প্রথম পর্ব: গতকাল ১ম পর্ব(আসলে ছোট গল্প) লিখেছেন নীলআকাশ। গল্পের নায়িকা অর্থাৎ ফারিহা একটু বদমেজাজী ছিল। আরোগ্য কমেন্টস করেছিল "এ মেয়েরে বিয়ে করলে সারা জীবন গোলামী করতে হবে অন্যথায় ভাত জুটবে না।" দেখে খুব কষ্ট লাগলো। আসলে মেয়েটাকে এমন কটুকথার মুখে ছেড়ে দিতে একদমই ইচ্ছা করছিল না। বি:দ্র: আমার জীবনের প্রথম গল্প লেখার চেষ্টা। জানিনা অপচেষ্টা হলো কিনা......!
দৃশ্য--(৪)
ফাহিমকে দেখেই ফারিহা নিজের অজান্তে নরম জিহ্বা শক্ত দাঁতে কামড়ে ধরলো! হায় সর্বনাশ! এ তাহলে ড্রাইভার নয়? চেহেরা দেখেও ড্রাইভার মনে হচ্ছিলো না, কিন্তু বাবা যেভাবে বলেছিলে তাতে তো আমি ড্রাইভার ভেবে নিয়ে যা তা ব্যবহার করছি। এখন লজ্জায় মুখ দেখাই কি করে? এই সব ভেবেই অবিশ্বাসের ছাপ ফারিহার চোখে মুখে। ফাহিম এখন কি ভাববে?
উঠতে যাচ্ছিল হন্ত-দন্ত হয়ে। ফাহিম তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "বসুন, আমি বুঝতে পারছি আপনি আমাকে দেখে লজ্জা পেয়েছেন।"
ফারিহা আরো লজ্জা পেল এই কথা শুনে। চোখ তুলে তাকাতেই পারছেনা ফাহিমের দিকে। ছেলেটা একেবারে যে অপছন্দ করার মত না তা প্রথমে যেদিন দেখেছিলো সেদিনই ফারিহা বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু....
ফারিহার মনের মধ্যে যে এতো কিছু ঘটে যাচ্ছে তার কিছুই টের পাচ্ছেনা ফাহিম। ফাহিমের ধারণা যে মেয়েটা প্রথম থেকেই তার সাথে এমন ব্যবহার করেছে সে নিশ্চয় ফাহিমকে পছন্দ করবেনা। কিন্তু এভাবে তো উঠেও যেতে পারছে না!
-দেখুন ফারিহা, আমাদের এভাবে উঠে যাওয়াটা ঠিক হবেনা বোধহয়। আমাদের গার্জিয়ানরা কষ্ট পাবে। তাঁরা তো আর জানেনা যে আপনি আমাকে অপছন্দ করেন। আর আপনি যদি বলেন যে আমাকে পছন্দ করেন না সেক্ষেত্রে আপনার বাবা-মা আপনাকে ভুল বুঝতে পারে। ভাবতে পারে আপনি কাউকে পছন্দ করেন বলেই আমাকে অপছন্দ করছেন। তার চেয়ে আমি ভাইয়া-ভাবীকে বলে দেব মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি। বাকিটা সামলে নেয়ার দায়িত্ব আমার।
ফাহিম এতোগুলো কথা বলছে অথচ ফারিহা কিছুই বলতে পারছে না। লজ্জায়, সংকোচে। ভেবে পাচ্ছে না কি বলা উচিত।
বাইরের আবহাওয়াটা হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেল । এতো সুন্দর রৌদ্রোজ্জল দিনে বৃষ্টি হবে কল্পনাও করতে পারেনি।
এদিকে ভাবীও যেন কই গেল। সম্ভবত বাইরে কোথাও। রোদেলার জন্য কিছু আনতে গেছে হয়তো। বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যে আটকে গেল?
