শেষ পব’
লেকের পাড়ে বিভিন্ন লোকেশনে ঘূরাফেরা, নৌকা ভ্রমণ, শপিং সেন্টারে ঘুরেফিরে রাত ৮,৩০-এ গেলাম বন্ধুর বাসায়। বাসাটি চমৎকার লোকেশনে, বাংলো টাইপ ডুপ্লেক্স বাড়ি। এক বুড়ীর বাড়ি, দুতলায় তিনটা রুম একটায় বুড়ি থাকে, একটায় আমার বন্ধুটি থাকে, অন্য রুমটি পরিপাটি করে গুছানো কিন্তু কেউ থাকে না। বুড়ী অবশ্য সপ্তাহে দু’একদিন থাকে। আমরা আসব বলে সেদিন বুড়ী ছিল না, কাছা কাছি আর একটি বাড়ি আছে ওনার, ওখানেই বেশি সময় কাটে তার। বাড়ির নীচ তলায় ড্রয়িং রুমের পাশে সুন্দর করে বাচ্চাদের জিনিস দিয়ে সাজানো একটা রুম, বুড়ীর নাতি নাতনিরা প্রায়ই তার কাছে বেড়াতে আশে, তাই তাদের জন্য এই সুন্দর ব্যবস্থা। আমি অনেকটা আশ্চয’ হয়ে গেলাম যে বুড়ী তার বাড়ি শেয়ার করে, ইটালীতে এটা মনে হয় জীবনেও সম্ভব না। বেশির ভাগ ইটালীয়ানরা ফরেইন লোক দেখতে পারেনা কিন্তু আমরা যারা ছাত্র, পরিচয় পেলে অবশ্য খাতির করে।
সবাই মিলে রাতে খিচুরি, ইলিশ ভাজা আর মুরগী রান্না করে খেলাম। খুব মজা হল, অনেকদিন পর পিকনিক পিকনিক ভাব ছিল। অনেকদিন পর কার্ড খেল্লাম, ভাবিকে অবশ্য খেলাটা মনে করিয়ে দিতে হল। উনি রাজশাহী ইউনিভারসিটির ছাত্রী থাকা অবস্থায় কার্ড খেলতেন, কাজেই খুব বেশি সময় লাগেনি রিক্যাপ করতে। রাত একটায় ঘুমাতে গেলাম।
পরদিন সকাল ৯,০ টায় সবাই ঘুম থেকে উঠলাম। নাস্তা শেষ করে রেডী হয়ে আবার বের হলাম ঘুরতে। আজকের টাগের্ট জাতিসংঘ কমপ্লেক্স ও সংলগ্ন পার্ক এবং ওল্ড টাউন। এক বিশাল কমপ্লেক্স এবং সুন্দর সাজানো পার্ক। পার্কটির একপ্রান্ত লেকের পাড় পয’ন্ত বিস্ত্ৃত।পার্কটিতে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ পরিক্ল্পনা করে লাগানো এবং অনেক ফুলের বাগান। বসন্তকাল তাই সারি সারি টিউলিপ ফুটে ছিল, দেখলে মন ভরে যায়। ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যাবেন চার পাশ তারের নেট দিয়ে ঘেরা একটি জায়গা যেখানে কয়েকটি ময়ূর, সারশ, কিছু হাস ও নাম না জানা কিছু পাখি। জায়গাটি তারের নেট দিয়ে ঘেরা কিন্তু উপর খোলা।এত লোকের ভীড়েও পাখিগুলো উড়ে যায় না। পার্ক ঘুরতে ঘুরতে এক্ সময় চলে এলাম জাতিসংঘ ভবনের সামনে। ভবনের সামনে এক বিশাল চত্তর । ওখানেই আছে সেই বিখ্যাত ভাস্কর্য - কাঠের তৈরি বিশাল আকৃতির চেয়ার যার একটি পা ভাঙ্গা। যুদ্ধে মাইন ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরুপ নাকি এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।ভবনে ঢোকার রাস্তার দুই পাশে দুই সারি করে মোট চার সারি লাইনে সকল সদস্য দেশের পতাকা উত্তোলন করা আছে। ভবনটিকে সম্মূখ করে দাড়ালে হাতের ডান পাশের দ্বিতীয় সারিতে পেয়ে যাবেন বাংলাদেশের পতাকা। আমরা থাকতে থাকতে দেখলাম ভবনের সামনের চত্বরে সম্ভবত কিছু নাইজেরিয়ান লোক জড় হয়েছে তাদের কিছু দাবী দাওয়া নিয়ে ওখানে বিক্ষোভ প্রদশর্ন করার জন্য, যাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের ব্যানার।
ঘুরতে ঘুরতে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেল, তাই চলে এলাম শহরের কেন্দ্রে এক রেস্ট্রুরেন্টে। এখানে বলে রাখা ভাল যে জাতিসংঘ কমপ্লেক্স ও সংলগ্ন পার্কটি শহরের একপাশে অবস্থিত। খাওয়া দাওয়া সেরে বন্ধু সুমনে পৌছে দেয়ার জন্য আমরা গেলাম জেনেভা ইউনিভারসিটিতে। ইউনিভারসিটি টি অনেক বড় মানে এখানে অনেক বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয় কিন্তু ক্যাম্পাসটা এত বড় নয়। যদিও ইউরোপে আমাদের দেশের মত বড় ক্যাম্পাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুব কমই আছে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরটি একপাক ঘুরে বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম ওল্ড টাউনে। আমাদের হাতে সময় ছিল কম, ফিরতে হবে তাই ওল্ড টাউনে না নেমে গাড়ী নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে চলে এলাম জ়েনেভা সিটি থেকে বের হয়ে ফ্রান্স বডা’রে। আবার শুরু হল পথ চলা ইটালীর ছোট শহর পিয়াসেন্সার উদ্দেশ্যে। সাথে নিয়ে এলাম এক অভাবনীয় ভাল লাগা।