বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভ আবার নতুন করে বড়মাত্রায় শুরু হয়েছে। এই বিক্ষোভের আপাত কারণ হলো, আমেরিকায় নির্মিত একটি ইসলামবিরোধী ফিল্ম।
এতে ইসলামবিরোধী এমন সব ব্যাপার আছে যা মুসলমানদের ধর্ম চেতনায় আঘাত করে। মুসলমানরা ইসলামবিরোধী যে কোনো বিষয়েই খুব স্পর্শকাতর। তারা এর বিরুদ্ধে যেভাবে তাদের ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, এটা অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে সচরাচর দেখা যায় না। একথা মাথার মধ্যে রেখেই যে উপরোক্ত ফিল্মটির প্রযোজক ও পরিচালক এটি নির্মাণ করেছেন এতে সন্দেহ নেই।
এর অভিনেতা অভিনেত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ এখন বলছেন, ফিল্মটি যে এভাবে এবং এই উদ্দেশ্যে তৈরি করা হচ্ছে এ ধারণা তাদের ছিল না। তাদেরকে সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে এতে অংশগ্রহণ করানো হয়েছিল। তারা এমনও বলেছেন যে, ফিল্মটির অনেক সংলাপও পরে তাদের অবগতির বাইরে পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব থেকে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে, এমনকি নিশ্চিত হওয়ার কারণ আছে যে, এটি একটি বৃহত্তর চক্রান্তেরই অংশবিশেষ। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে, ফিল্মটির প্রযোজক এক ইহুদি।
মার্কিন সরকার যে এ ফিল্মটি নির্মাণের সঙ্গে সম্পর্কিত এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এটি প্রকাশিত হলে যে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানরা এর বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ দেখাবেন এ নিয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। এতে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো স্বার্থ নেই, উপরন্তু যথেষ্ট বিপদ আছে। এই বিপদেই ওবামা সরকার এখন পড়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট উত্তপ্ত উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অনেক দেশে এই ফিল্মটিকে কেন্দ্র করে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে অগ্ন্যুত্পাত হচ্ছে। ‘জাতীয় সম্মান’ রক্ষার স্বার্থে মার্কিন সরকার এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ক্ষমা প্রার্থনা অথবা দুঃখ প্রকাশেরও পাত্র নয়। কাজেই তারা এখন পর্যন্ত এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা অথবা দুঃখ প্রকাশ করেনি। কাজেই ফিল্মটির সঙ্গে মার্কিন সরকারকে জড়িত করে দেশে দেশে বিরাট আকারে মুসলমানদের বিক্ষোভ চলছে।
যদি ধরে নেয়া যায় যে, এ কাজ ওবামা সরকারবিরোধী ইহুদি কর্মীদের এবং বর্তমান ইসরাইল সরকারের, মার্কিন সরকারের নয়, তা হলেও ইসরাইলের পরম মিত্র এবং শক্তির প্রধান জোগানদার হিসেবে মার্কিন সরকারকে ছাড় দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ফিল্মটি নির্মাণ হওয়ায় সেখানকার সরকার না হলেও অন্য লোকেরা এ কাজ করেছে। এদিক দিয়ে মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভের যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে।
স্যাম বাসিল
ইনোসেন্স অব মুসলিমস চলচ্চিত্রের পরিচালক নিজেকে স্যাম বাসিল নামে পরিচয় দেন। স্যাম বাসিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায় এক সাক্ষাতকারে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নানা কথা বলেন। নির্মিত হওয়ার পর প্রায় তিন মাস আগে হলিউডের একটি থিয়েটারে প্রথম চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। চলচ্চিত্রটির আরবি ভাষায় ডাবিং করা সংস্করণ মুক্তি পায় এবং মিসরের একটি টেলিভিশনে এর ভিডিও ফুটেজ প্রচারিত হওয়ার পর বিক্ষোভ শুরু হয়।
পটভূমি
ইনোসেন্স অব মুসলিমস চলচ্চিত্রের পরিচালক বাসিল জানিয়েছেন চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে ১০০ জন ইহুদি মোট পাঁচ মিলিয়ন ডলার অর্থ দিয়েছেন। চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন ৬০ জন অভিনেতা ও ৪৫ জন কলাকুশলী। ওই চলচ্চিত্র নিয়ে লিবিয়া ও মিসরে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। চলচ্চিত্রটির অভিনেতা ও কলাকুশলীদের কয়েকজন দাবি করেন, ইসলাম ধর্মকে অবমাননাকারী সংলাপগুলো তাঁদের আসল সংলাপ নয়। এগুলো পরে সংযোজন করা হয়েছে। স্টিভ ক্লেইন যিনি কলাকুশলীদের একজন চলচ্চিত্রের সঙ্গে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার খবর নাকচ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাসিল নামটি পরিচালকের ছদ্মনাম।এ ছাড়া অন্য দুজন মার্কিন নাগরিক নিজেদের ওয়েবসাইটে এর প্রচারণা চালিয়েছিলো। তাদের একজন হলো খ্রিষ্টীয় চরমপন্থী যাজক টেরি জোনস এবং অন্যজন ওয়াশিংটনের আইনজীবী মরিস সাদেক (ইনি এক মিসরীয় বংশোদ্ভূত কপটিক খ্রিস্টান)।একদল নতুন কলাকুশলীর সহায়তায় খুবই কাঁচা ও অদক্ষ হাতে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামের বিতর্কিত চলচ্চিত্রটি।
