সব কাজ সবসময় করা যায় না। ভালো সময়ে ভালো কাজ, বড় সাধনা সম্ভব হয় সহজেই। মানুষের জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় তারুণ্য। তারুণ্যের সময় হলো জোয়ারের সময়। শীতের নদী বালির বাঁধ দিয়ে থামিয়ে রাখা যায়, কিন্তু বর্ষার ঢল সব বাধা উপড়ে সকল শিকল বিকল করে ছুটে যায়। তারুণ্যও তেমনি অবধ্য, অবাধ্য, অব্যর্থ। তরুণদের মেধা, জোর ও সাহস যেখানে মানুষের কল্যাণের কাজে লাগে, সেখানে সহজেই গড়ে উঠতে পারে শান্তিময় সুন্দর সমাজ। উল্টোদিকে, তারুণ্য যেখানে পথ হারায়, বিপর্যয় সেখানে অনিবার্য হয়ে ওঠে।
মানুষের গুরুতর ধর্ম হলো মানুষের কল্যাণসাধন। বস্তুত মানুষ তার স্রষ্টার কল্যাণ করতে পারে না। কেননা তাঁর কোনোকিছুরই প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন আছে মানুষের। মানুষ রোগে ভুগে কষ্ট পায়, বিপদে পড়ে সাহায্যের জন্যে হাত বাড়ায়। ধর্ম আমাদের তাই বলে: মানুষকে সাহায্য করলেই মানুষের স্রষ্টাকে সাহায্য করা হয়। মহান মানুষ হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন: ধর্ম মানেই কল্যাণসাধন – স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টির কল্যাণসাধন। যেহেতু যৌবনকালেই মানুষের শক্তি পরিণতি পায়, তাই যৌবন হলো মানুষের কল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়ার শ্রেষ্ঠ সময়।
তারুণ্যের উদ্দামধর্মের সঙ্গে মানবধর্ম ইসলামের সুন্দর মিল আছে। ইসলাম নতজানু বুযুর্গি পছন্দ করে না – চায় পৌরুষ ও শৌর্য, মমতার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতারও সে নির্দেশক। দুর্বলের মাথায় মমতার হাত, আর দুর্জনের ঘাড়ে তার ক্ষমতার হাত। মমতা দিয়ে ইসলাম মানুষকে শান্তির পথে টেনে নিয়েছে, আর ক্ষমতা দিয়ে অমানুষ তাগুতের ঘাঁটি ভেঙে দিয়েছে। এ ভাঙা ও গড়ার কাজ সাহস ও শক্তির কাজ। তাই তরুণেরা এগিয়ে না এলে বিপ্লব হয় না। আমাদের মহানবী সা. এ সত্যটি কখনও ভোলেন নি। তরুণদের ওপর তাঁর নির্ভর ছিল বেশি। বড় বড় কাজে তরুণদেরকে রাখতেন পুরোভাগে। তরুণদের হিদায়াতের জন্যে তিনি প্রার্থনা করেছেন বিশেষভাবে। সবার আগে ও সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় তরুণেরাই তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়েছেন। এর সুফলও এসেছে তেমনি। তেজি তরুণ হযরত উমর ইসলামগ্রহণের পরেই প্রথমবারের মতো কা’বাঘরে প্রকাশ্যে সালাত আদায় সম্ভব হয়েছে। অবশেষে, তারুণ্যপ্রধান ছিল বলেই ইসলামী বিপ্লব হতে পেরেছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতপ্রসারী বিপ্লব।
তরুণেরা কীভাবে নিজেদেরকে তৈরি করবে, কীভাবে মানবকল্যাণে করবে আত্মনিবেদন, তারা কী মূল্যবোধ ধারণ করবে এবং কীভাবে পালন করবে তাদের ওপর মানুষ ও ইতিহাসের অর্পিত দায় – মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর জীবনে এর বিশদ শিক্ষা রয়েছে। তাঁর নবীজীবন যেমন তারুণ্যের আদর্শ, তেমনি তাঁর ব্যক্তিজীবনও তরুণদের জন্যে বিশেষভাবে অনুসরণীয়। তরুণ মুহাম্মদ সা.-এর ‘হিলফ আল-ফুযূল’ মানবকল্যাণে ইতিহাসের এক আলোকিত অধ্যায়, তারপর বর্বর আরবভূমির উদ্ভ্রান্ত তরুণদেরকে জড়ো করে জ্ঞান, সভ্যতা ও মহত্ত্ব শিক্ষা দিয়ে শান্তিময় সমাজ গঠন এবং তাদেরকে সর্বকালশ্রেষ্ঠ সুন্দরতর মানবশ্রেণী হিসেবে গড়ে তোলার ঘটনার দ্বিতীয় কোনো দৃষ্টান্ত নেই।
