রুমানিয়া
১০০ বছর আগেও যুদ্ধ ক্ষেত্রে নারীরা ছিল। তবে সৈনিক হিসেবে নয়। নারীরা তখন যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসা অথবা সেবা করত। বিশ্বে প্রথম ১৮৬১ সালের আমেরিকান সিভিল ওয়ারে স্বল্পসংখ্যক নারীকে সামরিক পোশাক পরে যুদ্ধে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল।
বলিভিয়া
১৯১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধাহত সৈনিকদের সেবা এবং সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন কাজে হাজার হাজার নারী নিযুক্ত হয়। রাশিয়া সেই সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকে সম্মুখযুদ্ধের জন্য নিয়োগ দেয়। যুদ্ধক্ষেত্রে এক নারী কর্নেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্নেলই ছিলেন আধুনিক সামরিক বাহিনীর প্রথম কোন নারী অফিসার।
আলজেরিয়া
১৯৩৯ সাল থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এতে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দেশের নারী সৈনিকদের সামরিক পোশাক পরে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা যায়। আহত সৈনিকদের সেবা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য সহযোগিতায় তাদের অবদান ছিল ব্যাপক। প্রায় ৫ লাখ নারী সৈনিককে ব্রিটেনে, জার্মানিতে শত্রু বিমান আক্রমণ প্রতিরোধী ইউনিটে এবং রাশিয়ায় ফ্রন্ট লাইন ইউনিটে দেখা যায়।
আফগানিস্তান
১৯৮৫ সালে বিশ্বে প্রথম নরওয়ের ডুবোজাহাজে নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালে সাবমেরিনে একজন নারী ক্যাপ্টেন নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৮৮ সালে ডেনমার্ক, ১৯৮৯ সালে সুইডেন, ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়া, ২০০০ সালে কানাডা এবং স্পেন সাবমেরিনে নারী সৈনিক নিয়োগ দেয়।
আল সাল্ভেদর
বর্তমানে ব্রিটেন, জার্মানি, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন ও রাশিয়া সহ পৃথিবীর প্রায় দেশের নারী সৈনিকরা সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, যুদ্ধবিমান চালিয়ে শত্রুপক্ষের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে, জটিল চিকিৎসা-অপারেশন তত্ত্বাবধান করছে।
নারী সৈনিক নিয়োগে পৃথিবীর শীর্ষ কয়েকটি দেশ-
ব্রিটেন
অনেক আগে থেকে ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীতে নারী অংশ নিচ্ছে। প্রথম দিকে তা ছিল শুধু সেবিকা হিসেবে। ১৯৩৮ সালে ২০ হাজার নারীর একটি ইউনিট যুদ্ধের সময়ের জন্য সামরিক পুলিশ এবং শত্রু বিমান প্রতিরোধী সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ১৯৪৯ সাল থেকে দেশটির সামরিক বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়। তখনো সম্মুখযুদ্ধে তাদের অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ ছিল। তাদের অধিকাংশের সামরিক বাহিনীর কারখানায় এবং স্বল্পসংখ্যক নারী সেনা মূল বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়। এখন দেশটির সামরিক সদস্যদের প্রায় ৯ শতাংশ নারী।
ইসরাইল
পৃথিবীতে ইসরাইলই একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর নারীদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সামরিক বাহিনীর দাপ্তরিক কাজ, গাড়ি চালানো, সৈনিকদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ, সেবিকা, সেনাবাহিনীর রেডিও অপারেটর, ফ্লাইট নিয়ন্ত্রক এবং প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে হয়। প্রযুক্তিগত এবং দাপ্তরিক কাজে সেনা বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ শুরু হয় ১৯৭০-এর দশক থেকে। সামরিক বাহিনীতে নারীরা শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতা দেখাতে পারায় ২০০০ সালে সামরিক আইন সংশোধন করে নারীদের জন্য সমান সুবিধার বিধান করা হয়। নারীরা পুরুষ সেনাদের পাশাপাশি সম্মুখযুদ্ধে কামান ইউনিট, পদাতিক বাহিনীত এবং সাঁজোয়া বিভাগে অংশ নেয়। অনেক নারী সীমান্ত বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বসাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৩১ শতাংশই নারী। এই সংখ্যা ব্রিটেনের তিন গুণ।
জার্মানি
১৯৪৪-১৯৪৫ সালে পাঁচ লক্ষাধিক সাদা পোশাকের জার্মান নারী সৈনিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করে। তারা বিমান প্রতিরক্ষা, সেবিকা এবং যুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। তাদের কিছু সদস্য শত্রুপক্ষের বিমান আক্রমণ প্রতিহত করতে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির সামরিক বাহিনীর দাপ্তরিক, হিসাবরক্ষণ, দোভাষী, ল্যাবরেটরি কর্মী এবং প্রশাসনিক কাজের ব্যাপকসংখ্যক নারীরা নিয়োজিত ছিল। ২০০১ সালে সেনাবাহিনীর সব পদ নারীর জন্য উন্মুক্ত হয়। ২০১৩ সালে সেনাবাহিনীতে ১৮ হাজার নারী সদস্য ছিল। যা মোট সেনাসদস্যদের ১০ শতাংশ।
পাকিস্তান
