আমার নিকট এবারের ব্লগ দিবসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল ম্যাগাজিন প্রকাশ। কারো কাছে আবার পিঠা ও বিরানি ছিল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। যাইহোক, আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ব্লগ ম্যাগাজিন পাঠ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া-০১। প্রতিক্রিয়াটির সাথে ভিন্নমত সাদরে গ্রহনযোগ্য।
(১) বিশেষ রচনা: আমার অন্যরকম আমি এবং মুক্তকথা—সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা।
মূলকথা:
লেখিকা এই প্রবন্ধের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করেছেন চমৎকার ভাবে। ভাল লাগা, মন্দ লাগা, আগ্রহ-আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এই ছোট্ট অথচ হৃদয়গ্রাহী প্রবন্ধে। লেখিকার ভাষায় সংক্ষেপে বলতে গেলে এভাবে বলতে হয়, “ মানুষকে জানতে এবং বুঝতে চাই। নানান রকম মানুষের হাজারো চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত হতে চাই। মানুষের আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনা থেকে নিজেকে সহজই চেনা যায়। নিজেকে চেনার জন্য জানার শেষ নেই। সিনেমা, সঙ্গীত, সামাজিক যোগাযোগ এবং বই নিজেকে জানতে সাহায্য করে। পারিবারিক পাঠাগার থেকে জ্ঞান চর্চার বিরাট সুযোগ আমার জানার পরিধিকে সমৃদ্ধ করেছে। নিজের ভেতরকার মানুষটাকে জানার আগ্রহ মানুষকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। নিজের মত প্রকাশে এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব একজন মানুষকে অনন্য করে তুলতে পারে। কোন কিছুকে না দেখে ভয় পাবার কোন মানেই হয় না। ভূতকে একবার দেখে ফেললে মনের ভিতর আর ভূতের ভয় অতটা কাজ করবে না। আমি ভূতের রুপ দেখতে চাই।
প্রবন্ধের চুম্বক অংশ:
--- সাহস করে বলে বসলাম, “মা, খবরের কাগজের লেখাগুলো তো একপক্ষীয়। সবাইকে শুধু পড়ে যেতে হয়। এর পক্ষে –বিপক্ষে যে হাজারো কথা সবার মনের ভেতর ছটফট করে তা কেউ জানতে পারে না। তাই সবার মতামত সবাই জানতে পারবে এমন একটা কোন উপায় থাকা উচিত ছিল।” মা হেসে বললেন, “ তবে অত বড় খবরের কাগজ পড়তে কতদিন লাগতো জানো?”
----মাকে আমার বিচিত্র চিন্তার কথা অকপটে জানিয়ে দিই। আমি বিশ্বাস করি নিশ্চিত ভাবই ভারী পর্দায় ঢাকা জানালার ওপাশে ভূত আছে। সেটা আমি যতক্ষণ না দেখতে পাচ্ছি ততক্ষণ মাথার ভেতর নানান রকম ভয়ঙ্কর সব চেহারা মাথায় ভাসছে। তারচে’ পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দাও। আমি সরাসরি ভূতদের দেখতে পেলে ওরা কখানি ভয়ঙ্কর তা দেখে ভয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। মা সে ব্যবস্থায় করলেন আর আমার ভূতের ভয় ভিন্ন বিবেচনায় জায়গা পেল। আমার সেই বিশ্বাস হাজারগুণে শক্তিশালী হয়েছে পরে। আমি সবরকম ভূত এর মুখোমুখি হতে চেয়েছি সবসময়। তাদের রূপ এবং কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে প্রস্তুত থাকতে চাই , সজাগ থাকতে চাই।