অন্ধকার আরবে গোত্রে গোত্রে সংঘাত ছিল নিত্যকার ব্যাপার। বালক মুহাম্মদ সা. কেবলই ভাবতেন, শান্তির পথ খুঁজতেন। কৈশোরে এসে দীর্ঘ ও ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ তাঁর স্বচক্ষে দেখার অভিজ্ঞতা হয়। এই যুদ্ধের নাম পাপযুদ্ধ – ‘হারব আল-ফিজার’। হতাহতের কোনো গোনাগুনতি ছিল না। এত প্রাণহানি তিনি কিছুতেই সইতে পারছিলেন না। ঠিক করলেন – কিছু একটা করতেই হবে, মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানুষের জন্যে এই কল্যাণচিন্তারই মূর্ত রূপ ‘হিলফ আল-ফুযূল’ – কল্যাণসঙ্ঘ।
পাপযুদ্ধ ‘হারব আল-ফিজার’ ছাড়াও আরেকটি পাপচিত্র ‘হিলফ আল-ফুযূল’ প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে দেয়। সে ছিল বিদেশি বণিকদের শোষণ-নির্যাতন। ইয়েমেনের যুবাইদ শহরের এক ব্যবসায়ী মক্কায় এসে আ’স ইবনু ওয়ায়িলের কাছে পণ্য বিক্রি করেন। আ’স ক্ষমতাবান লোক। মালপত্র রেখে সে টাকা দিল না, উল্টো ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিল। আ’স জানত, বিদেশি ব্যবসায়ীর এখানে কেউ নেই, তাই প্রতিকারও নেই। বেচারা ইয়েমেনি রোদে পুড়ে পুড়ে কুরাইশ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে খামাখাই শ্রান্ত হলেন, কেউ তাঁকে আশা দিল না। শেষমেশ পবিত্র কা’বাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে এই ঘরের মর্যাদার দোহাই দিয়ে উচ্চকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন – সে বড়ই হৃদয়বিদারক পঙক্তিমালা, যাতে সর্বস্ব লুট হয়ে যাওয়া আলুথালুবেশী উষ্কোখুষ্কোকেশী ক্ষুধার্ত-অবসন্ন এক মুসাফিরের ছবি ভেসে উঠেছিল। শুনে, মহানবীর চাচা যুবাইর তৎপর হলেন। ভাতিজাকে ডাকলেন। মুহাম্মদ সা. তখন কুড়ি বছরের তরুণ। দুজনে পরামর্শ করে শোষিত মুসাফিরকে সাহায্যের উপায় বের করলেন, সেইসঙ্গে একমত হলেন এমন যুলম যেন আর না হয় সে লক্ষ্যে একটি কল্যাণসঙ্ঘ কায়েমের অনিবার্যতায়। শুরু হলো সাংগঠনিক সফর। বানু হাশিম, বানু যাহরা, বানু তায়িম, বানু মুত্তালিব, বানু আসাদ প্রভৃতি গোত্রের নেতাদের জড়ো করে আবদুল্লাহ ইবনু জুদয়ানের বাড়িতে অনুষ্ঠিত আন্তর্গৌত্রিক বৈঠকে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘হিলফ আল-ফুযূল’। তখুনি সবাই উঠে গিয়ে আ’সকে বাধ্য করলেন ইয়েমেনির পাওনা বুঝিয়ে দিতে। তারপর পবিত্র কা’বার কালো পাথরে পানি ঢেলে সকলে মিলে সেই পানি পান করে দুই হাত উপরে তুলে কঠিন প্রতিজ্ঞা করলেন:
• মযলুমের অধিকার উদ্ধার ও যালিমের প্রতিরোধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রাণপণ লড়াই করব।
• দরিদ্র, দুর্বল ও অসহায়ের সাহায্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
