somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরবানি

২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নওসাদ মিয়ার প্রতি দিন রোগী থাকেন না।যেদিন দু-চার জন রুগী পত্তর থাকে সেদিন নওসাদ মিয়া একটি মসলাদার পান খায়।চেম্বার বন্ধ করে পানটি হাতে নিয়ে হাঁটা দেয়। পানটি মুখে দেয় বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে। পান চাবাতে চাবাতে বাড়ি ঢোকে নওসাদ মিয়া।কুর্তা খুলে,খোলা বারান্দায় বসে আস্তে ধীরে পান চাবায়।স্বামীর মুখে পান দেখে পরী বুজতে পারে আজকে কিছু বেচা বিক্রি হয়েছে।হালকা বাতাসে ভেসে বেড়ায় মসলাদার জর্দার গন্ধ।নওসাদ মিয়া ধীরে হাত পাখা নাড়তে থাকলে তাকে সুখি মনে হয়।

পরী কিছু বলেনা মানুষটার প্রতি পরীর কিছুটা মায়া হয়।তা হয় যখন রৌদ্রের ভিতর হেঁটে আসার ফলে নওসাদ মিয়ার খালি বুকে ফুটে ওঠে টকটকে লাল দাগ।গলার নিচে স্যান্ডো গেঞ্জি বুকের যে টুকু ঢাকতে পারেনা সেখানটায় টবটকে লাল লেপটে থাকে।যেহেতু নওসাদ মিয়া অতিরিক্ত ফর্সা তাই লাল দাগটা বেশিই দেখা যায় তার।

পরী প্রথম প্রথম জানতে চাইতো কোনো বেচা বিক্রি হলো কিনা, তাতে নওসাদ মিয়া রাগ করতো।রাগ করতো একারনে যে বেচা বিক্র আর দোকান বলা তার পছন্দ নয়।সে বলে আমি কি মুদিখানা চালাই? আমার ডাক্তারি চেম্বার, রুগী পত্তর দেখি তারা আমাকে ফি দেয়। এটা বেচা বিক্রি আর দোকানদারের বিষয় না।নওসাদ মিয়া তার দোকান কে যখন চেম্বার বলে তখন তার মুখে ফুটে ওঠে এক প্রগাঢ় অহম।

নওসাদ মিয়া হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। গ্রাম্য বাজারের তার চেম্বার। জেলা সড়কের সরকারি জমিতে একটি ঘর তুলে ডাক্তারি শুরু করে সে।তাও প্রায় দশ বছর হতে চলছে।শুরুতে রুগি পেতোনা মোটেও। সব রুগি যেত এলোপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে, এখনো যায় তবে নওসাদ মিয়ার কাছেও কিছুকিছু আসে।নওসাদ মিয়া আইএ পাশ করে জেলা শহরের এক হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সহকারি হিসাবে বছর দুই ছিল।এর পর ম্যাট্রিয়ামেডিকা ও আরো কিছু বই কিনে সে নিজ গ্রামে চেম্বার খুলে বসে।

নওসাদ মিয়ার বাবা কৃষক ছিলেন। নিজেদের ক্ষেতের চাল ডালে বছর ব্যাপি খোরাকি চলে যেত। বাবার জীবিতকালেই যেহেতু চেম্বার দেয়া হয়,তাই সংসার খরচের চিন্তা করতে হতোনা। বাবা মা থাকতেই পরীকে বিবাহ করে নওসাদ মিয়া।তবে বছরের আগায় মাথায় বাবা মায়ের মৃত্যুতে কিছুটা বিপাকে পড়ে যায়।জমি টুকু বর্গা দিয়ে দেয়। তাতেও তাদের চলে যায় আর আস্তে ধীরে নওসাদ মিয়ার পসার-ও হয় কিছু।

নওসাদ মিয়া রোগী মুলত গরিব শ্রেণির। অল্প পয়সায় টুকটাক রোগ ব্যধি সারে এমন। অনেকের আবার তার ঔষধে বিশ্বাস কম।যেহেতু চিনির বড়িতে পানি রংয়ের ঔষদ মিশিয়ে রোগিদের দেয়া হয় তাতে তারা ভরসা রাখতে পারেনা।তারপর-ও কিছু আসে ঐ অল্প খরচের কারনে।

