আমাদের মধ্যে কি কেউ নামকরা শেফ মানে বাবুর্চি হওয়ার স্বপ্ন দেখছি ? খাওয়া-দাওয়ার জন্য বিখ্যাত প্যারিসের সবচেয়ে বিখ্যাত বাবুর্চি? নাও চাইতে পারেন । রেমির কিন্তু স্বপ্নই হলো বিখ্যাত বাবুর্চি হওয়া। শুধু তাই না, ওর কিন্তু একটা গুণও আছে। রেমি আবার গন্ধ শুঁকেই বলে দিতে পারে, সেটা খেতে কেমন হবে। ভালো না খারাপ। এমনকি সেটা বিষাক্ত কি না, সবই সে বুঝে ফেলে। কিন্তু, বাবুর্চি হওয়ার জন্য ওর ছোট্ট একটা সমস্যা আছে। সমস্যাটা কি? ও যে একটা ইঁদুর! ইঁদুরদের তো রান্নাঘরে ঢুকতেই দেয়া হয় না! রান্না করা তো বহু দূরের কথা।
আর রেমির বাবা যেদিন প্রথম ওর এই ক্ষমতার কথা জানলো, সে কিন্তু খুবই খুশি হলো। আর ওকে একটা কাজও দিয়ে দিলো। ওদের কলোনিতে যতো ইঁদুর আছে, সবাই খাবার নিয়ে এসে আগে ওর কাছে যায়, ও গন্ধ শুঁকে বলে দেয় খাবারটা ভালো না বিষাক্ত। চিন্তা করো, যে কিনা বাবুর্চি হতে চায়, তার জন্য এটা কতোটা একঘেঁয়ে কাজ!
এমনি একঘেঁয়েমিতেই দিন কেটে যাচ্ছিলো ওর। এরমধ্যেই একদিনের একটি ঘটনায় ওর জীবনই পাল্টে গেলো। ওদের কলোনিটা ছিলো এক বুড়ির বাসার ছাদের ওপরের চিলেকোঠার মতো একটা জায়গায়। একদিন ও আর ওর ভাই এমিল খাবারের জন্য অভিযান চালালো বুড়ির রান্নাঘরে। আর কী কাণ্ড, বুড়ি ঠিকমতো কানে শোনে কি শোনে না, দেখে কি দেখে না, সেদিন ঠিক টের পেয়ে গেলো। আর যায় কোথায়? ইদুর ইদুর বলে বন্দুক হাতে নিয়ে ওদেরকে একেবারে গুলিই করতে শুরু করলো। আর ছাদে এমনই গুলি করলো, ছাদটা ওদের কলোনিশুদ্ধ নিয়ে ভেঙে পড়লো। সবাই মিলে ওদের ছোট্ট ছোট্ট সব নৌকা আর ভেলায় করে পালাতে শুরু করলো। রেমি কিন্তু যাওয়ার আগে একটা জিনিস নিতে ভুল করলো না। কী সেটা? ওর নায়ক অঁগাস্ত গুস্তো’র একটা বই ছিলো ওই বুড়ির বাসায়। গুস্তো সেই সময়ের ফ্রান্সের সবচেয়ে বিখ্যাত বাবুর্চি। সেটা তো রেমি নিলো, কিন্তু নিতে গিয়ে ও তো পড়লো কলোনির সবার চেয়ে পিছিয়ে। ওদিকে বুড়িও তো গুলি করছে তো করছেই। সবাই-ই পালাচ্ছে। রেমি যেহেতু পিছিয়ে পড়েছিল, তাই এক জায়গায় গিয়ে ও কলোনির সবাইকে হারিয়ে ফেললো। একা একা ওর তো মন একদম খারাপ হয়ে গেলো। আর তখনই গুস্তোর ভ‚তই মনে হয় চলে আসলো। ওকে বললো, এটাই তো ওর সুযোগ বাবুর্চি হওয়ার। ইঁদুরদের সঙ্গে থাকলে কি আর ও বাবুর্চি হতে পারবে? ওকে মানুষের কাছে যেতে হবে। ও-ও নতুন উদ্যমে চলতে শুরু করলো। আর একটু পরেই ও আবিষ্কার করলো, ও সারাটা জীবন কাটিয়েছে ওর স্বপ্নের শহরেরই নিচে, প্যারিসের নিচে। আর পাশেই, গুস্তো’র রেস্টুরেন্ট।
গুস্তো অবশ্য বেশ কিছুদিন হলো মারা গেছেন। রেমি তা জানতো না। আর গুস্তো’র রেস্টুরেন্ট এখন ওর সহকারী স্কিনার চালায়। ও কিন্তু খুব একটা সুবিধার লোক না। গুস্তোর উইল অনুযায়ী আর কয়েকদিনের মধ্যে গুস্তো’র কোনো উত্তরাধিকারী না আসলে গুস্তো’র বিখ্যাত এই রেস্টুরেন্টেরই মালিক হয়ে যাবে সে। এরমধ্যে একটা ছেলে আসলো ওর রেস্টুরেন্টে কাজ করতে। নাম লিঙ্গুয়িনি, গুস্তো’র সস শেফের ছেলে। ও আসলে রান্নার কিছুই জানে না। তারপরও ওর মা মারা যাওয়ার আগে একটা চিঠিতে ওকে কাজ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে গেছে। যদিও স্কিনারের কেন যেনো মনে হচ্ছিলো, ছেলেটার মধ্যে কোনো না কোনো সমস্যা আছেই, তবুও ওকে ক্লিনার হিসেবে নিতেই হলো, ওদের ক্লিনার যে কিছুদিন আগে কাজ ছেড়ে দিয়েছে!