• দেশের অশান্তি দূর করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকব।
• বহিরাগতদের নিরাপত্তা ও অধিকার কিছুতেই ক্ষুণ্ন হতে দেব না।
এই ছিল ‘হিলফ আল-ফুযূল’-এর শপথনামা, যা ফলকে লিখে কা’বাঘরে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাসে সম্ভবত এটাই মানবাধিকারের প্রথম ইশতেহার।
‘হিলফ আল-ফুযূল’ ছিল অনেকটা আজকের জাতিসঙ্ঘের মতো। দুটোই গড়ে উঠেছে ঠিক একই রকম যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রেক্ষাপটে। এখনকার মতো যোগাযোগের যুগ হলে তখনকার আঞ্চলিক এ সংস্থা হয়ত বৈশ্বিক আওতা পেত। কিন্তু সেই সময়ে তা আদৌ সম্ভব ছিল না। শুধু সংস্থা কেন, কোনোকিছুরই খুব ব্যাপ্তি ঘটতে পারত না। তাই বৈশ্বিক বিস্তার পায় নি ‘হিলফ আল-ফুযূল’, তবে ঐতিহাসিকদের বৈশ্বিক স্বীকৃতি সে পেয়েছে। অন্ধকার আরবে নৈতিক আলোকায়নের জানালাটি সে খুলে দিয়েছে। মানুষের জন্যে মমতার এ অবিস্মরণীয় অভিযাত্রার মূল পরিকল্পক ও সংগঠক ছিলেন তরুণ মুহাম্মদ সা.। তখনও তিনি নবী নন। তাই অর্পিত নয়, স্বপ্রণোদিত হয়েই তিনি মানবকল্যাণের এ মহৎ চেতনা ধারণ ও বাস্তবায়ন করেছিলেন। কাজেই জাতিধর্মনির্বিশেষে দুনিয়ার সমস্ত তরুণের জন্যেই তিনি কল্যাণচেতনার পথিকৃৎ। তাঁর জীবনের আলো আমাদের পথ দেখায়। তাঁর প্রত্যেকটি পদক্ষেপই আমাদের জন্যে একেকটি পাঠ। তাঁর প্রতি সালাম!
সময় বড়ই রহস্যময়। কীভাবে যায়, কোথায় যে যায় – বোঝা যায় না। আম-কুড়োনো দিন পেছনে ফেলে হঠাৎ যৌবন। দুনিয়ার ঝামেলা সামলে সুন্দর জীবনযাপনের জন্যে নিজেকে তৈরি করে তুলবার ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ একদিন আয়নায় তাকিয়ে অবাক – এক গাছা দুই গাছা করে চুল-দাড়ি সাদা হতে শুরু করেছে! হায়, ভালো কাজ বড় কাজ করবার জন্যে এখনও যে গুছিয়ে ওঠাই গেল না!
আমাদের সবার জীবনই এমন, দায় বুঝে নিতে তৈরি হওয়ার আগেই দায় কাঁধে এসে পড়ে। খাটো জীবন, দীর্ঘ প্রস্তুতির সময় কোথায়! কাজেই কাজে নেমে পড়তে হয় কাজের সময় হলেই। করতে করতে শেখা, শিখতে শিখতে করা। স্রষ্টার চোখে জগৎ-জীবন নিছকই খেলা – কিন্তু আমাদের কাছে জীবন খেলা নয়, মহা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অথচ জীবনের সুবর্ণ-সময় যে-যৌবন, তাকে আমরা অনেকেই খেল-তামাশায় অবহেলায় অর্থহীন কোলাহলে পার করে দিই। কী দারুণ বোকামি! যা উপার্জন করা যায় না, তা কি অপচয় করবার জিনিস! আল্লাহর রাসূল সা. সাবধান করে দিয়ে বলেছেন:
পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে অমূল্য মনে করে কাজ সেরে নাও – বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের আগে প্রাচুর্যকে, ব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।