নওসাদ মিয়া তার পাড়ার লোকদের সাথে তেমন মেশে না।বলতে গেলে মেশেই না। এ কারনে নওসাদ মিয়ার বাড়িতেও কেউ আসেনা।শুধু রিজুর মা প্রতি দিন আসে পরীকে কিছু গৃহস্থালি কাজে সাহায্য করতে। নওসাদ মিয়ার আট বছরের ছেলে পনু তাকেও এ বাধ্যবাধকতা মানতে হয়। ফলে তার পাড়ার সমবয়সীদের সাথে খেলা ধুলা করা হয়ে ওঠেনা।এবং মহিলাদের বৈকালির ঘরোয়া বৈঠকেও পরীর যাওয়া হয় না।পনুকে ভর্তি করানো হয় গ্রামের উল্টো দিকের স্কুলে। যেখানে গ্রামের অন্য কোন ছেলেরা যায় না।এ কারনেও পাড়ায় পানুর কোন বন্ধু থাকেনা।

নওসাদ মিয়ার চেম্বার থেকে যেহেতু আয় কম তাই সে বাড়তি আয়ের জন্য ঢাকার একটি দৈনিকে আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে ঢোকে।সংবাদ সংগ্রহেরর জন্য সে সাধারনত কোথাও যায় না। লোক মুখে শুনে প্রতিবেদন লিখে পাঠিয়ে দেয়। তার সংবাদ গুলি থাকে অত্যন্ত নিরীহ গোছের তাতে নওসাদ মিয়ার সাংবাদিকতা নিয়ে কখনো ঝামেলায় পড়তে হয় না।

সাংবাদিকতা করতে গিয়েই নওসাদ মিয়া একটি দেয়াল পত্রিকার করে ফেলে। প্রাইমারি স্কুলের গেটের কাছে একটি গাছে দেয়াল পত্রিকার বোর্ডটি ঝুলিয়ে দেয়।দেয়াল পত্রিকার নাম দেয় কল্পতরু।তাতে রঙিন কালির শিরোনামে লেখা থাকে কথিকা ছোট গল্প প্রবন্ধ আর কবিতা।আর এগুলি নওসাদ মিয়া নিজের লেখা।স্কুলের বাচ্চারা প্রথম দিকে পড়ার চেষ্টা করলে তারা বোর্ড অবধি তাদের চোখ নিতে পারে না।পারেনা একারনে যে বোর্ড টি তাদের উচ্চতার চেয়ে বেশি থাকে।ফলে নওসাদ মিয়া ছাড়া তার লেখার আর কোন পাঠক থাকেনা।বোর্ড টি ঢাকা থাকে পলিথিনে যাতে বৃষ্টিতে অথবা শিশিরে কাগজ ভিজে না যায়। তবে কিছু কাকা প্রায়ই বসে থাকে বোর্ডের উপর। কাকের পায়খানা পলিথিনে লেগে থাকলে প্রায়ই দোখা যায় নওসাদ মিয়া এক টুকরো কাপরে সেটি পরিষ্কার করছে।

নওসাদ মিয়া প্রতি তিন মাস পর ঢাকা যায়।আর যায় দুই ঈদের আগে।দুই কারেনে তার ঢাকা যাওয়া,এক পত্রিকার অফিসে যায় তার সম্মানির টাকাটা নিতে আর কিছু ঔষধ আনে চেম্বারের জন্য তাতে কিছুটা সস্তায় ঔষধ কিনতে পারে সে।বিকালে লঞ্চে ওঠে নওসাদ মিয়া ডেকে চাদর বিছিয়ে একটা পেপার কিনে পড়তে থাকে।লঞ্চে কেনা কলা পাউরুটি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।পরের দিন ঢাকায় সারা দিন ঘুরে তার কাজ দুটি সমাধা করে একই নিয়মে লঞ্চে করে বাড়ি ফিরে। ফেরার পথে পনুর জন্য বড় পিচকাটা পাউরুটি আর সাগর কলা কিনে।প্রতিবার একই রুটিন মানে নওসাদ মিয়া।

