মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
পশ্চাদপদ জনপদের আদর্শ শিক্ষক ছিলেন আব্দুস শহিদ সমাস্টার। নৈতিকতা আর আদর্শের সংকটকালে নিজের সব টুকু বিলিয়ে দিয়ে হাওরপাড়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেন। ছিলেন পরোপকারী ও আত্মত্যাগী একজন সোনার মানুষ। তাই তো তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার সর্বজনের নিকট ছিলেন শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাত্র। অহিংসু প্রকৃতির ওই গুনী ব্যক্তি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শিক্ষকতায় নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। ছিলেন দক্ষ ও পরিশ্রমি একজন মানুষ গড়ার করিগর। মেধা ও শ্রম অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন হাওরপাড়ের মানুষের জন্য। যৌবনের শুরুতে পাবলিক হেলথে চাকুরীর সুবাদে হবিগঞ্জ থেকে দোয়ারাবাজার উপজেলায় স্বপরিবারে চলে আসেন। এখানকার অশিক্ষার বেড়াজালে বন্দি মানুষজনের করুন অবস্থা থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসেন। চাকুরী ছেড়ে নিজে শিক্ষকতার পেশায় আতœ নিয়োগ করেন। প্রথম দিকে তিনি সুনামগঞ্জের হুড়ার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার হাতেখড়ি তাঁর। পরে বদলি হয়ে নিজ এলাকায় টেংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে আসেন। এখানে শিক্ষাদানের পাশাপাশী তিনি শিক্ষার উন্নয়নে সুদূর প্রসারী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নিজের পকেটের টাকা এমনকি স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে স্কুল ঘর নির্মাণ করেন। বিদ্যালয়গৃহ পাঠদান উপযোগী করে তিনি হাওরপাড়ের শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের উদ্বুব্ধ করেন। শিশুদের বিদ্যানিকেতনে পাঠাতে নিজ এলাকার অভিভাবকদের সচেতন করে তোলেন। তাঁর হাতেগড়া এ অঞ্চলের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আজ নিজেদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। মৃত্যুর আগে তাঁর প্রবল ইচ্ছে ছিল হাওরপাড়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করবেন। নিজের পেনশনের টাকা দিয়ে জায়গা ক্রয় করেন দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের পূর্ব পাশে। এরই ধারা বাহিকতায় প্রিয় শিক্ষকের ইচ্ছে পুরণের জন্য তাঁরই শিক্ষার্থী বর্তমান নুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান সহ স্থানীয় শিক্ষানুরগাী ব্যক্তিদের আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় একটি বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নিজের ছাত্রদের মহৎ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে আব্দুস শহিদ মাস্টার সাধ্যমত গৃহ নির্মাণের জন্য টাকা দেন। তাঁর মৃত্যুর পর আলীপুর গ্রামের নিকট নির্জন হাওরপাড়ে তৎ সময়ের স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুহিবুর রহমান মানিক সোনালীনূর উচ্চ বিদ্যালয়’। ওই এলাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অসামন্য অবদান রয়েছে। অন্ধকারে সে আলোকবর্তিকা নিভে গেলেও তাঁর অবদানের কথা আজো মানুষ ভুলেনি। তিনি জীবদ্দশায় সকলের ভালবাসায় ছিলেন সিক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