প্রবাসে বাংলাদেশের রক্তের উত্তরাধিকারী গুণীগন - ৯
‘টেন আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং পারসন অব দ্য ওয়ার্ল্ড ২০১০’ এবং ‘প্রভাবশালী ১০০ ব্রিটিশ বাংলাদেশি ২০১২’ তালিকায় স্থান পাওয়া তরুণ উদ্যোক্তা সাবিরুল পৃথিবীজুড়ে তরুণদের স্বপ্নের কথা বলে বেড়ান। তাঁর কথা শুনতেই ভরে ওঠে মিলনায়তন; এমনকি স্টেডিয়ামও!
১৪ বছর বয়স থেকেই আলো ছড়াচ্ছেন তরুণ সাবিরুল। বয়স যখন বিশের কোঠায়, তাঁর নামের পাশে যুক্ত হয় মিলিয়নিয়ার তকমা। খোদ যুক্তরাজ্যের ৬৫০টি স্কুলে তাঁর ব্যবসা শেখার গেম ‘টিন-ট্রাপ্রেনার’ আছে পাঠ্যসূচিতে।
সতেরোতে পা দিয়ে সাবিরুল ভাবলেন, তাঁর নিজ অভিজ্ঞতাকে তরুণদের মধ্যে ভাগাভাগি করা দরকার। লিখলেন তাঁর প্রথম বই দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইয়োর ফিট ( বিশ্ব তোমার পদতলে) । সমস্যা হলো, ৪০টি প্রকাশনা সংস্থায় পাণ্ডুলিপি পাঠিয়েও লাভ হলো না। কেউই বইটি ছাপতে আগ্রহী নয়।
সাবিরুল নিরাশ না হয়ে নিজ উদ্যোগেই বইটা ছাপান । প্রকাশের পরপরই অবিশ্বাস্য সাড়া। প্রকাশের নয় মাসে বই বিক্রি হলো ৪২ হাজার ৫০০ কপি! আর এই সময়টায় ৩৭৯টি অনুষ্ঠানে নিজের বই ও ভাবনা নিয়ে বক্তব্য দিলেন সাবিরুল।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন সাবিরুলের বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে প্রেরণার প্রতীক হয়ে আলো ছড়াবে এই তরুণ।’।
তাঁর আশাবাদ মিথ্যা হয়নি। দ্বিতীয় বই প্রকাশ করলেন, দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইয়োর ফিট-থ্রি স্ট্রাইকস টু এ সাকসেসফুল এন্ট্রাপ্রেনিউর নামে। সিঙ্গাপুরের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মার্শাল ক্যাভেন্ডিস থেকে বের হলো বইটি। বইটি মূলত নানা দেশের ২৫ জন টিন-স্পিকারের (কিশোর বক্তা) সাফল্যগাথা। সাবিরুলের তৈরি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৬-২৫ বছর বয়সী তরুণদের বক্তৃতা দেওয়ার জায়গা ‘টিন স্পিকার’ এর সাফল্য ছিল এটি।
কেবল বই আর বক্তৃতা নয়। এবার সাবিরুলের মাথায় এল ‘টিন-ট্রাপেনার’ গেম তৈরির ভাবনা। স্কুলপড়ুয়া তরুণদের ব্যবসা শেখার মজার এই বোর্ড গেম প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেন ২০ হাজার ডলার। এখানেও সফল সাবিরুল। একসঙ্গে বিশ্বের ১৪টি দেশে শুরু হলো ‘টিন-ট্রাপেনার’ বিক্রি। নানা দেশে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে গেমটি। ইংরেজির বাইরে আরও ১৩টি ভাষায় বের হয়েছে এটি। খোদ যুক্তরাজ্যের ৬৫০টি স্কুলে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের খেলতে দেওয়া হয় সাবিরুলের এই উদ্ভাবন।
সাবিরুল ২০১১ সালের মে মাসে মালদ্বীপ থেকে শুরু করেন , পৃথিবীজুড়ে ১০ লাখ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির প্রজেক্ট “ইন্সপায়ার ওয়ান মিলিয়ন”।
এ প্রকল্প নিয়ে বিশ্বের ২৫টি দেশ চষে বেড়িয়েছেন সাবিরুল। তাঁর এই প্রকল্পে অংশগ্রহনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশকারী তরুণ উদ্যোক্তার সংখ্যা ইতোমধ্যে ১০ লাখ পূর্ণ হয়ে গেছে । ২০১৪ সালের ৪র্থ মার্চ ১০ লাখ পূর্ণ হওয়ার মুহূর্তটি তিনি বাংলাদেশে উদযাপন করেন ।
পুরস্কার -
মাত্র ২২ বছর বয়সেই সাবিরুলের ঝুলিতে জমা পড়েছে অনেকগুলো পুরস্কার।
‘২০০৮ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস ও প্রিন্সেস অব জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া “মোজাইক বেস্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর অব দ্য ইয়ার” পুরস্কার ।
একই বছরই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে পাই “গ্রোয়িং আপ সিইও অ্যাওয়ার্ড” ও “আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং অ্যাচিভার অ্যাওয়ার্ড”।
২০০৪ সালে “ইয়াং কোম্পানি অব দ্য ইয়ার” ও “বেস্ট প্রেজেন্টেশন অব দ্য ইয়ার”।’
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় দাদার বাড়ি সাবিরুল ইসলামের । পিতা শফিকুল ইসলাম ।
বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের নিয়ে সাবিরুল অনেক আশাবাদী। তাঁর মতে, বাংলাদেশি তরুণেরা মেধাবী ও উদ্যমী।
বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা সাবিরুল;গো এহেড।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৪