নওসাদ মিয়ার ঢাকা থেকে ফেরার দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে পনু।নওসাদ মিয়া ফিরলে চায়ে ভিজিয়ে পউরুটি খায় পনু, শেষে একটি কলা নিয়ে উঠানে হাঁটে আর একটু একটু করে কলাটি খায়।পনুর মনে আফসোস হয়,এত বড় রুটি,কলা গ্রামের কোন ছেলেদের দেখানো যায় না বলে।কখনো কখনো সে রাস্তা অবধি যায় তার পরেও কারো দেখা পায় না।আর তাতে কেবল তার মন খারপ হতে থাকে।
নওসাদ মিয়া বাড়িতে বিভিন্ন ঔষধি তরুলতা থাকাতে স্ত্রী পুত্রের সামান্য শারীরিক সমস্যায় তার ঔষধের পাশাপাশি এগুলি খাওয়ায় নিয়ম করে।আর বিধিনিষেধ আরোপ করে বিভিন্ন খাদ্যের উপর। বেগুন শিম পুইশাক, পুঁটি ইলিশ বোঁয়াল, হাসের গরুর গোস্তে কত এলার্জী তা নওসাদ মিয়া পরীকে প্রায়শই বলতে থাকলে পরী ভাবে এসমস্ত মাছ মাংস লোকটা কিনতে পারেনা তাই হয়তো এগুলি বলে।যেহেতু অন্যান্য মাছ তরকারি-ও নওসাদ মিয়া সাধারনত কিনেনা।তবে জাল দিয়ে সে মাছ ধরে, তাতে পুঁটি, চিংড়ি কি বোঁয়ালের কড়া পেলে ফেলা তো হয়ই না বরং খাওয়া-ই হয়। খেতে খেতে নওসাদ মিয়া যেন নিজেকেই বলে। ভালো মেডিসিন আছে এন্টি এলার্জী, এক ডোজ খেলে আর সমস্যা হবে না।তবে এগুলা না খাওয়াই উত্তম।

নওসাদ মিয়া গরুর গোস্তো কেনে বছরে এক বার কুরবানির ঈদের দিন।যেহেতু তার কুরবানি দেবার সামর্থ্য থাকেনা, তাই ছেলে বউয়ের কথা বিবেচনা করে এক ভাগ গরুর গোস্তো কেনে। বছরে এক দিন-ই নওসাদ মিয়ার বাড়িতে গরুর গোস্তো রান্না হয়।প্রতিবেশি যারা কুরবানি দেয় তারা নওসাদ মিয়ার বাড়িতে গোস্তো দিলে সে রাখেনা।রাখেনা একারনে যে নওসাদ মিয়া ভাবে এগুলি তাদের গরিব মনে করে দেয়া হয়।তাই নওসাদ মিয়া প্রতিবেশিদের ফিরায়ে দেয়।একারনে বিগত কয়েক বছর তাদের বাড়ি কেউ আর গোস্তো নিয়ে আসেনা।
নওসাদ মিয়া কুরবানির দুই দিন আগে ঢাকা যায়।যেহেতু সে একদিনের বেশি ঢাকা থাকেনা।তাই তার কুরবানির আগের দিন বাড়ির ফেরার কথা।প্রতি বার সে এরকম করে। ঢাকায় তার থাকার কোন জায়গা না থাকায় বা থাকার প্রয়োজন না থাকাতে ফিরতি লঞ্চে ফিরে আসে সে।ঈদের সময় ফিরতে কষ্ট।লঞ্চে প্রচন্ড ভিড় হয়। তাই পরী তাকে প্রতিবার ঈদের আগে যেতে মানা করে। নওসাদ মিয়া শুনেনা। সে জানে এই টাকা কয়টা না হলে সে গোস্তো কিনতে পারবেনা।

নওসাদ মিয়া সকালে বাড়ি ফিরেনা পরী চিন্তায় পড়ে যায়।মানুষাটা তো কখনো এরকম করেনা।পরী অনেক ভেবে নিজেকে প্রবোধ দেয় হয়তো লঞ্চ ফেল করছে বা মানুষের ভিড়ে উঠতে পারে নাই।পরদিন সকালে ফিরবে হয়তো। কালকে কুরবানি, পরী ভাবে মানুষটা এই রাতে কোথায় থাকবে। ঢাকায় তো নওসাদ মিয়া থাকার কোন জায়গা নেই।

