এইচ জি ওয়ালেসের টাইম মেশিন বইটার বাংলা অনুবাদ সেবা প্রকাশনীর কল্যানে পড়া হয়ে গিয়েছিলো ক্লাস ৫/৬ এ থাকতেই। কঠিনরকমের ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম। তখন মনে হতো আহা যদি একটা মেশিন থাকত!!!!
কারন আর কিছুই ছিলো না বাবা মার বকা, পড়া, স্কুলের স্যারদের দৌড়ানি আর একজন বালিকার পাশে থাকার অভাব। জ্বি, হ্যা কঠিন প্রেমালু ভাবের শুরু তখন। ইচ্ছা করত ১৫ টা বছর আগাইয়া যাই। এই সব ঝামেলা শ্যাষ। আনন্দে দিন কাটবে। কত স্বপ্ন কত কি। দেখতে দেখতে ১২ বছর পার করে ফেললাম।
১২ বছর পার হয়ে আসার পর এখন হঠাৎ আবার কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছে, আহ, যদি টাইম মেশিন আসলেই থাকতো!!! কারন আর কিছুই না। রেজাল্টের জন্যে বসে আছি। এরপরে প্রফেশনাল লাইফ শুরু করা লাগবে। কি ঝামেলা!!!! এর থেকে তো সেই ১২ বছর আগের জীবনটাই ভালো ছিলো ! ক্যান যে মানুষ বড়ো হয়!!!!!!
কয়েকদিন ধরে মনে বড় জিঘাংসা ভাব। মনে হয় টাইম মেশিন ক্যান নাই থাকলে এই মানুষ গুলারে অতীতে ফিরা গিয়া হওয়া আটকাইয়া দিতাম। শালারা না হইলে এতো ঝামেলা হইতো না। আবার কিছু অনুশোচনাও আছে। কতজনের কাছে কত কি ভুল করেছি। আহা, যদি আরেকবার সেই সময়ে যেতে পারতাম তাহলে ওই ভুলটা থেকে নিজেকে আটকে রাখতাম। কিছু প্রিয় মানুষের সাথে প্রিয় মুহুর্ত আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাটাতে পারতাম । অথবা ঝড়ের রাতে বাবা এসে কখন পাশে শুয়ে থাকত, বাবার বুকের সাথে মিশে নিরাপদ লাগত আরো একবার হয়ত অনুভব করতে পারতাম। এখন বাবা আমি পাশাপাশি রুমে থাকলেও ঝড়ের রাতে বাবা আসে না আগের মত। এসে পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে না বাবা ভয় লাগছে? রাস্তায় কত দিন বাবা হাত ধরে রাখে না? আমি যখন সেভেন বা এইটে পড়ি তখনো আমি লাফ দিয়ে বাবার কোলে উঠে যেতাম। কত দিন কোলে করে বিকালে ঘুরাতে নেয় না? ক্যান একটা টাইম মেশিন নাই?
আমি পায়জামার ফিতা বাধতে পারি না। শার্টের হাতা গোটাতে পারি না। পারি না শার্টের কলারের বোতাম লাগাতে। জুতার ফিতা বাধাও আমার ধর্তব্যের বাইরে। ঈদের সময় মার সময় যেতো আমাকে নিয়ে আমার পায়জামার ফিতা বেধে দিতে হবে। আমি হাফ শার্ট পড়তে পারি না। ফুল হাতা শার্টের হাতা গুটিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে জুতার ফিতা বেধে দিতে হবে। কত কি!!!! আর এখন !!! এখনো ফিতা বাধা শিখিনি। রাবার লাগানো পায়জামা পড়ি, শার্টের হাতাটা কোন ভাবে গুটাই। আর শার্টের উপরের বোতাম লাগিয়ে দেয় ছোট ভাই বা কোন বন্ধু। আর জুতার ফিতা?? সেটা শিখেছি। আমার মাথার চুল অনেক ঘন। কলেজেও যখন পড়তাম আমার মা প্রতি সপ্তাহে একদিন চুলে তেল দিয়ে দিত। মা আমার চুল যে এখন পড়ে যাচ্ছে দেখো না? ক্যান তেল দিয়ে দাও না?? ক্যান আমরা বড় হই? ক্যান একটা টাইম মেশিন নাই?