আমার এক কাছের বন্ধু।২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে।রেজাল্ট দেয়ার পর আইবিএ'র জন্য প্রস্তুতি নিলো।সে বছর হলোনা।অন্য কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দিলোনা।আবার প্রস্তুতি নিতে থাকলো।আস্তে আস্তে তার কনফিডেন্স লেভেল বাড়তে থাকলো।এবার আশা পূর্ণ হবে ভেবে এক্সামের জন্য দিন গুনতে গুনতেই একসময় জানলো যে আইবিএ'তে সেকেন্ড টাইম এডমিশন টেস্ট দেয়া যাবেনা।বেচারার মাথায় আকাশ মহাকাশ সব ভেঙ্গে পড়লো।শেষমেশ আইইউটি ভরসা হিসেবে নিলো।সেখানেও পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেলোনা।কি করে এখন।মিস্টে একটা সুযোগ আছে।কিন্তু বিধি বাম!! এক্সামের দিন সকালে এক্সিডেন্ট করে বসলো।হাসপাতালে রইলো দশদিন।ওখান থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলো।কিন্তু এরপর থেকেই চরম হতাশ হয়ে গেলো।ভাগ্যকে অভিশাপ দিয়ে এখন কবিতা লেখে বসে বসে।
তো বেচারা একদিন জিগ্যেস করে বসলো,'দুনিয়ার সবচেয়ে অভাগা কে বলতে পারিস?'। জবাবের অপেক্ষা না করে নিজেই বললো,'এইযে মূর্তিমান আমি'। আমি মাথা নাড়লাম,'উহু।তোর চেয়েও অভাগা আছেরে।' এই বলে তাকে এক দুর্ভাগা জ্যোতির্বিজ্ঞানীর কাহিনি বললাম।সে সেখান থেকে সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করলো।তো ভাবলাম আপনারাও বাদ যাবেন কেনো!! আপনাদেরও জানিয়ে দেই সেই বেচারার দূর্ভাগ্যের ফিরিস্তি।
গুইলিয়াম জোসেফ হায়াসিন্থ জাঁ বাপটিস্ট লে জেন্টিল ডে লা গ্যালাইসিয়েরে ।এই ইয়া বড় নামখানা আমাদের আলোচ্য ভদ্রলোকের।আমরা তাঁকে লে জেন্টিল সাহেব বলবো।জন্ম ১৭২৫ সালে।জাতে ফরাসী।কাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা আর অংক কষা।মানে জ্যোতির্বিদ।এগারোটি বছর বেচারা এমন কাজের পিছনে সারা দুনিয়া জুড়ে দৌড়িয়েছেন যেটা করতে পারলে অন্যভাবে তাঁর নাম ইতিহাসে লেখা হতো।
সেটা বলার আগে কিছু ভারী কথা বলে নেই।১৫৪৩ সালে কোপার্নিকাসের এবং ১৫৮৮ সালে টাইকো ব্রাহের কোপার্নিকাসকে সমর্থন করে দেয়া সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ থেকে বিজ্ঞানীরা ধারনা করলেন যে, পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী গ্রহ দুটির ট্রানজিট ঘটবে।ট্রানজিট মানে অতিক্রম। সূর্যকে পরিক্রমন করতে করতে এই গ্রহ গুলো এক সময় পৃথিবীর সামনে দিয়ে যাবে।তখন সূর্য থেকে আসা আলোর কিছু অংশ এই গ্রহ বা জ্যোতিষ্ক ঢেকে দিবে যার ফলে পৃথিবী থেকে এদের স্পষ্ট দেখা যাবে এবং শনাক্ত করা যাবে।