গ্রামে একটা খবর নিয়ে আসে কেউ। বা যে কোন ভাবেই খবর টা পাড়ায় ঢুকে পরে। বানের জলের মত ঢুকে পড়ে প্রতিটা ঘরে।শুধু খবরটা থেকে বাদ পড়ে যায় পরী।তার কাছে খবরটা পৌঁছেনা অথচ খবরের প্রকৃত মালিক সে।যেহেতু তার বাড়িতে মানুষের যাতায়াত কম তাই খবরটা স্বাভাবিক ভাবেই পরীর কাছে পৌঁছায় না।তবে কুরবানির এই সকালে খবরের বিষয় বস্তু ঢুকে পরে পরীর উঠান অবধী।কিছু মানুষ নওসাদ মিয়ার লাশের খাটিয়া নিয়ে ঢুকে পরে পরীর অন্দরমহলে।তাতে পরীর কেবল বিস্মিত-ই হয়।অথবা এ আকস্মিকতা তার বোধের বাইরে।পাড়ায় যারা কুরবানি দেয় তাদের কুরবানি বন্ধো রাখা হয়।মৌলভী সাহেব নওসাদ মিয়ার জানাজায় দাড়িয়ে বলেন যেহেতু কুরবানি তিন দিন থাকে তাই কালকে কুরবানি দিলে অসুবিধা নেই।আর নওসাদ মিয়ার স্ত্রী পোয়াতি, তাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিবেন।তার গর্ভের সন্তানের পিতা মরহুম নওসাদ মিয়া।

পরীর জীবনে বাস্তবিক কুরবানি নেমে আসে চিরতরে।পরী কিছুটা অপ্রকৃতস্থ হয়ে যায়।বা এটাই হয়তো প্রকৃত,এটাই স্বাভাবিক। পরীর মানুষের কাছে যেতে হয়।যেতে হয় হাটে বাজারে।বর্গাদারের কাছ থেকে ধানের ভাগ বুঝে নিতে হয়।আর এ ভাবেই অল্প দিনে সে আরো অপ্রকৃতস্থ হয়ে যায়।পরী অনর্থক প্রলাপ বকতে থাকে। যেন সে নিজের সাথেই সারা দিন কথা বলতে থাকে।পাড়ার মানুষের সাথে কারনে অকারনেই বিবাদে জড়িয়ে পড়ে হামেশাই।পরীর ছেলে যে পনু তাকেও পরীর ভাইয়েরা শহরের একটি এতিম খানা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়।এতে পরি প্রকৃত অর্থেই একা হয়ে যায়।

পরীর নিজের সাথে কথা বলা ছাড়া কোন লোক থাকেনা।থাকে নওসাদ মিয়ার পালা কুকুরটা। যেটি বাচ্চা থাকতে হাট থেকে নওসাদ মিয়া নিয়ে আসে।কুকুরটা নওসাদ মিয়া থাকাকালীন কোন ডাকাডাকি করতোনা। ভাতের ফ্যানটুকু,এটো ছানা ভাত খেয়ে শুয়ে থাকতো। কুকুর টা আজকাল দিনে দুপুরে ডাকে, রাত দুপুরে ঘেউঘেউ করে।পরীর বাড়িতে লোকের আনাঘোনা বাড়ে।কারনে অকারনে মানুষেরা ঢুকে পরে বাড়িতে তাতে পরী বিশ্রী গালি দিতে থাকে, এমনকি কুকুরটাও । এরপর কিছুটা শান্ত হলে বিভিন্ন কথা বলতে থাকে কুকুরটার সাথে।মানুষের চেয়ে কুকুরটার সাথে কথা বলতে পরীর বেশি ভালো লাগে হয়তো। মানুষের সাথে পরীর কোন কথাই আর বলা হয়না আর।