(২) স্মরণ: নগরের ঋষির নীরব প্রস্থান--- রেজওয়ান তানিম।
মূলকথা:
জনপ্রিয় ব্লগার ঈমন জুবায়ের স্মরণে পাঁচ পৃষ্ঠার লেখাটি শুরু করতে না করতেই যেন শেষ হয়ে গেল। ব্লগার ঈমন জুবায়ের সম্পর্কে এর আগে আমি জানতাম না। ব্লগ ম্যাগাজিনে উৎসর্গ অংশে নাম দেখে জাদিদ ভাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। জাদিদ ভাইয়ের উত্তর আসতে আসতে ততক্ষনে এই লেখাটি পড়ে ঈমন জুবায়ের সম্পর্কে জেনে গেলাম। ঈমন জুবায়ের সম্পর্কে জানার জন্য এর থেকে ভালো কোন লেখা আসবে কি না জানি না।
প্রবন্ধের চুম্বক অংশ:
---- শুধু লিখতেন আর লিখতেন। ব্লগে পোস্ট করেছেন ১৫০০ টি অর্থাৎ চার বছরের কিছু বেশি সময়ে বছরে গড়ে ৪০০ লেখা পোস্ট করেছেন। লেখা প্রকাশের গতিতে অনেকেই অবাক হতেন, কেউ কেউ হত বিরক্ত।
---- নিজেই বলেছেন এই কথা, “ কিছু না। চাকরি/বাকরি না। খুঁজিও নাই। আমার সময় কাটে বই পড়ে, গিটার বাজিয়ে- ইন্ডিয়ান রাগ বাজাই, বোনের বাচ্চাদরে সাথে সঙ্গে খেলাধূলা করে আর গান লিখি ব্ল্যাকের জন্য ….. ২০০৮ সাল থেকে ব্লগিং করি, এতেও সময় কাটে। এই ….. মনে মনে রোমান্টিক হলেও বিয়েটিয়ে করি নাই। স্বাধীন থাকতে চাই। এই …. আমার ডায়াবেটিস আছে …. মেয়েদের এড়িয়ে চলি …. তারা ছেলেদের বদলাতে চায় …. আমি বদলাতে চাই না … এই … “
---- এখনো চোখে লেগে আছে তার প্রোফাইলে লেখা ছোট্ট দুটি লাইন—
“ জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন,
জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন।
(৩) প্রবন্ধ: ব্যবচ্ছেদ: একটি সমাজ --- মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
মূল কথা:
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ হচ্ছে সীমাহীন সীমার পরিধি। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রধান উপাদান মানুষে মানুষে যে বিভেদ তা সত্যিই লজ্জাকর। হিন্দু ও মুসলিম সমাজই কত কত বিভেদ। মতের মিল না থাকায় একজন অন্যজনকে অপবিত্র বলছে, হত্যা করছে। লিঙ্গের ভিত্তিতে তৈরী করা হচ্ছে বৈষম্য। তৃতীয় লিঙ্গের কাউকে দেখলে নাক ছিটকানো মানুষটি যে তাকে অষ্পৃশ্য ভাবে তার কাছে যৌনাঙ্গের অধিকারী ধর্ষক ও বেশ্যা অষ্পৃশ্য নয়।
প্রবন্ধের চুম্বক অংশ:
--- আমরা দেখতে পাই হিন্দু সমাজে চারটা উপসমাজ- ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র। সবাই একই দেবদেবীর পূজা করে একই ধর্ম পালন করে। কিন্তু একটা গোষ্ঠী থেকে আরেকটা গোষ্ঠীর কত্ত ভেদাভেদ। মুসলমানেরা শিয়া-সুন্নি-ওহাবী প্রভৃতি দলে বিভক্ত। একই আল্লাহ ও রাসূলের ঈবাদত করেও কত বিভেদ এদের মাঝে!
--- আমি মনে করি, একটি রাষ্ট্র মানেই একটি সমাজ। সমাজে যদি একের অধিক উপসমাজ, কিছু দেবতা, কিছু অষ্পৃশ্য, ভিন্ন ভিন্ন স্তরে সীমাবদ্ধ শ্রেণীবৃত্ত বিরাজমান থাকে তাহলে একটি রাষ্ট্রের তথা সমাজের মৃত্যু কি অবধারিত নয়?
