৩৬৫ দিন আগের কথা। আমি তখন আজকের এই দিনে বাংলাদেশে। স্পষ্ট মনে আছে দিনটার কথা। সবকিছু গুছিয়ে লাগেজ যখন রেডি আম্মু একের পর এক মনে করিয়ে দিচ্ছিল এটা নিছিস, ঐ টা নিছিস। আমি তখন মাথা নেড়ে হু হু করে শর্টকাট জানান দিয়ে যাচ্ছিলাম। আসলে তখন কি নিতে হবে বা নিতে হবে না এইসব চিন্তা মাথায় আসে নি।। মন শুধু বলছিল, "হাসনাত তুমি তোমার প্রিয় মানুষ গুলোকে মিস করতে যাচ্ছো"।
সবকিছু যখন ঠিকঠাক, বেড়িয়ে পরি নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্য। শেষ বারের মত নানু বুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কেঁদে কেঁদে দোয়া করছিল। সাথে আন্টিও।। আম্মুর চোখে কয়েক ফোঁটা জল দেখছিলাম।। তবে আমি সিউর সেগুলো ছিলো আনন্দের ও দুঃখের।। আনন্দের অশ্রুই বেশি ছিলো মনে হয়। কারণ, আমি বড় হওয়ার সাথে সাথে দেখছি, শিখছি আনন্দের অশ্রু নাকি চোখ বেয়ে নিচে পরে না শুধুমাত্র চোখের কোণে চিকচিক করে। হয়তোবা আম্মু আমাকে বুঝাতে চেয়েছিল,"দেখ। আমি কত শক্ত। তুই কেনো কান্না করিস। আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারলে, তুই কেনো পারবি না"....।।।
আমি সেদিনই বুঝতে পারি মায়েরা একই সময়ে কত ভাবে তাদের সন্তানদের সাথে অ্যাক্ট করে।। আর আব্বু তো মনে হয় আম্মুর থেকেও বেশি কান্না করছিল।। তবে আমার সামনে বা ফোন করে না।। ফোন করে শুধু সাহস দিতো।
এরপর সোজা চলে আসি এয়ারপোর্ট। এর মধ্যে গাড়িতে বসে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম সবার কাছে ফোন করে বিদায় নিতে।। যাদের কাছে ফোন করতে পারি নি তাদের কে অন্ততপক্ষে টেক্সট করি।। সারা রাস্তায় কানে হেডফোন লাগিয়ে ফুল বলিউমে শুধু মিনারের একটা গানই শুনছিলাম।। আর তখন আমার ছোট ভাই পাশের সিটে বসে দেখছিল তার বড় ভাই কিভাবে কাঁদে।। পিছনের সিট থেকে মামা কিছুই বুঝতে পারে নি।।
Emigration ক্রস করতে প্রায় ২ ঘন্টার মত লেগে যায়।। তখনও মনের মধ্যে কেমন একটা ভয় কাজ করছিল।।
এইবার অপেক্ষার পালা।। কখন United Air করে নতুন ডেস্টিনেশনে যাএা শুরু করবো।।
এরই মধ্যে একদৃষ্টিতে দেখছিলাম, একটা ছুটতে থাকা দুরন্ত শিশু, তার পেছনে ব্যস্ত মা, পেট কাঁপিয়ে হাসা মধ্যবয়স্ক লোক, চুইংগাম চিবোতে থাকা তরুণী, এয়ার লাইন্স গুলোর সার্ভিসিং এর মানুষ, সোনালী চুলো এক বিদেশিনী ঘুম ঘুম চোখ, কবুতরের জোড়ার মত এক দম্পতি, গুটিসুটি মেরে বসে থাকা খুব উদ্বিগ্ন চেহারার এক তরুণ।।
এরই মধ্যে স্ক্রিনে দেখতে পাই ৮ টার ফ্লাইট পিছিয়ে ১ টায় করা হইছে।।(বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান বলে কথা)। তবে সেদিন ওয়েটিংরুমে বসে দুর্দান্ত এক সাহসের কাজ করি।। কাউকে প্রথমবারের মত কাঁপা কাঁপা হাতে কল দেই। সে রিসিভও করে।। একই সাথে অনেকগুলো উপদেশ দেয় আর সবশেষে বলে, "আমি যে তোমাকে এতগুলো কথা তোমাকে বললাম, তোমার কি কিছু বলার নাই"??
সময়ের সাথে সে ও আজকে নাই।। খুব ভালো ও সুখে আছে মে বি।।
একবছরে সবকিছুই বদলেছে। বদলেছে কাছের মানুষগুলো। এটাই নিয়ম।।আরও পরির্তন হয়তো দেখবো।
সেই অপেক্ষায়।।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:০০