মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটা বাজার। নাম 'ঊষাপুর বাজার "
এমনিতে সব পাওয়া গেলেও বাজারের আয়তন খুব বড় নয়।দু মিনিটেই এমাথা থেকে ওমাথায় যাওয়া যায়।দশ বারো খানা স্থায়ী দোকান।হাটবার বাদে বাকি দিনগুলোতে ওগুলোই খোলা থাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। নদীর এপাড়ের আশেপাশের তিন চার গ্রামের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপাতি কিনার এই একটাই বাজার।
টেইলার্স,সেলুন,মুদি ইত্যাদির দোকান ছাড়াও আছে একটা হোটেল।এক্কেবারে পাড়াগাঁর হোটেল বলতে যা বুঝায় এও তেমনি।নাম 'শান্তির হোটেল'।প্রোপাইটর মোঃ মিজানুর রহমান।ভাত মাছের হোটেল।হোটেল মালিক মিজানুর রহমান বদ প্রকৃতির লোক।সবকিছুতেই এক দু টাকা বেশি দাম রাখে।সারাদিন নিজের ঘুপচি কাউন্টারে বসে থাকে আর তীক্ষ্ণ নজর রাখে বাবুর্চি আর দুই পিচ্চি বেয়ারার উপর।উনিশ থেকে বিশ হলেই চলে বেদোম মার।মিজানের সুদের কারবারও আছে।হোটেলের কাজের সাথে তাও চলে সমানে সমান।বাজে ব্যবহার আর কালো মোটা চেহারার জন্যে জেলে দিনমজুর খদ্দেররা তাকে আড়ালে ডাকে 'কসাই মিজান'।
একদিনের হাটবার।চারপাশের গেরস্ত সব নিজের বিক্রয়যোগ্য মালামাল নিয়ে হাজির বাজারে।হই হল্লা আর কোলাহল বাজার জুড়ে।স্থায়ী দোকানের চারদিকে খোলা জায়গা জুড়ে অনেক অস্থায়ী দোকান।চলছে কেনা বেচা।জমে উঠেছে কসাই মিজানের হোটেলও। সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই এমন সময় উদয় হলো এক পাগলের।
চটের বস্তা পড়া এই পাগল হঠাৎ কোথেকে উদয় হলো কেউ বলতে পারল না।গা থেকে ভকভক করে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে।মানুষ দূর থেকে দাড়িয়ে জটলা বাঁধলো একে ঘিরে।শীর্ণ হাত খানা বাড়িয়ে কসাই মিজানের দিকে চেয়ে পাগল বললো,'দে।কিছু দে।'
পাগলকে কিছু দিয়ে দোকানের খাবার নষ্ট করতে রাজি নয় কসাই মিজান। তবুও সে পুরান ঠান্ডা একটা পরোটা এগিয়ে দিল।কিন্তু পাগল পেট দেখিয়ে বললো,'ভাত দে। ভাত '।
যে কিনা ভিক্ষুক দেখলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় সে দিবে এক অচেনা পাগলকে ভাত!!পাগলের আস্পর্ধা দেখে স্বভাবতই ক্ষেপে গেল মিজান।কোন কথা না বলেই শুরু করলো লাঠি দিয়ে মার। সে এক অমানুষিক মার।একেবারে রক্তাক্ত অবস্থা। মানুষ এদিকে মজা লুঠতে লাগল।সামান্য পাগলের প্রতি মায়া দেখানোর কোন ইচ্ছা তাদের মধ্যে দেখা গেলো না।
বেদম মার খেয়ে ওই ক্ষুধার্ত পাগল রক্তবর্ণ চোখে কসাই মিজানের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বললো বুঝা গেলনা।শুধু 'মর ' শব্দটা স্পষ্ট শোনা গেল।এরপর ওই পাগল সোজা গিয়ে ঝাঁপ দিলো নদীতে।
অনেক পেরিয়ে গেলেও পাগল আর উঠল না।হুট করে উদয় হয়ে ছোট্ট একটা ঘটনার জন্ম দিয়েই পাগল হারিয়ে গেল মেঘনার জলরাশির তলে।
এর কিছুক্ষণ পর।হঠাৎই নদী উত্তাল হয়ে উঠলো।প্রকৃতি যেনো পাগল হয়ে গেছে। বাতাসে গাছ পালা সব ভয়াবহভাবে দুলতে লাগলো। শুরু হলো প্রচন্ড ঝড়।মানুষজন সব বাড়ির পথে পালালো।হাট ওখানেই সেদিনকার মতো শেষ হলো।বাজার পুরা খালি হয়ে গেল।
পরদিন দেখা গেলো,সব দোকান ঠিকঠাক থাকলেও শুধু কসাই মিজানের হোটেলের কোন চিহ্ন নেই। এক্কেবারে হোটেলসহ পুরা জায়গাটা তলিয়ে গেছে নদীগর্ভে!!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৫৪