ফাহিম চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। তার মনটা খুব খারাপ। বৃষ্টি দেখলে যে ফাহিমের ভিজতে ভীষণ ইচ্ছা করে সেই ফাহিম কিনা আজ বৃষ্টিকে ভয় পাচ্ছে! যে বিয়ে নিয়ে মনের মধ্যে হাজারও স্বপ্ন ছিলো তা যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা যে অপছন্দ করার মতো না তা যে কেউ বলবে। আজকে সেজেগুজে আসাতে আরো অসাধারণ লাগছে। বারবার দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সুন্দর চেহারাই কি জীবনের সব? সুন্দর আচরন, ভদ্র ব্যবহার না হলে যে এমন মেয়েকে দিয়ে সংসার হবে না। ভাইয়াকেই বা কি বলবো? মুখের উপর তো নাও করতে পারবো না! শেষ ভরসা ঐ ভাবী। ভাবীর কাছে অবশ্যই বলতে হবে খুলে।
-ফাহিম, ওখানে কি করছো?
-আরে ভাবী? তুমি কখন এলে। আর কোথায় বা গেছিলে?
- এইতো পাশেই। রোদেলার জন্য খেলনা কিনতে।
-তা... মেয়ে কি পছন্দ হয়েছে?
- হ্যাঁ..., কিন্তু.......
কথা শেষ না করতে দিয়েই আলহামদুলিল্লাহ বলে ব্যাগ থেকে লাল ছোট বক্স বের করে হাতে দিল ভাবী।
-নাও, এইটা পড়িয়ে দাও।
-কিন্তু....
-কোন কিন্তু নয়। মেয়ে তোমার পছন্দ হয়েছে ব্যস!
তখনো ফারিহা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছিলো টেবিলের আল্পনাগুলো মনযোগ দিয়ে দেখছে।
-এই যে লাজুক পরী! এখন এত লজ্জা পেতে হবে না।
-দেখি.... হাতটা দেখি....
ফারিহার হাত সামনে এগিয়ে ধরলো ভাবী। ফাহিম যেন চৌরাস্তার মোরে হাতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানো, আংটি হাতে ভাস্কর্যের মতো। বোবা, নিস্প্রাণ। কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না। একবার ভাবলো এক দৌড়ে পালিয়ে যাবে। দাড়োয়ানের মুখে যে বর্ণনা শুনেছে তা যে মিথ্যা মনে করবে তারও উপায় নেই। ফাহিম নিজেই তো ঘটনার সাক্ষী!
-কি হলো? এতো কি ভাবছো?
ভাবীর কথায় বাস্তবে ফিরে এলো যেন।
-না....কিছু না!
-আংটি পরাচ্ছো না কেন? আর কতক্ষণ ওয়েট করবা?
নাহ, আংটি পরিয়েই দেই! আংটি পরালেই কি আর বিয়ে হয় নাকি?
শত সংকোচের মধ্যেও আংটি পরালো। যে মেয়েটা এতটা চটপটে আর বদমেজাজী সে কোন কথায় বলছে না? কি জানি, মেয়েটা কি ভাবছে কে জানে!
দৃশ্য--(৫)
কিছুতেই ঘুম আসছে না ফাহিমের। এভাবে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে পারে না। নতুন জীবন নিয়ে সব ভাবনার ইতি এভাবে ঘটবে?
না..... আর কিছুই ভাবতে পারছেনা। কি করবে এখন ফাহিম? কি করা উচিত? একবার ভাবছে সব ঘটনা ভাবীর সাথে শেয়ার করবে। কিন্তু কোন এক অজানা শক্তি বিছানা থেকে তাকে উঠতে দিচ্ছে না।
যাক কালকে বলা যাবে, ভেবেই মোবাইলের লক ছাড়িয়ে এলার্ম সেট করার জন্য যেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো অমনি অচেনা নাম্বার থেকে একটা ফোন এলো। অপরিচিত নাম্বার সাধারণত রিসিভ করে না ফাহিম। এবারও করলো না। একে একে তিনবার বেজে বন্ধ হলো তবুও রিসিভ করলো না। চতুর্থবারে ফোন উঠালো।
-এতক্ষন লাগে ফোন ধরতে?
