আরিফুল জোয়ার্দারের বয়স আড়াই কুড়ি পেড়িয়ে গেলো এই সেদিন । চুলে ধূসরতার ছাপ লেগেছে আরও বছর কয়েক আগেই । সেই সাথে পেটের পরিধির বেড় ও বেড়েছে । তাই ভুড়ি কমাতে জোয়ার্দার সাহেব সুযোগ পেলেই প্রাতঃভ্রমন করতে ছোটেন । কিছুটা কৃপণ জোয়ার্দার সাহেব যে সাতশ টাকা ভিজিটের ডাক্তারের পরামর্শে এমনটা করতে ছোটেন তা নয় । এটা তার বিদূষক স্ত্রী হেলেনা জোয়ার্দার এর নির্দেশ । কারনে অকারনে এই বাড়ীর অন্য ফ্লাটের চার চারজন গৃহবধু হেলেনা জোয়ার্দারকে দেখা হলে প্রায়ই বলেন –
জোয়ার্দার ভাবী , ভাইয়ের ভুড়ি দেখি দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে । খুব আদর যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন মনে হয় !
এসব কথা সহ্য করার পাত্রী জোয়ার্দার স্ত্রী নন । আরিফুল জোয়ার্দার যে দিনদিন মোটু হয়ে যাচ্ছেন এটা হেলেনা জোয়ার্দারও খেয়াল করেছেন । তার অনেকটা স্লিম ফিগারের পাশে ভুড়িওয়ালা স্বামী বেমানান । চামড়ায় কিছু ভাজও পড়েছে এর মধ্যে । হেলেনা জোয়ার্দার যখন গাঢ় মেক-আপ নিয়ে বাইরে যান তখন তাকে তরুনী বলে চালিয়ে দেয়া যায় অনায়াসে। তাই জোয়ার্দার সাহেবকে সাথে নিয়ে বেরুলে মিসেস জোয়ার্দারের একটু লজ্জা লজ্জা লাগা অস্বাভাবিক নয় । লোকে ভেবে বসতেই পারে, বৃদ্ধস্য তরুনী ভার্যা !
তাই শরীরের ফিটনেসের ব্যাপারে মিসেস ছাড় দিতে রাজী নন মোটেও। তাই জোয়ার্দার সাহেবের উপর অলিখিত একটা মার্শাল’ল জারী করাই আছে ।
অবশ্য ছাড় তিনি কোনও কিছুতেই দেন না । শান্তি মতো দু’দন্ড যে বসবেন জোয়ার্দার সাহেব তার জো নেই । হয়তো অফিসের পরে ঘরে এসে ভাবলেন , আজ একটু আরামের সাথেই বিবিসির সান্ধ্য নিউজটা শুনবেন । হবেনা । মিসেস জোয়ার্দার তখনি ধমকে উঠে বলবেন, “ -- হুমমমম নিজে আরাম করতে বসলে আর এদিকে আমি যে তোমার ঘর সামলাতে সামলাতে মরে গেলাম সেদিকে তোমার মোটেও খেয়াল নেই । বসে বসে তো পেটটাকে ড্রাম বানিয়ে ফেলেছো । ওঠো, ওঠো আমি এখন সিরিয়াল দেখবো । আর মরিয়ম কে বলো চা বানিয়ে আনতে …”
তা কপালেই বোধহয় সুখ কথাটি লেখা নেই জোয়ার্দার সাহেবের । সংসারে অহেতুক কুরুক্ষেত্র ডেকে আনতে চান না বলেই তিনি সব সময় তার এই একটি মাত্র স্ত্রীর মন পেতে ওঁৎ পেতে থাকেন ।
তো , সেদিন খুব সকালে পুজণীয় গিন্নির সন্তুষ্টি লাভের আশায় ঘুমিয়ে থাকা মিসেসকে জোয়ার্দার সাহেব খুব মিহি সুরে ডাকলেন –
- হনি, তুমি কি আমার সাথে ইয়োগা করতে যাবে ? আর দুজনে একত্রে একটু না হয় হেটে আসলাম !
আরামের ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় হেলেনা জোয়ার্দার বিরক্ত । ঝাঁঝাঁলো বামাকন্ঠে বললেন –
- ওহ.... তোমার ধারনা আমি তোমার মতো মোটা হয়ে গেছি ?
জোয়ার্দার – না...না তা বলিনি । ইয়োগা শরীরের জন্যে ভালো তো তাই ভাবছিলাম... আর শরীরটাও ফিট থাকে .....।
মিসেস জোয়ার্দার --- তার মানে আমি আন-ফিট ? আমি অসুস্থ্য, আকারে ইঙ্গিতে এটা বলতে চাও ?
জোয়ার্দার – আচ্ছা আচ্ছা , ঘাট মানছি বাবা । ইচ্ছা না হলে উঠোনা । যাওয়ার দরকার নেই ..
মিসেস জোয়ার্দার – কি বলতে চাও ? আমি অলস ? বুড়ি হয়ে গেছি ? আমি না গেলে তোমার সুবিধে হয় ? একা যেতে চাও ?
আসন্ন সুনামীর আতঙ্কে জোয়ার্দার সাহেব ভেবে পেলেন না কি বলবেন , কি বলা উচিৎ !
মিনমিন করে শুধু বলতে পারলেন – না না সোনা, তুমি আমাকে ভুল ভুঝেছো । আমি সে রকম কিছু ........
কথা শেষ করতে পারলেন না জোয়ার্দার সাহেব তার আগেই সুনামীর বাতাস তার মুখের কথা উড়িয়ে নিয়ে গেলো ।
মিসেস জোয়ার্দার – ওহ ... তার মানে বলতে চাচ্ছো আমি তোমাকে কখনও বুঝতে পারিনা, শুধু ভুল বুঝি ? তোমার আক্কেলটা কেমন বল তো ......
জোয়ার্দার – আরে বল্লাম তো তোমাকে সেরকম কিছু বলিনি আমি ।
মিসেস জোয়ার্দার – তাহলে কি আমি মিথ্যে বলছি ? আমি মিথ্যুক ?
জোয়ার্দার - ওহহো... সোনা , এই সকালবেলাটাতে কেন খামোকা ঝগড়া করছো ?
মিসেস জোয়ার্দার - ওহ তোমার ধারনা আমি একটা ঝগড়াটে মহিলা ?
জোয়ার্দার - আচ্ছা ঠিক আছে, আমিও যাবোনা , তোমাকেও যেতে হবেনা ।
মিসেস জোয়ার্দার - দেখলে........ আসলে নিজে যেতে চাওনা অথচ তোমার না যাবার দোষটা ঠিকই আমার উপর চাপিয়ে দিলে । মানুষজনকে বলতে পারবে, আমার কারনে তুমি সকালে ইয়োগাতে যেতে পারনি !!
জোয়ার্দার - ঘাট হয়েছে বাবা.... এখন সব বাদ দাও । আমি একাই যাই । তুমি ঘুমাও । এবার খুশি ?
মিসেস জোয়ার্দার - উউউ... এইতো আসল কথায় এলে । সব সময়ই দেখি , আমাকে কোথায়ও না নিয়ে যেতে হলেই বেঁচে যাও ! নিজেকে নিয়েই ভাবো শুধু ... উউউহ .... স্বার্থপর .........
জোয়ার্দার সাহেবের জানালায় খুব সকালের কুসুম কুসুম সূর্য্যটা ততক্ষনে যেন পোড়া ডিমপোঁচ এর কুসুমের মতো চ্যাপ্টা হয়ে লেপ্টে রইলো ।
এবং তার পরদিন ……………………………
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৪