somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি যখন বাবা হবো

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি: গুগল থেকে নেয়া....

ছোট্ট শিশু পৃথিবীতে আমার জন্ম যেদিন নিবে,
তুলতুলে হাত মৃদু হাসি তার দাঁত বিনা মুখ জিবে।
নকশিকাঁথায় জড়িয়ে বাবুকে যেই নিতে যাব কোলে,
বাবুর আম্মু বলবে আমাকে ''ফালিয়ে দিওনা ভুলে।
কচি কচি হাত ওভাবে ধরোনা ব্যাথা যদি পায় সোনা!
আহারে, শীতের মধ্যে ঘুঁচাওতো কাঁথার কোণা।''

এত ছোট শিশু ফুলের মতন তুলতুলে গাল বলে,
কাজের ফাঁকেতে মাঝে মাঝে এসে নিতে মন চায় কোলে।
আলতো করে চুমু দিয়ে গালে আদর মেখে দেই তারে,
কোথা থেকে যেন স্বর্গীয় সুখ দোলায় হৃদ মাঝারে।
দু'মাস হয়নি এখনি যেন আব্বু বলে যায় ডেকে,
''জলদি আসো, আব্বু বলেছে'' ডাকি আমি আয়শাকে।
আমার সাথে ঝগড়ায় মাতে ''না, আব্বু বলেনি ছেলে,
আম্মু বলে ডেকেছে আমায় তুমি শোন নাই ভুলে।''

সোনালী আশের মতো চুলগুলো বাতাসে যখন উরে,
ছেলেটাকে রেখে ইচ্ছা করে না কাজের লাগি যাই দূরে।

হঠাৎ একদিন মুখের ভেতর মুক্তা দানার মতো!
ছোট ছোট দু'টি দাঁত গজালে আয়শা যে খুশি কতো।
ফোন করে বলে, ''শোন স্যার, বাবুর হয়েছে দাঁত!
মিষ্টি নিয়ে এসো দোকান থেকে ফিরতে করো না রাত''।
ভাই-বোন আর বাবা মার কাছে ফোন করে একে একে,
খুশিতে আয়েশা লাফাচ্ছে যেন এতো খুশি কই রাখে!
আম্মা বলেন, ''এতো লাফানোর ঘটেছে কি বউমা এমন?
ছোট বেলায় দাঁত উঠতেই পারে, লাফানো থামাও তো এখন"!
মায়ের কথাতে আয়শার মনে একটু ব্যাথা যায় লেগে,
সকাল থেকে তাই ভাত খাবে না, গাল ফুলে আছে রেগে।
আব্বা তখন কোথা থেকে যেন আসলো যেই বাড়িতে,
আয়েশা আম্মা আজ খায়নি কেহ ভাত রয়ে গেছে হাড়িতে।

হঠাৎ ছেলেটা মা বলে যেই উচ্চারন করে মুখে,
সব রাগ বলে আয়েশা তখন ছেলেটাকে নেই বুকে।
খুশিতে আয়েশা কেঁদে ফেলে যেন আনন্দে ভাসে বুক,
মা ডাক শুনে অপার খুশিতে ভুলে যায় রাগ শোক।
বউয়ের এমন পাগলামি দেখে মাও কেঁদে ফেলে শেষে,
আব্বা এসে দু'জনকে থামাবে, সেও কাঁদে অবশেষে!
ছেলেটাকে নিয়ে আনন্দ খুশিতে সবার চোখে দেখি জল,
ঘটনা বৃত্তান্ত শুনে আজ আমার চোখটাও ছলছল!

তাইতো বলি বেহেশত কেন জননীর পদতলে,
সব সুখ কেন ছড়ায়ে রয়েছে স্নেহ মাখা ঐ কোলে?
দশমাস মায়ে পেটে ধরে ছেলে প্রসবের কত ব্যাথা,
মা ডাক শুনে সব ভুলে যায় মুছে যায় শোক গাঁথা।

অল্প বাদেই বাড়িতে এসে সবার চোখে জল দেখে,
আৎকে উঠি, আমার ছেলেটা পড়ছে না কেন চোখে?
প্রতিদিন সোনা গুটিগুটি পায়ে অল্প হাটতে নিলে,
পড়ে যেত প্রায় দৌড়ে উঠাই হাতের ব্যাগটা ফেলে।
আয়েশাকে ডাকি আম্মাকে ডাকি কেহ নাহি শুনে ডাক!
এমন নিরবতা ভাবিয়ে তুলে আজ অবশেষে করি রাগ।
রাগ করি দেখে আম্মা হাসে আয়েশাও খিলখিল,
আমি বলি, ''দেখ ভনিতা ছাড়ো তো মারবো কিন্তু কিল।
আগে বল আজ কাঁদছো কেন এমন খুশির দিনে,
ছেলেটা কোথায় বল তাড়াতাড়ি মিষ্টি এনেছি কিনে।''
"বাবুটা তোমার আব্বুর সাথে পুকুরের ধারে গেছে,
চিন্তা করো না কিছু হয় নাই বাবুটাও ভালো আছে।"
চারটি বছর কেটে গেল দেখি হাসি খুশির সংসারে,
এমনি ভাবে কাটে যেন সুখে প্রার্থনা প্রভুর দ্বারে।

ছেলেটা আমার চার বছরেই মক্তবে যায় রোজ,
আমিও ছেলেকে পড়াতে বসিয়ে মাঝে মাঝে নেই খোঁজ।
একদিন বাবুকে লেখা শিখাবো স্লেট খড়িমাটি হাতে,
হাতেখড়ি দিতে বসিয়েছি ছেলেকে আমার পাশেই খাটে।
মুখচেপে হাসি ছেলেটার অমন লেখার কসরত দেখে,
বাবুটার এতো পরিশ্রম দেখে কষ্টও লাগে বুকে।
একদিনে লিখে আলিফ বা তা ছা তিনটে বর্ণমালা,
অনেক কষ্টেও জীম পারে নাই মুখটা হয়ে গেল কালা।
ছেলেটার মাথায় হাত রেখে বলি মুখবার করে না বাবা!
ধৈর্য্য ধরো অবশ্যই জীবনে ভালো কিছু তুমি পাবা।

পরদিন দেখি নিজ তাগিদেই ছেলেটার হাতে চক!
ধ্যান করে লিখে আগের বর্ণ যেমন ধ্যানে থাকে বক।
ছেলেটার অমন উৎসাহ দেখে আব্বাকে আনি ডেকে,
আম্মাও আসে ডাক শুনে আমার অবাক কান্ড দেখে।
আয়েশা ছিলো রান্নার কাজে সবার জটলা দেখে,
শাক রাঁধে তাতে লবনটা বেশি দেখেওনি আজ চেখে।
খেতে বসে বাবু নুন নুন বলে চমকে উঠলাম আমি,
আরেকটি বর্ণ শিখে নাকি ছেলে হয়েছে অগ্রগামী?
আয়েশা তখন শাক মুখে দেই অবাক কান্ড দেখে,
হেসে উঠে বলে "স্যার, নুনে পোড়া শাক দেখিনি তো আজ চেখে।"
এমন কান্ড দেখে হাসি আমি হেসে উঠে ছোট ছেলে,
স্বর্গীয় সুখ সেথা এসে নামে শাকে নুন ছিলো বলে।

নামাযে দাঁড়ালে পাশে এসে দাঁড়ায় বুকের উপরে হাত,
মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বের করে হাসে দাঁত।
রুকুতে গেলে ছেলেটা আমার মাথার সামনে ঝুলে,
আম্মাজান এসে নামায় জলদি আদর মেখে নেয় কোলে।
একটু পড়েই কান্না করে ছেলে কোল থেকে আসে নেমে,
সিজদায় গেলে ঘোড়া ঘোড়া খেলে উঠতে গিয়ে যাই থেমে।
ছেলের আম্মু জলদি নামায় কতক্ষনইবা থাকতে পারি,
সালাতের শেষ কোলে এসে বসে বাপ-ছেলে মুনাজাত ধরি।

বাজারে গেলে চশমা কেনার বায়নাটা ধরে রোজ,
বিভিন্ন কিছুর দৃশ্য দেখিয়ে ছেলেটাকে দেই বুঝ।
এক এক করে চারটা চশমা বল কিনে দেই দু'টি,
যত খেলনা সব বের করে বসে স্কুল দিলে ছুটি।

অল্প তালিম দেই ছেলেকে খেতে বসে প্রতিদিনি,
ছেলেটাও আমার সোনার মতন মাথা নাড়ে যেন জ্ঞানী।
উপদেশ আমার মেনে চলে রোজ সালাম কালামে সেরা,
সহপাঠিদের দেয়না কষ্ট মনে যেন জ্যোতি হেরা।

এমন সন্তান পাওয়া যায় বলাে কতটা পূণ্য করে,
মা-বাবা-ভাই, বৌ-ছেলেটায় আলো আজ আমার ঘরে।


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৬
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি তাদের কাছেই যাবে তারা তোমার মূল্য বুঝবে....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪


মৃত্যুর পূর্বে একজন পিতা তার সন্তানকে কাছে ডেকে বললেন, 'এই নাও, এই ঘড়িটা আমি তোমাকে দিলাম। আমাকে দিয়েছিলো তোমার দাদা। ঘড়িটা দুইশত বছর আগের। তবে, ঘড়িটা নেওয়ার আগে তোমাকে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×