পরিচিত গলা মনে হচ্ছে। মেয়ে কন্ঠ দেখে অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞাস করলো, কে আপনি?
- সারাদিন যার সাথে ছিলেন তাকেই চিনতে পারছেন না?
এবার বুঝলো, এতো সেই মেয়ে। ফারিহা।
-কি ভাবছেন এতাে? কথা বলছেন না কেন?
-জ্বি বলুন, শুনতে পাচ্ছি।
-কাল সকাল আটটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গ্লাস টাওয়ারের ঐখানে আসবেন। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। বেশি কথা বললে কান নষ্ট হয়ে যাবে। রাখি।
কিছু না শুনেই ফোন কেটে দিল। এখন আর ইচ্ছা করছে না ফোন ব্যাক করতে। ফারিহার কথা শুনে কেমন যেন লাগছে। তবে কি ফাহিম বলির পাঠা হতে যাচ্ছে?
দৃশ্য--(৬)
সারা রাত দু:শ্চিন্তায় ঘুম আসেনি। শেষ রাতে ক্লান্তিতে ঘুমে চোখের দু'পাতা এমন ভাবে জোড়া লেগে আসছিলো শেষমেশ ঘুম ভাঙ্গে যখন দেয়াল ঘড়িতে সকাল সাড়ে আটটা বাজে। ফারিহা যে তাকে দেখা করতে যেতে বলেছিলো তা বেমালুম ভুলে গেছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে পেটের ক্ষুদায় ফোনটাও চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে। এতক্ষণে ভাবী ডাকতে আসছে।
কি হলো এখনো উঠছো না যে? ফারিহা কল দিয়েছিলো। তোমাদের নাকি কোথায় যাওয়ার কথা?
-সর্বনাশ! কি করে বিষয়টা ভুলে গেলাম? যাক, ভালোই হয়েছে। মেয়েটার বুঝা উচিত কাউকে অবজ্ঞা করলে কেমন লাগে।
ফারিহা প্রায় এক ঘন্টা বসে থেকে চলে এলো। মনটা ভীষণ খারাপ। এমন অবহেলা কারো কাছ থেকে পায়নি সে। রাগে কান্না পাচ্ছে। বুঝতে পারছে কারো অবহেলা পেলে কেমন লাগে। আজকে গাড়ি নিয়ে একাই বের হয়েছিল। ইচ্ছা ছিল অনেকক্ষণ ঘুরবে ফাহিমের সাথে। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। আজকে আর কোথাও যাবে না। সোজা বাসায় চলে যাবে। ছেলেটাকে যাও একটু মনে ধরছিলো এই ঘটনার পরে তার সাথে আর সম্পর্ক করা চলে না। উত্তেজিত হয়ে বাড়ি ফিরছিলো। শাহবাগের মোড়ে আসার পর এক ট্রাফিক আটকে ফেললো।
-প্লিজ আপনার লাইসেন্সটা দেখান।
-সব সময় কি লাইসেন্স নিয়া ঘুরবো নাকি? লাইসেন্স বাসায় আছে। চলেন যাই দেখিয়ে দেব।
এক কথায় দুই কথায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট নরমাল মামলা ঠুকে দিল। মেজাজটা আরো গরম হয়ে গেল। এই অল্পটাকার মামলা ব্যাপার না তবে যে অপমানিত হলো তাতে খুব কষ্ট পেল মেয়েটি। কি আর করা!
গাড়ি নিয়ে সাইন্স ল্যাবরেটরির কাছে আসার পর ঘটলো আরেক বিপত্তি! বাটার সিগন্যাল পার হতে নিয়ে এক রিকশার সাথে বাধিয়ে দেয়। চাক্কা বেঁকে যায় রিকশার। কয়েকজন রিকশাওয়ালা ঘিরে ধরলো। ফারিহাকে গাড়ি থেকে নামিয়েই ছাড়লো। এক হাজার টাকা জরিমানা সাধলেও মানুষের কথার হাত থেকে রেহাই পেল না!
