শতাব্দীর নোটবুকে জমা পড়ছে আরও একটি বছর। সতের বছর পেরিয়ে শতাব্দী হয়ে উঠবে পূর্ণ যৌবণবতী অষ্টাদশী। প্রচলিত মিথ অনুসারে, সতের বয়েসী রমণীরা হয় মোহনীয় কোমল উচ্ছল।সতের পেরিয়ে আঠারোতে সকল প্রাণচাঞ্চলের সাথে সে হয়ে ওঠে পূর্ণ যৌবণা ।শতাব্দীর সতের বছর কেটেছে প্রচলিত মিথের মত। ব্যক্তি জীবনে বিগত বছরের চাইতে সতের কেটেছে বেশ। বছরের জন্মলগ্ন থেকে বিগত যাবতীয় সমস্যার সমাধার কাটিয়ে ওঠার বাসনা অনেকাংশে সফল হয়েছি। বোহেমিয়ান আগোছালো জীবনটা গুছিয়ে নিতে নিতে বারো আনা পারিবারিক হয়ে উঠেছি। যদিও আমার মানসিকতার সাথে পারিবারিক হয়ে ওঠার গল্পটা বেশ অদ্ভুত।আমি ভাগ্যের উপর বিশ্বাসী নয়, কর্মে বিশ্বাসী। সাহস এবং কর্ম আমাকে বিগত হতাশা এবং সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়েছে।
সাহিত্য হচ্ছে আমার কাছে নেশার মত। জীবনে অনেক সিদ্ধান্তের পরিবর্তন পরিবর্ধন ঘটলেও সাহিত্য সাধনা এবং কবিতার নেশা কখনো বিচ্ছুতি ঘটেনি। সতেরতে বেশ কিছু সাহিত্য সাময়িকী এবং পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে।পান্ডুলিপি প্রস্তুত করেও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করতে না পারলেও আগামী অর্থাৎ আঠারোর বই মেলার ”কাব্যের বাঁশরী” নামক যৌথ কাব্যগ্রন্থে থাকছে এই অধমে কবিতা।
সতেরোর প্রথম অর্ধাংশে রাজনীতি এবং বিভিন্ন সংঘঠনের সাথে বেশ জড়িয়ে গেলেও শেষের দিকে সকল রাজনীতি এবং সংঘঠন থেকে পদত্যাগ করেছি।মূলত, চোখ থাকতে অন্ধ হয়ে এবং ঘাড় থাকতে নির্বোধ হয়ে থাকা স্বভার বিরোধী। প্রতি রাতে বিবেকের কাছে নত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। এখন আর তা হয় না।কিন্তু, মাঝে মাঝে ঘাড়ের চিন্তা করতে হয়। আমাদের সমস্ত আয়োডলজি সব ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র উন্নয়ন দিয়ে কখনো একটি দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করা যায় না। মানুষের সর্বশেষ অধিকার - ভোটাধিকার কি আছে? আমাদের কন্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে ৫৭ ধারা দিয়ে। অনুভূতি এতটাই নাজুক হয়ে আছে যে, আপনি যে কোন সময় মামলার হামলার সম্মুখীন হতে পারেন। গণতান্ত্রিকতার নামে চলছে ভাঁওতাবাজি। আমরা সবাই কাঠের চশমা পরে ঘুরি। আর পীরের গুণ গাই।রাজনীতি হচ্ছে সেই মুদ্রা, যার দুপিঠেই জং ধরা। কেউ করে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা,কেউ করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা। আর আমাদের বুকের মধ্যে পাথর জমা হতে থাকে। কবে ফিরবে সুস্থ রাজনীতি?
রাষ্ট্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।প্রতিদিন,প্রতি সপ্তাহ, প্রতি মাসে ঘটেছে ধর্ষণ,গুম,হত্যা,অপহরণ। কোন কিছুর কি দৃষ্টান্ত মূলক বিচার এবং শাস্তি হয়েছে। হে রাষ্ট্র, তুমি কি জবাব দিবে ত্রিশ লক্ষ শহীদের কাছে।রাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্স করছে বিচার বর্হিভূত হত্যা।যার আবার অফিসিয়াল নাম – ক্রসফায়ার।
রাষ্ট্র লেখকদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে মোল্লাদের রাখছে বহাল তবিয়তে।রাষ্ট্রের চোখে কি ছানি পড়েছে? তিনি দেখেন না, উষ্কানি কারা ছড়ায়। নাকি ভোট ব্যাংক সবলের লোভে মেরুদন্ড বিসর্জনে কোন ক্ষতি নেই।
দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ।
বেশ! বেশ!
চালের দাম কত মহাজন?
তেল, নুনের খচ্চা বহু।
আমরা আছি মহা সুখে মধ্যবিত্ত কারাগারে।
দেশ ভাসে বিদ্যুতে, মাসে মাসে বিল বাড়ে।
রোহিঙ্গারা বেশ আছে।
ভাতের অভাবে বঙ্গ মানুষ মরে।
আমাদের আছে সেতু, ব্রিজ, বন্দর
ভেতরে ভেতরে সহনীয় মাত্রায় বাঁশ থাকে।
শিক্ষাক্ষেত্রে দেশে সোনা ফলছে।ফ্রিতে বই পাচ্ছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী।সরকার অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।কিস্তু, বইয়ে ছাগল প্রীতি এবং ছাগল মার্কা মন্ত্রী সহনীয় মাত্রায় বাদ দেয়া উচিত।লজ্জা করা উচিত প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সর্বক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহাউৎসব করে। আবার,ফল প্রকাশের উৎসব করার মত নিলর্জ কাজ এরা কিভাবে করে? হাজার হাজার A+ দিয়ে আমরা কি করবো? যদি এদের ভিতরে কিছু না থাকে।আমাদের মেধাবীরা সুযোগ না পেয়ে বিদেশ যাচ্ছে। আর দেশ ভরে যাচ্ছে চোরে।জাতির জনক বলেছিলেন – ”সবাই পায় সোনার খনি। আমি পেয়েছি চোরের খুনি।” পিতা আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন? দেশে এখন হরিলুট চলছে।
পঞ্জিকার অঙ্ক ধীরে ধীরে পেরিয়ে যাচ্ছে। আসছে আরও একটি বছর।যাবতীয় সমস্যা,অঙ্ক,হিসেব-নিকেস, মান অভিমান ভুলে আগামী বছর কাটুক শান্তি,সুখ এবং সমৃদ্ধিতে।
অষ্টাদশী রমণীর মত,
অষ্টাদশী বছর।
সবার জীবনে বয়ে আনুক
ভালবাসার নহর।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।।
৩১.১২.১৭
নোয়াখালী
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১০