এখনো চার ঘন্টা বাকি । কখন আসবে সেই ক্ষন । সময় হবে ১১ :৫৯ । আর তড়িঘড়ি শুরু হয়ে যাবে মাতৃকার । চলবে ১ মিনিটের তীব্র সে অপেক্ষা । ১২:০১ মিনিটের এই উদযাপনটা কখনো মিস হয় না তার ।
কি ভাবছেন তা জানতে পারি ?জন্মদিন, ভালবাসা দিবস ,Marriage Anniversary নাকি অন্য কোন বিশেষ দিন । উত্তরটা মেয়েটাও জানে না । কেক হাতে বসে আছে আনমনে । গুনে গুনে ৪২টা রঙ -বেরঙের মোমবাতি জালিয়েছে সে । বুঝতে পারছি জন্মদিন ভেবে ভুল ভাবনা শুরু হয়ে গেছে । সাধারনত জন্মদিনে প্রাধান্য পাওয়া দাম্ভিক মোমবাতিগুলোর অহংকারচ্যূত হয়েছে মাতৃকার তৈরি কেকটাতে । আজ মোমবাতিগুলো যেন নিষ্প্রয়োজন আর বিলাসিতার মূর্ত প্রতীক । আজকের দিনটার বিশেষত্ব কম কারন আজকের দিনটার মধ্যমনি নিজেও এই দিনটা নিয়ে মাতামাতি করার আদিক্ষেতা করে না ।
ভালবাসা দিবস বা Marriage Anniversary বা জন্মদিনের কথা ভুলে গিয়ে একবার প্রিয়তমার সামনে দাড়ানোর কল্পনা করবেন প্লিজ?? কি হলো,কৈফিয়ত দিয়ে দিয়েও ব্যর্থ আপনি ক্ষমার একমাত্র উপায় গিফটের জন্য দৌড় শুরু করেছেন তো ? না করলে দেরি করেন না Speed খেয়ে দৌড় শুরু করুন । নইলে কপালে কষ্ট আছে । তবে আজকের দিনের মধ্যমনির জন্য কিছু করতে হবে না আপনার সুস্থতাই তার যথার্থ পুরষ্কার ।
সৃষ্টিকর্তার কাছে একটা সুন্দর স্বপ্ন প্রাপ্তির দোয়া করছে সে । স্বপ্নে সে একদিনের জন্য আজ আবীর এর চরিত্রে অভিনয় করতে চায় । বিধাতা আজ তার স্বপ্নপ্রাপ্তিরইচ্ছা পুরন করবেন মনে হয় । মাতৃকার ঘুম আসছে............ ।
ঐতো আবীরের আম্মু নামায পড়ছে মোনাজাতের সময় এসে গেছে দেখি । আরে একি ওর আম্মু মনে মনে যে দোয়া করছে তা স্পষ্ট শুনছি আমি??"আল্লাহ আমার কলিজার টুকরাটাকে তুমি সুস্থ্য রেখো ।ওর স্বপ্ন গুলো সত্যি করে দিও মাবুদ । ও আমার হাতের খাবার ছাড়া কিছুই তো খেতে পারে না মাবুদ ওর কষ্ট করে সবকিছু খেয়ে পরে থাকার তৌফিক দিয়ে দিও । মাবুদ এইবার ওর আব্বুর ৫হাজার টাকা বেশি ইনকাম করার সুযোগ করে দিও ওকে একটা ভালো মোবাইল যেন কিনে দিতে পারি । মাবুদ চোখের পানি যদি লাগে আমার থেকে নিয়ে নাও, ওর চোখে পোকা পড়েও যেন চোখ থেকে পানি না পড়ে । ........"