যেহেতু পরি পোয়াতি তাই পরী প্রায়ই ক্লান্ত থাকে।পরীর খাদ্যাভাব দেখা দেয়।পরী শাকপাতা টোকায় আর বর্গা জমিতে পাওয়া চালে দিন পার করে কেবল।তবে তার পেটের বাচ্চা বাড়েনা তেমন। পরী স্বাভাবিক থাকলে হয়তো বুঝতে পারতো।পরী যে পোয়াতি তা হয়তো তার মনেই থাকেনা। তার পেট নড়ে উঠলে তার কেবল মনে পরে সে পোয়াতি।পরী তখনি বলতে থাকে" খাইবে আমারেও খাইবে, আমারেও কুরবানি দিবে।এমন কি কুকুরটা কেও বলে "তুইও কুবানি হবি, পলাইয়া যা, পলাইয়া যা,হগলে কুরবানি হইবে"।

অবশেষে পরী ক্ষুধায়,পুরুষ মানুষের আর নিজের ভিতরকার বিবিধ সংকটে কেবল চুরান্ত পাগল হতে থাকে।আর তা আরো বাড়িয়ে তোলে যখন কোন এক সকালে পরী দেখে তার কুকুরের পিঠে গভীর কোপের ক্ষত।তাতে পরী কেবল বলে "তুই-ও কুরবানি হইলি আমার জন্য আর কত কুরবানি বাকি আছে খোদা"।পরী কুকুরটার ক্ষতে হলুদ বাটা লাগালে তাতে কুকুরের মরন বরং সহজ আর শান্তি দায়ক হয়,মৃত্যু রোধ করতে পারেনা।অবশেষে পরীর নিয়ন্ত্রনে আর কিছুই থাকেনে আর।

পরী পথে নেমে পরে। সাথে নেয় একটি পোটলা তাতে নেয় কিছু পিঠা তার বিবাহের লাল শাড়ী আর নওসাদ মিয়া পাঞ্জাবী টা।আর হাতে পরে নেয় সোনার বালা জোড়া।যা তার শাশুড়ি তাকে দিয়েছিল।পরি পথে নেমে কেবল হাঁটতে থাকে। পনুকে মাদ্রাসায় দেবার সময় সেও মাদ্রাসায় গিয়েছিল সাথে।পরী মাদ্রাসার দিকে বা পানুর দিকে-ই কেবল হাঁটতে থাকে।যেন আমরন সে এই পথে হাঁটেই থাকবে। যেহেতু সে পোয়াতি তার হাঁটতে কষ্ট হয়। পা ফুলে যায় পরী হাঁটা থামায় না। সে নিরবিচ্ছিন্ন হাঁটতে থাকে।

পরী ভরা দুপুরে পৌঁছায় পনুর মাদ্রাসার সামনে। যেহেতু ছেলেরা দুপুরে ভাত ঘুমে থাকে তাই মাদ্রাসা দুপুরে নিরব থাকে।মাদ্রাসার গেটে তালা মারা থাকে সব সময়। পকেট গেট খোলা থাকে তবে আজ পকেট গেটও বন্ধ। তাই পরী ভিতরে ঢুকতে পারেনা তাতে পরী অধৈর্য হয়ে গেট নাড়াতে থাকলে পাশের চায়ের দোকানদার, ওয়ার্কসপের মিস্তি ও আরো কিছু মানুষ পরীর কাছে তার বৃতান্ত জানতে চাইলে,পরী কিছুটা বিচলিত হয়ে কেবল বলতে পারে "আমার পোলারে নিমু, পনুরে নিমু "।

ছোট জটলায় তার কথা ভালো বোঝা যায় না ফলে নানা জনে নানা ভাবে কথাটা শোনে। এতে একটা রহস্য ঘনীভূত হলে,পরীকে তারা জেরা করতে থাকে এতে পরী বিগরে গিয়ে কিছু গালি দিলে ছোট জটলা কেবল বাড়তে থাকে,আর কিছু মানুষের ক্রোধ পুঞ্জিভূত হয়,সাথে নানান প্রশ্ন আসতে থাকলে,পরী কোন আশাব্যঞ্জক উত্তর দিতে না পারায় এবং এলোমেলো কথায় সে ছেলে ধরা সাব্যস্ত হয়।
আরো সন্দেহ হয় যখন তার পোটলায় কি আছে দেখে চাইলে পরী যখন দেখাতে রাজি হয় না । তাতে সন্দেহ আরো দৃঢ় হয় যে পোটলার ভিতরে বাচ্চার মাথা আছে।

