ঘটনা একটু আগের। বন্ধুকে নিয়ে রওয়ানা হলাম শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন এর দিকে। আমার বন্ধু আগামীকাল ঢাকা যাবে। উদ্দেশ্য আগামীকালের যে কোনো ট্রেনের একটা টিকেট সংগ্রহ করা। স্টেশনে দেখলাম কোনো ভিড় নেই। ভাবলাম অনায়াসে টিকেট পেয়ে যাবো। কাউন্টারে গিয়ে বললাম, "আগামীকালের একটা টিকেট দিন।"
প্রাগৈতিহাসিক যুগের চশমা পরিহিত ভদ্রলোক চশমা ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে বাঁকা চোখে বললেন, "১১ তারিখ পর্যন্ত কোনো টিকেট নেই।"
মনে হলো ধাক্কা খেলাম। বললাম, "টিকেট নেই মানে!"
"নেই মানে নেই, সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।" বলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। টিকেট পাওয়ার জন্য ১২ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময় নেই আমাদের। তাই বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। পরিচিত এক ভদ্রলোককে বলাতে উনি বললেন, "এখানে কালোবাজারি ছাড়া টিকেট পাওয়া যায় না। এদিকে এসো, দেখি যদি কিছু ব্যবস্থা করতে পারি। আমাদের একটু দূরে দাঁড়াতে বলে উনি পাশেই এক দোকানে গেলেন। কিছুক্ষণ পরই চোখের ইশারায় ডাকলেন আমাদের। ভদ্রলোক বললেন, "এর সাথে কথা বলো, আমার কাজ আছে, আমি চললাম।" দোকানদারের সাথে আমাদের যে কথা হলো তার মর্মার্থ এই যে, আমাদের টিকেট পেতে হলে আজ রাত ১২ টার পর এইখানে আসতে হবে। যদিও টিকেটের দাম ১৩৫ টাকা, উনাকে দিতে হবে ২০০ টাকা। ভ্যাট, আয়কর (!) কর্তন বাবদ কিছু হয়তো থাকবে উনার জন্য। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে উনি বললেন, "বলা যাবেনা, তবে টিকেট পেতে হলে অত্যন্ত গোপনে আসতে হবে ঠিক সময়ে।" রাজী হলাম আর ভাবতে থাকলাম। এই হলো আমাদের রেল ব্যবস্থা।
টিকেট পাওয়ার সময় এখনও আসেনি। তবে জানি, সময়মতো পৌঁছাতে পারলে টিকেট পাবো।
রেল বাংলাদেশ সরকারী সম্পদ। সরকারী সম্পদ বলেই ভাগ-বটোয়ারা একটু বেশী। এই ভাগাভাগির সর্বশেষ অংশীদার ফুটপাতের এক দোকানদার।
ক'দিন আদেই রেলমন্ত্রী বললেন, "প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভাঙা-চোরা ট্রেনে চড়িয়ে দিয়েছেন।" বাহ! ট্রেনের দুরাবস্থা দেখে উনি ভয় পেয়ে গেলেন। সুপুষের মত সাহস দেখাতে পারলেন না। ট্রেনের যদি বেহাল দশা না-ই হবে, তবে আপনার মত নায়কের হাতে এর দায়িত্ব কেন দিবে সরকার? কদিন আগেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বড় বড় বুলি ছাড়তেন। আজ ভাঙা-চোরা ট্রেন দেখে ভয় কেন?
ভয় ভাঙা-চোরা ট্রেন দেখে, না ফুটপাতের ঐ দোকানদারকে?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:৪৭