somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহানবীর দয়া

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সময়ের প্রয়োজনে সাধারণভাবে সাময়িক সমাজবিপ্লব হতেই পারে, কিন্তু একটা জাতির সকল ব্যক্তিমানুষকে বিশ্বাস ও চরিত্রে আমূল বদলে দিয়ে ভেতর থেকে নতুন করে গড়ে তুলে জীবন-সমাজ-রাষ্ট্রবিপ্লব সাধন করা দুঃসাধ্য ব্যাপার — রাসূল সা. সেটি সার্থকতার সঙ্গেই করেছেন, বিশ্ববিপ্লবের সূচনা করে গিয়েছেন। আল্লাহর সাহায্যের পাশাপাশি মুখ্য যে কারণটি এর মূলে ক্রিয়মান ছিল, তা হলো রাসূলের বিনম্র স্বভাব, সৃষ্টির প্রতি দয়া ও মানুষের জন্যে মমতা। সূরা আলে-ইমরানের ১৪৯ সংখ্যক আয়াতে বলা হয়েছে:

“অতএব আল্লাহর অনুগ্রহেই তুমি তাদের প্রতি কোমলচিত্ত; যদি রুক্ষভাষী ও কঠোর হতে, তবে তারা তোমাকে ছেড়ে দূরে চলে যেত।”

সূরা তাওবার ১২৮ সংখ্যক আয়াতেও রাসূলের চরিত্র-মাধুর্য, সমবেদনা, শুভকামনা ও দয়াশীলতার উল্লেখ করে বলা হয়েছে:

“তোমাদের মধ্যে এসেছে তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, তোমাদের দুঃখ যার কাছে দুঃসহ। তিনি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী, বিশ্বাসীদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।”

রাসূলের দয়াদর্শন যথার্থভাবে উপলব্ধির জন্যে তাঁর কথা ও কাজ দুটোই সামনে রাখতে হবে। তাই আমরা কিছু বিশুদ্ধ হাদীস উদ্ধৃত করছি:

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে, রাসূল বলেছেন: "আমি মুমিনদের খুবই ঘনিষ্ঠ, এমনকি তাদের নিজেদের চেয়েও। অতএব যে ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায় তার ঋণ শোধের দায়িত্ব আমার। আর যদি সে সম্পদ রেখে যায়, তবে তা তার উত্তরাধীকারীদের।" (সহীহ বুখারী-৬৭৩২, সহীহ মুসলিম-২৩১৯।)

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে, রাসূল বলেছেন: "যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।" (সহীহ মুসলিম-২৩১৯।)

সাহাবী আমর ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে, রাসূল বলেছেন: "যারা অন্যের প্রতি দয়া করে, আল্লাহ তাদের দয়া করেন। যারা পৃথিবীতে আছে তোমরা তাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনিও তোমাদের দয়া করবেন। দয়া হলো আল্লাহর নৈকট্য, যে এতে পৌঁছুতে পারল সে আল্লাহর কাছে পৌঁছে গেল, আর যে তা কেটে ফেলল সে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল।" (তিরমিযী-১৯২৪।)

বিশিষ্ট ইহুদি পণ্ডিত আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের প্রতি লক্ষ করুন। রাসূল মদীনায় এলে তিনি গিয়ে দেখা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথম যে-কথাটি আমি তাঁর মুখ থেকে শুনলাম, তা হলো:
"হে মানবমন্ডলি! সালামের প্রচলন করো, (অভুক্ত) মানুষকে খাবার দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখো।" (তিরমিযী-২৫৮৫।)


আসলে সৃষ্টির প্রতি দয়া আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা ইসলামের মূল শক্তি। রাসূল দুর্গত মানুষের সাহায্যকে সবচেয়ে বড় ইবাদত বলেছেন। বলেছেন, যে প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তির সঙ্গে খায়, সে মুসলমান নয়। তিনি আর্তজনের সেবা, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, বিপন্নকে উদ্ধার করা, ঋণগ্রস্তকে সাহায্য করা, অভাবী ও ইয়াতীমকে আশ্রয় দেওয়া, প্রতিকারের শক্তি থাকা সত্ত্বেও শত্রুকে ক্ষমা করা ইত্যাদি মানবিক চরিত্রের পূর্ণতা সাধন করে গিয়েছেন। যে-নবী মানুষের দুঃখ সইতে পারতেন না, আমরা তাঁরই অনুসারীরা আজ নির্দয় ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি। মানুষের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা ছাড়া যে আল্লাহকে পাওয়া যায় না, এটি ভুলে যাচ্ছি।

মানবতার দৃষ্টান্ত দেখুন: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ মসজিদে নববীতে ইতিকাফ করছিলেন। এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এল। তাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করে জানলেন, সে ঋণগ্রস্ত। তারিখ পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শোধ করতে পারছে না। আব্দুল্লাহ দাঁড়িয়ে গেলেন, তৎক্ষণাৎ জুতো পরে বেরিয়ে এলেন মসজিদ থেকে। আগন্তুক তখন বাধা দিয়ে বলছিলেন, এ কী! আপনি না ইতিকাফে আছেন। জবাবে তিনি আঙুল তুলে রাসূলের কবর দেখিয়ে বললেন, ওই ওখানে যিনি শুয়ে আছেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি— "যে-কেউ তার ভাইয়ের সাহায্যের জন্যে পা বাড়ায়, তাঁকে দশ বছর ইতিকাফের সাওয়াব লিখে দেওয়া হয়।"

এই হলো ইসলামের মানবপ্রেম। এমনই ছিল ইসলামের নবী আর তাঁর সঙ্গীদের দয়াদর্শন। এই ঘটনার আয়নার সামনে আমরা যদি নিজেদেরকে, এমনকি আজকের মাওলানা, পীর, তসবি-জপা ধার্মিকদের দাঁড় করিয়ে দেই, তাহলে কি লজ্জায় মাথা নুয়ে আসবে না?
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×