এই ট্রানজিটগুলো খুবই বিরল মহাজাগতিক ঘটনা।একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর এটি ঘটে থাকে।শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রে এ ক্রমটিকে এভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে যে, একটি শুক্র সরণের ঠিক ১০৫.৫ বছর পর একটি শুক্র সরণ হয় যার ঠিক আট বছর পর আরেকটি শুক্র সরণ হয় আবার এই শুক্র সরণটির ১২১.৫ বছর পর একটি শুক্র সরণ হয় এবং এর আট বছর পর আবার একটি শুক্র সরণ ঘটে এভাবে প্রতি ২৪৩ বছরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।শুক্র সরণ মানে শুক্রের ট্রানজিট।শুক্র সংক্রমণও বলা যায়।
কেপলার সর্বপ্রথম ১৬৩১ সালে শুক্রের ট্রানজিট পর্যবেক্ষন করলেও তাঁর পর্যবেক্ষনে ত্রুটি ছিলো।এর চেয়ে বড় কথা তিনি আট বছর পরের শুক্র সরণটি দেখে যেতে পারেন নি।কিন্তু তাঁর ক্যালকুলেশনকে সংশোধন করে পরবর্তী শুক্র সরণের দিন তারিখ সঠিকভাবে ভবিষ্যৎদ্বানী করতে সমর্থ হন আরেক প্রতিথযশা মেধাবী জ্যোতির্বিদ জেরেমিয়াহ হরকস্।তিনি সূর্য আর শুক্রের আকারের উপর ভিত্তি করে একটা প্যারালাক্স বা লম্বন পদ্ধতি ব্যবহার করেন।আর তা থেকে পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব সম্পর্কে একটা ধারনা দিতে সমর্থ হন।দুঃখজনক ব্যাপার হলো যে তাঁর ধারনা সঠিক ছিলোনা।এখন কি করা যায়?? আমাদের তো সূর্য আর পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্ব জানতেই হবে।তো সেই লক্ষ্যে আরেক বিজ্ঞানী জেমস গ্রেগরি তাঁর 'Optica promota' গ্রন্থে একটা ট্রানজিট শুরু ও শেষ হবার সময়কে হিসেবে ধরে আর সেই সাথে ত্রিকোনমিতির সূত্রকে কাজে লাগিয়ে একটা প্যারালাক্সের স্কেচ আঁকেন।এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ভুবনবিখ্যাত জ্যোতির্বিদ এডমন্ড হ্যালি ওরফে ধূমকেতু সাহেব ১৫৭৭ সালে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে বুধের ট্রানজিট নির্ভুলভাবে পর্যবেক্ষন করেন। তিনি ১৭১৬ সালে এক সম্মেলনে এই ধরনের ট্রানজিট পর্যবেক্ষনের উপর গুরুত্বারোপ করার করার জন্য সকল জ্যোতির্বিদদের অনুরোধ করেন।কারন এ থেকে সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্ব আরো নির্ভুলভাবে বের করা সম্ভব হবে।এবং আশা করেন যে পৃথিবীর সকল জায়গা থেকেই পর্যবেক্ষন কাজ পরিচালনা করা হবে।হ্যালি যদিও অনেকদিন বেঁচে ছিলেন তবুও তিনি ১৭৬১ সালে সংঘটিত শুক্রের ট্রানজিট দেখে যেতে পারেন নি।
১৭৫০ সালের দিকে জ্যোতির্বিদ মিখাইল লোমোনোসভ প্রায় শ খানেক বিজ্ঞানীকে ১৯৬১ সালের শুক্রের ট্রানজিট পর্যবেক্ষনের জন্য তাদের সেরা সেরা সব দূরবীন আর অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যাবার জন্য আহ্বান জানালেন।
এবার আসি আমাদের লে জেন্টিল সাহেবের কথায়। এতক্ষনের বকবকে তো ভুলেই গেছেন তাঁর নাম,না?? তো ইনি 'French Academy of Science' থেকে শুক্রের ট্রানজিট পর্যবেক্ষন করার জন্য নির্বাচিত হলেন।জেন্টিল ঠিক করলেন তিনি এই পর্যবেক্ষনের কাজ করার জন্য তৎকালীন ভারতের ফরাসী উপনিবেশ পন্ডিচেরিতে যাবেন।সেই লক্ষ্যে জাহাজে উঠলেন ১৭৬০ সালে। যেহেতু তখন সুয়েজ খাল বলে কিছু ছিলো না তাই তাঁকে আফ্রিকা ঘুরে ইন্ডিয়ার পথে যেতে হবে।বিশাল পথ পাড়ি দিতে হবে।প্রায় পনের মাসের জাহাজ ভ্রমন।আর ট্রানজিট হবে ১৭৬১ সালের জুন মাসে। তার আগেই তাঁকে পন্ডিচেরী পৌঁছতে হবে।
যাত্রাপথে তিনি থামলেন তখনকার 'Isle De France' বর্তমানে যা 'Mauritis' নামে পরিচিত। তিনি ১৭৬০ সালের মার্চে ফ্রান্স ছাড়েন আর মাউরিতিসে এসে পৌঁছেন সেই সালের জুলাইতে। এখানে বেশ কিছু কয়েকমাস দিন গুজরান করে ১৭৬২ সালের মার্চে পন্ডিচেরীর উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নেন। আর তখনি জানতে পারেন যে, পন্ডিচেরিতে ব্রিটিশ আর ফরাসীদের মধ্যে ধুন্ধুমার যুদ্ধ চলছে।ওখানে এখন যাওয়া নিরাপদ না।অনেক চিন্তা ভাবনা করে এবার তিনি একটা ফরাসী রণতরীতে উঠলেন।এটা যাচ্ছিলো নিউজিল্যান্ডের করোমানডেলে। হাতে আছে মাত্র তিন মাস।
কিন্তু এই না শুরু ভাগ্যের খেল।যুদ্ধজাহাজের ক্যাপ্টেন ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধের উন্নতির খবর শুনে জাহাজের নাক ঘুরিয়ে দিলেন আবার মাউরিতিসের দিকে।আর জেন্টিলকে জাহাজের উপর থেকেই শুক্রের ট্রানজিট পর্যবেক্ষনের মহামূল্যবান উপদেশ দিলেন। বেচারা জেন্টিল আর কি করে!!
জাহাজের উপর থেকেই কাজ চালালেন।কিন্তু জাহাজ তো নড়ছিলো সবসময়ই।সো লাভ হলোনা।মাপজোখ সঠিক হলোনা।তার পর্যবেক্ষন বৈজ্ঞানিকভাবে কোন কাজেই আসবেনা।হতাশ মনোরথে তিনি ফিরে এলেন মাউরিতিসে।
এবার সিদ্ধান্ত নিলেন যে আট বছর পরে আবার যে ট্রানজিট হবে তা তিনি এশিয়াতে থেকেই পর্যবেক্ষন করবেন।মানে এই আট বছর থেকে যাবেন পন্ডিচেরির আশেপাশে।আবিষ্কারের নেশায় মানুষ কত কিই না করে।বলে রাখা ভালো যে ১৭৬৯ সালের পর শুক্রের ট্রানজিট হবে আবার ১৮৬৯ সালে।মানে ঠিক একশ বছর পর। তাই জেন্টিলের হাতে আর একবারই সুযোগ আছে।
তো সময় যেতে থাকলো।তিনিও বসে রইলেন না। ভারত মহাসাগরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক তথ্য-উপাত্ত,প্রানীদের নমুনা এইসব সংগ্রহ করতে লাগলেন।মাটি, জোয়ার-ভাটা, চুম্বকত্ব, বায়ু, ইত্যাদি সম্পর্কেও পড়াশুনা চালালেন।সাথে ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যাটাও ঝালিয়ে নিলেন।মাদাগাস্তার দ্বীপে ঘুরাঘুরি করলেন এইসব কাজে।
সময় যায় আর শুক্রের সাথে তাঁর অ্যাপয়নমেন্টও এগিয়ে আসে।এদিকে একাডেমী ঘোষণা দিলো যে, ফিলিপাইনের ম্যানিলাই শুক্রের ট্রানজিট পর্যবেক্ষন করার জন্য সবচেয়ে আদর্শ জায়গা হবে।ম্যানিলা তখন ছিলো স্প্যানিশ উপনিবেশ।
