দিনটা এখনও ঝাপসা ঝাপসা মনে পরে । তখন নিউ টেনে উঠলাম মাত্র । ছোটবেলা থেকেই বয়েজ স্কুলে বড় হওয়া । সেই সুবাদে মারাত্তক ইন্ট্রোভারটনেস সহজ বাংলায় যাকে বলে লজ্জা সেইটা অতিরিক্ত মাত্রায় ছিল । সবার সাথে দাপিয়ে কথা বলতাম আর কোনও সমবয়সী অথবা কাছাকাছি বয়সী কেও আসলেই একদম ঠাণ্ডা । এই জন্যে নারী সহচার্জ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম ।
এত ছিল অকারণে ধানাই পানাই । গল্প শুরু করার আগে অনাবশ্যক আদিখ্যেতা দেখানও লেকচার । এবার আসল কথায় আসি ...
ঢাকার মুটামুটি পপুলার একটা স্কুলে ক্লাস ১০ এ পড়তাম । স্কুল শুরু হত সকাল ৭ টায় । আমি আবার একটু আগেই স্কুলে যাই । ফার্স্ট বয় ছিলাম বলে একটু আঁতেল আঁতেল ভাব ছিল নিজের ভিতর । তাই বাসা থেকে বের হতাম ৬:৩০ এর মধ্যেই । আমার ছোটভাইও আমার স্কুলেই পড়তো । দুই ভাই একসাথেই স্কুলে যেতাম । স্কুল বাসা থেকে তেমন দূরে ছিল না । ১৫ টাকা রিকশাভাড়া ছিল তখন । থাকতাম সরকারি এক কোয়ার্টারে । ত প্রত্যেকদিন সকালেই আম্মু নইলে আব্বু স্কুলে দিয়ে যেত দুই ভাইকে । কোয়ার্টারের গেট থেকে রিকশা প্রায়ই পাওয়া যায় । সেদিন যেন পাওয়াই যাচ্ছিল না । ৬:৪৫...
মারাত্তক ভয় পাইতেসি । স্যার না জানি কত্ত বোকা দিবে প্যারেডে না গেলে । পাশে একটা আপুও দাড়িয়ে ছিল রিকশার জন্যে । এই বিষয়ে একটা কথা বলে নেই ... আমার ছোটবেলা থেকেই উচ্চতার একটু সমস্যা ছিল । এখন অনেক কষ্টে ৫’৪” এ দাড়িয়ে আছি । তখন আরও আকাল ছিল । দেখে বোঝাই যাইত না যে ১০ এর পোলা । ( )
ফিরে আসি সেই আপুতে । একটা রিকশা আসল । আম্মু ডাকার আগেই আপু রিকশায় উঠে পরল । কি আর করার... ভাবলাম সেইদিন বুঝি আমার আর যাওয়াই হবে না । কিন্তু কি অবাক কাণ্ড... !!!! আপু বলল, “অ্যান্টি...ওরা দুইজন আমার সাথে যাক ?? আমি ওদেরকে স্কুলে নামায় দিবো নে । ” আমি তো লজ্জায় পরে গেলাম । তার পরে ভাবলাম ছোটভাইটাকে সিটে বসাব আর আমি উপরে বসব । তাড়াতাড়ি গিয়ে রিকশায় উঠলাম । ছোটভাইয়ের দিকে তাকালাম । ওমা !!! একি । ও দেখি আমার থেকেও বেশি লজ্জায় কাচুমুচু করতেসে । এদিকে আমি রিকশায় উঠে বসে পরসি । আম্মু আর কি করবে... বলল, “তোমরা যাও । আমি ওকে নিয়া আসতেসি ।”
আমার যা অবস্থা হইসিল তা মনে পড়লে এখনও লজ্জা পায় । যাই হোক... আমার প্রথম নারী রিকশাসঙ্গিনী... অবশ্যই আমার মা খালার পরে... সেই মেয়েটাই । চলার মাঝখানে কারও কোনও কথা নাই ... উনিই প্রথম কথা বললেন, “কোন ক্লাসে পড় ???”
-জি ক্লাস ১০ এ উঠলাম এবার ।
উনি একদম চুপ । কিছুক্ষণ পড় লক্ষ্য করলাম রিকশায় আমাদের মাঝখানে যে পরিমাণ জায়গা তাতে একটু শুকনা টাইপের কেও ভালমত এঁটে যাবে । ( )
এরপরে আর তেমন মজার কিছুই নাই । স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে তিনি নেমে গেলেন । নামও জানা হয় নাই তার । আমাদের কোয়ার্টার এলাকাতেই থাকে... পরে জানতে পারলাম সে আসলে আমার ইয়ারমেট ছিল ।
ছোটভাইটা এবার বৃত্তি পেল । ওর মা তখন বাসায় আসছিলেন । কথা বার্তা বললেন অনেক । জানতে পারলাম সেই মেয়ে নাকি ডি.ইউ তে ঘ ইউনিটে ২৭ তম হইসে । ব্রিলিয়ান্ট বালিকা...
নামতাও শুনসিলাম । বিশ্বাস করেন পোস্টটা লিখার জন্যে নামটা মনে করার চেষ্টা করসি অনেকবার । কিন্তু মনে আর পরল না ... কি আর করার...
নাম না জানা মেধাবী ললনাকে থ্যাংকস । নাইলে সেইদিন ক্লাস করা লাগত না ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৩