ফারিহা আসলে ভাল চালক নয়। কেবল শিখছে। এজন্যই সেদিন গাড়িটা পর্যন্ত গ্যারেজে ঠিক করে রাখতে দেয়নি ওর বাবা। আজকে জানলেও বের হতে দিত না।
কোন মতে বাড়িতে এসে নিজের রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুয়ে শুয়ে ভাবছে সেদিন ফাহিমের সাথে অমন বাজে ব্যবহার করা কিছুতেই উচিত হয়নি। আসলে আজকে গাড়ি নিয়ে না বেরুলে হয়তো সে বুঝটুকুও হতো না।
দৃশ্য--(৭)
ফাহিমের ভাইয়া ৬ মাসের জন্য জর্ডান যাচ্ছে। এইতো কালকেই কনফার্ম হলো। রবিবারেই ফ্লাইট। অফিসের কাজে। জরুরী একটা ট্রেইনিংয়ে। ও হ্যাঁ........ বলাই হয়নি, ফাহিমের ভাই একটা গার্মেন্টেস প্রোডাক্শন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। এই ট্রেইনিংয়ে তার বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। তাই ট্রেইনিংটা হাত ছাড়া করতে চাচ্ছে না। এদিকে ফাহিমও সব সময় ছুটি পায়না, ওরো বিয়ে দেয়া দরকার। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করাটা প্রায় অসম্ভব।
ফাহিমও খুব দু:শ্চিন্তার মধ্যে আছে। বড় ভাই চলে যাবে, তাকেও কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম কর্মস্থলে ফিরে যেতে হবে।
এদিকে যে বিয়ের আয়োজন নিয়ে ভাই-ভাবী কথা বলছে তা কিছুই বুঝতে পারছে না। কানাঘোষা দেখে ভাবছে হয়তো বিদেশের ব্যাপারে কিছু বলাবলি করছে, তাই ওতোটা মনযোগ দিল না। আর এমনিতেও ফাহিম অন্যের কথায় আড়িপাতা পছন্দ করে না।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দিল ফাহিম।
একি........?
এই অসময়ে ফারিহার বাবা আমাদের বাসায়?
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে সালাম দিয়ে বললো, আংকেল ভেতরে আসেন। ফারিহার বাবাও হাসিমুখে সালামের জবাব দিয়ে বললো, কেমন আছো বাবা?
-জ্বি আংকেল ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভাল আছি। তোমার ভাইয়া কোথায় ?
-ভেতরের রুমেই আছে। যান চাচা।
ফারিহার বাবা ভাই-ভাবীর সাথে আলাপ করতে গেল।
ফাহিম ভাবছে বাবাটা যার এতো নরম মনের তার মেয়ে যে কেন বদমেজাজী হলো?
দৃশ্য--(৮)
দুপুর দুইটা বাজে। ভাই আর ফারিহার বাবা একত্রে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। যখন ফিরে এল তখন প্রায় সন্ধ্যা। সাথে দেখি পাশের মসজিদের ইমাম সাহেব। হাতে অনেক বাজার-সদাই। নতুন কিছু শপিং ব্যাগও দেখছি। কিন্তু হঠাৎ করে এতো বাজার করার হেতু কি হতে পারে? ভাইয়া বিদেশে যাবে তাই হয়তো.......
একটু পরে ভাইয়া ডাক দিলো:
-ফাহিম, এদিকে আয় তো ভাই!
- জ্বি ভাইয়া আসছি......
- দেখতো এই পান্জাবীটা পড়ে লাগে কিনা?