জেন্টিল শেষমেশ ম্যানিলা যাবেন বলে ঠিক করলেন।১৭৬৬ সালে একটা স্প্যানিশ জাহাজে চড়ে চলে এলেন ফিলিপাইনে।কিন্তু ফিলিপাইনে দিন খুব একটা ভালো কাটলো না।সেখানকার স্প্যানিশ গভর্নর তাঁর সাথে বাজে ব্যবহার করলো এবং তাঁকে স্পাই ভেবে বসলো।ফলস্বরুপ ম্যানিলা থেকে বিতাড়িত জেন্টিল কোনমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরলেন আবার সেই পন্ডিচেরিতে। খবর এই যে,ইতিমধ্যে ফরাসী এবং ব্রিটিশদের মধ্যে একটা শান্তি চুক্তি হয়েছে।ব্রিটিশরাও তাঁকে সাদর আমন্ত্রন জানালো।এমনকি তাঁকে উন্নতমানের একটা টেলিস্কোপ ও অন্যান্য সব ব্যবস্থা করে দিলো।জেন্টিলের হাতে এক বছর সময়।তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।আবহাওয়ার প্রতিও নজর রাখছেন।
অবশেষে ১৭৬৯ সালের জুনের তিন তারিখ।ট্রানজিটের আগের দিন।ব্রিটিশ গভর্নরকে বৃহস্পতির দারুন সব ভিউ দেখিয়ে সন্তষ্ট করালেন তিনি। মোটামুটি সবকিছুই তাঁর এই পর্যবেক্ষনের অনুকুলে।ওইদিনের বর্ননা দিয়ে তিনি লিখছেন,'আমি খুবই উত্তেজিত ছিলাম।কোনমতে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম।কিন্তু কিছুতেই চোখ বন্ধ করতে পারছিলাম না।'পরদিন ট্রানজিটের সময়কাল জুড়ে হঠাৎ করেই সূর্যের সামনে কালো কালো মেঘ জমতে শুরু করলো।আস্তে আস্তে কুয়াশা আর মেঘে ঢেকে গেলো পুরো আকাশ।ট্রানজিট শেষ হলো আর আকাশও পরিষ্কার হয়ে গেলো।জেন্টিল হতাশায় নিমগ্ন হয়ে গেলেন। আট বছরের অপেক্ষায় পুরো ব্যর্থ হয়ে গেলো।তাঁর কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে আরো একটা ঘটনা ঘটলো।সেটা হলো সেদিন ম্যানিলার আকাশ একদম পরিষ্কার ছিলো।মানে ট্রানজিট পর্যবেক্ষনের জন্য পারফেক্ট।
তিনি তাঁর জার্নালে লিখলেন,'আমি প্রায় দশ হাজার লিগ(দৈর্ঘ্য মাপার পদ্ধতি। এক লিগ প্রায় তিন মাইলের সমান) অতিক্রম করেছি।অনেক পথ পাড়ি দিয়ে নিজের মাতৃভূমি থেকে এতোদূরে এসে রইলাম।পর্যবেক্ষনের সময় সূর্যের সামনে এক টুকরো কালো মেঘ দেখার জন্য?আমার কষ্ট আর ধৈর্য্যের ফলটাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবার জন্যই যেন এই মেঘের আবির্ভাব হয়েছিলো।'
এখানেই শেষ না।হতাশ,ক্লান্ত এবং ব্যর্থ জেন্টিল নয় বছর আগে ছেড়ে আসা নিজ ভূমিতে ফিরে যাবার জন্য রওনা দিলেন।আচ্ছা বলে নেই যে রওনা হবার আগে তিনি ডায়রিয়াতে ভুগে মরে যেতে বসেছিলেন।তো ফ্রান্সে যাবার পথে যাত্রাবিরতি নিয়ে থামলেন মাউরিতিসে।সাল ১৭৭০।এখানে কিছুদিন থেকে আবার রওনা হলেন।এবার জাহাজ 'কেপ অব গুড হোপ' দ্বীপের কাছাকাছি জায়গায় ঝড়ের কবলে পড়লো।এবং ভাঙ্গা নড়বড়ে জাহাজ আবার ফিরে এলো মাউরিতিসে।সাল ১৭৭১।