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানের নারীদের সামরিক বাহিনীর উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা আকাশপথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিতে পারে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারীরা সামরিক বাহিনীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম নারী বৈমানিকেরা সম্মুখ অভিযানে অংশ নেয়। নারী সৈনিকদের আকাশপথে সম্মুখ অভিযান, স্নাইপার, আকাশ থেকে আক্রমণ এবং পদাতিক বাহিনীতে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ
৪৭ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স সম্পন্ন করে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম ২০ জন তরুণী নিয়মিত কমিশন লাভ করেন। ওই কোর্সের বাকি ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন ৪৮ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে অংশ নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করার সুযোগ পান। দ্বিতীয় এ কোর্স শেষে ২০০৩ সালের জুলাইয়ে আরো ২১ জন নারী কমিশন লাভ করেন।
এরপর ৪৯ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে ২২ জন এবং ৫০ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে এ বছর আরো ১৩ জন নারী কমিশন লাভ করেন। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপরই সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনী ছাড়াও নারী কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে নৌ ও বিমানবাহিনীতেও ।
সেনাবাহিনীতে নিয়মিত কোর্সের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা এখন ১৫৬। ৮৮ জন ক্যাপ্টেন আর ৬৮ জন লেফটেন্যান্ট ও সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট।
সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখায় পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে সমান মর্যাদা ও যোগ্যতা নিয়ে কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। আর্টিলারিতে রয়েছেন ২১, ইঞ্জিনিয়ার্সে ২২, সিগন্যালসে ১৮, এএসসিতে ৩০, অর্ডন্যান্সে ৩৩, ইএমইতে ১৯, এইসিতে ১২ ও আরভিএফসিতে একজন নারী।
দীর্ঘমেয়াদি কোর্স ছাড়াও স্বল্পমেয়াদি কোর্সে সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোরে নারী অফিসারের সংখ্যা ৫০২। এঁদের মধ্যে এএমসি ১৯৪, এডিসি ১৪ ও এএফএনএসে (আর্মড ফোর্সেস নার্সেস সার্ভিস) ২৪৯ জন।
সেনা বাহিনীর মেডিক্যালে কোরে মেয়েদের অবস্হান :
মেডিক্যাল কোরে নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসিনা সুলতানা (স্ত্রী ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ) ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেহেনা বেগম চৌধুরী (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ)। এসব মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা ৬৫৮
যুক্তরাষ্ট্র
১৭৭৫ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনীতে নারীদের প্রথম নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন নারীরা সেবিকা, পোশাক তৈরি এবং রান্নার কাজ করতেন। ১৯১৭ সালে নারীরা প্রথম তালিকাভুক্ত সৈনিক হন। আর ১৯৪৮ সালে চূড়ান্তভাবে আইন প্রণয়ন হওয়ার পর নারী সামরিক বাহিনীর স্থায়ী অংশ হয়। এখন সামরিক বাহিনীর সব পদই নারীর জন্য উন্মুক্ত। ২০১২ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ১৪ শতাংশ নারী। ১ লাখ ৬৫ হাজার নারী সদস্যের মধ্যে ৩৫ হাজার সদস্য কর্মকর্তা পর্যায়ের। লেফটেন্যান্ড জেনারেল বা মেজর জেনারেল পদেও নারীরা দায়িত্ব পালন করেছেন।
চীন
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামরিক বাহিনী চীনের। দেশটির সৈন্য সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ ৮৫ হাজার। এই সৈন্য সংখ্যার প্রায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হলো নারী। দেশটির জন সংখ্যার প্রায় দশমিক ১৮ শতাংশ সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত।
রাশিয়া
এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার নারী সদস্য রয়েছে, যা দেশটির সামরিক শক্তির ১০ শতাংশ।
তুরস্ক
তুরস্কের নারীরা একসময় মূল প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধাহতদের সেবা করার পাশাপাশি সৈনিকদের সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখন তুর্কি সামরিক বাহিনীতে নারীদের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্ম, পদাতিক এবং সাবমেরিন ইউনিট ছাড়া সকল শাখায় নারী কর্মকর্তারা অংশ নিতে পারে। ২০০৫ সালে সেখানে ১২৪৫ জন নারী কর্মকর্তা নিযুক্ত ছিল।
এ ছাড়া ইরিত্রিয়া,
লিবিয়া,
দক্ষিণ আফ্রিকা,
জাম্বিয়া,
অস্ট্রেলিয়া,
দক্ষিণ কোরিয়া,
নেপাল,
নিউজিল্যান্ড,
ফিলিপাইন,
সিঙ্গাপুর,
শ্রীলঙ্কা,
থাইল্যান্ড,
ডেনমার্ক,
ফিনল্যান্ড,
ফ্রান্স,
আয়ারল্যান্ড,
নরওয়ে, পোল্যান্ড,সার্বিয়া, সুইডেন,কানাডা, আর্জেন্টিনা,সহ বহু দেশের সামরিক বাহিনীতে নারীরা নিযুক্ত আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:০০