উপরের ছবিতে দুরে দেয়ালে টাঙানো একটা মহিলার ছবি দেখছেন, ওটার বর্তমান বাজার মূল্য ৮২ মিলিয়ন ডলার ! আজ্ঞে হ্যাঁ আমি ওখানে গেছিলুম আর গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে বসেছিলুম খানিকক্ষন। ছোট্ট একটা পেইন্টিংএর দাম প্রায় সাড়ে ছশো কোটি টাকা ( ৬৫০০০০০০০০.০০)! হ্যাঁ দুনিয়ার অন্যতম মুল্যবান পেইন্টিং মোনালিসার কথা বলছি।
সকালেই হোটেল থেকে বেরুলুম দুনিয়ার সবচাইতে দামী মিউজিয়ম ল্যুভ মিউজিয়ম দেখতে যাবো। ট্রেনে করে রিভোলি ল্যুভ স্টেশন আর সেখান থেকে হেঁটে মিউজিয়ামের গেটে পৌছে টিকিটের জন্য লাইন ধরলুম, টিকিটের দাম আমাদের দেশের তূলনায় কমই।
ল্যুভ বা ল্যুভ মিউজিয়াম পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম আর সবচাইতে ধনী মিউজিয়াম এবং ঐতিহাসিক প্রসাদ।। এটা সীন নদীর তীরে অবস্হিত প্রকান্ড প্রাসাদ, যার ডিসপ্লে করা আয়তনই হচ্ছে প্রায় সাড়ে ছলাখ বর্গ ফুট। সেখানে রাখা আছে বিভিন্ন সময়ের প্রায় ৩৫০০০ বিভিন্ন পেইন্টিংস সহ অন্যান্য দুস্প্রাপ্য বস্তু।
বছরে প্রায় এক কোটি মানুষ এটা দেখতে আসেন যেটা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ।
প্রাসাদটি দ্বাদশ শতাব্দীতে একটা দুর্গ ছিল যা বিভিন্ন সময়ে বাড়িয়ে বা সংস্কার করে আজকের মিউজিয়ামে রুপান্তর ঘটে। ১৬৮২ সালে সম্রাট চতুর্দশ লুই এই প্রাসাদ ছেড়ে ভার্সাইতে তাকার জন্য চলে যান তখন থেকে এটা রাজকীয় সামগ্রী প্রদর্শনেরর জন্য চালু হয়। ১৬৯৯ সালে এটাকে মিউজিয়াম হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ১০ ই আগস্ট ১৭৯৩ তারিখে এটাকে পেইন্টিংস প্রদর্শনীর মিউজিয়ামে ঘোষনা করা হয়। তখন এটাতে ৫৩৭ টি পেইন্টিংস ছিল।
এটাতে এখন ৮ টি বিভাগ রয়েছে মিসরীয় সামগ্রী, পুর্ব দিকের সামগ্রী, গ্রীক, এট্রুসকান, রোমান, ইসলামিক, ডেকোরেটিভ পেইন্টিংস প্রিন্টস এবং আঁকা।
নূহাশ পল্লি নামক একটা শ্রীহীন পার্কে ঢুকতে যদি দু'শ টাকা লাগে তো সেটার তূলনায় পৃথিবীর সবচাইতে দামী আকর্ষনীয় মিউজিয়ামের টিকিটের দাম তো প্রায় মাগনা । এবারও আমার গাইড দেওয়ান সেবক এর টিকিট লাগলোনা, সে যথাযথ কাজ করেনা,. তার সঠিক আয় নেই তাই। তা বলে সেটা প্রমান করার জন্য একশোটা প্রথম শ্রনীর গেজেটেড অফিসারের সার্টিফিকেট লাগেনি।
বাংলাদেশে রাতের বেলা বউকে নিয়ে রিকশায় ঘুরলে কাবিন নামা নিয়ে ঘুরতে হবে! নাহলে আমাদের ডিএমপি পুলিশ বলবে তিনি যে আপনার স্ত্রী তার প্রমান কি? মিন মিন করলেই ব্যাস মাল ছাড়ুন।
এখানে বলে রাখি মিউজিয়ামে ঢোকার আগে কিছু খেয়ে দেয়ে ঢুকবেন আর পকেটে বেশ কিছু ইউরো রাখবেন। মিউজিয়ামটা ভাল করে পুরোটা দেখতে আপনাকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। সুতরাং মাঝে মাঝে বসার জায়গা আছে বসবেন আর কফি খাবেন। অন্য খাবার নেই। উপর নীচ করার সময় লিফট ব্যাবহার করতে পারেন তবে সেটা আমার কাছে ঝামেলার মনে হয়েছে।
ঢোকার মুখে কড়া নিরাপত্তা রয়েছে, আপনাকে চেক করেই ঢোকানো হবে তবে গায়ে হাত দেয়না কখনোই। আর ঢুকবার পর ভেতরে শুধুই দর্শক আর অদৃশ্য সিকিউরিটি রয়েছে। আপনাকে ডিসটার্ব করবেনা অবশ্যই। আর আছে কোটি কোটি টাকা দামের চিত্রকর্ম প্রাচীন শিলা ইত্যাদি অনেক কিছু যা বলে বোঝানো অসম্ভব।
মিউজিয়ামের ভিতরে।
-চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:১৭