তোমার কাছ থেকে দশটা টাকা চেয়ে নিলাম
সিগারেট ফুরিয়েছে বলে,
এই রৌদ্র মাথায় নিয়ে আমরা ছিলাম
এতোক্ষন চুপচাপ ।
অনেকক্ষন কথা বলিনি কেউ আর তখনই
সিগারেটের কথা মনে হলে
তোমার কাছ থেকে দশটা টাকা চেয়ে নিলাম ।
তোমার বিন্দু বিন্দু ঘাম লেগে থাকা মুখ
বেশ খানিকটা হেটে আসায় ফুলে ফুলে ওঠা বুক,
স্যান্ডেলের ষ্ট্রাপে ওটা কি কোনও ফুল ?
ঠিক ঠাহর হয়না কোন শাড়ী তোমাকে মানায়
অথচ এইবেলা, আধবেলা অফিস শেষে
ঘরে ফেরা লোক,চোখের কোনায় তাকায় উৎসুক ।
তোমাকেই দ্যাখে, এক নারী
কিছুটা বিবর্ণ শাড়ী, লেবাস কমদামী, স্যান্ডেলও তাই
ঘেমে ওঠা মুখ, শক্ত চোয়াল
প্রসাধনের কোনও ব্যাপার স্যাপার নাই।
অথচ প্রসাধনহীন তোমার শরীর অটুট এখনও,স্থির ।
যেখানে যেমন থাকার আছে ঠিকঠিক
নাহ্, তাও নয়। আরো যেন বেশী কিছু কোথাও আছে,
বোঝা যায় কি যায়না
অন্তত আমি বুঝিনা ।
বোঝে ঐ লোকগুলো, আধবেলা অফিস শেষে
ঘরে ফেরা লোক তাকায় উৎসুক
দ্যাখে, যেন তুমি ঠিক ‘ম্যাডোনা’।
তুমি একটু বিরক্ত বিরক্ত মনে হয়,
সিগারেটের ধোঁয়ায় ?
নাকি লোকেদের চোখের ভয়!
আসলে ভেবে দ্যাখো, কি ভীষন খেটেখুটে এখন
সারাদিন পর ফিরছো ঘরে
সাথে মলিন পুরুষ একজন । যে তোমার কিছু নয়
আবার অনেক কিছু, এমন ভাব ধরে
রৌদ্র আড়াল করে
তোমারই গায়ে ছায়া ফেলে পাশাপাশি
এমন একটা ঘনিষ্ঠ সান্যিধ্যে বিলাসী
বাবুর মতো হাটছে।
আমি তো জানি, টাইপিষ্ট কাম কেরানী
এমন একটা চাকরী । কতোই বা বেতন তোমার !
সারাদিন আঙ্গুলে তোলা খট্খট্ শব্দের মতোন
বাড়ীতেও লেগে আছে খট্খট্, মায়ের অসুখ
বাবার হার্টের রোগ, দু’দুটো ভাইবোন ।
তার উপর আমি বেকার একজন
তবুও শৈশবের সেই ভালোবাসার মন
এখনও রেখেছো মনে
কে জানে, এ কেমনতরো খেয়াল তোমার!
তুমি তো জানো, যে টাকাটা নিলাম সিগারেটের
ওরকম কতোই তো নিয়েছি কতোদিন। ফেরৎ এর
আশা করোনি কখনও, জানতে
কিছু একটা রোজগারপাতি ছাড়া পারবোনা দিতে
ফিরিয়ে সে ঋন, যেমন নিত্যদিন
এভাবেই পাশাপাশি হেটে যাওয়া ছাড়া
অন্য নিয়তি নেই আমাদের।
মনে আছে, একবার আমিও একজন কবির মতোন
কবিতা লিখেছিলাম, সুখের সংজ্ঞা নিয়ে ?
“ সুখ মানেই যাবতীয় অসভ্য শয়ন
কারুকার্যময় স্তনের মিনার।
সুখ মানেই ভালোবাসা –
তোমার আমার। ”
পড়তে গিয়ে লজ্জায় লাল, বলেছিলে ডেকে
‘যাহ্, কি অসভ্য তুমি। এইসব ছাইপাশ কেউ ল্যাখে ?’
আসলে কোনও সুখের মতোনই কোনও একটু সুখ
হাতের নাগালে অনায়াস হয়না কখনও
কারন, বিপ্রতীপ সময় দিয়ে আছে মুখ
আমাদের সময়ে ।
এবার তুমি বা’হাতি রাস্তা নেবে, আমি সোজা ।
প্রতিদিন যেমন হেটে আসি অগনিত লোক ঠেলে
অফিস-দালানকোঠা,দোকানের আলো, রিকসার ঠুন্ঠুন্
পিছে ফেলে
বেয়ারা কুকুর আর বিষন্ন দিন, তাও পিছে পড়ে যাবে
শুধু তোমার চোখ নিত্যকার মতো থম্কাবে ।
কিছু বলতে গিয়েও বলবেনা
আসলে আমাদের বলার কিইবা আছে !
শুধু দু’টি ভিন্ন রাস্তা
তুমি বা’হাতি – আমি সোজা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২৭