মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
দর্শন ও সাহিত্যে এক প্রবাদতুল্য বাঙালী ছিলেন দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ চৌধুরী। তিনি আমাদের জাতি-স্বত্তার স্বরূপ উদঘাটনে প্রাণপন চেষ্ঠা করেছেন। তাঁর এই অনবদ্য অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছিলেন একাধারে জাতীয় অধ্যাপক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা, সুলেখক, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সাংবাদিক। তিনি আমাদের জাতীয় জীবনে এক নক্ষত্র পুরুষ এবং উপমহাদেশের অন্যতম একজন দার্শনিকও বটে। বাংলা সাহিত্য ও দর্শনে জীবদ্দশায় তিনি যে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন তার জন্য সকলের কাছেই সমান ভাবে সমাদৃত। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ তাঁর দর্শন ও সাহিত্যে আমাদের জাতি-সত্তার সরূপ উদঘাটন করেছন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তাঁর ক্ষুরধার লেখনিতে ইসলামী বিশ্বজনীন জীবন দৃষ্টি ও সামগ্রীক জীবন দর্শনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠেছে। তিনি এ দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কর্মকান্ডে একাগ্রচিত্তে মনোনিবেশ করার প্রয়াস ব্যক্ত করেছেন। তাঁর স্বীয় সম্প্রীতি ও উদারতার মাধ্যমে সকল ধর্মাবলম্বী মানুষকে এক কাতারে আনার প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছিলেন। ইসলামের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ তাঁকে সংকীর্ণতার উর্ধ্বে এনে সর্বজন শ্রদ্ধেয় করে তুলেছিল। তাঁর জীবন দর্শন সচেতন মানুষের মানবিক কল্যাণের আলোকবর্তিকা হিসেবে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে। বিশ্বের অনেক দেশেই দার্শনিক হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। অনেক দেশে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য প্রদানের জন্য। তার লেখনী ছাপা হয়েছে বিশ্বের কমপক্ষে দশটি দেশে। সঙ্গতঃ কারণেই দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বহুপ্রজ সৃষ্টিশীল, বহুমুখীন কর্মকুশলী, দার্শনিক এক প্রবাদতুল্য বাঙালি প্রতিভার নাম।
গেল ২৫ শে অক্টোবর ছিল দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ চৌধুরীর ১১২ তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে ‘দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ফাউন্ডেশন’ জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনসভার আয়োজন করা হয়। সংগঠনের পরিচালক ও দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের কনিষ্ঠ কন্য বিশিষ্ট সাহিত্যিক সাদিয়া চৌধুরী পরাগের সভাপতিত্বে তাঁর জীবন ও কর্মের উপর বিষদ আলোচনা করেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষাবিদ, সাহিত্যক ও দার্শনিকরা। কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে তিনি যেখানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়ার পানাইলে তাঁর জীবন ও কর্মের উপর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠার ফসল সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুঁথিকাগার সিলেট কেন্দ্রিয় মুসলিম সাহিত্য সংসদেও ছিলনা দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের স্মৃতি চারণ মূলক কোনো উদ্যোগ। ১লা নভেম্বর এই মনীষার ১৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ একাধারে দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্য গবেষক,ইতিহাসবেত্তা, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, কথাসাহিত্যিক, কবি, সুবক্তা, রাজনীতিক প্রভৃতি অনন্য প্রতিভাধর একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী গুণী এই সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় সম্ভবত ১৯৯৭/৯৮ সালে। তখন তিনি বয়সের ভারে নুজ¦্য। অবস্থান করছিলেন নিজ বসত বাড়ী দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়ার পানাইল জমিদার বাড়ীতে। তিনি এমনি একজন একাগ্রচিত্ত ব্যক্তি যিনি বিছানায় শুইয়েও তখন লিখেছেন। মনেপ্রাণে জাতীয়তাবাদের আদর্শ লালন করেছেন আমৃত্যু। তাঁর সাহিত্য ও দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল শ^াশত ধর্ম ইসলামের জাগরণ নিয়ে।
