“ একটুখানি ব্লগ ....আ টুল অব কমিয়্যুনিকেশান ! ”
আজ একটি কিংবদন্তীর বর্ষপূর্তির সকাল । এগারো বছর আগে এমনি এক পৌষের প্রথম দিনটিতে আজকের শীতসকালের নরম সূর্য্যের মতো আলো ছড়িয়ে তার ভীরু মুখটি তুলেছিলো সে !
কিশলয়ের মতো ফুঁটেছিলো যে একদিন, তা আজ এ্যাদ্দিনে এক মহীরূহ; আপনাদেরই জল সিঞ্চনে ।
হাটি হাটি পা পা করে যার শুরু তা কালের পথ ধরে এখন এক টগবগে তরুণী ।
তরুণী, এ কারনে যে ; সে ধারন করে । ধারন করে সভ্যতা-সংস্কৃতি, বহমান রাখে সংস্কৃতির বংশপরম্পরা । তৈরী করে ইতিহাস, সৃষ্টি করে ইতিহাসের পাত্রপাত্রী ।
আপনি হয়তো বুঝে ফেলেছেন , কার কথা বলছি আমি । যার বিহনে আপনার দিন কাটেনা, কাটেনা রাত । দিবস রজনী আপনি যার আশায় আশায় থাকেন ।
হ্যাঁ, আপনার প্রিয় সামুর এগারো বছর পূর্ণ হলো আজ ।
এ পূর্ণতায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে পথের বেছানো কাঁটা মাড়িয়ে , সকল খানাখন্দ পেড়িয়ে আসতে হয়েছে তাকে । সে পথের দিশারী ছিলেন আপনি নিজেই । সবলে আপনিই তাকে হাতে ধরে এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে নিয়ে এসেছেন । তাকে এখানে নিয়ে এসেছেন বটে কিন্তু তাকে এগিয়ে দিতে হবে সামনের আরও অনেক বন্ধুর পথ। আপনারই প্রয়োজনে, ভালোবেসে । এই অস্থির সময়ে দ্রুত বদলে যাওয়া চারিপাশ, সুস্থ্য মানসিকতার অনুপস্থিতি , অশোভনতার - অসহিষ্ণুতার চাষাবাদ, শিষ্টাচারের প্রকট অভাব এসবের কারনে তার পথ চলা থেমে থাকবেনা নিশ্চয়ই !
অনেকেই অনেক কথা বলেন , প্রিয় এই ব্লগটির লেখক ও লেখার দৈন্যতার কথা বলেন । আর আমি বলি কি, আমরা কেউই সব্যসাচী লেখক নই ! আমরা অনেকেই একদম আনকোরা, আধোয়া । আপেশাদার । আমাদের এই আধোয়া লেখায় ঋদ্ধ লেখকেরা চোখ বাঁকা করতেই পারেন । হাসতেই পারেন আমাদের লেখার কাঁচা গন্ধ শুকে, লেখার দৈন্যতা দেখে । কিন্তু কে বলতে পারে, আমাদের মধ্যে থেকে একদিন সৃষ্টি হবেনা ইতিহাস ? আমাদের মধ্যে থেকেই বেরিয়ে আসবেনা ইতিহাসের পাত্রপাত্রী ?
সামুতে অনেকে কাঁচা লেখা তো বটেই সাথে দূর্গন্ধ ছড়ায় এমন লেখাও লিখে থাকেন ।
লেখা তো যে কেউই লিখতে পারেন , দিতেও পারেন । লিখতে পারাটা ব্লগের জন্যে কঠিন কিছু নয়, কঠিন হলো আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন তা, আর আপনাকে তুলে ধরছেন কি ভাবে । সামুকে আপনি যে ভাবেই সঙ্গায়িত করুন না কেন, মূলটা তো এখানেই যে, এটা আপনার দিনমানের খেড়োখাতা । খেড়োখাতায় যতো আঁকাবুকি ,কাটাকুটিই করুন না কেন শেষমেশ তার নির্যাসটুকু তো আপনার নিজের কথাই বলে, আয়নায় আপনার মুখটিই দেখায় ! আপনি কে...কেমন লোকটি আপনি ! আপনার সামু ব্লগ যদি আপনাকেই দেখায়, তবে সেখানে আপনার ছবিটি কেমন ? আপনার রূচি -আপনার শিক্ষা , আপনার স্বকীয়তা , আপনার নিজস্ব ধ্যানধারনার সুন্দর এবং সত্যিকারের একটি ছবি সেখানে দেখা যায় কি ?
এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক স্যামুয়েল লাভার এর একটি উদ্বৃতিকে একটু ঘুরিয়ে না বললেই নয় – “মানুষের যখোন একবার কথা বলার চুলকানী ওঠে তখোন তার উপশম করতে পারে একমাত্র কলমই । কিন্তু আপনার যদি কলম না থাকে তবে ধারনা করি- সম্ভাব্য সকল উপায়ে আপনি চুলকোতে চাইবেন” ।
“সামু” আপনাকে সে রাস্তাটিই খুলে দিয়েছে । সে রাস্তায় হাটতে হাটতেই কেউ কেউ শিখে নিয়েছেন , লেখার যাবতীয় কৌশল । কাঁচা থেকে পরিপক্ক হয়ে উঠেছেন স্বকীয়তায় । নিজেকে নিয়ে গেছেন শীর্ষে । কিন্তু মাঝেমাঝে মন্দ কারো ভাবনার অসুস্থ্যতার কারনেই সামু দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে বলে মনে হয় । সে তো বহমান নদীতে দু’চারটে দুর্গন্ধে ভরা কচুরীপানা ভেসে যাওয়ার মতো । এতে কি নদীকে নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধরে নেবেন ? সে তো হবে আপনারই দৃষ্টিশক্তি, বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা ।
নোংরামী কোনখানে নেই ? রাজনীতি, মাঠঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস -আদালত সবখানেই তো ভালোর পাশাপাশি নোংরামীও সমপরিমানে নয় বরং বেশী পরিমানেই বিদ্যমান । তাই বলে কি আপনি ঐ সবের সংষ্পর্শ এড়িয়ে চলেন ? সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে তাদের বাতিল করে দেন জীবন থেকে ? গুটি কয়েক রাজনীতিক যখোন বস্তির বুলি নিয়ে নোংরামী ছড়ান তখোন আপনি কি সকল রাজনীতিকদের নির্বাসনে দিতে চান ? আঙুলে গোনা কিছু ছাত্রের উশৃঙ্খলতা, সন্ত্রাসের দায়ে সারা ছাত্রসমাজকে কি বয়কট করে চলেন ? পথভ্রষ্ট কিছু উগ্র ধর্মবাদীদের উগ্র কাজের দায়ে আপনি কি সকল বিশ্বাসীদের ফাঁসি চান ?
আপনি সবাইকে এক কাতারে ফেলেন না । আসলে আপনার চারপাশে বিরাজিত সব নোংরামীর সাথে আপনি সবাইকে গুলিয়ে ফেলেন না। আর গুলিয়ে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজও নয় ।
দেশ-কাল-পাত্রের সাথে “সামু” আপনার টুলস অব কমিয়্যুনিকেশান । যখোন আপনার ভাবনারা ভীড় করে আসে তখোন শব্দগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে । আপনার সুপ্ত প্রতিভা , সমাজ - প্রতিবেশের প্রতি আপনার ধ্যান-ধারনা, সংস্কারের সৃজনশীলতা আপনার অচলায়তন ভেঙ্গে আপনাকে ছড়িয়ে দেয় বিশ্বময় ।
আর যারা বাঁকা চোখে এই ব্লগকে দেখেন তারা জেনে রাখুন , যে লেখক আবেগময়তার সাথে মানুষের পূর্ণতাকে বুঝতে অক্ষম, নিজের সৃজনশীলতার শোভনীয়তা , অশোভনীয়তা বুঝতে অপারগ, ব্লগে তার আত্মনিবেদন নেই নয়তো প্রবেশাধিকার । তাই একজন সত্যিকারের সামুব্লগারকে সতর্ক, সংযত, রূচিশীল হতেই হয় , আজকের জন্যে এবং আগামীকালেরও ।
আজ এই শীতপ্রভাতে সামুর গন্ধ শিউলিগন্ধের মতো ছড়িয়ে যাক, রসে ভেজা পিঠাপুলির মতো সুস্বাদু হোক তার বুকে ঝাঁপ দিয়ে পড়া সকল লেখা । সামুর আঁচলে ফুঁটে উঠুক অগনিত নবীনের অপটু হাতের লেখার ছোপওয়ালা তারাদের কারুকাজ । ঋদ্ধরাও থাকুক এখানে চাঁদের আলো ছড়িয়ে । সেই চাঁন্দি জোছনায় সামুর সবাই অবগাহন করুক হৃদয়ের সবক’টা জানালা খুলে ।
আমাদের তীর্থ হয়ে উঠুক সে .......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫২