“শরবতে শাহী” নয় “শরবতে ছহি”য়ের রেসিপি
( একটি রম্য রেসিপি প্রযোজনা )
মাঝে মাঝে দেখি অনেকেই ব্লগে কোনও না কোনও খাবারের রেসিপি দেন । আর হুমড়ি খেয়ে পড়ে সবাই ব্লগ পাতায় করেই গোগ্রাসে তা গিলে খান। ক’জনে তা নিজ হাতে বানিয়ে খান , জানিনা । আমারও একটা রেসিপি দিতে মুঞ্চাইলো । নিজে নিজে বানাবেন । কাউকে হাত লাগাতে দেবেন না ।
তবে এটা কি করে বানাবেন তা আপনি আমার চেয়ে ভালো করেই জানেন । যেটা জানেন না আমি তাই লিকতাম চাই ।
এ পর্য্যন্ত দেখেছি, রেসিপি প্রদানকারীরা শুধু কিভাবে বানাবেন, কি কি করতে হবে ইত্যাদি বলেন । যেমন --- পেঁয়াজ কুচিয়ে রাখুন ...... ফ্রাইপ্যানে অল্প তেল ঢালুন ....... হালকা বাদামী করে মাংসের টুকরোগুলো ভেজে তুলুন..... গরম গরম পরিবেশন করুন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই না ?
আমি শুধু কি কি করবেন না সেই বয়ান দিতাম চাই ।
বানাতে তো সবাই পারে কিন্তু “না বানাতে” পারে কয়জন ?
“শরবতে ছহি”
প্রধান উপকরন : পাত্র , পানি , মিষ্টি ও লবন
সহযোগী উপকরন : রং ।
যেভাবে বানাবেন না –
অপ্রস্তুত প্রনালী :
১ ) শরবতের পাত্র হিসাবে কাপড় কাচা বা ফ্লোর ধোয়ার বালতি অথবা চৌবাচ্চা ব্যবহার করবেন না । বাচ্চাদের বাথটাবে এই শরবত বানানোর চেষ্টা বাদ দিতে হবে । আবার এই এক্টুসখানি কফি কাপও নেবেন না । পোলাপানের ঔষধের বোতলের ঔষধ খাওয়ার মেজারিং কাপখানাও কখনই নয় । আবার ছাদের ট্যাংকিও চলবেনা । আপনি গ্রামে-গঞ্জে থাকেন বলেই যে পাতকূয়ায় শরবত বানাবেন তাও ঠিক নয় ।
২ ) ওয়াসার পানি ব্যবহারে বিরত থাকতে হবে । তার মানে এই না যে, আপনি বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহার করবেন । বৃষ্টি হলেই শান্তিনগরের রাস্তায় জমে যাওয়া পানি দেখে শান্তি মতো শরবত বানাবেন এরকম বুদ্ধিমানের কাজটি করবেন না । মহল্লার ড্রেনের পানিও না । বাসার ছাদ থেকে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানিও চলবেনা ।
বদনার পানিতো না - ই। আর কমোডে টলটলে পানি দেখে ওদিকে ভুলেও হাত বাড়াবেন না ।
৩ ) মিষ্টি, শরবতের সবচেয়ে প্রধান উপাদান । সেকারনেই সুকুমার রায়ের ঝোলাগুড় দিয়ে শরবত বানাবেন, সে চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিন । স্যাকারিন দেবেন না ।
এই আসছে শীতের রোদের মিষ্টিও চলবেনা ।
চিনি ছাড়া কোনও গত্যন্তর নাই ।
ব্রাজিল বা ভারতীয় ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (একধরনের সার) যুক্ত ভেজাল মেশানো সাদা দানাদার চিনিকে “না “বলুন। কেরু কোম্পানীর মেশিনে আখের রস দিয়ে এ্যালকোহল বানানো হয় । সেই মেশিনের বানানো চিনিও তাই হালাল নয় ।
এখন দালাল ছাড়া হালাল চিনি কই পাবেন তা নিয়ে একঘন্টা ভাবুন । এই ফাঁকে বাকী জিনিষগুলো গুছিয়ে নিন ।
৪ ) লবন ছাড়া কোনও খাবারই স্বাদের হয়না ! এটা ঠিক তো ? লবনহীন বা কম লবন হয়েছে, তো সবকিছুই আলুনি আলুনি লাগে ! লাগে কিনা ?
তাই শরবতে ছহিকে সুস্বাদু করতে হলে লবনের কোনও বিকল্প নেই ।তার মানে এই না যে, বেশী সুস্বাদু করার জন্যে টেষ্টিং সল্ট শরবতে ঢালবেন আপনি । তবে আয়োডিন যুক্ত লবন ব্যবহার করবেন না । তাতে গ্লুকোজ + আয়োডিন = “গ্লুকোডিন”বা “গ্লুকোআয়োডাইড”নামের বিষাক্ত যৌগ তৈরী হতে পারে ।
তাছাড়া আয়োডিন খেয়ে আপনি বুদ্ধিমান হয়ে গেলে আমার ভাত মারা যাবার সম্ভাবনা আছে ।
৫ ) রং - রঙীন শরবতের মাজেযাই আলাদা ।
তাই শরবতের জন্যে আপনার পছন্দের রংটি বেছে নিন ।তাই বলে ব্রাশ বা তুলি দিয়ে শরবতে রং করতে গেলে খুউব…খুউউউউউব ভুল করে ফেলবেন । ঘরবাড়ী রং করার জন্যে ব্যবহৃত মিষ্টি মধুর রংয়ের আদ্রতা রোধক ও দীর্ঘস্থায়ী এ্যাক্রিলিক ইমালসন পেইন্ট চলবেনা । দীর্ঘস্থায়ী রঙের দরকার কি ? খেয়েই তো ফেলবেন !!!!!
ডিসটেম্পার দিয়ে শরবতের টেম্পার নষ্ট করবেন না কখোনই । ওড়না বা কামিজে বুটিক ছাপ দেয়ার রং থেকেও দূরে থাকতে হবে । বাসায় হাতের নাগালে পাওয়া যায় বলে পিচ্চিদের ওয়াটার কালারের বক্সের দিকে মোটেও হাত বাড়াবেন না । পিচ্চিরা ছবি আঁকতে গিয়ে রং না পেলে আপনার জীবটাই “শরবতে হালুয়া” বানিয়ে ছাড়বে ।
হলুদ মরিচের গুড়ো দিয়ে রং করলে বানানো শরবতের স্বাদ বদলে যেতে পারে । তাই ওগুলোকে তাকের উপরেই থাকতে দিন । গামছা, গেঞ্জী রং করার রংয়ের ব্যবহারও নিষিদ্ধ । এমনকি মেহেদীর রং ও নয় । ওটা হাতে লাগান , শরবতের পাত্রে ঢালবেন না ।
নেইল পলিশের রং ??? হাসালেন । শরবত কি আপনার হাতের নখ যে নেইল পলিশ লাগাবেন ? রং নিয়ে এরকম নখড়া করবেন না ……………….
যে ভাবে পরিবেশন করবেন না :
ঠান্ডা ঠান্ডা খেতে চাইলে কখনই শরবত চুলোর আগুনে জ্বাল দেবেন না ।
আর গরম গরম খেতে চাইলে ভুলেও বরফ পানিতে শরবতটাকে চুবাবেন না ..............
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৭