প্রবাসে বাংলাদেশের রক্তের উত্তরাধিকারী গুণীগন- ২৩,২৪,২৫,২৬,২৭ ।
২৩/ লন্ডনের সর্ববৃহত সেইন্সবারি চেইন শপের ব্যাগ ডিজাইনার বাংলাদেশী বালিকা শারমীন
লন্ডনের টটেনহামে উদ্বোধন করা হয়েছে লন্ডনের সর্ববৃহত সেইন্সবারি চেইন শপের, এর উদ্বোধনী দিনে ক্রেতাদের সুভ্যেনির হিসাবে দেয়া হয়েছে বাঙ্গালী বংশোদ্ভূত বালিকা শারমিন আক্তারের ডিজাইন করা ব্যাগ। এবং তাকে দিয়ে ফিতা কেটে উদ্বোধন করা হয় সেইন্সবারির সর্ব বৃহত এই সুপার শপ।
সেইন্সবারী স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলের শিশুদের মাঝে ব্যাগের ডিজাইনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল আর সব শিশুদের পিছনে ফেলে বিজয়ী হন অয়েলবার্ন প্রাইমারী স্কুলের শারমিন আখতার।
টটেনহাম জার্নাল, হাঞ্জেরী ইন্ডেপেন্ডেট তার এই কৃতিত্ব নিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে ।
শারমীনের পিতা শাহ রাসেল সপরিবারে ইংল্যান্ডে বসবাস করেন । তাদের গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ।
২৪/ নেদারল্যান্ডসের ইউরোপীয় কালচারাল আর্ট ফেলোশিপ বিজয়ী বুননশিল্পী শফিকুল কবির চন্দন
বুননশিল্পী শফিকুল কবির চন্দনের বাস ইতালির বাণিজ্যিক রাজধানী মিলানে। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশের নরসিংদীতে জন্ম প্রবাসী এই গুণী শিল্পীর। আপন মনে ছবি আঁকেন তিনি, তবে তা রং-তুলি দিয়ে নয়। ছবি বুনেন তিনি তাঁতে বাহারি তন্তু দিয়ে।
পশম-রেশম, শন, উল, খড়-বিচালি, হোগলা, চামড়া, বাঁশ, লতা, পাতা, কাগজ, পাট, সুতো তথা তন্তু দিয়ে মনের রঙে তন্তু ভাস্কর্য নির্মাণ করেন প্রখর মেধাবী শফিকুল কবির চন্দন। ছাত্রজীবনেই তাঁর শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছিল এশিয়ান আর্ট বিয়েন্নাল এবং ন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক পরবর্তী ভারতের শান্তিনিকেতন থেকে ফাইবার আর্টসে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। বাংলাদেশে ফিরে ঢাকার চারুকলাতেই শিক্ষকতা করেন কয়েক বছর।
১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চারুকলায় আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাঁকে বিশেষ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ট্যাপেস্ট্রি প্রদর্শনী হয় শিল্পী চন্দনের একক শিল্পকর্ম দিয়ে। ১৯৯৯ সালে কোলকাতায়ও প্রথম একক ফাইবার আর্ট প্রদর্শনীর কৃতিত্ব তাঁরই। ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পী শফিকুল কবির চন্দনের শিল্পকর্মের বেশ কটি’টি একক প্রদর্শনী দারুণ সমাদৃত হয়েছে ইতিমধ্যে।
নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত শিল্প কর্মশালায় মেধাবী এই বাংলাদেশি শিল্পীকে ইউরোপীয় কালচারাল আর্ট ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। মিলানেই সপরিবারে বসবাস করেন পেশাদার এই সার্বক্ষণিক শিল্পী।
২৫/ ইউনেসকোর মহাপরিচালকের সিনিয়র স্পেশাল অ্যাডভাইজার - তোজাম্মেল টনি হক
ষাটের দশক থেকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের অধিবাসী তোজাম্মেল টনি হক। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলায় চল্লিশের দশকে। পড়াশোনার শুরু নওগাঁতেই, স্কুল-কলেজ শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। স্কুল জীবন থেকেই জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে ।
