ছবি কর্জ: গুগল থেকে
উৎসর্গ: একজন মেয়েকে....। যাকে ২০০৯ সালে কান্দা পাড়ায় বেঁচে দেয়া হয়েছিলো।
স্তব্ধ রাতের নিরবতা ভেঙে
ক্রন্দন ধ্বনি আসে কানে!
ঘুম ভেঙে যায়; জেগে উঠি,
নিষ্পাপ মশকীর মৃদু গুন্জরনে।
সারাঘর জুরে কীটনাশকের বিষাক্ত ধোঁয়া;
কয়েলের তীব্র গন্ধের ভেতর
ঠাঁই বসে এক মশকী!
কি সাহস; কত হিম্মত, আহা!
না, তাকে হত্যা করতে উদ্ধত হয়নি আমি।
মশকীর কাছ থেকে শিখছিলাম!
কেমন করে, কিভাবে ভয়কে দূরে ঠেলে
উপেক্ষা করতে হয় তুলার মতো!
সেই মন্ত্রমুগ্ধ পাঠ নিতেই বসেছিলাম।
মশকীর মতো হিম্মত যদি
উদ্যান শুন্য হৃদে সঞ্চার করে
বটবৃক্ষ করতে পারতাম উপ্ত;
তবে হয়তো তোমাকে বাঁচাতে পারতাম!
হয়তো সহজে বেঁচে যেতে তুমি।
মনের মুকুরে আজো নিভু নিভু আশা সুপ্ত।
আজ তোমার মনের দোয়ার
তীব্র গন্ধযুক্ত!
কখনো নিজের পারফিউমের ঘ্রাণে
কখনো বা অন্য কারো শার্ট থেকে নাও ধার।
মনের ভেতর আছে কি আনন্দ জোয়ার?
ভীষণ অন্ধকার।
নেহায়েত তেলাপোকা ছাড়া সেথা
পাবে না কেহ তৃপ্ত প্রেমের আহার!
তোমাতে কেহ প্রেম পাবে না খুঁজে
পুরষ্কারে মিলে থকথকে জল
গন্ধ ভরে পুঁজে।
তোমার বস্তিতে অল্প কিছু দিন
জায়গা করে দিতে পারবে?
ছারপোকার মতো, কোল বালিশের ভাঁজে
লুকিয়ে থাকবো আমি!
তোমাকে বের করে আনার ফন্দি ফিকির
করবো দিবসযামী।
কিভাবে হিম্মত আসবে হৃদে?
বস্তির জলে স্নান করলে
সাহস পাওয়া যাবে কিছু?
এ জলেই তো মশকীর জন্ম,
তুমিও তো এখানেই বাঁচো!
বস্তির ছোট্ট খুপরি ঘরে,
চার পেয়ে এক নরবড়ে খাটে
কি যে পৈশাচিক সুখে আছো
আমি বুঝতে পেড়েছি ঢের!
চার পা একত্র করলেই কি সুখ পাওয়া যায় টের?
বিশ্রাম নেবার ফুসরত আছে তোমার?
থাকলেও বা কি আসে যায় তাতে!
তুমি তো চলমান এক যন্ত্র
আনন্দ দানের মেশিনে রুপান্তরিত।
মায়া থেকে মেশিনে রুপান্তরের আমি সাক্ষী!
ভয়ংকর সাক্ষী!
কবিতার পটভূমি:
প্রথম যখন টাঙ্গাইল আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হই তখন যানতাম না যে এতো কাছে এ পাড়া। একদিন চৌকি কিনে ভ্যানে করে ফিরে আসার সময় ও পাড়ার রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। রাস্তার পাশে দেখি সেজেগুজে অনেক মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে থাকা রুমমেট কে জিজ্ঞেস করলাম '' এখানে এতো মেয়ে মানুষ কেন? বিয়ে বাড়ি নাকি।'' আমাকে বলে '' ও দিকে তাকাইস ন্যা, ধইরা নিব তরে। এইটা তো ঐ পাড়া..." পড়ে তার কথায় বুঝতে পাড়ি।
২০০৯ সালের কথা। ফাগুন শেষে শীতের শুরু তখন। টাঙ্গাইল আলিয়া মাদ্রাসার ২য় তলার ৮ নম্বর রুমে থাকতাম। আলিয়া মাদরাসার ছাদ থেকেই কান্দাপাড়া দেখা যায়। একদিন এশার নামাজ পড়ে রুমে আসছি এমন সময় একজন ২২ বা ২৫ বছরের যুবক মাদ্রাসায় আসে। সে কি কান্না..! বলে, ''ভাই আমার বোনকে বাঁচান। আমার বোনকে ঐখানে আইনা বেইচা দিছে।'' আমাদের মধ্যে থেকে একজন গিয়েছিলো ভেতরে সাহস করে। কিন্তু কোন মতে নিজের জান নিয়া ফেরত আসছিলো। যে কাহিনি বর্ণনা করেছিলো তা আরো ভয়াবহ।তারপর লোকটাকে থানায় পাঠিয়েছিলাম। কোন লাভ হয়নি। মানবাধিকার, নারী অধিকার বিভিন্ন স্থানে দৌড়িয়ে শেষমেশ ছাড়াতে পেড়েছিলো কিনা জানিনা.......।
কৃতজ্ঞতা:সুজন ভাইকে (নজসু)..., যার প্রেরণায় পোস্ট করা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৭