নিঃসঙ্গী বর্ণমালা
গেলো রাতখানাকে পরের দিনটা চুরি করে নেয়ার আগে, ঠিক মাঝপ্রহরে নিলীমার হৃদয় নামের জমিখানা অনেক ভাগে ভাগ হয়ে গেলে আমার নামটি খারিজ হয়ে যায় ।
কথারা তখোন এগোয়না আর । যেখানে যতি টানা হয়েছে সেখান থেকে আর বর্ণরা শব্দ হয়ে ওঠেনা । এলোমেলো হয়ে আসে গায়ে গতরে । ত্রিশ বছরের নারী-শরীরের মতো দোমড়ানো । খুব কাছে থেকে দেখলে মনে হবে কথাদের কোনও গন্ধ নেই । যে গন্ধ নিলীমার চুলে ভাসে, খেলে যায় ঠোঁটে তা বুঝি বেনোজলে ভেসে যায় কোথাও । গেরস্থ ঘরের মতো তাই আগোছলো পড়ে থাকে কথারা । নিলীমা ফুঁ দিয়ে শব্দগুলো ঝেড়ে ফেলে দিলে এমোনটাই হয় । সেগুলো জড়ো করে ঘরখানা সাজাতে যেতেই গেঁথে তোলা মালা থেকে খসে পড়ে কথাগুলো । পুঁতির মতো ঠুং-ঠাং গড়িয়ে যায় এদিক ওদিক । চুপিচুপি তাদের কাছে না ডাকলে পরে তাদের রাগ বাড়তে থাকে । ছলনায় ভোলানো তখোন বেশ কঠিন হয়ে ওঠে । আসঙ্গলিপ্সায় জোনাকীর মতো তার টিপটিপ জ্বলে ওঠা লেগে থাকে চোখে । মুঠির সে জোর নেই যে তাকে বাঁধি ।
দীর্ঘ দিবস রজনী এই ছিলো যে খন্ডিত শব্দের প্রেতিনী-নাচ । বর্ণশ্রমিকের ফসল তোলার বেভুল গান । সে গানেরও তাল-লয় ছিড়ে গেলে স্বপ্নের বর্ণমালাদের সেই থেকে আর জোড়া বাঁধানো যায়নি । জোড়া লাগানো গেলে তা হতে পারতো বুঝি ডগমগে একফালি পুঁইশাক । হতে পারতো নকশী কাঁথা এক ।
নিলীমার আরণ্যক শরীরভঙ্গী ইশারা দিলে তবেই-না তা হতে পারতো !
আকাশের জলে নাইয়ে কথাদের তাই আবারো সাফসুতেরো করতে হয় । তবুও করমচাগন্ধী হয়ে ওঠেনা । আকাশের কি কোনও গন্ধ থাকে ? টকটক গন্ধ ? ভেজামেঘ থেকে টুপটাপ পড়া জলগন্ধ ? নিলীমাকে নিয়ে যে বর্নমালার ছৌ খেলতে চাই তা স্থির হয়না তাই । দোলে....দোলে....দোলে.... দুলতেই থাকে ।
তাই শব্দেরও হাতবদল করতে হয় , আলো জ্বেলে খুঁজে নিতে হয় ধ্রুপদী বর্ণমালা । শব্দের ভান্ডারে টান লাগার আগেই শব্দচোর হয়ে উঠতে হয় । স্বরস্বতিয়ার ঝাঁপি থেকে টেনে তুলতে হয় আদেখলা চোখের কিছু কিছু ত্যাদোড় শব্দকে ।
ঝা – চকচকে ধারালো বর্ণমালা গেঁথে গেঁথে নিলীমার বর্ণহীন আঁচলে যে চিঠির কারচুপি কাজ ফুঁটিয়ে তুলতে চাই তা যেন লজ্জাবতী লতা হয়ে ওঠে ক্রমে । মুখ লুকোয় নিকোটিন ঝাঁঝরা ফুসফুসে । দম ফেলতে হেচকি ওঠে । তখোনই না স্বপ্নের বর্ণমালা তার পুরো বুকখানা উদোম করে দেয় । হু –হু করে বয়ে যায় বাউরী বাতাস । আর তখোন-ই গমকে গমকে বিষরক্ত মার্চ করে বেরিয়ে যেতে থাকলে পরে, স্বপ্নের বর্ণমালাখানি খাবি খেতে থাকে । বর্ণেরা দলছুট হয় । ডুবসাঁতারে যে ক’টি গাঙপাড়ে হামাগুড়ি দিয়ে আসে তাকে তুলে আনি সুনীল করতলে । পাতাকুড়ুনীর মতো কুড়াই জলটুঙ্গির ফাঁক-ফোকরে কিছু ঝরা বর্নফুল, একে একে । যেটুকু বেঁচেবর্তে থাকে তাতেই সেজে ওঠে চিরকালের আদিম ওঙ্কার ------
ভা...........
....
....
....
লো.........
....
....
....
বা.....
....
....
....
সি...........
নিলীমা ছুঁয়েও দেখেনা । পড়ে থাকে শুধু আমার নিঃসঙ্গী বর্ণমালা, একাকী ......
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:০৬