কেননা দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ গ্রিসের দার্শনিক মতবাদের সাথে ধর্মের স¤পর্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। এই উপমহাদেশে তিনিই প্রথম জোরের সঙ্গে বলেছিলেন, দর্শনের ছাত্র মাত্রই নাস্তিকতা নয়। দর্শনে তিনি যে মুসলিম জাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। তিনি সুফী মতবাদের ওপরও প্রচুর গবেষণা করেছেন। মধ্যযুগে মুসলিম লেখকদের সাহিত্যচর্চার অন্যতম সাধনা ছিল ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী প্রচার করা। ইসলাম স¤পর্কে অজ্ঞতা দূর করে সমাজকে ইসলামের ছায়াতলে আবদ্ধ কল্পে তারা যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাতে বাংলা সাহিত্যও হতে পেরেছিল সমৃদ্ধ। তারা ধর্মীয় বিষয়াদি অনুবাদ করে ধর্মসাহিত্যের বিকাশ ঘটিয়েছেন। একই সাথে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জনগণকে সচেতনও করেছেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বাংলা ১৩১৩ সনের ৯ কার্তিক শুক্রবার ইংরেজি ১৯০৬ সালের ২৫ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলার তেঘরিয়া গ্রামে তার নানা মরমি কবি হাসান রাজার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দেওয়ান মোহাম্মদ আসফ ছিলেন সুনাগঞ্জ জেলার বর্তমান দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্তর্গত দোহালিয়ার জমিদার এবং একজন জাতীয়তাবাদী জননেতা। তাঁর মাতা রওশন হুসেইন বানু। (হাসান রাজার জ্যেষ্ঠা কন্যা)। তিনি ছিলেন একজ ‘বিদুষী’ মহিলা। মাতার দিক থেকে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ মরমি কবি হাসান রাজার উত্তরাধিকারী হয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের জীবন ও কর্ম বিষয়ক এক নিবন্ধ হতে জানা যায়, তিনি দোহালিয়ার মধ্য ইংরেজি স্কুল, সুনামগঞ্জ জুবিলি হাইস্কুল, সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে অধ্যয়ন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ফারসিতে লেটারসহ প্রবেশিকা পরীক্ষা, ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং ১৯৩০ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩২ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে দর্শন শাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর তিনি ৩/৪ বছর উত্তর ভারত ভ্রমণ করেন। দেওয়ান আজরফ ১৯২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাসান রাজার দ্বিতীয় পুত্র গনিউর রাজার কনিষ্ঠা কন্যা সাজিদুন্নেসা খাতুন চৌধুরীরানীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দেওয়ান আজরফের স্ত্রী বিগত ১৯৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর ৬ পুত্র ও ২ কন্যা রেখে পরলোকগমন করেন। ১৯৩৬ সালে মুহাম্মদ নুরুল হক ও অন্যান্যদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় দেওয়ান আজরফ সিলেটে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ' গঠন করেন। দেওয়ান একলিমুর রেজা এবং মুহাম্মদ নুরুল হক যথাক্রমে সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদক হন। দেওয়ান আজরফ ১৯৪০-৪৩ সালে এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক পরিমন্ডলেও দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ছিলেন একজন অগ্রগণ্য এক জননেতা। ১৯৪৬ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং আসাম প্রাদেশিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও দেওয়ান আব্দুল বাসেত তখন আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদক। এ বছরই দেওয়ান মোঃ আজরফ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আসাম প্রাদেশিক আইন পরিষদের (আপার হাউজ) সদস্য নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বনিদ্বতায়। ১৯৪৬ সালে আসামে কংগ্রেস মন্ত্রিসভা গঠিত হলে আসাম প্রদেশের বহিরাগত মুসলমানদের উপর ভীষণ অত্যাচার করা হয়। