শিরো নাম হীন অভিব্যক্তি ৷৷
______________________________________________________
জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েও ব্যবসা হয়। নানা প্রলোভনে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এক শ্রেণির অসাধু মুক্তিযোদ্ধাদের নেতা ও লোভী দায়িত্বশীল, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সিন্ডিকেট সুযোগে চক্র গড়ে তোলেছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার এখনো নীরব দহনের শিকার হচ্ছেন। অধিকন্ত টাকার ছড়াছড়িতে অনেকে যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।
খতিয়ে দেখাগেছে, বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতিবাচক কাজের অজুহাতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সংশ্লিষ্ট জনেরা অসহায় দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে নানা ভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। সঠিক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই থেকে শুরু করে, সরকারি ভাতা, লোন গ্রহণ সহ সরকারি নীতিবাচক সিদ্ধান্ত গুলো কে পুঁজি করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
#আমাদের দোয়ারাবাজার উপজেলা মুক্তিযুদ্ধর স্মৃতি বিজড়িত এক জনপদ। ১৯৭১ সালে উপজেলার বাঁশতলা_ হকনগর ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার। সঙ্গত কারণেই ওই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাও বেশি। প্রায় আট শত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাস ভূমি হলো আমাদের দোয়ারাবাজার উপজেলা। আমাদের এই জনপদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যাঁরা সারা বাংলাদেশের উচ্চ শিখরে পৌছিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন সদ্য প্রয়াত একাত্তরের সংগ্রামী নারী, বীরঙ্গনা কাকন বিবি বীরপ্রতিক। মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক, আব্দুল মজিদ বীরপ্রতিক ও আব্দুল হালিম বীরপ্রতিক।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নানা কারণে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাও তালিকা ভুক্তি করণ করতে পারেননি। কেননা তৎকালে অনেকে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজাকার, আলবদর ও পাক দোষরদের রোষানলে পড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়েছে। উপজেলার মহব্বতপুর এলাকার আশক আলী তাদের মধ্যে একজন। অন্য দিকে অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না করে এমন কি একাত্তরে প্রকাশ্যে দিবালোকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান করেও পরবর্তী সময়ে সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকা ভুক্তি করিয়েছেন। কট্ররপন্থি একজন স্বাধীনতা বিরোধী, জীবন্ত একজন রাজাকার হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা! দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরসিংহ গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার মৃত আলাউদ্দিন এরই জ্বলন্ত প্রমাণ। আজো ওই রাজাকারের পরিবার মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।
#অপর দিকে সরকারি নীতিমালা বহির্ভুত ভাবে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা সহযোগিতা করেছেন। চিন্তা চেতনা ও মননে যাঁরা স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন তাদের অনেক কে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্বাক্ষী, মুক্তিযুদ্ধ কালীন কমান্ডার সহ সরকারের নিযুক্ত কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় দায়িত্বশীলরা। এর উদাহরণ উপজেলা সদরের অ্যাডভোকেট পরিতোষ চন্দ্র রায়। খতিয়ে দেখাগেছে, তিনি যে তালিকা নম্বর দেখিয়ে ভাতা নিচ্ছেন তা আদৌ তার তালিকা নম্বর নয়। অন্য এক উপজেলার প্রকৃত এক মুক্তিযোদ্ধার নম্বর দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সুবিধা নিচ্ছেন। কিন্ত তিনি একাত্তরে মনে প্রাণে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়কও ছিলেন বটে।
সরকারের সাম্প্রতিক সময়ের নীতমালা অনুযায়ী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে নাম মাত্র সূদে লোন দিচ্ছে। এ সুযোগ নিতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকেও (সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা_কর্মচারী, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা সদস্য ) সিন্ডিকেট কে দিতে হচ্ছে উৎকোচ। লাখ প্রতি গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। প্রমাণ আছে ওই উপজেলার জনৈক এক ব্যাংক কর্মকর্তা শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের (নতুন_পুরাতন লোন গ্রহিতা) এর লোন সেকশন, আদান প্রদান সহ নানা অজুহাতে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের যোগ সাজসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
নিজে সুবিধা বঞ্ছিত হবেন, সমস্যার সৃষ্টি হবে নানা ভয় ও আতঙ্কে এমন পরিস্থিতির শিকার হলেও মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের কেউ মুখ খুলেন না।
কম ভোগান্তি পোহাতে হতে হয়নি নিজের সহযোদ্ধা নির্বাচিত দায়িত্বশীলদের কাছেও।
#অনুসন্ধানে দেখাগেছে, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার কে পুঁজি করে রাজধানী ঢাকাসহ গ্রাম পর্যায়েও কম ব্যবসা বাণিজ্য হচ্ছেনা! সন্তান কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা লীগ,প্রজন্ম লীগ প্রভৃতি নামীয় সংগঠনের দায়িত্বশীল সেজে অনেকে সরলতার সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার নানা সময়ে প্রতারিতও হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সংগঠন গুলোর কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় বিভক্তির ফলেও নানা অজুহাত ও প্রলোভনের মারপ্যাচে পড়ে চাঁদাসহ সদস্য ফি, ফরম ফি ইত্যাদিসহ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে দিতে হচ্ছে টাকা।
পরিশেষে বলতে চাই যাঁরা একাত্তরে নিজের জীবন বাজি রেখে মরন পণ লড়াই করে আমাদের একটি লাল সবুজের পতাকা দিলেন। যাঁদের কারণে আমরা পেলাম এক খন্ড স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আজ তারাও ভয়াল চরিত্রের অসাধু, লোভীদের কাছে ধরাসয়ী!
##আমাদের দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসিয়াল ফেসবুক আইডি হতে একটি সাবধানতা পোষ্ট দেখে এতো সব লেখা গুলো লিখতে হলো। ব্যক্তিগত কোনো ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীকে চিহিৃত বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নয়। পোষ্টটি পড়ে বিবেকে নাড়া দিল তাই কিছু লিখলাম। আশা করি সকলেই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৩