মুুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের একজন রক স্টার ছিলেন। তাঁর গীটারের প্রাণের মোর্ছনা ভেসে উঠতো। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী। আধুনিক বাংলা রকে তিনি ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। আইয়ুব বাচ্চু শুধু একজন গায়কই ছিলেন না গানের একনিষ্ট ভক্তও ছিলেন। জীবদ্দশায় অসংখ্য রিয়্যেলেটি শোতে বিচারকের আসনে দেখা গেছে তাঁকে। তিনি যে সব ধরণের গানের ভক্ত-শ্রোতা ছিলেন তা বিভিন্ন সময়ে পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি গান গাইতেন, গান নিয়ে গবেষণা করতেন, গানের প্রতি উৎসাহ যোগাতেন। একাধারে রক স্টার আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন গায়ক, লিডগিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, প্লেব্যাক শিল্পী। এল আর বি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন। তাঁর চলে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক ছিল বিদায় বার্তায় সরব। গুনী ওই শিল্পীকে নিয়ে নানা জনের নানা অভিব্যক্তি উঠে আসে লিখনীতে। সারা বাংলাদেশের শিল্পী-গায়ক, শ্রোতাদের মুখে শোনা যায় শোকের করুন সুর। আইয়ুব বাচ্চু হয়তো মহান রবের ঢাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন পরপারে। কিন্ত তাঁর রেখে যাওয়া কর্মের কারণে তিনি আজীবন বেঁচে থঠশবেন আমাদের মাঝে।
উল্লেখ্য, সঙ্গীতজগতে আইয়ুব বাচ্চুর যাত্রা শুরুহয় ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে। অত্যন্ত গুণী এই শিল্পী তাঁর শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি নামেও পরিচিত। তার ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কন্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সঙ্গীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্টে চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার কন্ঠ দেয়া প্রথম গান হারানো বিকেলের গল্প। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রক্তগোলাপ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ময়না এর মাধ্যমে।
গিটারে তিনি সারা ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত ছিলেন। জিমি হেন্ড্রিক্স এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুনভাবে অণুপ্রাণিত।
তাঁর একক অ্যালবাম গুলো হচ্ছে-রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫),সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব, সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এছাড়াও ব্যান্ড অ্যালবাম, এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), ¯পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২), নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী, লাল বাদশা (১৯৯৯), আম্মাজান (১৯৯৯), গুন্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০), ব্যাচেলর (২০০৪), রং নাম্বার (২০০৪), চাঁদের মত বউ (২০০৯), চোরাবালি (২০১২), টেলিভিশন (২০১৩), এক কাপ চা (২০১৪) প্রভৃতি। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর আইয়ুব বাচ্চু ফুসফুসে পানি জমার কারণে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর বৃষ্পতিবার ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে সকাল ৯টায় তিনি মারা যান। তাঁর চলে যাওয়াতে বাংলা আধুনিক রকে যে শুণ্যতা সৃষ্টি হয়ে তা কখনো পূরণ হবার নয়। আমি এই গুনী কন্ঠ শিল্পীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৪৭