এবার ঘটলো এক মজার ঘটনা। লিঙ্গয়িনি কাজ করতে করতে কী মনে করে স্যুপে যা ইচ্ছা তাই দিতে থাকলো। আর তাতে স্যুপ তো একদম যাচ্ছেতাই হয়ে গেলো। সেটা আবার রেমি দেখলো। ওকে গুস্তো’র ভ‚ত বললো, এটাই তোমার সুযোগ। যাও, স্যুপটা ঠিক করে দাও। ও-তো বুঝতেই পারছে না কী করবে। রান্নাঘরে ইদুর দেখলে তো বাবুর্চিরা ওকে ধরেই মেরে ফেলবে। কিন্তু স্যুপটাও তো ঠিক করা দরকার। এরমধ্যেই ও পা পিছলে রান্নাঘরে পড়ে গেলো। অনেক কষ্টে যখন বের হতে যাচ্ছে, তখন মনে হলো, ও তো বাবুর্চি। ও তো স্যুপটাকে এরকম বিতিকিচ্ছিরি অবস্থায় রেখে যেতে পারে না। ও স্যুপটা ঠিক করতে লাগলো। সেটা আবার লিঙ্গুয়িনি দেখে ফেললো। এদিকে সেই স্যুপ আবার অর্ডার করেছিলো এক খাদ্য সমালোচক। সে তো স্যুপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এমন স্যুপ নাকি সে আগে কখনোই খায়নি। আর সবাই-ই তো ভাবলো লিঙ্গুয়িনি-ই বানিয়েছে এই স্যুপ। আর তাতে স্কিনার তো আরো খেপে গেলো। পুঁচকে ছোঁড়া, সে আবার তার রেসিপির ওপর মাতব্বরি করে।
কিন্তু এই ফাঁকে রেমি আর লিঙ্গুয়িনির বেশ ভাব জমে গেলো। আর ওদের কিন্তু একজনকে ছাড়া আরেকজনের চলবেও না। কারণ, রেমি রান্না করতে পারে, লিঙ্গুয়িনি রান্নার ‘র’-ও জানে না। ওদিকে রেমি তো ইদুর! সে তো চাইলেও রান্না করতে পারবে না। কিন্তু রেমি লিঙ্গুয়িনিকে দিয়ে রান্না করাবে কি করে? কতোভাবেই না ওরা একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করলো, কিছুতেই কিছু হলো না। পরদিন কিন্তু হঠাৎ করেই ওরা খুব সুন্দর একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেললো। লিঙ্গুয়িনির চুলের দুটো গোছা ধরে ওকে পুরোপুরিই চালানো যায়। রেমি লিঙ্গুয়িনির বাবুর্চি টুপির মধ্যে বসে বসে ওকে দিয়ে জম্পেশ রান্না করতে লাগলো। আর গুস্তো’র রেস্টুরেন্টের বাবুর্চিদের মধ্যে লিঙ্গুয়িনিরও বেশ নামডাক হয়ে গেলো। ওদিকে স্কিনার কিন্তু ঠিকই সন্দেহ করেছে যে, লিঙ্গুয়িনির একটা ইঁদুর আছে। সেই ইঁদুরই সব করে, লিঙ্গুয়িনি কচুটাও পারে না। কিন্তু সেটা সে কিছুতেই প্রমাণ করতে পারছিলো না।
এদিকে রেমি একদিন একটা বিরাট আবিষ্কার করে বসলো। স্কিনারের অফিসে গিয়ে একদিন দেখে কি, লিঙ্গুয়িনি-ই আসলে গুস্তো’র বংশধর। উইল অনুযায়ী ও-ই এখন রেস্টুরেন্টের মালিক। আর যায় কোথায়, ও উইল নিয়েই দিলো ভোঁ-দৌড়। স্কিনারও ওকে দেখে ফেললো। ও কি আর বসে থাকবে? ওই উইল লিঙ্গুয়িনির হাতে গেলে যে রেস্টুরেন্টটাও হাতছাড়া হয়ে যাবে! ও-ও তাড়া করলো। কিন্তু ইঁদুরের সাথে দৌড়ে কী আর পারা যায়! রেমি ঠিকঠিক উইলটা লিঙ্গুয়িনিকে দিলো। আর পরদিনই সবাই মিলে খুব আনন্দ করে গুস্তো’র রেস্টুরেন্টের নতুন মালিককে বরণ করে নিলো। খালি মন খারাপ করলো স্কিনার। ও এবার তক্কেতক্কে থাকলো, কি করে রেস্টুরেন্টটাকে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু তাই কী আর হয়! রেমি আছে না! লিঙ্গুয়িনি আর রেমি মিলে আবারও গুস্তো’র রেস্টুরেন্টকে আগের মতো বিখ্যাত করে তুললো। লিঙ্গুয়িনি তো গুস্তো’র মতোই সেলিব্রেটি বাবুর্চি হয়ে গেলো!