১৯৫২ সালে তিনি স্কুলের ছাত্র থাকাকালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল-ধর্মঘটে সক্রিয় অংশ নেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনীতি করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। পরে পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব দ্য স্টুডেন্টস অব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনিই প্রথম কোনো বাঙালি ছাত্রনেতা যিনি ওই পদের অধিকারী হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে আইয়ুব বিরোধী রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে কানাডায় পাড়ি জমাবার পর আর দেশে ফেরা হয়নি তাঁর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। সত্তর ও আশির দশকে ইংল্যান্ডে ছিল বর্ণবিদ্বেষের এক বিষাক্ত পরিবেশ, যেখানে অভিবাসী সংখ্যালঘুরা ছিল অসহায়। বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন ক্রমশ দানা বাঁধতে শুরু করলে তোজাম্মেল হক টনি হক সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯৮৮-১৯৯০ ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন শেষে প্যারিসেই যোগ দেন ইউনেসকোর সদর দপ্তরে। ইউনেসকোর মহাপরিচালকের সিনিয়র স্পেশাল অ্যাডভাইজার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনের সময় একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শিক্ষা ও কমিউনিটির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি ২০০৩ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
২৬/ আমেরিকায় বায়ো-টেরোরিজম প্রতিহত করার পদ্ধতি আবিষ্কারক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী ড. জাফরুল হাসান
আমেরিকায় বায়ো-টেরোরিজম প্রতিহত করার পদ্ধতি আবিষ্কারক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী ড. জাফরুল হাসান
এবার আমেরিকা প্রবাসী বাঙালির মেধার আরেকটি স্বীকৃতি এলো । ডাকযোগে কিংবা অন্যভাবে অ্যানথ্র্যাক্স আক্রমণকে (বায়ো-টেরোরিজম) প্রতিহত করার পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী ড. জাফরুল হাসান। আমেরিকারর ‘পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ)’র পক্ষ থেকে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে এমএসসি করে ১৯৮৬ সালে রোটারি ক্লাবের স্কলারশিপ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনায় উচ্চতর শিক্ষা নিতে আসেন জাফরুল। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি মাস্টারস অব পাবলিক হেলথ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ড থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে ডক্টরেট করেন।
ব্রিটেনে প্রথম বাংলাদেশি নারী বিচারক - ব্যারিস্টার স্বপ্নারা খাতুন
ব্রিটেনে বিচারক পদে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি নারী নিয়োগ পেলেন। ব্রিটেনের সার্কিট জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সিলেটের স্বপ্নারা খাতুন। ব্যারিস্টার স্বপ্নারা খাতুন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর ইউনিয়নের মোল্লা গ্রামের প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মরহুম মিম্বর আলীর মেয়ে।
স্বপ্নারা খাতুনের পিতা মিম্বর আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডন প্রবাসীদের মধ্যে অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তার অবদানের জন্য তাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে।
স্বপ্নারা খাতুন পারিবারিকভাবে দীর্ঘ দিন ধরে ব্রিটেনে বসবাস করছেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বড় ভাই শামীম আহমদ এয়ার স্পেইস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজে কর্মরত।
অপর ভাই শফি আহমদ ত্রিপল এফআরসিএসধারী ডাক্তার। তিনি বর্তমানে লন্ডন রয়েল হাসাপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত। শিক্ষাজীবনে অধ্যয়ন শেষে স্বপ্নারা খাতুন সাউথ ইস্টার্ন সার্কিট বেইসড এর লন্ডন ফ্যামিলি কোর্টে জাজ হিসেবে যোগদান করেন। সার্কিট জাজ পদবী ব্রিটেনে ডিস্ট্রিক্ট জাজের উপরে এবং আগামীতে পদোন্নতি পেলে ব্রিটেনের হাই কোর্টের জাজ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে তাঁর।
(সকল তথ্য সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১