জ্ঞান বিকাশের পৃথিবীতে মানুষ জ্ঞানের সন্ধান করতে মহাব্যস্ত । কখনও জ্ঞানের খোঁজে যায় মহাজ্ঞানীর কাছে কখনও বা মূর্খতার কাছে। শিশুকালের বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব পিতার কাছে জ্ঞানীর তুল্য, পক্ষান্তরে উদাসীন পুত্র পিতার ক্ষেদজনক । সমাজের কাছে সে নির্বোধের তুল্য । বাল্যকালের এ পরিসংখানে আমরা নিজেদের নিজেরাই ভুলাই । কিন্তু বস্তু জগতের সমস্ত ধারণাই কি জ্ঞান নাকি আত্মপরিচয়ের মাঝে জ্ঞানের বিস্ফোরন ।সকল জ্ঞানই কি সব কিছুর সমাধান নাকি সকল সমস্যাই জ্ঞানের শুরু ।শুনেছি সমস্যা বিহীন কোন গবেষণা চলতে পারে না। অনেক বিজ্ঞ লোক মাঝে মাঝে অনভিজ্ঞ ব্যবহারে অভ্যস্ত হন। কেউ কেউ আবার তা স্বীকারও করেন বটে। বস্তুত জ্ঞান কি শুধুমাত্র বইয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ, নাকি বই প্রায়োগিক জ্ঞানের আয়না স্বরুপ। আমরা তাতে দেখি ও সামনে চলি। কিন্তু এমনও অনেক দৃষ্টান্ত আছে যা মহাজ্ঞানেরও উর্ধ্বে। আরজ আলী মাত্ববর, ফকির লালন শাহের মত অনেক নিরক্ষর ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করে অনেক ব্যক্তি আজ প্রতিষ্ঠিত। তাহলে সকলের জন্য তথাকথিত জ্ঞান অর্জিনের প্রয়োজন কি। মানুষ মানুষের ভুল সামনা সামনি ধরলে তা মূর্খতার বিষয়।অনেক ধর্মগুরু বলেন নম্রতাই জ্ঞানের শুরু। নম্রভাবে নির্বুদ্ধিতা কিভাবে মেনে নেওয়া যায়। বড়দের সম্মান যদি জ্ঞানের প্রকাশ হয় তাহলে আমাদের সমাজে বৃদ্ধদের কিবা কষ্ট হত। অথচ আমার বাড়ির কাজের ছেলে বা দারোয়ান যে আমার বড় তাতে আমরা কতটুকু সচেতন।আমরা মানতে চাই না সকলে জ্ঞানী,আবার সকলেই মূর্খ। কিন্তু মানুষ মাত্রই কি জ্ঞানী বা মূর্খতার ঊর্ধে নয়? জ্ঞান শুধুমাত্র যে উপরেই উঠায় নাকি নিচের দিকে নামায়? আদম-হবার সেই সদসদ জ্ঞান কি আমাদের সৎ উদ্দেশ্যে পাওয়া, নাকি সেই জ্ঞান আমাদের শাস্তি স্বরুপ। কখনও হয়ত এই জ্ঞানই আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে অকুল পাথারে। দেশ বিভক্তি, পরিবার বিভক্তি, সমাজ বিভক্তি প্রভৃতি বিভক্তিতে আজ আমরা জর্জরিত। বিজ্ঞানের বেগে বিভক্তিপ্রায় আবেগ যেন নিরন্তর খোঁজে মানবতা।আমার এই লেখাতেও সাধু চলিতের মশ্রণ অনেক জ্ঞানীকে হাসাতেও পারে। কিন্তু আমার লেখার বিষয়বস্তু বোধগম্য হলেই আমার লেখার সার্থকতা।দ্বৈত ধারণার এই পৃথিবীতে সমস্তই দ্বিধা বিভক্ত। আলো আঁধার, দিক দর্শন, ভাল খারাপ, আস্তিক নাস্তিক, আনন্দ বেদনা, হাসি কান্না, জ্ঞান মূর্খতা সকলেরই সমান অবস্থান। আমরা কখনও একটা কম আর একটা বেশি দেখি। আর তাতেই মূল্যায়িত হয় মানবতা।বস্তুত মানুষই মানবতার সংষ্কারক। কিন্তু মানবতা কি সত্য ও একমাত্র নয়।কেনই বা বিভাজন এই মানবতার।
আমার দর্শন সকলের জন্য নয়। শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা সকলের দৌড়ের তালে নিজেও না দৌড়ায়।জাগতিক আর অবস্তুগত পথের মাঝে যে কিনা বিন্দুমাত্র দাঁড়াবে, ভাববে, সিদ্ধান্ত নিবে। অজপাঁড়া গাঁয় যে মহাজ্ঞান লুকিয়ে আছে তার সন্ধান করে। আর সে জ্ঞানই হল মানবতা। মানুষের মানুষের যে আশ্চর্য মিল তা বোঝা যায় এই জ্ঞানে। এই মিল অবয়বের নয় কিন্তু আবেগের। উচ্চ উচ্চ আদালতে বা সমাজে এদের কদর কতই হবে। মহাজ্ঞানী, মহাজনেরা হয়ত সবকিছুর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করবেন না। কারণ অর্থের বেগ ধ্বংস করে বিবেক আর আবেগ। মানুষের মূল্যায়ন আর অবমূল্যায়ন মানুষই করে। নিম্ন শ্রেণীর কোন প্রাণী করে না।
দিনে দিনে সমাজে জ্ঞানী বাড়ছে কিন্তু মূর্খের সংখ্যা কি আদৌ কমছে।কিন্তু আমি বলি পুঁথিগত বিদ্যে যদি জ্ঞানী হওয়া যায়, তাহলে বাড়ছে বৈকি। মূর্খতার সম্পর্ক কি বিদ্যেয় নাই? ঈশ্বর যদি সকলকে মহাজন বানাতেন তাহলে কি আর মহাজনদের কাজের কোন মূল্য থাকত।
পৃথিবীর মাঝে আজ সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ধনবান আর গরীবদের মাঝে বাড়ন্ত ব্যবধান। দিনকে দিন তা বেড়েই চলছে। কারণ উদ্ঘাটিত হলেও সমাধানের জন্য আমরা কি মানবতাকে ১ নম্বর দিচ্ছি।গরীবদের মূর্খতাই তো জ্ঞানীর গর্ব। যে বনে বাঘ নেই সে বনে শেয়ালই রাজা।আমরা শিয়ালের মত ধূর্তবাজ হয়ে কারণে অকারণে টেবিল চাপড়াই আর বলি নিরক্ষরতা অভিশাপ। অক্ষরজ্ঞান যদি সবই হত তাহলে তো উচ্চশিক্ষিতরা ভিক্ষাবৃত্তি করত না।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে শীত বস্ত্রহীনদের জন্য হাজার বছরের পরিকল্পনা করা হত না।দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা কি তাদের জন্য নাকি আমাদের জন্য।আমরা খেয়ে পড়ে বাঁচব বলে।
হায়রে ঈশ্বর তুমি কি এসবের মূলসূত্র নও? প্রাথমিক বিভাজনের পরম পরিকল্পনার জন্য আমি চিরদিনের প্রশ্ন জানাই। মানুষের এই ভিন্নতা, ভিন্ন মতামত, ভিন্ন সুখ, ভিন্ন দুঃখ, তবুও সবাই কেন সেই একই মহাজ্ঞানীর সান্নিধ্য পেতে চায়। চায় আজীবন জীবীত থেকে বিস্তার করতে তার আপণ রাজ্য।