ফাহিমের বুঝার আর বাকি রইলো না তাকে কুরবানীর গরুর মতো কেন সাজানো হচ্ছে! আজ আর রক্ষা নেই্ ভাইয়ার সামনে কিছু বলতেও পারছে না। এই ভাই-ই তো তাকে পড়ালেখা করিয়েছে। তার ভাল-মন্দের খেয়াল রেখেছে। যখন যা আবদার, মিটিয়েছে। আজ কি করে না করবে ভাইয়ের সিদ্ধান্ত কে? কিন্তু ভাইকে বললে যে বুঝবে না তাও নয়। তারপরও কেন যেন বলতেও ইচ্ছে করছে না। হয়তো মেয়েটিকে কোন কারনে ভাল লেগে গেছে..........
দৃশ্য--(৯)
কোন অনুষ্ঠান নেই, সানাই নেই, লাইটিং নেই সাদামাটা একটা বিয়ে হয়ে গেল। যার সাথে কথা শুরু হয়েছিলো ঝগড়া দিয়ে সেই কিনা আজ জীবন চলার সাথী হবে? সেই কিনা আজ পাশে বসে আছে? বিষয়টা ভাবতেও কেমন যেন লাগছে। সাদামাটা বাসর ঘরে নীল শাড়িতে লম্বা ঘোমটা টানা যে মেয়েটি বসে আছে সেই কি ফারিহা? না অন্য কেউ? যদি ফারিহায় হবে তবে তাঁর বদ মেজাজ কোথায় গেল.........?
নাহ.......। আর ভাবতে পারছে না। ঘোমটা সরিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা আসলে কে?
চোখ বন্ধ করে ঘোমটা সরালো। ঘোমটা সরিয়ে চোখটা খুলতেও ভয় করছে। সব ভয় দূরে ঠেলে কোন মতে চোখটা খুলেই অবাক? মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এল, মাশাআল্লাহ.....।
ফারিহা ভীষণ চমকে উঠলো। তাকে দেখে আজ পর্যন্ত কেউ এমন শব্দ উচ্চারণ করেনি। সবাই তো মাল-ই বলতো......!
আরো বেশি শ্রদ্ধায় সিক্ত হলো ফারিহার মন। আনন্দে হৃদয়টা ভরে গেল ভালবাসা পূর্ণ কথা ও ফাহিমের জ্ঞানের গভীরতা দেখে। এমন করে কেউ কোনদিন তাকে বলেনি। কেউ এতো সুন্দর করে ভালবাসেনি। কেউ বুঝায় নি কোনটা ভদ্রতা আর কোনটা অভদ্রতা...........।
দু'জনের ভালবাসায় সাদামাটা বাসর রাতও তারা ঝিলমিল করে উঠলো। অমাবশ্যার রাতেও যেন পূর্ণ চাঁদ ফাহিমের ঘরে। ফরিহাও মনে মনে সংকল্প করলো মানুষের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না। অভদ্র আচরনে কাজ আদায় করা যায় ঠিকই কিন্তু ভদ্রতায় কাজ ও মানুষের মন দুটোই আদায় করা যায় তা খুব ভালভাবে বুঝতে পারছে!
ফারিহার অবাক লাগছে এই জন্য যে, যাকে একদিন ড্রাইভার ভেবে ভুল করেছিল সে আসলেই ড্রাইভার! ফারিহার মনের ড্রাইভার!