সে সময় ফ্রান্সের সবচেয়ে বড়ো খাদ্য সমালোচক ছিলেন অ্যান্টন ইগো। ওর সামনে গেলে বাবুর্চি কেন, ওয়েটাররা পর্যন্ত ভয়ে কাঁপতে থাকতো, এমনি তার দাপট! গুস্তো’র রেস্টুরেন্টের জনপ্রিয়তাও কিন্তু এই ইগো’র কারণেই কমেছিলো। গুস্তো একটা বই লিখেছিলো, আর সেটার শিরোনাম এই নাক উঁচু সমালোচকের পছন্দ হয়নি। তাই সে ঘ্যাঁচ করে গুস্তো’র রেস্টুরেন্টের একটা স্টার কমিয়ে দিয়েছিলো। এবার সে এসে লিঙ্গুয়িনিকে বলে গেলো, কালকে আমি আসছি। তৈরি থেকো। ওদের সবার তো জিভের জলই শুকিয়ে গেলো। এরমধ্যেই দুনিয়ার সব ঝামেলাও একসঙ্গে এসে জড়ো হলো। রেস্টুরেন্টের সব বাবুর্চি জেনে গেলো, লিঙ্গুয়িনি রান্নার কিছুই জানে না, সব রেমি নামের একটা ইঁদুর ওকে দিয়ে করায়। আর তা শুনে ওরা সবাই ওর রেস্টুরেন্টের কাজ ছেড়ে চলে গেলো। আর যাই হোক, একটা ইঁদুরের অধীনে তো আর কাজ করা সম্ভব না! এমনকি ওর প্রেমিকা কোলোত্তে’ও চলে গেলো। ওদিকে স্কিনার তো হিংসা পুড়ে যাচ্ছিলো। আর তাই অনেক আগেই ফুড ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ করে রেখেছিলো, গুস্তো’র রেস্টুরেন্টে ইঁদুর আছে। আর তা চেক করার ডেটও পড়লো ঠিক সেইদিনেই। আর এরমধ্যে আবার রেমি’র সঙ্গেও খিটিমিটি লেগে গেলো লিঙ্গুয়িনির। রেমিকে সে বেরই করে দিলো রেস্টুরেন্ট থেকে। এবার লিঙ্গুয়িনি কী করে বলুন তো? ইগোকে কিভাবে ও সেরা খাবার দিয়ে সন্তুষ্ট করবে? শেষ পর্যন্ত কিন্তু ও ঠিকই সন্তুষ্ট করেছিলো। অ্যান্টন ইগো তার জীবনের সেরা খাবারই খেয়েছিলো সেদিন গুস্তো’র রেস্টুরেন্টে। কিভাবে? উঁহু, তা তো বলছি না। সেটা নিজেকেই দেখতে হবে।
ছবি: র্যাটাটুলি
পরিচালক: ব্র্যাড বার্ড, জন পিঙ্কাভা
ধরণ: অ্যানিমেশন/ ফ্যান্টাসি
ভাষা: ইংরেজি
প্রকাশ: জুন, ২০০৭
প্রযোজনা: ওয়াল্ট ডিজনি, পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও
দৈর্ঘ্য: ১১১ মিনিট
টরেন্ট ডাউনলোড লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫২