১/
মফস্বলের মিষ্টি দোকানে , বিশাল পাতিলে রসে ভাসা রসগোল্লা দেখা যায় । খেতে অতিসুস্বাদু । বানানোর পর ঢাকনা দিলে গরম ভাপে মিষ্টি ভেঙ্গে যায় । তাই মিষ্টি বানিয়ে সারা রাত উন্মুক্ত রাখা হয় । যেসব কর্মচারীরা বেশি রাত পর্যন্ত কাজ করে তারা রাতে দোকানে থাকে ।
দোকানে থাকা কর্মচারীদের মালিকের একটা অত্যাবশ্যকীয় হুকুম তামিল করতে হয়। চাকরী বাঁচিয়ে রাখতে হলে কর্মচারীদের এই হুকুম ফরজ জ্ঞানে পালন করতে হয় ।
হুকুমটা হল - সকালে সবার আগে যে ঘুম থেকে উঠবে , মিষ্টির পাতিলে পড়ে থাকা মরা ইঁদুরগুলি সে ই সরাবে ।
২/
আমার কামলাক্ষেত্রের পাশের এক চা দোকান থেকে নিয়মিত চা খাই ।
এরা গরুর দুধের ভাল চা বানায় । একদিন চা খাওয়ার পর পেটে হালকা ব্যথা অনুভূত হল । দুষ্টুমি করে চা দোকানের পিচ্চিটাকে বললাম , রাতে বোধ হয় তোদের দুধের পাতিলে ইঁদুর পড়েছিল ।
পিচ্চি কিছুটা বিরক্ত ! এই সব কি বলেন ? ইঁদুর পড়বো কইত্থেইকা ?
কয়েকদিন পর আবারে মৃদু ব্যথা ,দুষ্টুমি করে আবারো একই প্রশ্ন , আবারো একই উত্তর ।
এর ৫/৭ দিন পর পুরনো উপসর্গের কারণে আবারো পিচ্চিকে বললাম , আজকেও তোদের দুধে ইঁদুর পড়েছে ।
পিচ্চিটা লাজুক হেঁসে বলল , - পইত্তেক দিন মামায় কেমনে যে ধইরা ফালায় ! !
পিচ্চির কথা শুনে পেট গুলিয়ে উঠলো , অনেক কষ্টে বমন ঠেকালাম ।
৩/
আসলে আমরা আমজনতা অনেক কিছুই ''ধইরা পালাই''।
সাগর রুনি হত্যা , শেয়ার বাজার লুট , বিডিআর হত্যা , রিজার্ভ ব্যাংক চুরি সহ ইত্যাকার শত ঘটনা আমরা ''ধইরা পালাই''তে পারলেও দাদার মত বলতে পারিনা ।
দাদা যা ''ধইরা পালাই''ছেন তা বলতে দ্বিধা করেন নি ।
অতি গুণবান এই দাদা এক সময় জয়নাল হাজারীর আতিথ্য গ্রহণ করেছিলে । স্কটিশ সুরা আর সাকীতে তিনি এতই মাতোয়ারা হয়ে গিয়েছিলেন যে , আনন্দের আতিশয্যে জয়নাল হাজারীকে মহা পুরুষ উপাধী দিয়ে বসেন । এক বসাতেই লিখে ফেলেন হাজারীর কি একটা বইয়ের ভুমিকা ।
এহেন গুণী দাদাকে বেগুণ জ্ঞান করা প্রধান মন্ত্রীর মুলা ঝুলানো টেকনিক তিনি ''ধইরা পালাই''ছেন । ক্ষোভটা পুষিয়েও রাখেন নি । চাউর করে দিয়েছেন খোমা বইয়ে ।
তিনি লিখেছেন , 'তারপর ১৫ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে আট বছর কেটেছে শেখ হাসিনার সরকারের। শেখ হাসিনা স্বাধীনতা পদকের মুলোটি আমার নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কিছুতেই সেটি আমাকে দিচ্ছেন না। উনার যোগ্য ব্যক্তির তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে আকাশ ছুঁয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় আমার স্থান হচ্ছে না।'
'আমাকে উপেক্ষা করার বা কবি হিসেবে সামান্য ভাবার সাহস যার হয়, তাঁকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার ভিতরে অনেক আগে থেকেই ছিল, এখনও রয়েছে। পারলে ভুল সংশোধন করুন। অথবা পরে এক সময় আমাকে এই পদকটি দেয়া যাবে, এই ধারণা চিরতরে পরিত্যাগ করুন।'
উনার স্ট্যাটাস পড়ে যা বুঝলাম , শেখ হাসিনা ইচ্ছা করলেই যাকে তাকে পদক দিচ্ছেন , ''আকাশ ছোঁয়া'' লিস্টিতে অন্তর্ভুক্তদের নাকের ডগায় মুলা ঝুলিয়ে প্রলোভিত করে নানা কর্ম হাসিল করে নিচ্ছেন । দাদার নাকের ডগায়ও ১৫ বছর মুলা ঝুলিয়ে রেখেছিলেন ।
৪/
লিখাটা শেষ করে দিলাম । কারণ , জানার সংকীর্ণ ব্যাপ্তি আর দুর্বল স্মৃতি ধারীদের দিয়ে লিখা লিখি হয় না । আমাকে দিয়েও হবে না । আমি অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও একটা বিষয় মনে করতে পারছিনা যে , মুলাটা কোন প্রাণীর নাকের ডগায় ঝুলানো হয় ?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২৮