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার বিরুদ্ধে প্রথমে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন এবং কংগ্রেস কর্তৃক প্রবর্তিত ১৪৪ ধারা অমান্য করার জন্য মুসলিম লীগ নেতা ও কর্মীগণকে আহবান করেন। দেওয়ান আব্দুল বাসেতকে সঙ্গে নিয়ে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ তখন কামরূপ ও দড়ঙ্গ জেলার খাড়–পুটিয়া, গোলন্দি, কালাইগাঁও, বড় পেটা প্রভৃতি স্থানে আন্দোলনে নেতৃত্বদান করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন। আন্দোলন দমনে নিয়োজিত আসাম রাইফেলস থেকে তার প্রতি গুলীবর্ষণ করার সময়ে পুলিশ সুপার শামসুদ্দীন হাজিারিয়া রাইফেলের নল আকড়ে ধরায় তিনি সে যাত্রায় রক্ষা পান। আন্দোলনের জন্য ভাসানীকে সর্বপ্রথম তেজপুরে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে একদল যুবক নেতা ও কর্মী আসামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। এরূপ সক্রিয় আন্দোলনে শরীক হবার দরুন ১৭ মে আব্দুল বারী চৌধুরী, আব্দুল হাইসহ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফকে শিলচরের ফাটকবাজারে গ্রেফতার করা হয়। তৎকালে প্রয়াত আজরফ চৌধুরী শিলচরে দশ মাস কারাদন্ড ভোগ করেন।
ভারত বিভাগের পরে সিলেটে এক গণভোটের আয়োজনসহ এই অঞ্চলের মানুষের অধিকার আদায় ও সংকটে তিনি দুর্বার আন্দোল-সংগ্রামে ব্রতী হন। রাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলনেও ছিলেন তিনি অগ্রজ।
দেওয়ান মোঃ আজরফও এ সময় মুসলিম লীগের প্রাদেশিক কমিটির সদস্য হন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অীধবেশনে কুমিল্লার প্রখ্যাত আইনজীবী মিঃ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজিরি সঙ্গে বাংলাভাষাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষারূপে গণ্য করার দাবি জানালে পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী স্যার খাজা নাজিম উদ্দীন এবং গণপরিষদের স্বীকার মৌলভী তমিজ উদ্দিন খান তার বিরোধিতা করে যে বক্তব্য পেশ করেন তাতে পূর্ববাংলার সর্বত্র আগুন জ্বলে ওঠে। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়াদী উদ্যান) এক জনসভায় উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কায়েদে আজমের এ আকস্মিক ঘোষণায় কোনো প্রতিবাদ না হলেও তার দু'দিন পর (২৪ মার্চ) কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পুনরায় এ উক্তি করলে ডিগ্রি গ্রহণকারী কিছু ছাত্র তার প্রতিবাদ করেন। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ তখন ছিলেন নওবেলাল নামক পত্রিকার স¤পাদক। সে পত্রিকায় গণপরিষদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের বক্তব্যসহ জিন্নাহ সাহেবের ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। তার ফলে সিলেটের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী নওবেলাল তথা দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ এবং মাহমুদ আলীর ওপর ক্ষেপে যায়। তারা উভয়ে মিলে তৎকালীন গোবিন্দ চরণ পার্কে যে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন, তাতে দেওয়ান অহিদুর রেজা ও মকসুদ আহমদ নামে একজন ছাত্র উপস্থিত ছিলেন। এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী হঠাৎ সেই সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে মকসুদ আহমদকে ধরে নিয়ে ভীষণ প্রহার করে। ট্রাক ভর্তি একদল লোক মানিকপীরের টিলাসংলগ্ন নওবেলাল' অফিসে উপস্থিত হয়ে উর্দু ভাষা সমর্থনকারীদের পক্ষে ¯ে¬াগান দিতে থাকে। এ সময় দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বা মাহমুদ আলীর পক্ষে সিলেটে চলাফেরা করা ভীষণ সংকটজনক ছিল। প্রায়ই সংবাদ আসতো তারা যেকোন সময় আক্রান্ত হতে পারেন। তা সত্ত্বেও তারা বাংলা ভাষার পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যান।