কৃতজ্ঞতা: পদাতিক চৌধুরিকে, যার কাছে গল্প চেক করার জন্য পাঠিয়েছিলাম। গল্প পড়ে প্রিয় ভাইয়ের মন্তব্য: খুব ভালো হয়েছে।
গল্পটা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম সম্ভবত শেক্সপিয়ারের কোন একটা গল্পে এরকম একটু পড়েছিলাম বা অন্য কোন লেখকও হতে পারেন । একজন ধনী বাবার রগচটা মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ সব ভেঙে যাচ্ছিল তার বদমেজাজী স্বভাবের জন্য। মেয়েকে সময়ে পাত্রস্থ করতে না পেরে বাবাও বেশ বিরক্ত ও হতাশ হয়ে পরেছিলেন নিজের মেয়ের উপর । অবশেষে একটি পাত্র এহেন মেয়েকে সব জেনে শুনে বিয়ে করতে রাজি হলে , কন্যার পিতার দুশ্চিন্তার অবসান ঘটে এবং সেই মতো বিবাহ স্থির হয়।
বিয়ের দিন পাত্র মহাশয় একেবারে সাদামাটা একটা গাড়ি ভাড়া করেছিলেন। যেটা দেখেই পাত্রীর মস্তক গরম হয়ে যায়। যদিও বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় তিনি আর কিছু করতে পারেননি ; বাধ্য হয়ে ওনাকে স্বামীর সঙ্গে সেই পুরানো গাড়ীর সওয়ারি হতে হয় । মাঝ রাস্তায় আবার বিপত্তি ! গাড়ি গেল বিগড়ে। অগত্যা পায়ে হাঁটা আরকি। রাগে গজগজ করতে করতে তিনি তার পতিদেবতাকে অনুসরণ করতে লাগলেন । অবশেষে দীর্ঘ রাস্তা পায়ে হেঁটে যখন তিনি স্বামীর বাড়িতে পৌঁছালেন তখন দেখলেন জৌলুসহীন বাড়িতে তাকে বরণ করার মতো কেউ নেই। একটা বিয়ে বাড়ির যাবতীয় বৈশিষ্ট্য যে বাড়িতে অনুপস্থিত। চমকের আরো বাকি ছিল ।
দীর্ঘ রাস্তা পায়ে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি পৌঁছে দেখলেন কোন খাবার নেই। স্বামী দেবতার অবশ্য একটিই কথা ,তোমার বাবা তো আমার সব দেখে শুনেই দিয়েছেন ; কাজেই কি আর করা যাবে। যাই হোক অনেক রাতে দুজনের 4 টুকরো রুটি এল। স্বামী দেবতা নিজের ভাগের দুটি রুটি খুব আগ্রহের সংগে খেলেও কনে তা খেতে আপত্তি করলেন। স্বামী মহাশয় এবার যখন কনের ভাগের রুটিতে হাত দিলেন খাবেন বলে তখনই কনে ছোঁ মেরে নিয়ে নিলেন এবং খিদের তাড়নায় কাঁদতে কাঁদতে ওই পোড়া রুটি গো -গোগ্রাসে খেয়ে ফেললেন। রাতে শোয়ার জন্য কোন খাট নেই; ভাঙাচোরা মেঝেতে শোয়ার ব্যবস্থা। যে মেয়ে জীবনে কোনদিন 10 ইঞ্চি গদি ছাড়া কখনও থাকেনি তার পক্ষে বাসর রাতে যদি ভাঙাচোরা মেঝেতে থাকতে হয় তাহলে কতটা দুর্বিষহ বা যন্ত্রণার তা সহজেই অনুমেয় ।
যাইহোক এই অবস্থায় বেশ কিছু দিন কাটানোর পর যখন প্রথাগতভাবে বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় হলো কনে আবার বায়না ধরলে , স্বামী দেবতার একটিই কথা বিয়ে যখন করেছি তখন দুটি মত নয়, মত হবে একটিই। যতক্ষণ না দুজনের মত এক না হচ্ছে ততক্ষণ বাপের বাড়ি যাওয়া হবে না। এইভাবে আরো বেশ কিছুদিন গেল। অবশেষে এমন একটা সময় এল যখন স্বামী -স্ত্রীর মত একটিই পথও একটিই । তখন অবশ্য স্বামী দেবতা তার সুযোগ্য স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
আমি ঠিক এরকম একটি প্লটের কথা বলতে চেয়েছিলাম। তবে আপনার গল্পও বেশ জমাট হয়েছে। আগামীতেও আমরা আরও সুন্দর সুন্দর গল্পের আশায় থাকবো।
অফুরান শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪১