মওলানা ভাসানী স্মরণে
আমি তোমার কানপচা কুকুর
হতে চেয়েছিলাম।
কারণ পূর্ণিমা উজ্জ্বল এক রাতে তুমি বলেছিলে,
‘আল্লাময় মানুষ যদি হতে চাও
আগে কুকুর হও ।’
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে শব্দহীন কথায়
আমি শুধাতেই তুমি এক নিঃশ্বাসে বললে,
‘কুকুরের মত নিশাচর হও
যেমন দরবেশ নির্ঘুম নিঃঝুম
নিশা কাটায় আল্লাহর নেশায়-
‘কুকুরের মত প্রভু ভক্ত হও ।
এমন ভক্ত-
মানুষের দ্বারা সম্ভব যত আঘাত
সব সয়েও পরিতৃপ্ত অনুভূতি নিয়ে
ভক্ত বিলাও আশেক দরবেশের মত ।
‘কুকুরের মত ক্ষুধার্ত থাক ।
পাইলে খাও না পাইলে নাই ।
ছড়ানো দু’পায়ে মাথাটা রেখে
প্রভূর দিকে ধৈর্যের দৃষ্টিতে তাকাও
এবং তাকিয়েই থাক ।
পরিতৃপ্ত অন্তরে দরবেশের মত বলো,
কুকুরের মত অভুক্ত থেকেও আমি প্রশান্ত চিত্ত ।’
আমি বললাম, ‘অনেক হয়েছে- হে মহামুনি !
আমি তো অতিশয় দুর্বল
কুকুরের দশ গুণ রপ্ত করা সম্ভব নয় ।
ঐ তিনটিতেই কি আমাকে
দরবেশি দেয়া যায় না ?’
বললে, ‘তাহলে, অন্তত আর একটি গুণ
রপ্ত করো ।
- আমার কানপচা কুকুর হও,
সব হবে ।
‘কানপচা বলে দুর্গন্ধ ছড়াবে তুমি
দুর্জনের নাসিকায় বেশি বেশি লাগবে
সত্য-সজ্জন সুন্দর-সুজন মুচকি হাসবে
অনুক্ত ভাষায় বলবে, এ তোমার কেমন লেবাস,
নিজেকে গোপন রাখতে এ কী খেয়াল !
অসুন্দর সেজে সুন্দরের সাধনা ?
হ্যাঁ, এতেই তুমি নিরাপদ ।
তাই বলি, কানপচা কুকুর হও,
হবে, সব হবে ।
০১ নভেম্বর ১৯৯০ খ্রী:
১. মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আশেপাশে ঘুরঘুর করত একটি কুকুর । জীবনের শেষ বছরটিতে কুকুরটির কানে ঘা হয় ও কান পচে যায় । দুর্গন্ধ ছড়ানো কুকুরটি মহান নেতা মওলানা ভাসানীর চেয়ারের নীচে শুয়ে থাকত । কিন্তু তিনি একে তাড়া দিতেন না । কথিত আছে, মওলানা মহানের সাথে যে ছল-চাতুরি করতো কেবল তার নাসিকায় দুর্গন্ধ পৌঁছাতো । মওলানা হুজুরের ইন্তেকালে কুকুরটি শোক-বিহ্বল আচরণ করে । শত তাড়া উপেক্ষা করে মহান মওলানার সমাধি-বক্ষে শুয়ে থেকে সপ্তম দিবসে কুকুরটি মারা যায় ।
২. ঐ কান-পচা কুকুরের মত একজন ভক্ত কবিতাটি রচনা করেছেন ।
৩. গভীর দুঃখবোধ মিশ্রিত মুর্শিদ-প্রেম একজনকে কানপচা কুকুরে উন্নিত করতে পারে ।
(কবিতাটি ভাসানীর মাজারের পাশে লেখা আছে )
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৩