষত্রের সংখ্যার কাছাকাছি। আর নিউরন সংযোগের সংখ্যা প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন। এমনকি ঘুমের মধ্যেও মস্তিষ্ক দোলে, পিটপিট করে, মিটমিট করে। চালাতে থাকে মানুষের জটিল কাজগুলো; যেমন – স্বপ্ন দেখা, মনে রাখা, অনুমান করা। ভাবা যায় আমাদের চিন্তা, লক্ষ্য, কল্পনা – এগুলোর বাস্তব ও বস্তুগত অস্তিত্ব রয়েছে? জ্বী হ্যাঁ, শুনতে অদ্ভুত শোনালেও অবস্তুগত বিষয় হিসেবে পরিচিত এই ব্যাপারগুলোর বাস্তব ও বস্তুগত অস্তিত্ব রয়েছে।
জিজ্ঞেস করতে পারেন, “চিন্তা” জিনিসটা দেখতে তাহলে কেমন?
বেশ, উত্তর হবে – এটা শত শত তড়িৎ রাসায়নিক বিচ্ছুরণ দিয়ে তৈরি!
অনেক বছর ধরে একটা ধারণা প্রচলিত ছিল যে, মস্তিষ্কের কোষ নতুনভাবে উৎপাদিত হয় না। যে কয়টা নিউরন নিয়ে জন্মেছি, সে কয়টা নিউরন নিয়েই আজীবন চলতে হবে। কিন্তু এখন আমরা জানি যে, নিউরোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় সারাজীবনই নিউরন উৎপন্ন হতে থাকে।
আমাদের শরীরের নার্ভে মস্তিষ্ক থেকে সম্পূর্ণ শরীরে রক্ত চলাচলের গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭০ মাইল। এই কারনেই আমরা যেকোনো কাজের খুব তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া দিতে পারি। ভালো লাগা, খারাপ লাগা, কষ্ট পাওয়া, খুশি হওয়া ইত্যাদি সব অনুভব আমরা খুব জলদি ব্যক্ত করতে পারি।
. আমাদের ব্রেইন এর কার্যক্ষমতা প্রায় ১০ ওয়াট এর বৈদ্যুতিক বাতির মত। এর জন্যই বিভিন্ন কার্টুন এর ছবিতে দেখা যায় যখন সে চিন্তা করে তখন মাথার উপর একটি বাতি জ্বলে উঠে। একজন মানুষের মস্তিষ্ক তখনও একটি ছোট বাতির ন্যায় শক্তি জমা রাখে যখন সে ঘুমাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১২