প্রবাসে বাংলাদেশের রক্তের উত্তরাধিকারী গুণীগন-১৩
কাতারের সরকার ও জনগণ আগে ৩ সেপ্টেম্বর তাদের একমাত্র ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে ‘স্বাধীনতা দিবস’ উদযাপন করতেন। একজন হিস্টরিক্যাল রিসার্চ এক্সপার্ট কাতারের বহু বছরের ইতিহাস গবেষণা করে বের করলেন, ৩ সেপ্টেম্বর নয় , ১৮ ডিসেম্বর হলো কাতারের ‘জাতীয় দিবস’।
২০০৬ সালের মে মাসে তিনি কাতার সরকারের কাছে তাঁর গবেষণালব্ধ তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন । যাবতীয় তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কাতার সরকার ৩ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা দিবস বাতিল করে ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস নির্ধারণ করে। ২০০৭ সাল থেকে কাতারে ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। এ জন্য কাতারের সরকার ও জনগণ এই ইতিহাস বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গর্ববোধ করেন ।
এর সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশেরও গর্ব করার অনুষঙ্গ । কারন ৬৩ বছর বয়সী এই হিস্টরিক্যাল রিসার্চ এক্সপার্ট আর কেউ নন । ইনি বাংলাদেশের ডক্টর হাবিবুর রহমান ।
যিনি কাতার আমিরের সচিবালয়ে একমাত্র ইতিহাস বিশেষজ্ঞ (হিস্টরিক্যাল রিসার্চ এক্সপার্ট) হিসেবে ১৯৮২ সাল থেকে কাতার আমিরের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন ।
১৯৯৭ সালে দ্য মেকিং অব দ্য গালফ ওয়ার বইয়ের জন্য হাবিবুর রহমান আমেরিকা থেকে ‘লিটারারি অ্যাওয়ার্ড’ পান। তাঁর লেখা আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য বই হলো: এ ব্রিটিশ ডিফেন্স প্রবলেম ইন দ্য মিডল ইস্ট, দি ইমারজেন্স অব কাতার এবং চেঞ্জিং ফেস অব কাতার।
শাহ পরীর দ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হাবিবুর রহমান ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্স পাস করেন। ১৯৭২-৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৬-৭৭ সালে কানাডার অটোয়া ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি পান।
১৯৮২ সালে ইংল্যান্ডের লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি কাতারের আমিরে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান।
হাবিবুর রহমান ১৯৯৯ সালে ঢাকায় আমেরিকা ভিত্তিক সর্ববৃহৎ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘নিউ হরাইজন’ প্রতিষ্ঠা করেন। গত ১২ বছরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ১৪ হাজার মানুষ কম্পিউটার-বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ।
২০০৭ সালে শাহ পরীর দ্বীপ এলাকায় তিনি তিনটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছেন। এক হাজার ৮০০ নিরক্ষর ব্যক্তি এখানে সাক্ষর হয়েছেন।
হাবিবুর রহমানের বাবা মরহুম হাজি নবী হোসাইন , মা মরহুম জমিলা খাতুন ।
পাঁচ ভাই, তিন বোনের মধ্যে হাবিবুর রহমান তৃতীয়। তাঁর স্ত্রী কাতারের ব্রিটিশ স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাঁদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে ও এক মেয়ে কাতারের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। দুই মেয়ে সেখানেই লেখাপড়া করছে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশ কাতারের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গবেষণা-কর্মে ৩৩ বছর ধরে ভুমিকা রাখা ,
ডক্টর হাবিবুর রহমান এর জন্য শুভ কামনা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