১৯৭১ সালে বাংগালীরা রাজাকার শব্দের সাথে পরিচিত হয়। যুদ্ধরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে এই বাহিনী গঠিত হয়। 'রাজাকার' ফার্সি শব্দ। এর অর্থ স্বেচ্ছাসেবী। ভারত বিভাগ কালে তাদানিন্তন হায়দ্রাবাদের শাসক নিজাম ভারত ভুক্ত হতে অনিচ্ছুক থাকায় ভারতের সামরিক বাহিনীকে প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য রাজাকার নামক একটি স্চেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন।
৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তান সামরিক শাসনকে সহায়তা প্রদান কল্পে মে মাসে খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে কয়েকজন পাকিস্তান পন্থী কর্মী নিয়ে হায়দ্রাবাদের 'রাজাকার'-এর অনুকরণে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। পরবর্তিতে দেশের অন্যান্য অংশেও রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলা হয়।
প্রথম পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী ছিল এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন। ১৯৭১ এর ১লা জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডন্যান্স ৭১ জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রুপান্তরিত করেন। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় সেপ্টম্বরে জারীকৃত এক অধ্যাদেশ বলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্য রুপে স্বীকৃতি দেয়।
রাজাকার বাহিনীর প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশিক্ষনের মেয়াদ ছিল ১৫ দিন। ১৯৭১ এর ১ লা জুলাই কুষ্টিয়ায় রাজাকার বাহিনীর প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং সমাপ্ত হয়। পূর্বাঞ্চলের সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল এ এ কে নিয়াজী সেই বছর ২রা নভেম্বর সাভারে রাজাকার বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডারদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং শেষে বিদায়ী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরবর্তি পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী একটি স্বাতন্ত্র অধিদপ্তরে উন্নিত হয়। এবং পাকিস্তানকে ভাগ না করার উদ্দেশ্যে কাজ করে যেতে থাকে।
তাদের এই স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বলি হতে হয়েছে অগনিত মুক্তিকামী মানুষদের। এর পর বাংলার মুক্তিকামী মানুষদের কাছে পরাজিত হল পাক বাহিনী সেইসাথে রাজাকার বাহিনীরও অঘোষিত পরাজয়। কিন্তু তারা আজও সক্রীয় আছে এই মাটিতেই বক ধার্মিকের বেশে অথবা মুক্তিযোদ্ধার বেশে। বাংলার মানুষ ভুলে যায়নি ঐসব দিনের কথা যেদিন নিজেদের টিকিয়ে রাখার নিমিত্তে তারা উড়িয়েছিল বাংলাদেশের পতাকা , জোর গলায় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চিৎকার করেছিল এবং সেটা আজও প্রতিস্থাপিত হয়ে আছে। তাই সাবধান বাংলার মানুষেরা, আমাদের চোখে ধূলো দিয়ে আবারও কূটচাল চালানোর চক্রান্ত চলছে। তাদের যেন ধরে ফেলা না যায় তাই তারা মুক্তিযোদ্ধার বেশেই আছে আমাদের আশেপাশে। মাঝে মাঝে তাদের হিংস্র কর্মকান্ডের একটি ছাপ চলে আসে তাদের কথাবার্তায়, তাদের অতিরিক্ত নোংরা কথায়। স্বাধীন বাংলার মাটিতে বসেতো সারাসরি ধর্ষন করতে পারেনা তাই কথা এবং গালাগালিতে ধর্ষনের ছাপ রেখে চলে। নিজেকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় ৭১ এ যেই তান্ডবলীলা চালিয়েছিল সেই স্থানে। কিন্তু আজও আমরা বীর সেনানী। তাদের এসব চক্রান্ত নস্যাৎ করবই করব।
(কৃতজ্ঞতা : মুনতাসীর মামুন ভাই এবং
বজলু মহাজন)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৮:৩৭