দেওয়ান মোঃ আজরফ ১৯৫৯ ও ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান দার্শনিক কংগ্রেসের ধর্ম ও দর্শন শাখায় সভাপতিত্ব করেন। পরবর্তীকালে তিনি পাকিস্তান দার্শনিক কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ ও ১৯৭০ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা লাভের পর তিনি বাংলাদেশ দর্শন সমিতির সহ-সভাপতি এবং ১৯৮৪ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি হজব্রত পালন করেন। অল্প বয়স থেকেই দেওয়ান আজরফ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। ১৯৪০ সালে তার প্রথম গল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে ৬৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এখানে তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের একটি তালিকা প্রদত্ত হলো : (১) তমদ্দুনের বিকাশ, (২) সত্যের সৈনিক আবুজর, (৩) ইতিহাসের ধারা, (৪) নতুন সূর্য (গল্প গ্রন্থ), ৫. ব্যাকগ্রাউন্ড অব দি কালচার অব বেঙ্গল, (৬) জীবন সমস্যার সমাধানে ইসলাম, (৭) ফিলোসফী অব হিস্টোরি, (৮) সাইন্স এন্ড রেভেলিউশন, (৯) ইসলামী আন্দোলন যুগে যুগে, (১০) আবুজর গিফারী (ইংরেজি), (১১) ইসলাম ও মানবতাবাদ, (১২) সন্ধানী দৃষ্টিতে ইসলাম, (১৩) দর্শনের নানা প্রসঙ্গ, (১৪) আজাদী আন্দোলনের তিন অধ্যায়, (১৫) আমাদের জাতীয়তাবাদ, (১৬) মরমী কবি হাসন রাজা, (১৭) ইতিহাসে উপেক্ষিত একটি চরিত্র, (১৮) ইসলামিক মুভমেন্ট, (১৯) ধর্ম ও দর্শন, (২০) অতীত জীবনের স্মৃতি, (২১) নয়া জিন্দেগী (উপন্যাস), (২২) বিজ্ঞান ও দর্শন (৩ খন্ডে), (২৩), অতীত দিনের স্মৃতি (২৪) সিলেটে ইসলাম। তাঁর অসংখ্য গ্রন্থ এখনও অপ্রকাশিত রয়েছে।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহিত্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্ব¡পূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে আন্তর্জাতিক মুসলিম সংহতি পুরস্কার, নাসির উদ্দীন স্বর্ণ পদক (১৯৮৪), ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বর্ণপদক (১৯৮৯), মহান একুশে পদক (১৯৯২), মাওলানা আকরাম খাঁ স্বর্ণপদক (১৯৯৩), জালালাবাদ স্বর্ণপদক (১৯৯৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৯১), ভাসানী পুরস্কার (১৯৯৫), কবি মোজাম্মেল হক পুরস্কার (১৯৯১), শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকর এবং স্বপ্নাবেশ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৩ সালে সরকার এই মহান ব্যক্তিত্বকে শিক্ষা, সমাজ সংস্কৃতি ও দর্শনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত করেন।
দেশের খ্যাতিমান এই দার্শনিক ১৯৯৯ সালের ১ লা নভেম্বর সবাই কে কাঁদিয়ে পরলোক গমন করেন। তাঁর চলে যাওয়ায় বাংলা সাহিত্যে যে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছিল তা কখনো পূরণ হবার নয়। তিনি চলে গেলেও তাঁর সৃষ্টিশীল দর্শন ও সাহিত্য কর্মের কারণে যুগ-যুগান্তর অবধি বেঁচে তিনি থাকবেন আমাদের মাঝে।
পরিশেষে বলতে চাই সার্বজনীন চিন্তার কীর্তিমান পুরুষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের সৃষ্টিশীল লেখনি ও তাঁর লালিত স্বপ্নগুলো ধরে রাখতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। তিনি যেখানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়ার পানাইলে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ স্মৃতি সাহিত্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্র অথবা পাবলিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২০