এদিকে এখানে এসে ইউরোপে ফিরে যাবার জন্য কোন জাহাজ পাচ্ছেন না।অনেক চেষ্টা আর খোঁজাখুঁজির পরে এক স্প্যানিশ ক্যাপ্টেন তাঁকে ইউরোপে নিতে রাজি হলো। এরপর কাডিজ নামক একটা বন্দর হয়ে ফ্রান্সে ফিরে এলেন ১৭৭১ সালের ৮ই আগস্ট।১১ বছর পর।১৪/১৫ মাসের দীর্ঘ যাত্রার পর।
কিন্তু না। এখানেই শেষ নয়।কাহিনী নাটকীয়তা এবার চরমে।
বহুদিন জেন্টিলের কোন খবর না পাওয়ায়া তাঁর আত্মীয় স্বজনরা ধরে নিলো সে মারা গেছে।সে এসে জানলো যে,তাঁর স্ত্রী অন্য একজনকে নিয়ে করে ফেলেছে।আর স্বজনরা তাঁর সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে।সেই সাথে একাডেমীতে তাঁর সদস্যপদও অন্য একজনকে দিয়ে দেয়া হয়েছে।
সম্পত্তি ফিরে পেতে জেন্টিল আত্মীয়দের বিরুদ্ধে মামলা করলো।তাঁকে প্রমান করতে হবে যে সে এখনো জীবিত।এই মামলা পরিচালনার জন্য যে টাকা দরকার তা ছিলো মামলা পরিচালনা করার জন্য তিনি যে অ্যাটর্নি নিয়োগ দিয়েছিলো তার কাছে।এই অ্যাটর্নি আবার তাঁর সাথে দেখা করতে আসার সময় ডাকাতদের কবলে পড়ে আর টাকা-পয়াসা সব খোয়ায়।
মামলা পরিচালনার টাকা না থাকায় জেন্টিল হেরে যায়।সম্পত্তি আর একাডেমীর সদস্যপদ হাতছাড়া হয়েই রইলো।বরং উল্টো তাঁকেই বিচারের রায়ে দন্ডিত করা হয়।
তিনি আবার বিচারের জন্য আবেদন করেন।এইবার রাজার সরাসরি হস্তক্ষেপে জেন্টিল তাঁর সদস্যপদ আর সহায়-সম্পত্তি ফিরে পান।কাহিনি শেষটুকু ভালোই।জেন্টিল বিয়ে করেন আবার এবং সেই সংসারে তাঁর একটা কন্যাসন্তান হয়।
তবে আরেকটু দুঃখের খবর দেই যে, তাঁর সংগ্রহীত সকল প্রাকৃতিক নমুনা মাউরিতিস থেকে প্রথমবার ফ্রান্সে আসার সময় ঝড়ে জাহাজ ঝড়ে কবলিত হওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়।আসলেই, অভাগা যেখানে যায় সাগর শুকিয়ে যায়।কিন্তু চেষ্টার ফল বৃথা যায়না আসলে।জেন্টিল যেমন রয়ে গেলেন পৃথিবীর ইতিহাসে।সাথে রয়ে গেলেন চাঁদের বুকেও।কিভাবে??
১৯৩৫ সালে, বিজ্ঞানীরা তাঁর নামে একটা লুনার ক্রেটার এর নামকরন করেন।লুনার ক্রেটার হলো চাঁদের পৃষ্ঠে থাকা বিভিন্ন গর্ত।
সর্বশেষ একটা কথা বলে নেই, আমরা কেউ কিন্তু আর শুক্রের ট্রানজিট দেখতে পারবোনা।মানে অতদিন বেঁচে থাকার গ্যারান্টি নেই কিনা তাই বলছিলুম আরকি।কারন শুক্রের শেষ ট্রানজিট হয়েছে ২০১২ সালের ৬ জুনে।আর পরবর্তী ট্রানজিট হবে ২১১৭ সালে এবং এর আট বছর পর ২১২৫ সালে।
তথ্যসূত্রঃ১/ The Ordeal of Guillaume Le Gentil
২/Guillame Legentil – the most unlucky astronomer ever?
৩/Born under a bad sign.
৪/Guillaume Le Gentil - Mourir deux fois en cherchant Vénus - LPPV.02 - e-penser
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