এই অসহ্য গরমে আমাকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছে রেদওয়ান রনির “আইসক্রিম”
_____________________________________________________
শ্যামলী সিনেমা হলের প্রথম শো তে দেখে আসলাম এবছরের আলোচিত সিনেমা আইসক্রিম। এ যুগের তরুন-তরুণীদের রোম্যান্টিক গল্প নিয়ে রেদওয়ান রনির অসাধারন সৃষ্টি “আইসক্রিম” নামক সিনেমাটি।
বাংলা শব্দভাণ্ডারে দুটি শব্দ রয়েছেঃ “বিলাসিতা” ও “প্রয়োজনীয়তা”
প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দুটি শব্দকে আপনি গভীরভাবে অনুধাবন করলেই সকল উত্তর পেয়ে যাবেন। আর এই দুটো শব্দের মধ্যে আপনি যদি পার্থক্য খোজে বের করতে না পারেন তাহলে আপনাকে পরতে হবে সম্পর্কের গেঁড়াকলে।
প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক গুলোর ক্ষেত্রে কমপ্লিকেশন অথবা জটিলতা নতুন কিছু নয়। সম্পর্কের শুরুর আগে অথবা সম্পর্কের পরে প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল কে পরতে হয় বিভিন্ন দ্বন্দ্বে। কখনো সেটা নৈতিকতার দ্বন্দ্ব , কখনো আবার পারিবারিক দ্বন্দ্বে। এই সিনেমার মূল প্রেক্ষাপট এ সময়ের তরুন-তরুণীদের রোম্যান্টিক প্রেমের নৈতিকতার দ্বন্দ্ব নিয়ে।
সিনেমার শুরু নায়ক-নায়িকার পরিচয়ের নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে। নায়ক-নায়িকার পরিচয়,প্রনয় ও সবশেষে তৃতীয় পক্ষের আগমন।
কি টিপিক্যাল প্রেমের গল্প মনে হচ্ছে? আপনি ভুল মশাই প্রমান সিনেমা হলে বসেই পাবেন।
সিনেমার গল্প নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতে চাচ্ছিনা। তবে এক সেকেন্ডের জন্যও বোরিং ফিল করেনি। বিশেষ করে সিনেমার প্রথম অংশে দারুনসব হাঁসির দৃশ্য ও গল্পের ফ্লোতে টেরই পায়নি কখন সময় চলে গেছে। আর দ্বিতীয় অংশে নাটকীয় ঘটনার কারনে স্বাভাবিকভাবেই একটু স্লো ছিল তবে বিরক্ত হওয়ার মত নয় এবং এন্ডিং জাস্ট পার্ফেক্ট।
আমার রেটিং ৫/৫
বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে এমন জটিল একটি গল্প বাছাইয়ের মাধ্যমে খুব যত্ন করে প্রেজেন্ট করেছেন পরিচালক রেদওয়ান রনি। তাছাড়া পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপও তার নিজের। প্রশংসার দাবীদার সে।
সিনেমার কনসেপ্ট নিয়ে যদি কারো দ্বিমত থাকে অথবা ঘটনা গুলো অস্বীকার করেন তাহলে বলবো চোখ মেলুন, আমাদের আশেপাশে এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে অহরহ।
এবার আসি অভিনয় ও টেকনিক্যাল বিষয় গুলো নিয়েঃ
সিনেমার সবচেয়ে পজিটিভ দিক হল কাস্টিং। এই ক্ষেত্রে আমি কাস্টিং ডিরেক্টর কে দশে দশ দেবো। সিনেমার মূল তিন অভিনয় শিল্পী নবাগত হলেও তাদের মধ্যে ন্যাকামো আচরন ও অভিনয়ের দুর্বলতা দেখা যায়নি। কনফিডেন্টের সহিত অভিনয় করে গেছে পুরো সিনেমা জুড়ে। বিশেষ করে মুগ্ধ হয়েছি নাদিম চরিত্রে অভিনয় করা ‘রাজ” কে দেখে। সুদর্শনের পাশাপাশি ডায়লগ, এক্সপ্রেশন অনেক ইম্প্রেসিভ ছিল তার। প্রিয়তি চরিত্রে টুশির পার্ফমেন্সও ছিল প্রশংসনীয়। গ্লেমার, অভিনয় সব দিক থেকেই দারুন (গোপন তথ্য হচ্ছে আমি এই মেয়ের প্রেমে পরে গেছি )। তুলনামূলকভাবে রাজ ও টুশির চেয়ে একটু কম ভাল লেগেছে রউনক চরিত্রে অভিনয় করা উদয় কে। তবে অবশ্যই ভাল পার্ফমেন্স ছিল।
তাছাড়া ছোটছোট চরিত্রে এটিএম শামসুজ্জামান, ওমর সানি, প্রয়াত দিতি ম্যাম, প্রয়াত সায়েম সাদাতও দারুন ছিল।
তারপরেই বলতে হয় সিনেমাট্রোগ্রাফির কথা। মন-মুগ্ধকর লোকেশন আর দারুন সব দৃশ্যপট ছিল সিনেমা জুড়ে। চোখের শান্তি বলা চলে। অন্তরঙ্গ দৃশ্য অথবা সমুদ্রের পানির দৃশ্য, বালিতে রঙিন কাঁকড়ার চলাফেরা, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য সবই প্রশংসনীয়। ক্যামেরা এঙ্গেলের কাজও বেশ ইম্প্রেসিভ ছিল। বিশেষ করে অনেক দূর থেকে রাস্তার দৃশ্য দেখানো, গল্পের মূল দৃশ্য গুলো ফ্রেমে আটকানোর ধরন ইত্যাদিতে মুনশিয়ানা দেখিয়েছে।
সিনেমার গান গুলোও ছিল শ্রুতিমধুর, গল্পের প্রয়োজনে ও সময় উপযোগী ছিল। অযথা গানের আগমন ঘটেনি সিনেমায়। অর্নবের আর মিনারের গানটা বেশ ভাল লেগেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও মানানসয় ছিল।
সিনেমার কাহিনী নস্ট করা অথবা দৃষ্টিকটু কোন ভুল চোখে পরেনি। এক কথায় বলতে গেলে চোরাবালির পর আরেকটি অসাধারন সিনেমা সৃষ্টি করেছেন রেদওয়ান রনি। এই সিনেমা দেখে হতাশ হবেন না। এটা কোন আর্ট-ফিল্ম নয় যে কাহিনী বোঝতে হলে আপনাকে মুভিবোদ্ধা হতে হবে, আবার টিপিক্যাল কমার্শিয়াল মুভিও না। এটি একটি উপভোগ্য রোম্যান্টিক সিনেমা। হ্যাপি ওয়াচিং।