দীর্ঘ ৮মিনিটের দরদভরা দোয়াতে প্রথম পুরুষের ( আমি, আমার) ব্যবহার নেই । দোয়া নেই নিজের একটা শাড়ীর জন্যও । আবীরের আম্মু বাসায় দেশি মুরগী ইলিশ মাছ আর আবীরের প্রিয় প্রিয় খাবার বাজার করা বন্ধ করে দিয়েছেন । রান্নার সময় চুরি করে দুই এক পিস খাওয়া হৃদয়ের মনি ছাড়া মা তার আজ কিছু খাবে না । প্রতিনিয়ত ফোনের পর ফোন আসে মায়ের । ভার্সিটি পড়ুয়া দুরে থাকা ছেলের জন্য শত ভীড়ের মাঝেও একা বসে থাকা হাজার টা মা আজ নিজের বুকের মানিককে নিয়ে হাজারটা চিন্তায় ব্যস্ত । ঐ ছেলেরা জানে কি, সে যখন পরীক্ষার হলে চিন্তিত থাকে,ব্যস্ত থাকে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে তখন তার মা জায়নামাযে,পথে-প্রান্তরে প্রবেশপত্র ছাড়াই কৃত্রিম পরীক্ষা দিতে থাকে ,থাকে হাজার গুন বেশি চিন্তায় বিভোর। এই মা-ই একমাত্র সত্ত্বা যে ব্যস্ত শুধু তার সন্তানের প্রতিটা বিশেষ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে ।
এদিকে আবীর ব্যস্ত তার নতুন মোবাইল প্রাপ্তির উপায় খুঁজতে খুঁজতে। সেও মাকে অনেক অনেক ভালোবাসে । তবে এই ভালবাসা অপ্রকাশ্য কারন মায়ের প্রতি ভালবাসা সবার থাকে স্বভাবতই থাকে । নতুন আসা প্রেমিকাকে কত নতুন নতুন প্রকারে ভালবাসা প্রকাশ করা যায় তার উপায় খুজতে কেউ কেউ মহাব্যস্ত ।
মায়ের প্রতি ভালবাসা সেটা কি প্রকাশের দরকার আছে? Mothers Day আজ Friendship,Valientaines আর হাজার প্রকার Day এর মাঝে জীর্নশীর্ন শ্বাস নিচ্ছে এবং নিবে ।
ঘুম থেকে উঠে ধরফড় করে উঠে মাতৃকা । ১২:৩০ বাজে । ইস দেরী হয়ে গেছে । মোমবাতি ধরানোর সময় ও শেষ ।
মা হারা মাতৃকা ক্লাসে অনেক কথা বলে নিশ্চুপ থাকা তার ধর্ম নয় ।বেদনা যার নিসঙ্গ সহচরী, অধিক বাক্যের আর্দতা তার মূল সঙ্গী ।আজ সে শান্ত । মাতৃকা তার নামের মধ্যেও মায়ের স্পর্ষ খোঁজে । সুপ্ত চোখের পানি যে ফারাক্কার চেয়ে শক্তিশালী বাধ দিয়ে আটকানো সেই বাধ আজ খুলে দেয় মাতৃকা । শুরু হয়েছে কান্নার বৃষ্টি, ছুটছে কান্নার পানি আর এই জলোচ্ছ্বাসে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে তার সমগ্র সত্ত্বা ।
HAPPY MOTHERS DAY কেন বলে আজকে ?মাতৃকা গলা ফাটিয়ে বলতে চায়,"আম্মু !! এই তোমার জন্য ই আজ আমি বাচতে চাই,তোমাকে অনেক ভালবাসি, নিজেকে Special ভেবে শিহরিত হতে চাই ।"
আজ কান্না করুক সে, আজ কান্না তার প্রয়োজন ।
তবু মাতৃকার মাতৃত্ব প্রাপ্তি যে অধরাই থেকে যায় ।
যাদের এই দিনেও নিজের জন্মধারীনি জনমদুঃখিনি মাকে নিয়ে ভাবার সময় নেই তারা অন্তত আজ ভাবুন । মা হারা হাজারো মাতৃকার চেয়ে সৌভাগ্যবান আপনি এই সৌভাগ্যের মূল্য দিন ।
বিঃদ্রঃ "আবীর" আর "মাতৃকা" নামটা কাল্পনিক ।