বিদেশের কোনো শহরে পাঁচ-সাতটা দেশি পরিবার থাকলেই দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শাখা-প্রশাখা খুলতে দেখা যায় | যে যাঁর মতো নেতা হতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন সবাই; বাঙালি এমনই প্রচারপ্রিয় | বিদেশের ছোট ছোট শহরেও, যেখানে হাতেগোনা কটা বাঙালি ফ্যামিলি বাস করেন, সেখানেও গন্ডায় গন্ডায় বাংলা এসোসিয়েশন, বা সমিতি গজে উঠে | প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বা তেমন কিছু | বানিয়ে বলছি ভাববেন না যেনো, নেতৃত্বের কঠিন প্রতিযোগিতায় আমার-আপনার মতো "জনগণ" খুঁজে পাওয়া দায় | এর ব্যতিক্রমও কিন্তু আছে | শুনুন তবে আমার এক বন্ধুর কাহিনী |
পুরোনো এ বন্ধুর সাথে গত দশ বছরে অন্তত: গোটা দশেকবার দেখা হয়েছে; কখনো শপিং মলে, কখনো ব্যাংকে, কখনো বা বাচ্চাদের স্কুল বা ডে-কেয়ারে | এক শহরে বসবাস করলে যা হয় আর কি | অনেক অনুরোধ করেও তাকে কোনোদিন বাসায় আনতে পারিনি | সেও তার বাসায় যেতে বলেনি কোনোদিন | কথায় কথায় একদিন ও জানালো, কেবল আমি কেনো? তার সাথে এক অফিসে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন এমন অনেক বাঙালি ভাইবোনের অনুরোধেও সে কখনো তাদের বাসায় যেতে রাজি হয় নি; নিজের বাসায়ও কাউকে কোনোদিন ডাকেনি | অন্যরকম এক নিভৃতচারী মানুষ আমার এ বন্ধু |
না মেনে উপায় নেই, কেউ যদি নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ থেকে তার মতো করে ভালো থাকতে চায়, তবে তাকে বিরক্ত করা অশোভন | এ অনেকটা তার প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপের সামিল | তাই, আজকাল কোথাও দেখা হলে বাসায় যাওয়া-আসার প্রসঙ্গটা আর তোলা হয় না | জীবনটা ক'দিনের? মানুষের সাথে সামাজিকতা বজায় রেখে হউক, বা নিজের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে রেখে হউক, যার যেভাবে ভালো লাগে সেভাবে ক্ষনিকের এ জীবন কাটিয়ে দিলে ক্ষতি কি?
তবে, ক'দিন আগে ঘটে যাওয়া এক নাটকীয় ঘটনা পাল্টে দিলো আমার এ বন্ধুর পুরোনো হিসেব | এদেশে আমার স্কুল-শিক্ষিকা স্ত্রী উইকেন্ডের ছুটিতে আমাদের নিজেদের বাসায় কয়েকজন ছাত্র পড়ান; বলা চলে, হোম টিউটোরিং | হাইস্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অংক পড়ান তিনি | এ নিয়ে তাঁর এক অনলাইন বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়েছে আমার এ পুরোনো বন্ধু; হাইস্কুলে পড়ুয়া তার কন্যার জন্য অভিজ্ঞ অংকের শিক্ষক দরকার | আমার স্ত্রীর এ বিজ্ঞাপনে নাম ছিল না, ছিল ফোন নম্বর | কাজেই, আগে থেকে এ টিউটর কে তা বোঝার উপায় ছিলো না, বা নেই |
আমার সহধর্মিনীর সাথে এ বিষয়ে (ইংরেজিতে) টেলিফোন আলাপের পর কন্যাকে নিয়ে এক উইকেন্ডের সকালে আমাদের বাসায় হাজির এ বন্ধু | বাসার দরজা খুলে দিলাম আমি নিজেই | দু'জন দু'জনকে দেখেই হতবাক | এ যেন নাটকেরই কোনো অংক! বিশ্বাস হতেই কষ্ট হচ্ছিলো এমন কাকতালীয় একটা ব্যাপার | গোলক ধাঁধায় পড়ে বন্ধুর স্ত্রী, মানে, ভাবিও বেহুঁশ! ওদিকে, তাদের কন্যা কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না; স্বভাবতই: কনফিউজড | ফ্যালফ্যাল করে কেবলই এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো মেয়েটা ..
কন্যার কারণে এ বন্ধু আজকাল প্রতি উইকেন্ডে একবার আমাদের বাসায় ঢুঁ মেরে যায় | আমার স্ত্রী বন্ধু-কন্যাকে অংকে হেল্প করছে; আর, আরেকটু আগ বাড়িয়ে আমিও পদার্থবিদ্যাটা দেখে দিচ্ছি তার | নিজের বাচ্চাদের পড়াতে গিয়ে কানাডার হাইস্কুলের ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথ তো আমার এক প্রকার মুখস্থই |
অবস্থা এমনই এখন, আগে আমাদের এক মেয়ে ছিলো কেবল; আজ যেন দুটো..
ML Gani @ facebook
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৮