জনতার ভিতর থেকে কেউ বলে তাকে পুলিশে দেয়া হোক তাতে জনতার বেশির ভাগ না মানায় কেউ সজোরে পরীকে কশে চড় দিলে পরী ছিড়কে পড়ে রাস্তায়। পরীর মাথা ঝিমিঝিম করে। একটা ভোতা ব্যথা ছড়িয় পড়ে তার মাথার ভিতর।কেউ কেউ জনতাকে থামাতে চাইলে তা আরো উসকে উঠে।ছোঁয়াচে রোগের মত মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে সহিংস রোগ,রোগের প্রকপে মানুষের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে সহস্র জান্তব পা।সে পায়ের লাথি গুলি বারবার নেমে আসে পরীর বুকে পেটে পিঠে।পরী উঠে দাড়ায় আবার পড়ে যায় হাচড়ে-পাচড়ে উঠে আসতে চায় এই মৃত্যুর নহর থেকে। তখনি মাদ্রাসার গেট খুলে গেলে পরী জীবনের শেষ পথটুকু পেরিয়ে যায় অসিম দক্ষতায়।পরী ঢুকে পরে মাদ্রাসার ভিতরে।মাওলানার পায়ের কাছে পরে যায় মুখ থুবরে।পরীর হাত থেকে পোটলাটি পরে গেলে তার ভিতর থেকে কিছু পিঠা-পুলি ছড়িয়ে পড়ে মাটিতে।

অন্য সকল ছেলেদের সাথে পনুও এ দৃশ্য দেখতে থাকে।পনু পরীকে চিনতে পারেনা যেহেতু মুখটা দেখা যাচ্ছেনা। পরী মারা গেছে ভেবে জন-জটলা কমে যায়।মাওলানা সাহেব পরীর মুখটা যখন তুলছিলেন তখন পনুর নজর যায় পরীর হাতের দিকে অথবা হাতের বালার দিকে তাতে পনু চিনতে পারে এ বালা তার মায়ের। পরী প্রায়ই বালা জোড়া বের করে পনুকে দেখিয়ে বলতো যে তার বউকে দিবে তাতে পনু কেবল লজ্জা পেতো।বালা থেকে পনুর চোখ যায় পরীর মুখের দিকে আর তাতে পনু তার মাকে চিনতে পারলেও বুঝতে পারেনা তার মা এখানে কেনো এলো আর সকলে তাকে মারলো কেন।পনু মা মা বলে ডাকতে থাকলে পরী চোখ খুলে তাকায়।

পরী মাদ্রাসার ভিতর মাটিতে শুয়ে আছে তার কাপর ভিজে একটি সরু রক্তের ধারা আস্তে গড়িয়ে যায়। মৌলভী সাহেব মাথার কাছে বসে বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে থাকলে পরী দেখতে পায় সাদা সাদা পাঞ্জাবী পড়া অনেক ফেরেস্তা দাড়িয়ে আছে। পরীর বুজে আসেনা খোদার মউতের ফেরেস্তা কতজন থাকে আর তাদের এমন বাচ্চাদের মত মনে হয় কেন।পরী কিছুটা ভয় পায়, পরী মৃত্যুর ভয় পেতে থাকে আর ভাবে তারও কুরবানি হয়ে গেল অবশেষে। পরী দেখতে পায় এর মধ্য থেকে এক জন ফেরেস্তা তাকে কেবল মা মা বলে ডাকছে তাতে পরীর ভয় কিছুটা কেটে যায়।পরী আরো খেয়াল করে ফেরেস্তা টি ঠিক তার ছেলে পনুর মত দেখতে। তাতে পরীর মুখে ক্ষিন হাসি ফুটে উঠলে পরীর নিজেকে খুব হালকা মনে হয়। তার মনে হয় ফেরেস্তা গুলি যেন ক্রমশ লম্বা হতে হতে আকাশে তাদের মাথা ছুঁয়েছে আর তাকে তারা হাতে হাতে ছড়িয়ে দিচ্ছে অসিম শূন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:২৩
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×