[প্রস্তাবনা]
ব্লগে ক’দিন ধরে “ মা” কে নিয়ে লেখা হচ্ছে । সাড়া পড়েছে প্রচুর । “বাবা”কে নিয়েও লেখা হয়েছে । এতে পাঠকদের ইতিবাচক সাড়া নিঃসন্দেহে আমাদের মানবিক দিকটিকে আবারো সূর্য্যালোকে নিয়ে এসেছে । পিতা-মাতার প্রতি এই অনুভব নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে অগনিত পাঠককে । সকলের এই অভুতপূর্ব শিহরন তাদের উত্তর পুরুষদের ধমনীতে বয়ে যাবে আদি অকৃত্রিম ছন্দে , এই প্রত্যাশা করি ।
সকল পাঠকের সাথে তাই একাত্ম হয়ে ওঠার ইচ্ছে নিয়ে আরো একটি বিষয়ের অবতারনা অপ্রাসঙ্গিক হবে না বলেই নীচের লেখাটি লিখতে সাহস করছি আবারো।
বেলাশেষের দিনগুলি .....
সময় ফুরিয়ে আসবে দ্রুত ।
জীবনের যা কিছু অর্জন, পিছে পড়ে রইবে ........... শুধু থেকে যাবে নির্জন, নিরব একাকী প্রহর ।
ধাবমান মহাকাল তার কঠিন থাবা মেলে একদিন যে বেলাশেষের পাড়ানীর ঘাটে নিয়ে যাবে আমাকে-আপনাকে , তা আর কতোদুর ..............কেমন .......... কোনখানে !!!!!!!!!!!!!!!!!
যেদিন তুমি আমাদের বুড়ো, ক্লান্ত-দূর্বল হয়ে যেতে দেখবে ,
খুব আশা করি সেদিন তুমি ধৈর্য্য ধরে থাকবে । আমাদের বুঝতে চেষ্টা করবে .........
আমরা যদি তোমাদের সাজানো প্রাঙ্গন কখোনও নোংরা করে ফেলি খেতে গিয়ে
কিম্বা আমাদের শিথিলতার কারনে গুছিয়ে কাপড় পড়তে না পারি
তবুও অনুগ্রহ করে আমাদের সহ্য কোরো .......
ভেবে দেখো, তোমাকে খাওয়াতে আর কাপড় পড়িয়ে দিতে
আমাদের কতোই না পরিশ্রম করতে হয়েছে !
কতোই না নাস্তানাবুঁদ হতে হয়েছে তোমার দুষ্টুমির কাছে !
ছুটতে হয়েছে তোমার পিছে পিছে ।
জানবে, আজ আমাদের এই অপারগতা দুষ্টুমি নয় ; আমাদের অক্ষমতা । বয়সের দেওলিয়া হয়ে যা্ওয়া।
যদি তোমাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বারংবার আমাদের কন্ঠ থেমে যায়
কিম্বা একই কথা বারেবার বলে যাই ... আমাদের ক্ষমা করে দিও ।
আমাদের বাঁধা দিওনা , আমাদেরকে শুনতে চেষ্ট করো ............
তুমি যখোন এই এতোটুকু ছিলে তখোন তো তোমাকে একই গল্প হাযারো বার আমাদের বলতে হয়েছে !
তোমার একই প্রশ্নের জবাব শতবার দিতে হয়েছে ,
যতোক্ষন পর্য্যন্ত না তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো !
যখোন আমাদের স্নান করতে ইচ্ছে করবেনা কিম্বা পরিষ্কার থাকতে,
আমাদেরই দূর্বলতার কারনে ; আমাদেরকে লজ্জা দিওনা । বকাঝকা করোনা .........
মনে করে দেখো, তোমাকে স্নানের ঘরে ঢোকাতে
আমাদেরকে কতো ছোটাছুটি করতে হয়েছে তোমার
এবং স্নান করবেনা বলে তোমার হাযারো বায়নাক্কার পেছনে ।
জীবন সায়াহ্নে আমাদের জ্ঞান যখোন সীমিত,
তখোন তুমি যদি দেখো তোমাদের নিত্য নতুন দ্রব্য আর যন্ত্র সম্ভার ব্যবহারে আমরা অক্ষম বা একেবারেই অজ্ঞ , আমাদেরকে সাহায্য করো তাদের ব্যবহারে ...............
পিছন ফিরে তোমার শৈশবের দিনগুলির দিকে তাকাও,
দেখবে কতো কিছুই না তোমাকে শিখিয়েছি আমরা ।
কি করে খেতে হয় শিখিয়েছি, শিখিয়েছি কি করে হাটতে হয় ।
কাপড় কি ভাবে পড়তে হয় ,
কি করে নিজের অধিকার রক্ষায় লড়তে হয় শিখিয়েছি তা ও ।
যদি তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে
আমরা কথার খেই হারিয়ে ফেলি ,
স্মৃতি হাতরাতে হয় যদি তবে
আমাদের কিছুটা সময় না হয় ধার দিও ।
বিরক্ত হয়োনা ...........
কারন কথা বলাটাই আমাদের কাছে বড় নয়,
একমাত্র তোমাকে কাছে পাওয়াটাই আমাদের কাছে বড় ।
তুমি শুনছো... এমোন ধারনাতেই যে আমাদের সুখ ।
যখোন আমাদের পা দু’টো তার চলার শক্তি
হারিয়ে ফেলবে , মুঠির জোর যাবে কমে,
মুখে অরুচি এসে যাবে
তখোন যেন আমাদের হাটতে বলোনা !
জোরাজুরি করোনা খেতে ।
আমরা জানি আমাদের সামর্থ্য কতোটুকু .....
তখোন তোমার সাহায্যের হাতখানি বাড়িয়ে দিও আমাদের জন্যে ।
যেমোনটা আমরা করেছি যখোন তুমি হাটতে গিয়ে পড়ে যেতে ।
আমরা তোমাকে কোলে তুলে নিতাম । ব্যথার জায়গাতে চুমু খেতাম ।
আমাদের যতো দীনতা, যতো মালিন্য , যতো অক্ষমতা
তাকে সাদরে গ্রহন কোরো ........
যেমন আমরা এক সময় তোমাকে বুকে করে রেখেছি ।
কোনও একদিন তুমি বুঝবে, আমাদের শত ভ্রান্তি সত্বেও
আমরা কেবল তোমার মঙ্গলাকাঙ্খা করে এসেছি ।
শত অক্ষমতা সত্বেও আমাদের সামর্থ্যের সর্ব্বোচ্যটুকু ব্যয় করেছি
তোমাকে আগলে রাখতে , তোমাকে যোগ্য করে তুলতে .....
এই বেলা শেষের দিনগুলোতে তোমার কাছে এই অক্ষম আমরা আছি বলে
তোমার দুঃখ করার কিছু নেই , লজ্জিত হওয়ার ও কিছু নেই ।
কেবল বুঝতে চেষ্টা করো, আমরা কিভাবে তোমাকে আগলে রেখেছি সকল বিপদ আর ঝঞ্ঝা থেকে, তোমার শৈশব আর কৈশোরে ।
এবং যখোন আমরা আমাদের মৃত্যুকে কামনা করবো,
আমাদেরকে ভুল বুঝোনা ।
একদিন তুমিও এর অর্থ বুঝবে ........
শুধু এটুকুর প্রশংসা করতে চেষ্টা কোরো যে ,
যে বয়সের পথ আমরা পেড়িয়ে এসেছি
তা “জীবন-যাপন” নয় ।
কেবল বেঁচে থাকা – শুধুই তোমার জন্যে !
আমাদের দু’কদম সোজা হয়ে হাটতে সাহায্য কোরো ।
বেলাশেষের সূর্য্য ডোবার আগ পর্য্যন্ত যেনো তোমার ভালোবাসা আর
মর্য্যাদা আমাদের সাথে থাকে ছায়ার মতো .......
একটু হাসি আর জীবনভর তোমার জন্যে এই বুকে জমিয়ে রাখা
ভালোবাসাটুকু ছাড়া আজ তোমাকে দেয়ার মতো কিছু নেই যে আর আমাদের !
আমরা যে তোমাকে ভালোবাসি .........................