আমরা যে-সমাজে বাস করছি, তার নেতৃত্ব বার্ধক্য-ভারাক্রান্ত। এই সমাজ তাই বিষম সমাজ। প্রবীণেরা নবীণদের জন্যে আসন ছাড়তে রাজি হন না, অভিজ্ঞতার অভাবের ছুতো দেখান। ভুল ছুতো। তরুণেরা সবই পারে, পারতে দিলেই পারে। সুসমন্বিত সমাজ গড়তে হলে তরুণদেরকে যোগ্য গুরুত্ব দিতে হবে। অভিজ্ঞ প্রবীণেরা তাদেরকে সাহায্য করবেন – জায়গা দেবেন, পরামর্শ দেবেন, বেকারদের ডেকে কাজে লাগাবেন। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সমাজ-সংস্কারক হযরত মুহাম্মদ সা. সারাজীবন তরুণদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গিয়েছেন।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা খতীব বাগদাদী (১০০২ – ১০৭১) তাঁর ‘তারিখ-ই বাগদাদ’-এ লিখেছেন: ইয়াহইয়া ইবনু আকসাম যখন বসরা শহরের বিচারপতি নিযুক্ত হন তখন তাঁর বয়স কুড়ি বছরের মতো। বসরাবাসী এত কম বয়েসি তরুণকে এত বড় পদে ঠিক মেনে নিতে পারল না। তারা কানাকানি শুরু করল, ‘আমাদের মহামান্য বিচারপতির বয়েস কত হে?’ ইয়াহইয়া ঘটনা টের পেয়ে নিজেই জনতার সামনে দাঁড়ালেন। বললেন: ‘আমি উত্তাব ইবনু উসাইদের চেয়ে বড়, যাঁকে আল্লাহর রাসূল মক্কা বিজয়ের দিন সেই শহরের বিচারক নিযুক্ত করেছিলেন। মুয়ায ইবনু জাবাল আমার চেয়ে ছোট ছিলেন, যখন রাসূল তাঁকে বিচারপতি করে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন। আমি তো কা’ব ইবনু সুয়াইদের চেয়ে বড়, যাঁকে খলীফা উমর ইতোপূর্বে এ বসরা শহরেই ক্বাযীর দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন।’ এভাবে, কেবল ক্বাযী নয়, নেতৃত্বের সকল ক্ষেত্রেই মহানবী সা. তরুণদেরকে অগ্রাধিকার দিতেন। তরুণ উসামা ইবনু যায়িদকে তিনি এমন এক কাফেলার আমীর মনোনীত করেছিলেন, যাতে আবু বাকর-উমরের মতো শীর্ষ সাহাবিগণ শরিক ছিলেন। ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাস ও মুসলিম সংস্কৃতির বিস্তীর্ণ কাল জুড়ে তরুণদের অগ্রাধিকারের এমন অসংখ্য প্রমাণ ও দৃষ্টান্ত রয়েছে। ইসলামের ইতিহাস হলো প্রবীণের প্রজ্ঞার আলোকে মানবকল্যাণের পথে উদ্দাম তারুণ্যের দুর্বার অভিযাত্রার ইতিহাস।
ইসলামের আলোকিত যুগের আদর্শবান তরুণদের অক্ষয় কীর্তি, অমিত সাহস ও বুকভরা মহত্ত্ব আজ শুধুই ইতিহাস। সেই ইতিহাসের উত্তরাধিকার আমরা ধারণ করে আছি আমাদের স্মৃতিতে, কর্মে নয়। তাই পরানুকারী হুজুগ সহজেই আমাদের তাড়িত করে, খেলার বলের পেছনে ছুটতে ছুটতে আদর্শিক বলের খোঁজ নেওয়ার ফুরসত পাই না, দুর্বল ও লক্ষ্যচ্যুত আমাদের তারুণ্য দুঃশাসনের দাপটের তলে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে বাঁচে। এমন বাঁচায় তো গৌরব নেই, শুধুই লজ্জা। হে আত্মভোলা তারুণ্য! থামো, নিজের দিকে তাকাও – এবং ঘুরে দাঁড়াও! আত্মবোধে ঋদ্ধ হও, সত্যচেতনায় সবল হও, মানুষের জন্যে কল্যাণচিন্তায় জাগ্রত হও! মানুষের পাশে দাঁড়াও, সমাজকে আলো দাও, দুর্বৃত্তের কবল থেকে উদ্ধার করো স্বদেশ, উম্মাহর ঐক্যচেষ্টায় নিবেদিত করো নিজেকে! তোমার দিকেই তাকিয়ে আছে পৃথিবী। তুমি না জাগলে সকাল হবে না।
–––––––––––––––––––––––––––––––––––
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক। শাহবাগ, জকিগঞ্জ, সিলেট। এপ্রিল ১৮, ২০১৪। [email protected] ০১৭৩৫-৫৩০০০০।