(৪) প্রবন্ধ: ব্লগে আমাদের লেখা হোক শালীন, সৃষ্টিশীল—নূর মোহাম্মদ নূরু।
মূলকথা:
ব্লগ একটি স্বাধীন মত প্রকাশের উন্মূক্ত প্ল্যাটফর্ম। নিজেদের চিন্তা-চেতনা-মতামত লেখনির মাধ্যমে ব্লগারেরা প্রকাশ করেন। এখানে যেমন স্বাধীনতা রক্ষার ব্যাপারে সবাই সচেতন, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সংস্কৃতির চর্চা, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায়ও সচেতন। কোন বিষয়ের ব্যাপারে ভিন্নমত থাকতে পারে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা হতে হবে শালীন ভাবে।
প্রবন্ধের চুম্বক অংশ:
---- সামহোয়্যার ইন ব্লগকোন দলের বা পক্ষের নয়। এটি একটি উন্মূক্ত প্লাটফর্ম। যেখানে আমার মত অন্যান্য ব্লগারগণও তাদের মতামত ও মন্তব্য করার স্বাধীনতা ভোগ করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নানাবিদ কারনে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাংলা ব্লগাররা। নানাভাবে তাদেরকে হুমকি, অশালিন মন্তব্য, কুৎসা রটনা ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সরকার নির্ভেজাল অন্যায় ও গুরতর মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাংলা ব্লগে দীর্ঘ আটমাস বন্ধ করে রাখে। যার কারনে হতাশ হয়ে পড়েন এই ব্লগের ব্লগারগণ। অবশেষে সত্যের জয় হয়। খুলে দেয়া হয় সামহোয়্যারইন ব্লগকে।
যে অংশের সাথে একমত নই: লেখক বলেছেন, ব্লগারেরা হতাশ হয়ে পড়েন। আসলেই কি তাই? আমি কি হতাশ ছিলাম না। আপনারা কে কে হতাশ ছিলেন??
(৫) প্রবন্ধ: ব্লগ বাড়িয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা—মোজাম্মেল কবির
মূলকথা:
দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ব্লগারদের সরব উপস্থিতি একটা সময় ছিল চোখে পড়ার মত। ব্লগে যারা লিখেন তারা অনেকেই সচেতন। আর এই সচেতন মানুষেরা হুজুগে কোন কাজ করতে পারে না। কোন পক্ষের উস্কানিতে যে কোন পদক্ষেপই ভয়ঙ্কর হতে পারে।
চুম্বক অংশ:
---- জুম্মার নামাজের পর পাড়া মহল্লার মসজিদগুলো থেকে দলেদলে লোক কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে যাচ্ছে। চরম আবেগে উত্তেজিত সবাই। ইস্যু, মহানবী (স.)কে অবমাননার প্রতিবাদে ঈমান রক্ষার দায়িত্ব পালন। হঠাৎ একটি মিছিল দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসতে থাকে। মিছিলের শ্লোগান “ ব্লগারদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও”। আমি নিশ্চিত, যে ছেলেটি শ্লোগান দিচ্ছে তার ব্লগ, ব্লগার, ব্লগারদের আস্তানা সম্পর্কে ধারনা নেই মোটেই।
”ব্লগ বাড়িয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা” প্রবন্ধের একটি স্থানে লেখক বলেছেন, “ ব্লগারদের দাবীর মুখে সরকার কাদের মোল্লার ফাঁসির ব্যাপারে সংসদে আইন পাশ করতে বাধ্য হয়েছিলো।”
--- আমার মনে হয় সরকার ব্লগারদের দাবীর মুখে কোন আইন পাশ করেন নি। সরকারও চাইতো কাদের মোল্লার ফাঁসী হোক, তাই করেছে। এখানে ব্লগারদের ক্রেডিট নেয়ার কিছু আছে কি??
ছবিঋণ: কাজী ফাতেমা ছবি
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪৫