মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী ‘বীরপ্রতিক’। শিক্ষক,বর্ষিয়ান রাজনীতিক। ধার্মিক ও গম্ভীর প্রকৃতির ব্যক্তিত্ব তিনি। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হিসেবে সব সময় সবার নিকট সমাদৃত। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার এক সংগ্রামী গুনী ব্যক্তিও বটে।
যৌবনের শুরুটা শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে নিবেদিত রাখেন। উপজেলার বড়খাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে তার ক্যারিয়ারের সুত্রপাত। দেশ স্বাধীনের পুর্বে তিনি শিক্ষকতায় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। তখন থেকে এমএনএ আব্দুল হকের সহযোগিতায় তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত হন।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এপ্রিলের শুরুর দিকে পাক হানাদার বাহিনী যখন ছাতক দোয়ারাবাজার অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় হত্যাযজ্ঞের তান্ডব চালায় তখন ওই শিক্ষক আর বসে থাকতে পারেননি। এসময় সত্তোর এর নির্বাচন কে নিয়ে কবিতা লেখার অপরাধে জনৈক ওসমান গনি নামক এক পল্লী কবি কে পাক সেনারা নির্মম ভাবে হত্যা করলে প্রচন্ডভাবে দাগ কাটে তার হৃদয়ে। তখনি তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এমএনএ আব্দুল হকের পরামর্শে তিনি ভারতের মেঘালয়ে ‘ ইকো ওয়ান’ ট্রেনিং সেন্টারে প্রথম ব্যাচে ২৮ দিন যুদ্ধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে তাকে সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে সম্মুখ যুদ্ধ করার জন্য তাকে কোম্পানী কমান্ডার করে পাঠিয়ে দেয়া হয় উপজেলার বাংলাবাজার অঞ্চলে। ক্যাপটেন হেলাল উদ্দিন পিএসসির তত্তাবধানে তিনি ওই এলাকায় প্লাটুন তৈরী করে যুদ্ধ করেন। তার নামে ইদ্রিস কোম্পানী করে তিনি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
এসময় ইদ্রিস আলী ‘বীরপ্রতিক’ তার কোম্পানী ও সহযোদ্ধাদের নিয়ে উপজেলার টেবলাই, চানপুর, জয়নগর এলাকায় পাক বাহিনীর অবস্থানের বিপরীতে বান্কার স্থাপন করেন। তার নেতৃত্বে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের পাইপ লাইন কয়েকবার উড়িয়ে দেয়া হয়। সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজের বীরত্ব গাথা ইতিহাস তৈরী করেন জাতির শ্রেষ্ট সন্তান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ব্যাপক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীরপ্রতিক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। স্বাধীনতাত্তোর তিনি ফের একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পেশায় মনোনিবেশ করেন। ৯৫ সনে তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে কলেজে উন্নীত হলে তিনি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তারই আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় বড়খাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কলেজে উন্নীত হয় ।
২০১২ সালে তিনি অবসরে চলে আসেন। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলা আ’লীগের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে তিনি বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বর্তমানে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক, বড়খাল স্কুল ও কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি, বড়খাল জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এসোসিয়েশন কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তার রয়েছে ব্যাপক পদ চারনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০৮