মার্কিন পদক্ষেপ
সারা বিশ্বের মুসলিমদের ধর্মীয় চেতনায় চরমভাবে আঘাত করার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা বা কলাকুশলীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। চলচ্চিত্রটির প্রতিক্রিয়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষিত থাকায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
হিলারি বলেন, পৃথিবীর বড় বড় ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উপহাস করা হয়েছে। কিন্তু একে সহিংস আচরণের পক্ষে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বিশ্বের বড় বড় ধর্ম যেকোনো অবমাননার তুলনায় অনেক শক্তিশালী। এসব আক্রমণ প্রতিহত করেই ধর্মগুলো শত শত বছর ধরে টিকে আছে। তিনি আরও বলেছেন, অনেকের চিন্তা-চেতনায় যতই আঘাত করুক না কেন, আমরা কোনো নাগরিককে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। এ বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগও।
বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ
মার্কিন চলচ্চিত্রকারের তৈরি ‘দ্য ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ চলচ্চিত্র ইন্টারনেটে প্রচার করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, চলচ্চিত্রটি ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) কে কলঙ্কিত করেছে। চলচ্চিত্রটির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বাংলাদেশ খুবই উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নাম করে কোনো কোনো মহল এই ভিডিওচিত্রটির পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করছে। ঘৃণা বাড়ানোর প্ররোচনা দেওয়া কখনই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হতে পারে না। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতির প্রতি এভাবে অসম্মান করা কোনোভাবেই সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না এবং এ ধরনের কাজকে অবশ্যই ক্ষমা করা যায় না।’চলচ্চিত্র ইনোসেন্স অব মুসলিমস প্রচার করায় ভিডিও আদান-প্রদানের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
পাকিস্তান
প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের করাচিতে মার্কিন কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ হয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে একজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়।চলচ্চিত্র ইনোসেন্স অব মুসলিমস প্রচার করায় ভিডিও আদান-প্রদানের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
ভারত
ভারতে নির্দিষ্ট ভিডিওটির প্রচার ইউটিউব নিজেরাই বন্ধ রেখেছে।
রাশিয়া
রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেলের অফিস বিতর্কিত চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ কে উগ্রপন্থী ঘোষণা করেছে। এক মুখপাত্র জানিয়েছেন চলচ্চিত্রটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য এখন প্রসিকিউটর জেনারেলের অফিস আদালতের শরণাপন্ন হবে। তবে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই বিতর্কিত এ চলচ্চিত্রের কোন তথ্য বা বিতরণ প্রতিহত করতে ফেডারেল ম্যাস কমিউনিকেশন্স ওয়াচডককে প্রসিকিউটর জেনারেলের অফিস নির্দেশ দিয়েছে। ফেডারেল ম্যাস কমিউনিকেশন্স ওয়াচডক ইতোমধ্যেই রাশিয়ান ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানদের চলচ্চিত্রটিকে ব্লক করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
আরবদের এমন রিএকশন ভাল না। এদের মাথায়ে আছে গোবর।
আমি পৃথিবীর সব ইহুদি মারতাম কিন্তু কিছু ইহুদি বাঁচিয়ে রাখতাম।কারণ পুরো পৃথিবীকে বুঝাতে যে আমি কেন তাদের মেরেছি।
------------------------------------------------এডলফ হিটলার
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৩